স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৪

0
1160

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৪
আফসানা মিমি

গাড়িতে করে যাওয়ার মুহূর্তটায় কেমন একটা অস্বস্তিতে কাটা হয়ে রইলাম। মানুষটা একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। কেমন যেন নার্ভাস লাগছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পা কাঁপছে। এমন কেন লাগছে মরা! মানুষটা হঠাৎ করে কথা বলায় একটু কেঁপে ওঠলাম কেন জানি।
—তোমার কোচিং শেষ হয় কয়টায়?
—১ টায়।
—ক্লাস শেষে গেটের কাছে থেকো।
—কেন?
—কেন আবার? বাসায় নিয়ে আসার জন্য।
—আমার জন্য এতো কষ্ট করতে হবেনা অযথা।
আমার ফ্রেন্ডের সাথে আমি চলে আসতে পারবো।
—সবসময় এক লাইন বেশি বুঝো কেন?
—আজব! কই বেশি বুঝলাম?
—আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। কথার যেন নড়চড়
না হয়। কোচিং শেষে গেটের সামনে থাকবে, ব্যস।
—আচ্ছা।

ইশ! যেভাবে অধিকার ফলাচ্ছে মনে হচ্ছে উনার বিয়ে করা বউ আমি! আচ্ছা উনার মাথার তার কি ছিড়ে গেছে নাকি? এত জোড় দিয়ে কথা বলছেন কেন? এই ছেলের মাথায় যে কি ঘুরছে আল্লাহ্ই জানেন! আঙ্কেল
আন্টির সামনে তো একেবারে ইনোসেন্ট হয়ে
থাকে। আজ তারা নেই তাই আমার ওপর জোড়
খাটাচ্ছেন। বাবা মায়ের সামনে যেন নাদান বাচ্চাটা!

কোচিং সেন্টারে এসে গাড়ি থামানোর পর বলতে
গেলে খুব তাড়াহুড়ো করেই গাড়ি থেকে নেমে
গেলাম। উনাকে কোন কথার সুযোগ না দিয়ে
একপ্রকার দৌড়েই গেটের ভিতর চলে গেলাম।
শুনলাম উনি চিৎকার করে বলছে “এই মেয়ে শুনো
আমি কিন্তু অপেক্ষা করবো, মনে থাকে যেন!”

আজ একটা ক্লাস করেনি। যার জন্য ৪০ মিনিট
বসে থাকা লাগবে। মিঃ কাঠখোট্টা তো আসতে
দেরি আছে। এতক্ষণ কি করব আমি? ধ্যাৎ!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


—কিরে বসে আছিস যে! বাসায় যাবি না?
—ও রেহান তুই! আর বলিস না আমাকে এখানে
আরো ৪০ মিনিট বসে থাকতে হবে?
—শুধু শুধু বসে থাকবি কেন?
—আরে আমি যে আঙ্কেলের বাসায় থাকি উনার
ছেলে আজকে নিতে আসবে। কিন্তু আজ তো
তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ করে দিয়েছে তাই উনি না
আসা পর্যন্ত বসে থাকতে হবে।
—এই শোন না! একটা হেল্প করতে পারবি?
—কি হেল্প?
—তোর বান্ধবীটাকে না আমার মনে ধরেছে!
—বাহ্বা তাই নাকি?
—হ্যা, এই মেয়েটার নাম কি রে?
—তার নামই জানিস না অথচ এসেছিস লাইন মারতে?
—আরে বল না বোনটি আমার!
—ওর নাম স্বর্ণা।
—স্বর্ণা! আহ কি সুন্দর নাম! আচ্ছা আমার
যতদূর মনে পড়ে স্বর্ণা নামে আমাদের ক্লাসেও
একটা মেয়ে ছিল।
—হ্যা তার আগে আমার একটা কথা শোন। তোর
মনে আছে ক্লাস সেভেনের একটা ঘটনার কথা?
—এক্স্যাক্টলি কোন ঘটনার কথা বলছিস বলতো?
—ঐ যে তোর প্রথম প্রেমের কথা। সেই মেয়েটা
তোর সাথে এমন করার পরও তোর প্রেম
করার সাধ ঘুচেনি?
—এই ঘটনাটা আর মনে করাস না প্লিজ। কি
বিচ্ছুই না ছিল মেয়েটি!
—ঘটনাটা এখনো মনে হলে আমার হাসতে
হাসতে জান যায় যায় অবস্থা হয়ে যায়।
—চুপ কর না!
—আরে শোন না তোকে আবারও মনে করিয়ে
দিই। তুই যখন তাকে একটা লাল গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করেছিলি তখন তার মুখটা খুব হাসিখুশি
ছিল। কিন্তু কে জানতো সেই হাসিখুশি মুখোশের
আড়ালে যে এমন সাহসী একটা রূপ ছিল!
—উফফ চুপ করবি?
—বলতে দে না আমাকে! তারপরের দিন কি
করলো! একটা র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো গিফ্ট
বক্স নিয়ে হাজির। তুই তো খুশিতে আত্মহারা।
তাই দেরি না করে ক্লাসে এসে বেঞ্চে আরাম করে
বসে খুব সন্তর্পণে বক্সটা খুলছিস। যখন বক্সের
ঢাকনা খুলে লাফানো শুরু করেছিস আমি তো
মনে করেছি খুশিতে এমন করছিস। কাছে গিয়ে
যখন দেখি সে তোকে বক্স ভর্তি তেলাপোকা গিফ্ট
করেছে আর তা দেখেই তুই লাফিয়ে এখান থেকে সেখানে দৌড়োচ্ছিস তা দেখে আমার হাসতে
হাসতে পেট ব্যথা হয়ে গেছিলো। পরে তো আমরা
মাঠে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ে হাসতে লাগলাম।
আচ্ছা একটা কথা বলতো সে কিভাবে জানতো
যে তুই তেলাপোকা ভয় পাস?
—আরে সেটা তো আমিও জানিনা।
—সেই মেয়েটা এখন কোথায় তুই জানিস তার
ব্যাপারে কিছু?
—আজব তো! আমি কি করে জানবো? কি বিচ্ছুই না ছিল পাঁজি মেয়েটা!
—যাকে পছন্দ করেছিস এই সেই স্বর্ণা। যাই রে
গিয়ে দেখি মিঃ কাঠখোট্টা এসেছে কিনা!
—ও আচ্ছা! এই এই এক মিনিট। এই সেই স্বর্ণা মানে?
—মানে তোর কচিকালের প্রথম প্রেম স্বর্ণাই হচ্ছে আমার বান্ধবী। যাকে তুই পছন্দ করেছিস।

এতক্ষণে রেহানের মুখটা হয়েছে দেখার মতো।
নাহ উনার আসার সময় হয়ে গিয়েছে। যাই গিয়ে
দেখি এসেছে কিনা। গেটের কাছে এসে দাঁড়াতেই
দেখি উনি ভ্রু কোঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এই ছেলের সমস্যাটা কি? সবসময়ই এভাবে ভ্রু কোঁচকা তাকিয়ে থাকে কেন? আর তাছাড়া আসলোই বা কখন মিঃ খরগোশ? কাছে গিয়ে বললাম
—কখন এসেছেন?
—গাড়িতে ওঠো।
—বললেন না যে কখন আসলেন!(সিট বেল্ট
বাঁধতে বাঁধতে)
—ঐতো যখন থেকে তুমি গা দুলিয়ে খি খি করছিলে।(চোখমুখ শক্ত করে)
—আমি মোটেও গা দুলিয়ে হাসছিলাম না।
—হ্যা আমি তো কানা। নিজের চোখে না দেখেই বলেছি।
—আসলেই মনে হচ্ছে কানা।(বিড়বিড় করে)
—কি বললে?
—না না কিছু না। আমি শুধু বলেছি যে মানুষ যদি চোখ
কপালে নিয়ে ঘুরে তাহলে তো যে কেউই চোখে
উল্টাপাল্টা দেখবে।
—জাস্ট শাট আপ, ওকে? তা কি নিয়ে এত হাসাহাসি করছিলে শুনি? হাসতে হাসতে তো একদম
ছেলেটার গায়ের ওপর গিয়ে ঢলে পড়ছিলে।
—আমি সিউর আপনার চোখে কোন
গণ্ডগোল হয়েছে।
—চুপ একদম। যা বলেছি তার উত্তর দাও।
—আপনাকে কেন বলবো? আর তাছাড়া মানুষের কত ব্যক্তিগত কথাই তো থাকতে পারে। তা জেনে আপনি কি করবেন?(কণ্ঠে কিছুটা বিরক্তি ঢেলে বললাম)
—ওহ আই সী। ব্যক্তিগত!(বিড়বিড় করে)

তারপর আর একটা কথাও বলেনি বাসায় আসার আগ পর্যন্ত। চোখ মুখ শক্ত করে বসে সামনে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছিল। বুঝতে পারছি না সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে এত রিয়েক্ট করছে কেন এই দামড়া ছেলেটা? আমি কারো মুখাপেক্ষী নই হুহ্!

বাসার সামনে এসে গাড়ি থামানোর দুই মিনিটের
মধ্যেই আঙ্কেলদের গাড়ি এসে থামলো। আঙ্কেল গাড়ি থেকে নেমে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন
—কি ব্যাপার মামনি তুমি বাইরে কেন?
—আঙ্কেল এই মাত্র কোচিং থেকে আসলাম।
—শ্রাবণ তোমাকে আনতে গিয়েছিল নাকি?
—জ্বী আঙ্কেল। আপনিই নাকি উনাকে…….

আমার কথার মাঝে শ্রাবণ বাধা দিয়ে বলল
—আব্বু আসলে মিমি বলছিল আজকে যেন
তাকে কোচিং শেষে নিয়ে আসি।

এটা শুনে বিস্ময়ে আমার মুখ হা হয়ে গেল।
কত বড় একটা মিথ্যা কথা বললেন উনি! এখন
আঙ্কেল আন্টি আমাকে কি মনে করবে? মনে
চাচ্ছে গলা টিপে ধরি উনার। আস্ত মিথ্যুক একটা!

—আফসানা আসো পরিচয় করিয়ে দিই, এ হচ্ছে আমার মেয়ে ফাল্গুনী। আর মা ফাল্গুনী এ হচ্ছে
তোমার রেজওয়ান আঙ্কেলের মেয়ে আফসানা। তোমার রেজওয়ান আঙ্কেলের কথা মনে আছে তো?
—হ্যা আব্বু, ঐ যে নরসিংদী যে আঙ্কেলের বাড়ি!
—হ্যা।
—উনার একটা কিউট মেয়ে ছিল সেই কিউটিটা
কি এই আফসানা?
—হ্যা মনে আছে তাহলে তোমার!
—মনে থাকবে না কেন আব্বু? এটা তো বেশি
দিনের কথা না। এই তো আজ থেকে ১২ বছর আগের কথা। আর এই যে আপুনি তুমি তো ছোটবেলায় অনেক স্বাস্থবতী ছিলে। এখন এত শুকিয়েছো কেন?
—বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরের বিভিন্ন
ধরনের চেঞ্জ আসে। আমারো তাই হয়েছে। আর ছোটবেলায় যারা মোটা থাকে, আস্তে আস্তে বড় হলে তারা শুকিয়ে যায়।
—ফাল্গুনী যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
একসাথে বসে লাঞ্চ করবো আজ। আর আফসানা
তো চলে যাচ্ছে না। তার সাথে তুমি পরেও
আড্ডা দিতে পারবে।(আঙ্কেল)
—আচ্ছা যাচ্ছি।

ফাল্গুনী আপু আমার চেয়ে ৪ বছরের বড়। আধো আধো মনে পড়ে আমার বয়স যখন ছয় কি সাত তখন উনি উনার পরিবারের সাথে আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন। আর শ্রাবণের বয়স তখন মেবি ১৩ বছর ছিল। কারন এখন তার বয়স ২৫-২৬ তো হবেই।

খেতে বসে আপু আমাকে জিজ্ঞেস করলো
—তোমাকে সানা বলেই ডাকি ঠিক আছে?
আফসানা নামটা বড় বড় লাগে আমার কাছে।
তোমার কোন সমস্যা নেই তো?
—না না আপু। কোন সমস্যা নেই।
—আচ্ছা তুমি তো ছোটবেলায় অনেক ঝাল
খেতে পারতে এখনো কি সেরকমই খাও?
—আপু আপনার এটাও মনে আছে?
—মনে না থাকার তো কোন কারন নেই। যতদিন তোমাদের বাসায় ছিলাম সারাক্ষণ তো তোমার
সাথেই থাকতাম। কখন কি করতে সবই জানি আমি।
—জ্বী আপু আমি এখন আগের চেয়েও আরো
বেশি ঝাল খাই। আসলে ঝালযুক্ত খাবার আমার সবচেয়ে ফেভারিট।
—এজন্যই তো মুখে কোন রসকষ নেই। একদম রসকষহীন মানুষ হয়ে থাকে আমাদের সামনে।
মানুষের সাথে ঠিকই হেসে হেসে কথা বলতে পারে।

বিড়বিড় করে শ্রাবণ এই কথাটা বললেও আমি
স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। কারন আমি একদম উনার
সামনের চেয়ারে বসা। আপু প্রশ্ন করল
—কিছু বললে ভাইয়া?
—হ্যা বলছিলাম যে এত ঝাল খায় বলেই তো
মুখ দিয়ে মিষ্টি কথা বেড়োয় না।
—তা তুই কিভাবে জানিস যে সানার মুখ দিয়ে
মিষ্টি কথা বেড়োয় না? আমার জানামতে সানা অল্পভাষী। কারো সাথেই তেমন কথা বলে না।
তা তোমার সাথে কি ওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো নাকি?
—কি যে বলিস না! ওর সাথে কথা বলতে যায় কে?

এটা শুনে আমার মাথায় রক্ত ওঠে গেল। অপমানে মুখটা থম থম করে ওঠলো। কত বড় কথাটা বলল আমাকে! নিজেই ছ্যাঁচড়ামির পরিচয় দিয়েছে আজকে আর এখন বলছে আমার সাথে কথা বলতে কে আসে? ঠিক আছে এখন থেকে দেখব কে কথা বলতে আসে। মুখের ওপর পাল্টা উত্তর দিয়ে দিব হুহ্। আমাকে
ছোট করে কথা বলা! দেখাবো মজা হুহ্!

—আহা খেতে বসে এতো কথা বলছো কেন তোমরা? খাওয়া শেষ করো তাড়াতাড়ি কথা না বলে।(আঙ্কেল)

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ব্যালকনিতে এসে বসলাম। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ঐ শ্রাবোইন্নার এতো বড় সাহস আমাকে এসব বলা! পাই পাই করে উত্তর দিব। নয়তো আমার নাম আফসানা মিমি নয়।

“আজ আকাশে বড় এক ফালি চাঁদ ওঠেছে। নিশ্চয়ই আজ পূর্ণিমা লেগেছে। নয়তো এত আলো হওয়ার কথা না। চারপাশ চাঁদের আলোয় মাখামাখি অবস্থা। আজকের চাঁদের আলো দেখে আকাশের কথা মনে পড়ছে। সেই চাঁদনী রাতেই তো চারটি তৃষ্ণাতুর আঁখি এক হয়েছিল। যে আঁখির চাহনিতে মাদকতা ছিল। নেশা হয়ে গিয়েছিল।

আমার জীবনে কোনকিছুর অভাব নেই। কিন্তু
একটা জিনিসের বড্ড অভাব। আর তা হচ্ছে
একটা ভালবাসার মানুষ। কেউ একজন থাকলে
তার কাঁধে মাথা রেখে অথবা তার কোলে মাথা
রেখে জ্যোৎস্না বিলাশ করতে পারতাম। কেউ কি
আসবে না আমার ভালবাসায় ধরা দিতে? এই
শূণ্য জীবনটা পূরণ করতে?
বাতাস কানে কানে বলে যায় ‘আসবে,
খুব শীঘ্রই আসবে।’ কিন্তু কবে আসবে?”

আমার মনের কথাগুলো ব্যক্ত করার একমাত্র সঙ্গী হচ্ছে আমার এই ডায়েরিটা। আমার কথা শুধু শুনেই যায়। কখনো কোন অভিযোগ করে না।

রাত আনুমানিক ১১ টা হবে। কিন্তু দু’চোখের পাতায় একটুও ঘুম নেই। বড্ড একা লাগছে নিজেকে আজ।

“যায় দিন যায় একাকী
তাঁরে বিহনে কেমনে বলো থাকি…
যায় দিন যায় একাকী
তাঁরে বিহনে কেমনে বলো থাকি…
ভালোবাসা এই অন্তরে অভিমানে কেঁদে মরে
ওহ এই বুকেতে দুঃখ বেঁধে রাখি…
যায় দিন যায় দিন যায় একাকী…

আজ বিরহের আ……

“এই যে মিস মিমি, পেত্নী ধরেছে নাকি তোমাকে?
এই রাত বিরাতে গান গাচ্ছো যে!”

গান গাওয়ার মাঝেই আমাকে কে যেন থামিয়ে
দিয়ে উপরোক্ত কথাটি বলল। এটা তো শ্রাবণের
গলা মনে হচ্ছে। কিন্তু উনি এখানে আসবেন কেন?
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি কাঠের ঘরের বারান্দায়
শ্রাবণই দাঁড়িয়ে আছে। ঘরটা ব্যালকনি থেকে ফুট
বিশেক দূরে। তাকে দেখেই দুপুরের কথাটা মনে
পড়ে গেল। আমাকে অবজ্ঞা করে এতো বড়
কথাটি বলে এখন আসছে বেহায়ার মত আগ
বাড়িয়ে কথা বলতে। হুহ্ কথা বলব না আর
উনার সাথে। বসা থেকে ওঠে রুমে চলে
আসছিলাম। আবারো বলল
—কি ব্যাপার মিমি চকলেট কথার উত্তর না
দিয়ে চলে যাচ্ছো যে!
—আপনার কথার উত্তর দিতে আমার বয়েই গেছে।
—কে সে মানুষটা যার কথা মনে করে গান গাচ্ছো?
—কত মানুষই তো আছে তা কি আপনাকে
বলতে হবে নাকি?
—হুম বলতেই হবে।
—স্যরি। বলার প্রয়োজন মনে করছি না। আপনি আমার কে যে আপনাকে বলবো?
—তা তোমার বয়ফ্রেন্ড কি জানে তোমার কণ্ঠ
যে এরকম ষাঁড়ের মতো?
—ঐ মিঃ কাঠখোট্টা, খরগোশ এত বাজে বকেন
কেন আপনি?
—সত্যি কথাই তো বলছি। তা এখনো কি তোমার বয়ফ্রেন্ড মহাশয় টিকে আছে তোমার কাছে? নাকি এই কাকের মতো বেসুরা গলা শুনে পালিয়েছে?
—আমার মতো মেয়ে সে আর পাবে নাকি খোঁজে? আর আপনার মতো কাঠখোট্টা কি আর বুঝবে আমার
মতো মেয়ের কদর? যাক গে এতসব বলে লাভ
নেই। আপনি আপনার রাস্তা মাপেন আর
আমার রাস্তা আমাকেই নাহয় মাপতে দেন!

রুমে চলে আসছিলাম। আবারো আমাকে
ক্ষেপাতে বলে ওঠলো
—নেক্সট টাইম রাত বিরাতে এমন কাকের মতো বেসুরা গলায় কা কা করে গান গেও না। তোমার গান শুনে পশুপাখিরা সুইসাইড করবে। আর আমাদের মতো সাধারন মানুষেরা এমন কাকের কণ্ঠের গান শুনে গর্তের
মধ্যে গিয়ে লুকোবে। এমন কণ্ঠের গান শুনে
এতো তাড়াতাড়ি কান নষ্ট করতে চাই না।
—আপনাকে আমি গলা টিপে মারব। আপনাকে
আমি আপনাকে আমি…..ধুর!

এহেন কথা শুনে রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কেমন বজ্জাতের বজ্জাত! এতো বড় অপমান! এতো সাহস কই পায় উল্লুকটা আমার কণ্ঠকে বেসুরা বলার! যার গান শুনে সারা ক্লাসের ছেলেমেয়েরা তার ভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি স্যাররা পর্যন্ত প্রশংসা করতো। তার
কণ্ঠকে কিনা ঐ উল্লুকটা বেসুরা বলেছে! বলে
কিনা পশুপাখিরা সুইসাইড করবে! এতো বড়
অপমান সহ্য করার মতো নয়। তার হিসেব
কড়ায়গণ্ডায় উসুল করে দিব। বদ একটা!

সকালে নাস্তার টেবিলে শ্রাবণের সাথে দেখা।
তাকে শ্রাবণ ডাকতেই ভালো লাগে। সাথে ভাইয়া
যুক্ত করলে মন বাধা দেয়। আর তাছাড়া এই
বদটাকে ভাইয়া ডাকবে কে? খাটাশ কোথাকার হুহ্!

সবসময় খাবার বেলায় আমার সামনাসামনি
বসবে। আর সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে
তাকিয়ে মুখে খাবার দিবে। যেন এটা তার অভ্যাস।
হঠাৎ করে পায়ে সুড়সুড়ি অনুভব করলাম।

আমার জানামতে এ বাসায় একটাই বদ আছে।
যে কিনা এরকম ফাজলামো করতে উস্তাদ।
শ্রাবনের মুখের দিকে তাকালাম। মুখটা দেখে মনে
হচ্ছে দিনদুনিয়ার কোন খবরই নেই উনার। একেবারে কচি খোকা সেজে খুব মনযোগ খাচ্ছে। যেন তার মতো ইনোসেন্ট কেউ নেই এই জগতে! টেবিলের নিচে হালকা
উঁকি দিয়ে দেখি আমার ধারনাই সত্যি। ঐ বজ্জাত
শ্রাবোইন্নাই পায়ে গুঁতো দিচ্ছে। আবারো তার
দিকে তাকালাম দেখি মুচকি মুচকি হাসছে।
দাঁড়াও বাছাধন তোমার হাসি বের করছি আমি!
একে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। আমার পায়ে কাচের হিল ছিল। এমন জোরে এক গুঁতা দিলাম
দেখি খাওয়া ছেড়ে পায়ে হাত দিয়ে বললো
—ওহ্ গড! আমার পা!

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে