স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৬
আফসানা মিমি
—কিসব আবোল তাবোল বলছো! এখন তো
ঘুমের সময় সাঁতার কাটতে যাবে কেন তুমি?
—সেটাই তো। আমি তো ঘুমোতেই যাচ্ছিলাম
কিন্তু আপনি কে ভাই আমাকে ডিস্টার্ব করছেন
কেন এতো রাতে?
—আসলে কারো সাথে কথা বলতে খুব মন
চায়ছিল তাই ফোন দিলাম আর কি।
—এখন যদি ফোন না রাখেন উল্টাপাল্টা কিছু
বলে ফেলব তাই ফোন রাখেন জলদি।
—আরেকটু কথা বলি না! এমন করো কেন?
—ওই মিঞা! আমি কি আপনার প্রেমিকা নাকি বিয়ে
করা বউ যে আপনার সাথে কথা বলব?
ফোন রাখেন! যত্তসব!
ধমক দিয়ে ফোনটা আমিই রেখে দিলাম। এসব
পাগল ছাগল লোক কই থেকে যে আসে!
আমার ঘুমের বারোটা বাজাইছে এই বেটা।
বাসা টু কোচিং, কোচিং টু বাসা এভাবেই আমার দিনগুলো কেটে যাচ্ছে। সাথে শ্রাবণের সাথে হালকা খুনসুটি। এর মধ্যে আপুর সাথে আশেপাশোর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফেলেছি।
ভার্সিটি এক্সাম দিলাম কয়েকটা ভার্সিটিতে। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে চাঞ্ছ হলো। যাক আমার
পছন্দের সাবজেক্টই আসছে। রেহানও জাহাঙ্গীরনগরেই চাঞ্ছ পেয়েছে। অবশ্য আমাদের দুজনের ডিপার্টমেন্ট আলাদা। রেহানের ইংরেজি আসছে।
ক্লাস আরো কয়েকদিন পর থেকে শুরু হবে। একটা কাজে ভার্সিটি গিয়েছিলাম রেহানের সাথে। রাস্তায় অনেক গাড়ি থাকার কারনে রাস্তা পার হতে পারছিলাম না। আসলে এটা আমার ছোটবেলার স্বভাব। সহজে রাস্তা পার হতে পারি না। তাই সবসময় আব্বু আর ভাইয়ার হাত ধরেই রাস্তা পার হতাম। রেহান আমার হাত ধরে রাস্তার এপাশ থেকে ঐপাশে নিয়ে গিয়ে
প্লাটফর্ম এর ওপর দাঁড় করালো। হঠাৎই আমার গালে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। আলতো ভাবে নয় বরং কে যেন একটু জোরেশোরেই থাপ্পড় মেরেছে। মনে হচ্ছে ইট দিয়ে বারি মেরেছে। পাশে তাকিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া। শ্রাবণ এখানে কি করছে? আর আমাকে থাপ্পড়ই বা দিল কেন? থাপ্পড়টা খুব জোরেই লেগেছে
গালে। যার কারনে জ্বালাপোড়া করছে। চোখে
পানি এসে গেল তার এ কর্মকান্ডে।
—আপনি আমাকে শুধুশুধু থাপ্পড় মারলেন কেন?
—ভার্সিটি বসে, পার্কে বসে ফষ্টিনষ্টি করে সাধ মেটেনা? আবার রাস্তায় এসেও হাত ধরাধরি করে ফষ্টিনষ্টি করছো!
—কিহ? আমি ভার্সিটি, পার্কে বসে ফষ্টিনষ্টি করি? আপনার মাইন্ড এতটা চিপ? এরকম ভাবতে পারলেন আমাকে? আর কার সাথেই বা আমি এসব করি?
—এখন ভালো সাজা হচ্ছে তাইনা? মনে হচ্ছে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেনা! ক্যারেক্টারলেস মেয়ে কোথাকার।
—আপনি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনার
এতো বড় সাহস আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেন!
—দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না তুমি বুচ্ছো! তোমার মত
মেয়েরা এসব করতে ওস্তাদ।
—আর একটাও বাজে কথা বলবেন না আপনি।
নয়তো ভালো হবে না।
—উচিৎ কথা বললে তো গায়ে ফোস্কা পড়েই, তাইনা? যেখানে সেখানে ছেলেদের হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করতে
লজ্জা করে না তোমার?
—আরে আমি হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করলাম কই?
রাস্তা পার হচ্ছিলাম।
—তা তো দেখতেই পাচ্ছি। সবসময় এই ছেলের সাথে এত ঢলাঢলি কিসের? গায়ে ঢলে পড়ে এতো হাসাহাসি কিসের? মনে করেছো বুঝি না কিছু?
—ভাইয়া আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আমরা শুধুই ভাল বন্ধু এছাড়া আর কিছু না। রেহান বললো
—আমাকে বুঝাতে আসবে না তোমাদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক! তা আমি নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি। আমার কাছে ফালতু এক্সপ্লেনেশন দিতে হবে না।
ছিঃ! তোমাকে দেখলেই আমার ঘেন্না লাগে। নেক্সট টাইম এ মুখটা না দেখালেই খুশি হবো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
এটা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। এমন একটা কথা বলতে পারলেন উনি! আমাকে দেখলে উনার ঘেন্না লাগে! আর আমি কিনা কতকিছু ভেবে ফেলেছি। এমনকি আমার নিজের মনটাও আর আমার কথা কয় না। সারাক্ষণ উনার কথাই বলে। তবে কি আমি ভুল করে ফেলেছি আমার মনটা উনার দিকে অগ্রসর হওয়া থেকে না দমিয়ে রেখে? কোন ফিলিংসই
কি নেই আমার প্রতি? একটুও কি বিশ্বাস করে না আমাকে? এতটাই খারাপ আমি তার চোখে!
দাঁতে দাঁত চেপে ঠোঁট কামড়ে ভিতরের কান্নাটা
দমিয়ে রেখে শক্ত হয়ে বললাম
—সজ্ঞানে আমি দ্বিতীয়বার আর আপনার মুখোমুখি হবো না। এতই যখন ঘেন্না করেন আজকের পর থেকে আর আমার মুখ দেখতে হবে না আপনার। শুধু একটা কথাই বলব মানুষকে একটু হলেও বিশ্বাস করতে হয়। সত্যিটা জেনে তারপর তার ওপর অপবাদ দিতে হয়।
কিন্তু আপনার মাঝে বিশ্বাসের ছিটেফোঁটাও নেই।
এটা বলার পরই সে স্থান ত্যাগ করলো। এবার আর ভিতরের চাপা কান্নাটা আঁটকে রাখতে পারিনি। চিৎকার করেই কেঁদে দিলাম। রেহান আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে কিন্তু তাতে কোন কাজ হবে না। অনেক বড় একটা আঘাত দিয়েছে আজকে শ্রাবণ। যার ঘা শুকাতে অনেক দেরি হবে কিন্তু দাগটা আজীবন রয়ে যাবে।
—আফসু প্লিজ এভাবে কান্না করিস না। বাসায় চল প্লিজ।
—রেহান ও আমাকে এতটা অবিশ্বাস কিভাবে করলো? আমার প্রতি কি ওর একটুও বিশ্বাস নেই? কিভাবে বলতে পারলো এসব কথা? তার একটুও বুক কাঁপলো না? মুখে আঁটকায়নি একটাবারের জন্যও?
—দ্যাখ শ্রাবণ ভাইয়ার প্রতি তোর যে ফিলিংস, হয়তো তোর প্রতি উনার তেমন কোন ফিলিংস নেই তাই এসব বলতে পেরেছে।
—তাই বলে তোর সাথে আমাকে সন্দেহ করলো? আমি তো তাকে বলেছিলাম যে তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড তবুও সে এসব কথা বলতে পারলো? এতটা ঘৃণা করে আমাকে সে আমি ভাবতেও পারছি না রে।
—প্লিজ এসব কথা মন থেকে সরিয়ে বাসায় চল। এটা রাস্তা, দ্যাখ কিভাবে সবাই তাকিয়ে আছে! চল তোকে বাসায় পৌঁছে দিই।
—না রে আমি যেতে পারব। আমাকে একা ছেড়ে দে।
—আমার কথাটা শোন, আমি তোকে…
—প্লিজ রেহান! আমি একা যেতে পারবো।
রেহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বাসায় রওয়ানা দিলাম। নিজেকে আজ বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। বাসায় আসার পথেই ভাইয়াকে ফোন দিলাম আমাকে এসে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজকে। ঐ বাসায় আর এক মুহূর্তও নিঃশ্বাস নিতে পারবো না আমি। দম আঁটকে মারাই যাব। আস্তে আস্তে কিভাবে যে শ্রাবণের প্রতি এতটা দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম নিজেও জানিনা। কিভাবে এতো বড় একটা
ভুল করলাম ভেবে পাইনা। না জানি এর
মাশুল দিতে কতদিন লাগে! শহরে কি ছেলের
অভাব ছিল যে তার প্রতিই আমার আকৃষ্ট হতে
হল! আমার সাথে এমন করলে কেন খোদা?
বাসায় ঢুকার পরেই ডাইনিং রুমে শ্রাবণ আর
আপুর কথোপকথন শুনতে পেলাম। অবশ্য
তাদের দিকে আমি তাকাইনি। আপু
আমাকে দেখেই বলল
—সানা তোমার চোখমুখ এরকম লাগছে কেন?
আর ইউ ওকে সানা?
—জ্বী আপু আমি ঠিক আছি। আসলে ক্লান্ত
লাগছে আর কি তাই এরকম দেখাচ্ছে। একটা
শাওয়ার নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি রুমে
যাই আপু।(না তাকিয়েই বললাম)
—আরে বসে একটু কথা তো বলে যাও।
—একটু পর আসছি আপু শাওয়ার নিয়ে।
একবার আড়চোখে শ্রাবণের দিকে তাকালাম।
দেখি সে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ
ফিরিয়ে নিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
আসার সময় শুনতে পেলাম আপু শ্রাবণকে
বলছে “কিরে ভাইয়া তুই আবার কই যাস?
বস না আরেকটু কথা বলি!”
পিছনে আর না তাকিয়ে রুমে চলে আসলাম।
লম্বা একটা শাওয়ার নেওয়ার পর নিজেকে
একটু হালকা লাগছে। টাওয়ালে চুল পেঁচিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাঠের ঘরটার
দিকে তাকিয়ে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। আমি
জানি শ্রাবণ এর ভেতরেই আছে। কিন্তু আমার মুখ দেখতে চায় না বলেই দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আকাশপানে তাকালাম। আজকের পর থেকে এ জায়গাটায় দাঁড়িয়ে
আর আকাশ দেখা হবেনা। ভোরে পাখির
কিচিরমিচির ডাক শুনে ঘুম ভাঙা হবেনা আর
আমার। একটা জিনিস আমার মাথায়
আসছেনা। শ্রাবণ যেহেতু আমায় ঘৃণাই করে
তাহলে অন্যকারো সাথে দেখলে সে সহ্য করতে
পারেনা কেন? রেহানের সাথে আমাকে যতবারই দেখেছে ততবারই কেমন করে যেন তাকিয়ে ছিল।
ঐ চোখের ভাষা তো অন্য কথা বলছিল তখন।
তবে আজ তার কি হল? কেন এভাবে আমাকে
অপমান করল? মাঝে মাঝে তাকে বড্ড অচেনা
লাগে আমার কাছে। নাহ তার কথা আর ভাববো
না। আমাকে সে অবিশ্বাস করে, আমাকে
চরিত্রহীনা বলেছে। তবুও কেন তার কথা
ভাববো? আর কখনোই ভাববো না। কিন্তু
বেহায়া মনটা মানতে চায় না।
দূর অজানায় তাকিয়ে আনমনে এসব ভাবছিলাম। চোখটা মনে হয় আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আবারো
ঐ ঘরের দিকে চোখ গেল। তাকিয়েই আমি
থমকে গেলাম। শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে সেই প্রথমদিনের মত। পলক ফেলছে না
সে। তাই আমিই দৌড়ে চলে আসলাম রুমে।
আমাকে দেখতে যেহেতু তার এত ঘৃণাই লাগে
তাহলে এভাবে তাকিয়ে ছিল কেন?
নিচে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরুলাম।
সিঁড়িতে থাকাবস্থায়ই কলিং বেল বেজে উঠল।
আঙ্কেল চা খাচ্ছিল, আন্টি রান্নাঘরে ছিল আর
আপু সোফায় বসা ছিল। আমি যাওয়ার আগেই
আপু গিয়ে গেট খুলে দিল। গেট খুলে আপু
গেটের মুখেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নেমে
এসে দেখি ভাইয়া এসেছে। ভাইয়াকে দেখেই
মনটা ভাল হয়ে গেল। একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে
ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর
ভাইয়াকে ছেড়ে দেখি আপু এক জায়গায়ই
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপুর দিকে তাকিয়ে
দেখি আপুর চোখ পানিতে টলমল করছে।
ধাক্কা দিয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম
—আপু কি হয়েছে তোমার? এভাবে স্ট্যাচু হয়ে
দাঁড়িয়ে আছো কেন?
—না না কিছু হয়নি।
—ভাইয়া ভিতরে এসো।
ভাইয়াকে একপ্রকার টেনেই সোফায় এনে বসালাম।
—ভাইয়া কেমন আছো? আব্বু আম্মু কেমন আছে?
—তোকে ছাড়া কিভাবে ভাল থাকি বল?
ওনারা ভালোই আছে।
আপু দেখি ঐ এক জায়গাতেই স্থির হয়ে
দাঁড়িয়ে আছে। আপুর হলোটা কি?
—আরে আপু এদিকে আসো না! আসো
ভাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
—হ..হ্যা হ্যা আ..আস…আসছি।
—কি হয়েছে তোমার আপু? এত নার্ভাস
লাগছে কেন?
—কিছু হয়নি আমার সানা। তোমরা বসে কথা
বলো আমি আম্মুকে গিয়ে বলি চা নাস্তা দিতে।
—এত ব্যস্ত হইয়ো না আপু।
—আচ্ছা আমি আসছি।
যাহ বাবা চলে গেল! আপুর কি হলো হঠাৎ?
এরকম বিহেইভ করছে কেন?
আঙ্কেল, আন্টি, আপু, আমি আর ভাইয়া খেতে
বসেছি। শ্রাবণকে অনেকক্ষণ হল দেখিনা। দেখব
কি করে? সে তো আমার মুখই দর্শন করতে
চায় না। তাইতো বাসায় আসছেনা। আজকে
তো চলেই যাচ্ছি। এরপর থেকে আর পালিয়ে
বেড়াতে হবেনা।
—তোমাদের দুই ভাই-বোনের জন্য ফাল্গুনী মা
নিজের হাতে চিংড়ির মালাইকারি করেছে।(আন্টি)
—আন্টি চিংড়িতে আমার অ্যালার্জি আছে আর
ভাইয়া আগে খেতো চিংড়ির মালাইকারি কিন্তু
বেশ কয়েক বছর যাবৎ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।
—ফেভারিট খাবারের আইটেম খাওয়া ছেড়ে
দেয় নাকি কেউ?(আপু)
—কেউ না দিলেও ভাইয়া ছেড়ে দিয়েছে। কিছু
জিনিস ছেড়ে দেওয়াই ভাল। এতে করে কষ্ট
থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যায়।
—আফু বাদ দে না।(ভাইয়া)
—ওকে। আঙ্কেল-আন্টি আপনাদের একটা
কথা জানানো হয়নি। ভাইয়া আজকে আমাকে
নিতে এসেছে।
—সেকি আজকেই চলে যাবে? কই আগে বলো
নি তো?(আঙ্কেল)
—আসলে আঙ্কেল হয়েছে কি আব্বু আম্মুকে
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আর তাছাড়া
ভার্সিটিতে এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। কয়েকদিন
পর থেকে শুরু হবে। এর মাঝেই আমি গ্রামের
বাড়ি যেতে চাই। ক্লাস শুরু হলে তো আর
যেতে পারব না।
—ঠিক আছে তুমি যা ভাল মনে করো
ডিয়ার।(আন্টি)
—খুব তাড়াতাড়িই কিন্তু চলে আসবে সানা।
তোমাকে খুব মিস করব।
—আপু তা তো এখন বলতে পারছি না।
ভাইয়ার কোম্পানি ভাইয়াকে ধানমন্ডিতে একটা
ফ্ল্যাট বাসা দেওয়ার কথা। দিলে আমি
সেখানেই থাকব।
—এখানে থাকলে সমস্যা কোথায়? এখান থেকে
তো তোমার ভার্সিটি অনেক কাছে। ধানমন্ডি
থেকে তো দূরে হয়ে যায়।
—সমস্যা নেই আপু। ভাইয়ার ইচ্ছা আমি
ভাইয়ার সাথেই থাকি। আর তাছাড়া
আমিও তা-ই চাই।
—তোমার যা ইচ্ছা। তবে সেখানে যাওয়ার
আগ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবে এটা
আমার রিকুয়েস্ট।
—এভাবে বলছো কেন আপু? ঠিক আছে
তোমার কথাটা রাখবো।
বিকালে রেডি আঙ্কেল-আন্টি আর আপুর কাছ
থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। শ্রাবণকে একটাবার চোখের দেখাও দেখতে
পারলাম না। এতই ঘৃণা করেন আপনি আমাকে
শ্রাবণ যে বিদায়বেলায় একটা নজর দেখার
সুযোগও দিলেন না শেষবারের মত?
ভাইয়ার গাড়ি গেট দিয়ে বেরুবার সময়
দেখলাম আরেকটা সাদা কালারের গাড়ি
গেটের ভিতর ঢুকছে। এটা তো শ্রাবণের গাড়ি। এতক্ষণে আসলেন আপনি? আরেকটু আগে
এলে কি এমন ক্ষতি হতো! বিদায় আপনাকে।
বাসায় এসে আব্বু আম্মুকে দেখে অনেক ভাল
লাগছে। কত্তদিন পর তাদের দেখলাম! আমি
আসার পরই তোরজোড় করে আমার পছন্দের
খাবার রান্না করায় ব্যস্ত হয়ে গেল। আম্মু
জানতো না আমি যে আজ আসব।
রাতের খাওয়া শেষ করে আব্বু আম্মুর সাথে
কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে আমার রুমে আসলাম।
ইশ কতদিন পর আজকে আমার নিজের রুমে
ঘুমাবো! শুয়েছি অনেকক্ষণ হল কিন্তু ঘুম
আসছে না। বারবার শ্রাবণের কথা মনে
পড়ছে। মনটা এত বেহায়া কেন? যে আমাকে
এত্ত অপমান করেছে তারপরও কেন বারবার
তার কথা মনে পড়ছে?
“মন তুই এত বেহায়া কেন? সে তো তোর কথা
ভাবেনা কিন্তু তুই বারবার কেন তার কথা মনে
করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস? আমি যে সইতে
পারছি না। তার বিরহে থাকতে পারছি না আমি।
মন তুই আমার কথা কেন শুনিস না? কেন তুই
তাকে মনপ্রাণ উজার করে ভালবাসতে গেলি?
সে তো তোকে ঘৃণা করে, বড্ড ঘৃণা করে। তোর
মুখও সে দেখতে চায় না।”
চলবে……..