স্বামীর_বিয়ে১৭ও শেষ_পর্ব

0
2483

#স্বামীর_বিয়ে১৭ও
#শেষ_পর্ব
#সাখেরীন

রুহীনিঃ হাটু ঘেরে নিচে বসে কান্না করছিলাম। অভ্রের ডাকে চোখমুখ মুছে উঠে দাড়ালাম।
অভ্রঃ ( রুহীনিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে) তোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশিই বার বেড়েছো??
রুহীনিঃ ( অভ্রকে ধাক্কা দিলাম) তুমি আমাকে টার্চ করবে না তুমি বুঝছো। সেই অধিকার তোমার আর এখন নাই।
অভ্রঃ ও তাই না?
রুহীনিঃ হুম। ছাড়ো আমাকে অভ্র ভালো হচ্ছে না ছাড়ো বলছি।
অভ্রঃ(রুহীনির গায়ে হাত বুলাতে লাগলাম তারপর কুলে তুলে বেডের দিকে পা বাড়ালাম।) আমার অধিকার নাই তোমাকে ছোয়ার তাই না??
রুহীনিঃ অভ্রের হাতে জোরে কামড় বসিয়ে দিলাম।
অভ্রঃ আহহহহহ ( রুহীনিকে ছেড়ে দিলাম) রুহীনিইইইই
রুহীনিঃ আমাকে টার্চ করলে এর থেকেও খারাপ হবে।
অভ্রঃআর কিছু না বলে ছাদে চলে এলাম।
রুহীনিঃ পেটে হাত বুলিয়ে কান্না করছি।
অভ্রঃ পকেট হাত দিয়ে রাতের আকাশের চাদেঁ দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি রুহীনির বলা কথাগুলো। চোখের কোনায় পানি জমে আছে। রুহীনি এসব বলবে আমি কখনই ভাবিনি।আমার ছোঁয়া এখন ওর কাছে বিষের মতো লাগে। আমারই ভুল হয়েছে রুহীনিকে ভালোবেসে।
নিহাল ড্রিংক করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে থামার নামই নেই। রুহীনির বলা কথাগুলো আজ খুব মনে ব্যাথা দিয়ে ফেলেছে।
সারারাতই এই বার চালু থাকে তাই নিহালকে কেউই কিছুই বলছে না।
রুহীনিঃ আমার বাচ্চার জন্য যদি আমাকে সবার চোখে খারাপ ব্যাবহার করতে হয় করব। তারপর আমার বাচ্চা আর আমি অভ্রের ছায়াতলে থাকবো না।অভ্রের মতো ভদ্রতার মুখোশ পরে ভদ্র নাই বা হলাম-
আমি অভদ্রই ভালো আছি।
জানলার ফাঁক দিয়ে হালকা মিষ্টি রোদ রুহীনির চোখমুখের ওপর পরছে।
অভ্র চোখ বড়বড় করে দেখেছে আর বলছে কি মায়াবী লাগছে রুহীনিকে।
রুহীনি আড়মোড়া দিতেই অভ্র টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রুহীনিঃ চোখ খুলে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম অভ্র আছে কিনা?? নাহ নেই মন কেনো জানি খারাপ হয়ে এলো। চোখ দিয়ে পানি পরছে ক্লথ দিয়ে চোখ ডেকে রাখলাম কারন দেখলাম অভ্র এসেছে ।
অভ্রঃ রুহীনির দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম এখনো ঘুমিয়ে আছে। তাই নিজেই আলমারি থেকে শার্ট বের করে পরে নিচে চলে এলাম।
রুহীনিঃ অভ্র যেতেই চুলে খোপা করতে করতে ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে।
অভ্রঃ নাস্তা করছিলাম এমন সময় দেখি রুহীনি নিচে নামছে।
রুহীনিঃ অভ্র আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেখেও না দেখার মতো করে মার সাথে বসে নাস্তা শুরু করলাম।
নূর আর মমসি তাদের বাসা চলে গেছে।
রুহীনিঃনাস্তা শেষে হলে রুমে বসে আছি বরাবর দরজায় তাকিয়ে আছি। ইলা কখন আসবে…
আসলে কাল আমি ডক্টরের সাথে দেখা করার পর ইলার বাসায় গিয়েছিলাম। তারপর ইলাকে বলেছি সকাল দশটায় এই বাসায় আসতে আরো বলেছিলাম অভ্রকে এসব না বলতে । ইলাকে ইলার অধিকার দেওয়ার জন্য আসতে বলেছিলাম।
কলিংবেলটা বাজতেই চটজলদি দরজা খুলে দিলাম। দেখি ইলা এসেছে।
রুহীনিঃ আসো তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
ইলাঃহুম ( ভিতরে গেলাম এই প্রথম আমি অভ্রদের বাসায় আসলাম)
অভ্রঃ নিউজ দেখছি রুহীনির মুখে ইলার নাম শুনে ঘুরে তাকিয়ে দেখি ইলাাা আমিতো পুরো অবাক শরীর কাপছে না জানি কি হয় আজ। ( মনে মনে)
অভ্রের মাঃ রুহীনি মা ও কে??
রুহীনিঃ বসো ইলা। মা ও হচ্ছে এই বাড়ির বউ।
অভ্রের বাবা ও সাথো সবাই একসাথে বললো মানে??( অবাক হয়ে)
রুহীনিঃ মানেটা খুব সিম্পল। অভ্রের বউ আর তার বাচ্চার মাই হচ্ছে ইলা।
অভ্রের বাবাঃ কি যা তা বলছো?? সব মাথার ওপর দিয়ে গেলো…
অভ্রের মাঃ হ্যা ঠিকই বলেছো। ( রুহীনি হাত ধরে করুন ভাবে) রুহীনি মা কি হয়েছে?? কি বলছিস এসব?? ভেবে বল….।
রুহীনিঃ মা ভেবে বলার কি আছে যা সত্যিই তাই বলছি।
অভ্রের বাবাঃকি শুনছি এসব আমি?? এই মেয়েটা কি তোর বউ?? আর তোর বাচ্চার মা??( অভ্রের সামনে গিয়ে রেগে বললাম)
অভ্রঃকি বলব বুঝতেই পারছি না শরীর থরথর করে কাপছে।
অভ্রের বাবাঃ কি হলো বল??
অভ্রের মাঃ বাবা বল সব মিথ্যে এসব। আমার খুব টেনশন হচ্ছে….
অভ্রের বাবাঃ বল অভ্র সত্যিই কি ইলা তোর বউ?? তোর বাচ্চার মা???
অভ্র কান চেপে চোখ-মুখ খিচিয়ে বললো হ্যা ইলা আমার বউ আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে।
অভ্রের বাবাঃঅভ্ররররর( গালে চড় বসিয়ে দিলাম)
অভ্রঃ( গালে হাত দিয়ে) বাবআআআআ…
অভ্রের মা অভ্রের বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সোফায় বসালো।
অভ্রের বাবা রাগে কটমট করছে।দাঁতে দাঁত চেপে রুহীনিকে সব বলতে বললো ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো।
অভ্রের বাবা এসব শুনে আবারও অভ্রকে মারতে তেড়ে আসছিলো কিন্তু আসতে পারেনি অভ্রের মা থামিয়ে দিয়েছে।
অরিন ইলাকে উদ্দেশ্য করে…
অরিনঃ এই মেয়ে তোমার লজ্জা বলতে কিছুই?? ঘৃনা হয় না অন্যের স্বামীকে নিজের স্বামীর বানাতে??
ইলাঃ নিশ্চুপ…।
অরিনঃআর কাউকে পাওনি??
ইলাঃ নিশ্চুপ
অরিনঃআমার ভা….
রুহীনি আর অভ্রঃ( দুজন এক সাথেই) অরিিিনননননন…..
অরিনঃইলা এই বাসায় থাকলে আমি আর এই বাসায় থাকবো না। ( বলেই চলে এলাম রাগে)
কলিংবেলের আওয়াজ হতেই রুহীনি দরজা খুলে দিলো।
রুহীনিঃ ( দেখলাম উকিল এসেছে) ভিতরে আসুন
উকিলঃজ্বী ম্যাম।
অভ্রের বাবাঃ উকিল কেনো?? ( রুহীনিকে উদ্দেশ্য করে)
অভ্র ও বাকি সবাই উকিল কেনো আসছে এটা বুঝার চেষ্টা করছে।
রুহীনিঃ বিয়ের জন্য।
অভ্রের বাবাঃ মা মানে??
রুহীনিঃ আমি ইলাকে মেনে নিয়েছি আমার স্বামীর বউ হিসাবে। তাই চাইছি আপনারও ওকে মেনে নিন৷ এই বাড়ির সৃকৃতি ইলা ও বাচ্চা যেনো পায়।
অভ্রঃ ধুক ধুক করছে বুকটা কিন্তু কেনো?? আমার আরো খুশি হওয়ার কথা…।
ইলাঃখুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখানে তো আর নাচা যাবে না। তাই চুপচাপ বসে থাকাই ভালো। আমি জানতাম রুহীনি এমনটাই করবে। তাই তো ইচ্ছে করেই অভ্রকে বলিনি যে রুহীনি আমাকে এখানে আসতে বলেছিল।
অভ্রের মা অভ্রের বাবাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো।
অভ্রের বাবাঃ কি হলো এভাবেই টেনে নিয়ে এলে কেনো??
অভ্রের মাঃ দেখো ছেলেতো আমাদেরই আমি জানি ভুল করেছে । কিন্তু নাজায়েজের তো কিছু করেনি। এই বংশের প্রদীপ আসতে চলছে। আর রুহীনি যেনো মেনে নিয়ে সব কিছু তাহলে আমাদের মানতে সমস্যা কোথায় বল? একটু ভেবে দেখো আল্লাহ যা করেন হয়তো ভালোর জন্যই।
প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে এখনো অভ্রের বাবা মা কেউ আসেননি।
উকিলঃম্যাম আর কতক্ষন??
রুহীনিঃ( বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে) হুম দেখছি…
রুহীনি চলে যেতেই অভ্র ইলাকে উদ্দেশ্যে করে….
অভ্রঃ আমাকে একটা বার বলার প্রয়োজন হলো না???
ইলাঃ নিশ্চুপ ( কি বলবো অভ্রকে এখন)
অভ্রঃবল
ইলাঃআ আমি আসলে….
অভ্রের বাবাঃউকিল পেপার রেডি করো আমি রাজি ইলাকে এই বাড়ির বউ হিসাবে সৃকৃতি দিতে।
অভ্র আর ইলার মুখে হাসি রেখা ফুটে আছে।
রুহীনির চোখে মেঘ জমে আছে যে কোন সময়ে বৃষ্টি নামতে পারে।
অভ্রের মা ইলাকে খুব আদর যত্নে সোফায় বসিয়ে দেয় অভ্রের পাশে।
রুহীনিঃ অভ্রের সাথে ইলাকে দেখতেই শরীর জ্বলছে আমার। কান্না আসতাছে আমার। অনেক কষ্টে নিজে সামলিয়ে নিয়ে উকিল ঈশারা বললাম সব ঠিকতো উকিল ঈশারা বুঝালো সবই ঠিকঠাক আছে।
রেজিস্ট্রার পেপারে সাইন করলো প্রথমে ইলা। এখন অভ্রকে দেওয়া হয়েছে সাইন করার জন্য।
অভ্রঃ সাইন করতে কেমন যেনো লাগছে রুহীনির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে পানি। ওর চোখে পানি দেখে মনে হলো কলিজাটাই কেউ টান দিয়ে ছিড়ে ফেললো আমার।
অভ্রের মাঃ কি হলো সাইন কর…
অভ্রঃতারাতাড়ি সাইন করে দিলাম পেপারেতে।
সবাই খুশি হলো। অভ্রের মা ইলাকে ধরে ধরে অভ্রের রুমে নিয়ে গেলো।
রুহীনি এক কোনাতে দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্রের বাবা রুহীনির মাথা ছুঁয়ে বড় এক নিশ্বাস ফেলে তার রুমে চলে গেলেন।
উকিলঃম্যাম পেপার
রুহীনিঃ ধন্যবাদ
উকিল চলে গেলেন।
অভ্র রুহীনির দিকে আসছিলো কিন্তু রুহীনি সাইড হয়ে চলে গেলো স্টাডিরুমে।
অভ্র পিছনে পিছনে যাচ্ছিলো আর অভ্রের মা তাকে থামিয়ে ইলার কাছে যেতে বললো।
অভ্রঃকিন্তু মা…
অভ্রের মাঃ পরে কথা বলিস ওকে একটু একা থাকতে দে। তুই ইলার কাছে যা নতুন পরিবেশ ভয় পাবে হয়তো।
অভ্রঃ আচ্ছা।
অভ্র চলে গেলো তার রুমে।
রুহীনি মেঝেতে বসে কান্না করছে।
রুহীনিঃকেনো অভ্র?? কেনো??আমাকে এভাবে ধোকা দিলে??কেনো কাঁদাও আমাকে সময়???কেনো????????????
ইলাঃ( অভ্র আসতেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম) অভ্র আমি কখনো ভাবতে পারিনি সবাই আমাদের মেনে নিবে। আমি আজ অনেক খুশি অভ্র। আ…
অভ্রঃ( ইলাকে আর কিছু না বলতে দিয়ে) এসব না আর ভেবো না। রেস্ট নাও। তোমার রেস্টের প্রয়োজন। ( বলেই বারান্দায় এসে পরলাম)
ইলাঃ অভ্রের পিছনে পিছনে যায়।
দু’জনই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে বারান্দায়। চাঁদের আলোতে ইলা অভ্রের মুখখানা দেখতে পারছে সাথে আরো দেখতে পারছে একফোঁটা জল। যা অভ্রের চোখে চাঁদের আলোতে মুক্তার মতো দেখা যাচ্ছে। ইলা বুঝতে পারলো এটা রুহীনির জন্যই। তাই ইলা একটু ক্ষোভ নিয়ে রুমে চলে এলো।
রাত যত গভীর হচ্ছে ততই নিরব ভূমিকা পালন করছে শহরটা। ইলা সব বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। শুধু অভ্র আর রুহীনি ছাড়া। হয়তোবা আজ ঘুম কারো হবেইও নাহ….
শিরশির ঠান্ডা বাতাসে অভ্রের গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে কিন্তু তা অভ্রের খেয়াল নেই।
অভ্র রুমে একবার গিয়েছিল যেয়ে দেখে রুহীনির জায়গায় ইলা। হজম হলো না মনে হয় তাই চলে এলাম আবার বারান্দায়।
রুহীনির ফোন বাজতেই চটজলদি চোখমুখ মুছে ফোন রিসিভ করলো।
ইমানঃ ম্যাম ফফ্লাইট তো চারটা টায়।
একটা অলরেডি বেজে গেছে। আমার,মনে হয় এবার আপনার রওনা হওয়ার পালা।
রুহীনিঃ হুম। তুমি রেডিতো??
ইমানঃ জ্বী ম্যাম
রুহীনিঃ গুড ( ফোনটা রেখে দিলাম)
ইলাঃ ঘুম থেকে উঠে দেখি অভ্র নেই তাই জোর করে রুমে নিয়ে এলাম বারান্দা থেকে।
রুহীনিঃ একটা চিঠি আর আমার আর অভ্রের ডাই বোস পেপার গুলো হল রুমের টেবিলে রেখে দিলাম।সবাইকে একবার একবার করে শেষ দেখা দেখে নিলাম। হয়তো আর কখনোই দেখতে নাও পাই?? মারাও যেতে পারি।সবাইকে দেখা শেষে অভ্র আর ইলাকে দেখে আসলাম। মন চাইনি ওদের দেখতে। কিন্তু নিজেকে জোরপূর্বক করে অভ্রকে দেখে আসলাম। অভ্রের বুকে আজ ইলা ঘুমিয়ে আছে। এটা দেখে আরো ঘৃনা জমে গেলো।
যাইহোক অনেক কষ্ট নিয়ে বাসা থেকে বিদায় নিলাম। চোখে সব ভাসছে নদীর স্রোতের মতো। কতনা সুন্দর দিন ছিলো আমাদের। কত স্বপ্ন বুনেছি অভ্রের সাথে। কত বায়না করেছি অভ্রের সাথে।চোখ দিয়ে পানি পরছেই থামার নামই নিচ্ছে না। এসবই ভাবছিলাম ইমানের ড্রাইভার বললো এসে পরেছি তাই চোখ মুখ মুছে। মুখে উড়না পেচিয়ে বেরুলাম। কারন কেউ যদি ভুলবশত দেখে ফেলে সেলফি সেলফি করে জান খাবে। আর কালকে নিউজে এটা প্রচার হবে তাই উড়না পরেই ওয়েটিং রুমের বসে আছি।
ইমান এসে পাসপোর্ট দিয়ে গেলো। ইমানও বসে রইলো আমার সাথে। ইমান আমার কথায় জাপানে থাকবে আর ওইখানেই ওর ফেমেলিও আছে।
ইমানের আগেই আমার ফ্লাইট ছিলো তাই সে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। ইমান বারবার পিছনে ফিরে আমাকে দেখছিলো। কিন্তু কেনো?? অস্তিত্ব লাগছিলো তাই আর ইমানের দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
চারটা বাজার পনেরো মিনিট আগে এলান হয়েছিল। আমার উইন্ডোজ সিট পরেছে বলতে আমিই ইমানে বলে করিয়ে নিয়েছি। বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম এই পথ পারি দিবার জন্য। এমন সময় একটা লোক এসে পাশে বসলো ক্যাপ পরা। লোকটার দিকে না তাকিয়ে জানালা দিকে তাকিয়ে রইলাম।
পাশের লোকটাঃসরিি
রুহীনিঃ ( লোকটার কন্ঠ চিনা চিনা লাগছে আর সরি কেনো বললো পাশে তাকাতেই আমি অবাককক) নি নিহাাাালললল….
নিহালঃ( রুহীনি হাত ধরে) সরিইইইই রুহীনি। আ আমি ওইদিন না জেনেই তোকে থাপ্পড় দিয়ে আর কত অপমান করছি সরি আমি আর এমন করবো না রুহীনি সরি। আজ হয়তো অরিন আমাকে এসব আমাকে না বললে আমি বললে আমি তোকে হারিয়ে ফেললতাম৷
রুহীনিঃ মানে অরিন??
নিহালঃ অরিন আমাকে ইলা ও অভ্রের কথা সকালেই বলেছে যখন বিয়ো হয়। তখন আসতে চাইছিলাম কিন্তু ইমান আমাকে আটকিয়ে সব বলে দেয় তোর প্ল্যান।
রুহীনিঃ হুম বুঝলাম। কিন্তু তুই আসলি কেনো??? আর এতো তারাতাড়ি পাসপোর্টে আর??
নিহালঃ আমি অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা শেষ করেছি। এন্ড ফ্রী ভিসা কারনে।
রুহীনিঃ( মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে) তোর আসার প্রয়োজন ছিলো না। আমি একাই নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছি।
নিহালঃ সেই জন্য গাড়ি বসে বসে সে কি কান্না করছিলি হুহ কান্দুরি
রুহীনিঃ ( অবাক হয়ে) মানে??
নিহালঃ ড্রাইভার
রুহীনিঃ এর মানে গাড়ির ড্রাইভারও তুই ছিলি??
নিহালঃ আগ্গে জ্বী ম্যাম।
রুহীনিঃ তুই আসলি কেনো?? নূরের প্রয়োজন তোকে। নূর তোকে ভালোবাসে আর তুই এভাবে চলে এলি?? কতটা কষ্ট পাবে জানিস??আর তুইও তো ভালোবাসিস নূরকে।
নিহালঃ ভালোবাসি না শুধু ভালোলাগা ছিল নূর। শুন
কাউকে ভালোবাসার জন্য কোনো কারণ লাগে না,তুমি যদি ব্যাখ্যা করতে পারো যে- কেন তুমি তাকে ভালোবাসো- তাহলে এটা হচ্ছে ভাললাগা,
কিন্তু তুমি যদি ব্যাখ্যা করতে না পারো সেটাই হচ্ছে ভালোবাসা।
রুহীনিঃ আর কিছু বললাম না নিহালকে বাহিরে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখিতেছি।
নিহালও আর কিছুই বলেনি সেদিন।
আট বছর পর_____
অভ্রদের বাসায় মিলাদ পড়ানো হচ্ছে ইলার নামে। হ্যা ঠিকই দেখছেন। ইলা আর বেঁচে নেই সাতবছর হয়ে এলো আজ। রুহীনি চলে যাবার পর অভ্র প্রায় পাগলের মতো হয়ে যায় শোকে। তারপর ইলা ও তার বাচ্চার জন্য অভ্র নিজেকে স্ট্রং রাখে। ইলার যেদিন পেইন উঠে তখন অভ্রকে বলে যায় রুহীনিও তার বাচ্চা মা হতে চলেছে। এটা শুনে অভ্র পাথরের দাড়িয়ে পরে। রুহীনি যে অভ্রের মা হতে চলেছে ইলা আগেই জানতো অভ্রকে বলেনি যদি তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু হয়তো ইলাও বুঝে গিয়েছিল আর সময় নেই তার হাতে তাই সত্যিটা বলে দিয়ে চলে গেছে অজানা দেশে। সেদিন ইলার সাথে ইলার বাচ্চাকেও বাঁচাতে পারেনি ডক্টর । রুহীনি চলে যাবার পর অভ্র এমন কোন জায়গায় বাদ নেই না খুঁজেছে। এখনও খুজছে। অভ্রের মা আলচ দিয়ে শুধু চোখ পুছে তার ছেলে এমন করুন অবস্থা হবে সে ভাবতে পারেনি। রাতদিন আল্লাহর কাছে বলে রুহীনিকে ফিরিয়ে দিতে। অভ্র বাচ্চাকে নিজ হাতে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। কেউ ভাববেন না ইলার বাচ্চা…। এটা ইলার না অরনির বাচ্চা কথা বলতে শিখে মাএ।
অভ্রের কলিজা, আশা, ভরসাই হলে অরিন। অভ্র এখন বেঁচে আছেই শুধু অরিনের জন্য।
অভ্র এখন আর সুপারস্টার নেই। সাধারন সিম্পল মানুষ। পাচ ওয়াক্ত নামাজ আর বাবা সাথে কাজে হেল্প এই পর্যন্তই অভ্রের ডেলি রুটিন।
অন্যদিকে রুহীনি পিছনে পিছনে খাবার নিয়ে দৌড়াচ্ছে নিহা আর রিহার পিছনে।
নিহাঃপাপা পাপা দেখো না মম শুধু শুধু একটু পর পর খাবার নিয়ে আসে।
রিহাঃ আর ভাল্লাগে না জীবন ডাই খাবার আর খাবার।
নিহাল আর রুহীনি দুজনেই হেসে উঠলো তাদের মেয়েদের পাকনামো কথা শুনে।
নিহা আর রিহা হচ্ছে রুহীনির মেয়ে। রুহীনির বললে ভুল হবে নিহালেও। সময়ে বিবর্তনের সাথে সাথে নিহাল আর রুহীনির সম্পর্কটাও গাড়ো হয়ে যায়। রুহীনি এখন অভ্রের বুকে নয় নিহালের বুকে মাথা রেখে ঘুমায়। নিহাল থেকে নিহা আর রুহীনি থেকে রিহা নাম মিলিয়ে রেখেছে। এখানে কোন অভ্রের ছায়া নেই।
নিহাল পরিপূর্ণ খেয়াল রাখে রুহীনি আর তার বাচ্চাদের। নিহা আর রিহাকে স্কুল দিয়ে আসে নিহাল। নিহাল কখনো মনে করেনা ওরা অভ্রের সন্তান। রুহীনিকে যে ভাবে আগলে রাখে সে ভাবে বাচ্চাদের কেও।
আজ অফ ডে ছিলো তাই সবাই বাসায়। রুহীনি আর নিহাল জব করে। নিহা আর রিহা স্কুলে থাকে সারাদিন থাকে বিকেলে অফিস শেষে থেকে রিহা আর নিহাকে বাসায় নিয়েই ফিরে রুহীনি আর নিহাল।
রাত হয়ে গেছে।
ডিনার শেষে নিহাল রুমে চলে গেলো। রুহীনি বাচ্চাদেরকে ঘুমপাড়িয়ে দিলো।
রুহীনিঃরুমে এসে দেখি নিহাল মুভি দেখছে। তাই
ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। মেঘমুক্ত বিশাল আকাশের আজ শুধু অভ্রের চেহারা ভাসছে। অভ্রের বাচ্চাটা কেমন আছে?? বাসার সবাই কেমন আছে?? খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ আমাকে ছাড়া অভ্রের দিন কেমন চলে??অভ্রতো বলতো আমাকে ছাড়া নাকি তার নিশ্বাস নেওয়াটাও কষ্ট হবে। আজ জানতে ইচ্ছে করছে অভ্রকি এখনো বেঁচে আছে?? আজ আমার চোখে পানি নেই অভ্রের জন্য শুধু আছে একরাশ ঘৃণা।
নিহালঃলেফট পটা অফ করে বারান্দায় গিয়ে রুহীনির পাশে দাড়ালাম।
রুহীনিঃ নিহালকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম । নিহাল এসব বুঝতে পারলে খুব কষ্ট পাবে। আর আমি চাই না নিহালের কষ্ট হোক।
নিহালঃ রুহীনিকে কুলে করে রুমে নিয়ে যাচ্ছি।
রুহীনিঃ কি করছিস???
নিহালঃ রুমে নিয়ে যাচ্ছি। ঘুমাবো আমি।
রুহীনিঃ তো ঘুমা।
নিহালঃ (তেড়ে তাকালাম)জানিসই ভালো করে তোকে ছাড়া ঘুম হয়না তারপরও…
রুহীনিঃ হয়েছে বুঝছি। নিহালের বুকে নাক ঘষলাম।
নিহালঃ রুহীনিকে শুইয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পা বাড়ালাম।
রুহীনিঃ নিহালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে রইলাম। অভ্রের জায়গা হতো নিহাল কখনোই পাবে না আমার মনে। নিহাল নিহালের জন্য জায়গা করে নিয়েছে মনে।
কথায় আছে লোভে পাপ। পাপে মৃত্যু।
অভ্র বাচ্চার লোভে রুহীনিকে ঠকিয়েছে তাই তার শাস্তিও পেয়েছে ইলা আর বাচ্চাকে হারিয়ে সর্বশেষ হয়ে আছে।এর থেকে ব শাস্তি আর অভ্ররের হয় না।অভ্র অভ্রের কুকর্মে শাস্তি পেয়েছে। আর রুহীনি তার আসল ভালোবাসা।
ননমগলননম
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রুহীনি পর্দাটা সরিয়ে দিল। আলোতে নিহালের ঘুম। ভেঙে গেলো।দেখলো রুহীনির পাখিদের খাবার দিচ্ছে বারান্দায়।গিয়ে রুহীনির পিছনে দাঁড়ালো। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি। রুহীনি এবার ওর দিকে ফিরে বললো এখনো তিন প্রহরে জ্যোৎস্না দেখা বাকি।নিহাল আর রুহীনির ভালোবাসা এভাবেই অটুট থাকুক। সবাই নিহাল আর রুহীনির মতো হাজারো ভালোবাসার জন্য দোয়া করবেন।
সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে