স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৫
আফসানা মিমি
আজ একমাস হতে চললো আন্টিদের বাসা থেকে ভাইয়ার বাসায় এসেছি। আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি আমার মতো করে। আঙ্কেল, আন্টি, আপুর সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। আমাকে নাকি খুব মিস করেন উনারা। আমিও যে অনেক মিস করি তাদের। আপু ইনিয়ে বিনিয়ে শ্রাবণের কথা বলতে চায়, কিন্তু আমি অতটা পাত্তা দেই না। কেন জানি একটা ভোঁতা যন্ত্রণা হয় বুকের ভিতর। আস্তে আস্তে তা পুরো শরীরে বংশ বিস্তার করে। শেষে কান্না হয়ে তা কাঁটার মতো গলায় এসে মাঝেমধ্যে আঁটকে থাকে। না গিলতে পারি, না উগরাতে পারি।
আজকে আম্মু আসবে। ভাইয়াকে নাকি চেপে ধরবে বিয়ে করার জন্য। ধরে বেঁধে কাউকে বিয়ে করানো যায়? কেন যেন আমার সাহসে কুলায়নি ফাল্গুনী আপুর ব্যাপারটা নিয়ে ভাইয়ার সাথে বসে কথা বলা। কিন্তু আমি জানি ভাইয়া জীবনেও নিজের ইচ্ছায় আপুকে মেনে নিবে না। যদি না আপু দুই কদম সামনে এগোয় আর আমি আগ বাড়িয়ে ভাইয়ার সাথে ব্যাপারটা নিয়ে শেয়ার না করি! কারণ ভাইয়া দ্বিতীয়বারের মতো পেয়ে আবারও আপুকে হারিয়ে নিঃস্ব হতে চায় না। যা করার আমাকেই করতে হবে। এবং এতে আম্মুর সাহায্যও লাগবে।
আম্মু, আমি, ভাইয়া মুখোমুখি বসে আছি ড্রয়িংরুমের সোফায়। ভাইয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে একটু পর ফাঁসির কাঠগড়ায় ঝুলানো হবে তাকে। আম্মু, আমি দুজনেই ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু ভাইয়ার সেদিকে খেয়ালই নেই। শেষ পর্যন্ত আম্মুই প্রথম মুখ খুললো
—সুহৃদ এভাবে আর কতদিন?
এতোক্ষণে ভাইয়া মুখ তুলে তাকালো। একটু অবাক হয়ে বললো
—কিসের কথা বলছো তুমি মা? বুঝতে পারছি না আমি।
আম্মু আমার দিকে একবার তাকিয়ে পরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
—বুঝতে পারছিস না নাকি না বুঝার ভান করছিস?
—আম্মু প্লিজ একটু খুলে বলো তো তুমি এক্স্যাক্টলি কোন ব্যাপারটা বুঝাতে চাচ্ছো?
—কবে বুঝতে পারবি তুই? আমরা মরে ভূত হয়ে গেলে?
এবার ভাইয়ার চোখেমুখে বিরক্তির আভাস ফুটে ওঠেছে। কপাল কোঁচকে বললো
—উফফ্…আম্মু! কেন এতো হেয়ালি করছো? আর তোমাদের মরার কথা আসছে কেন এখানে হঠাৎ?
—আমাদের কি নাতী-নাতনীর মুখ দেখতে ইচ্ছা করে না? এভাবে চলতে থাকলে হবে?
ভাইয়া বোধহয় বুঝতে পারেনি আম্মু কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। হাল ছেড়ে দিয়ে বললো
—ইচ্ছা করলে এখানে আমার কি করার আছে? আমার কাছে কি এর কোন সলিউশন আছে? নাতী-নাতনী তো আর আমদানী করার জিনিস না যে কিনে এনে তোমাদের খায়েশ পূর্ণ করবো!
—বোকা ভাবতাম তোকে, এতটা বোকা তুই জানতাম না তো। এগুলো কি কেনার জিনিস যে কিনে এনে দিবি? তোর বোধবুদ্ধি কবে হবে বলতো? আরে বয়স কি কম হয়েছে? বিয়েশাদীর নামও দেখি তুই মুখে নিচ্ছিস না!
এবার বোধহয় ভাইয়ার টনক নড়লো। সোজা হয়ে বসে বিস্মিত হয়ে বললো
—কার বিয়ের কথা বলছো? আফসানাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবা? ওর তো লেখাপড়া শেষ হতেও অনেক দেরি! তোমরা কি বুঝে…..
ভাইয়ার কথা শুনে আমি বিষম খেলাম। কি বলছে এসব ভাইয়া! কই নিজের বিয়ের কথা ভাববে! তা না করে আমার চিন্তা করছে। আল্লাহ্! এত্তো বোকা ক্যান আমার ভাইটা? আম্মু বিরক্ত হয়ে বললো
—এখানে আফসানার বিয়ের কথা আসছে কোত্থেকে? আমি তো তোর বিয়ের কথা বলছি। আফসানার কি বিয়ের বয়স হয়েছে যে ওকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিব?
ভাইয়ার মাথায় যেন বাজ পড়লো। মুখ হা হয়ে বিস্ময়ে। কোনমতে বললো
—এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না আমি।
—কেন করবি না বল? বয়স কি কম হয়েছে?
—হঠাৎ বিয়ের ভূত মাথায় চাপলো কেন তোমার বুঝতে পারছি না? এভাবেই তো দিব্যি ভালো আছি। অযথা স্বেচ্ছায় ঝামেলা কাঁধে নেওয়ার কোন মানে হয়?
—তাই বলে বিয়ে করতে হবে না? আর তাছাড়া বিয়ের মতো পবিত্র একটা সম্পর্ককে তুই ঝামেলা বলছিস কেন?
—তা নয়তো কি? পরের মেয়েকে বিয়ে করে নরক যন্ত্রণা ভোগ করার কোন মানেই হয় না। মানুষ যে কেন বিয়ে করে! শুধু শুধু একটা উটকো ঝামেলাকে নিয়ে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে পারবো না। আর সংসারে আমি কোন অশান্তি চাই বুচ্ছো? তাই বিয়ে ফিয়ে আমার দ্বারা হবে না।
—দ্যাখ অযৌক্তিক কথাবার্তা আমাকে বলতে আসবি না। প্রত্যেকটা মানুষের জন্য বিয়ে ফরজ। আল্লাহ্ বলেছেন ছেলেমেয়ে উপযুক্ত হলে ঘরে বসিয়ে রেখো না। তাদের বিয়ে দিয়ে দাও। আল্লাহর বিধান অমান্য করবি তুই?
—কিন্তু মা তুমি দ্যাখো না এমন অগণিত সংসার আছে যা শাশুড়ী বউয়ের দ্বন্দ্ব, কলহের কারণে সুখের সংসারেও ফাটল ধরে। পরে দেখা যাবে তোমার পক্ষ নিলে বউ রাগ করবে, বউয়ের পক্ষ নিলে তুমি রাগ করবে। যা আমি মেনে নিতে পারবো না।
—কারো পক্ষ নিবি কেন তুই? ন্যায় অন্যায় না দেখে বিচার করবি না কারো। আর সবাই যে একইরকম সেরকমটা কিন্তু নয়। দুনিয়াতে যেমন ভালো আছে, তেমনি খারাপও আছে। দেখেশুনে কেউ খারাপকে বেছে নিবে না। কপালে যা লেখা আছে তা-ই হবে। এতো চিন্তা করিস না তো! এখন বল তোর কোন পছন্দের মেয়ে আছে নাকি আমরা মেয়ে দেখা শুরু করবো?
আম্মুর শেষের কথাটায় ভাইয়া থতমত খেয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
—এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন মা? আমি তো আর চলে যাচ্ছি না কোথাও দেশ ছেড়ে। গলায় শিকল পড়ানোর জন্য দেখছি পাগল হয়ে গেছো। আমার সময় হোক পরে বিয়ে করবো।
—তাড়াহুড়ো করলাম কই? এতোদিন তো দেখলাম কিন্তু তোর সময় তো হচ্ছে না। তুই যে কেমন বিয়ে করবি আমার জানা হয়ে গেছে ভালো করেই। কোন কাজেই গর্জ নেই তোর। বুঝবি বুঝবি, যেদিন মরে যাব সেদিন বুঝবি। তখন বলবি কেন মায়ের কথা শুনলাম না!
এবার ভাইয়া গলবে। কারণ আম্মু ভালো করেই জানে ভাইয়ার দূর্বলতাটা কোথায়! এবং আম্মু সময় সুযোগ বুঝে সেখানেই অ্যাটাক করে। তখন ভাইয়া আর না করতে পারে না। আম্মুর কথা মাথা পেতে মেনে নেয়।
—আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথা-ই রইলো তবে। তবুও এসব মরার কথা কখনো বলবে না আর। যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করবো। কানা, খোঁড়া, বোবা, বিকলাঙ্গ যাকে বলবে তাকেই চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নেব। টুঁ শব্দটিও করবো না, ঠিক আছে? এবার খুশি?
—এতোটাও খারাপ ভাবিস না আমাকে। কানা, খোঁড়া বিয়ে করাবো কেন? দেশে কি মেয়ের অভাব? মেয়েদের বাবা মায়ের লাইন লেগে যাবে তোর পিছনে। যদি খালি একবার মুখ খুলে বলি!
—থাক, লাইন লাগানোর দরকার নেই অত। কোনমতে একটা ধরে এনে দাও বিয়ে করে তোমার মনোবাসনা পূরণ করি। তবে এখানে আমার একটা শর্ত আছে।
—আবার কিসের শর্ত? ভ্রু কোঁচকে আম্মু বললো।
ভাইয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো
—মেয়ে যেমনই হোক সমস্যা নেই। তবে কোন বড়লোকের অহংকারী মেয়ে পছন্দ করতে যাবে না আমার জন্য। যার কাছে ভালবাসার চেয়ে নিজের স্ট্যাটাস, কেরিয়ারের দাম বেশি এমন মেয়ে আমার দু’চোখের বিষ। সাদাসিধে একটা মেয়ে হলেই চলবে। যার মধ্যে কোন গরিমা থাকবে না, আত্মাহংকার থাকবে না, রূপের দেমাগ দেখাবে না। যে কিনা সবাইকে ভালবেসে সকল বিপদআপদে ঢাল হয়ে সারাজীবন পাশে থাকতে পারবে এমন একটা মেয়ে খোঁজে বের করো। এছাড়া আর আমার চাওয়ার কিছু নেই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
বলেই সেইস্থান ত্যাগ করলো ভাইয়া। ফাল্গুনী আপু এখনো ভাইয়ার মনের কোথাও লুকিয়ে আছে। হয়তো ভালবাসায় নয়তো ঘৃণায়। যার যার মনের কথা সেই বলতে পারবে। তবে প্রথম ভালবাসা কি এতো সহজে ভুলা যায়? সকল অনুভূতিই যে সে চৌম্বকের ন্যায় কেড়ে নেয়। হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও যে বেহায়া মনটা তার কথা-ই ভাবে বারবার। যেমনটা আমি ভাবি শ্রাবণকে নিয়ে। আচ্ছা শ্রাবণও কি আমাকে নিয়ে ভাবে? আমার কথা তার মনে পড়ে? নাকি ভুলে গেছে যে আফসানা নামের কেউ একজন ছিল! হয়তো তার জীবনে ছিলাম না। কিন্তু চোখের সামনে তো ছিলাম বহুদিন। একটু্ও মায়া পড়েনি আমার ওপর?
ধুর আবারো বেহায়া মনটা তার কথা ভেবে চলেছে। চোখের কার্নিশে কয়েক বিন্দু পানিও জমা হলো তার কথা ভেবে। আমার মনটা যেমন বেহায়া, চোখটাও তেমন বেহায়া! পুরো আমিটাই বেহায়া। হায়ার ছিটেফোঁটাও নেই আমার মাঝে।
আম্মুকে ফাল্গুনী আপুর কথা বলেছি। আম্মু কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে পরে রাজি হয়েছে সরাসরি কথা বলতে। তাই আপুকে ফোন দিয়ে বলেছি আমার সাথে যেন দেখা করতে আসে একটু। আগেও একবার এই বাসায় এসেছিল আমি এখানে আসার কয়েকদিন পর। অবশ্য ভাইয়া সেদিন বাসায় ছিল না। আম্মুকে বলেছি কিছু ভালোমন্দ রান্না করতে। হবু বৌমা বলে কথা!
আপু এসেছে দুপুর বারোটায়। আম্মু তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত। আমি গিয়েছিলাম সাহায্য করতে। আম্মু ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়েছে আপুকে সঙ্গ দিতে। আম্মুকে দেখে আপু প্রথমে চমকে গিয়েছিল। পরে নিজেকে সামলে কুশল বিনিময় করে আমার আমার সাথে চলে এলো। আমি ইচ্ছে করেই ভাইয়ার রুমে এসে বসলাম আপুকে নিয়ে। আপু এদিক সেদিক নজর ঘুরিয়ে রুমটা দেখতে লাগলো। আমি এমন একটা ভাব ধরলাম যেন আপুর গতিবিধি আমি লক্ষ্য করছি না। নিজের মতো করে একটু দেখুক। যদিও চুরের মতো দেখছে। আজই শেষদিন। পরে নিজ অধিকারবোধ থেকেই দেখবে। ঠিক করেছি আজকে খুলাখুলি ভাইয়ার ব্যাপারটা নিয়ে আপুর সাথে আলোচনা করবো।
—খুব বেশিদিন নেই যেদিন এই রুমটা ভাইয়া শেয়ার করবে অন্যকারো সাথে।
আমার হঠাৎ কথায় আপু কিছুটা চমকে গেল। অবাক হয়ে বললো
—কি বললে? কার সাথে শেয়ার করবে?
—যার সাথে ভাইয়ার বিয়ে হবে।
—বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে? পাংশুবর্ণ মুখে বিস্ময় লুকিয়ে বললো
—না ঠিক হয়নি এখনো। আম্মু ভাইয়াকে চেপে ধরেছিল বিয়ের ব্যাপারে। অনেক ধানাইপানাই শেষে ভাইয়া রাজি হয়েছে বিয়ে করতে।
—ওহ্! আপুর মুখটা রক্তশূন্য দেখালো
—আর কত অভিনয় করবে আপু? ক্লান্ত লাগে না?
আমার কথাটা আপু হজম করতে পারেনি বোধহয়। তা আপুর চেহারায়ই ভেসে ওঠেছে স্পষ্ট। চোখদুটো যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে বিস্ময়ে। কিন্তু আমি নির্বিকার ভঙ্গিতেই বসে আছি আপুর দিকে তাকিয়ে। আপু তোতলাতে লাগলো
—কিক্…কিসের কথা বব্…বলছো তুমি সানা? কিসের অভিনয় কক্…করছি আমি?
—সত্যিই বুঝতে পারছো না আপু? নিজের মনের সাথে আর কত লুকোচুরি খেলবে?
—সানা হেয়ালি কোরো না প্লিজ! খুলে বলো।
—ভাইয়ার সাথে অন্যকোন মেয়েকে দেখে সহ্য করতে পারবে তুমি?
—কিক্..কিসব বলছো তুত্..তুমি সানা? তোত্..তোমার ভাইয়ার সাথে অ..অন্যকাউকে দেদ্..দেখলে আমার খা..খারাপ লাগবে কেন?
ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে আপুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
—সত্যিই লাগবে না? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো তো!
আপুর দৃষ্টি অস্থির।
—পাগল হয়ে গেছো তুমি সানা। বলেই উঠে দাঁড়ালো। আমি আবারো আপুর হাত টান দিয়ে আমার মুখোমুখি বসালাম।
—আপু সত্যিটা স্বীকার করতে না পারলেও অন্তত মিথ্যে বোলো না আমাকে।
—তুমি…তুমি…..
—হ্যাঁ আমি জানি তুমি ভাইয়াকে ভালবাসো।
এবার আপুর মুখটা হয়েছে এবার দেখার মতো। রক্তচোষা বাদুর যেন সব রক্ত শোষে নিয়েছে মুখ থেকে। ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে মুখখানি। কাজল কালো চোখদুটো টলটলায়মান দিঘীর ন্যায় নোনাপানির ঢেউ খেলা করছে। যার একটুখানি ছোঁয়ায় ভেসে যাবে গণ্ডদেশ। মাথা নিচু করে ফেললো আপু। যার কারণে অবাধ্য নোনাপানিগুলো চোখের কোল বেয়ে বাঁধনহারা হয়ে ছুটছে। একটু কাঁদুক, কাঁদলে মনটা হালকা হবে। আমি বুঝি ভালবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা কেমন!
আপুর হাতদুটো ধরে বললাম
—আপু….!
—সানা… তোমার ভাইয়া কি তোমাকে আমার কথা বলেছে?
—না।
—তাহলে কিভাবে জানলে তুমি?
—কিভাবে জানলাম, কবে জানলাম সেসব প্রশ্ন রাখো এখন। এখন বলো ভাইয়াকে কি তুমি আগের মতোই ভালবাসো নাকি….!
—বেশি! আগের চেয়ে বেশি ভালবাসি ওকে। আমি জানি আমি ভুল করেছি। ভবিষ্যৎ উজ্জল করার আশায় অন্ধ হয় ভালবাসাকে দুই পায়ে মারিয়ে চলে গেছি। জানি তার ক্ষমা হয় না। কিন্তু ওকে ছেড়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে ওকে ছেড়ে গিয়ে আমি কতটা ভুল করেছিলাম! দিনকে দিন চক্রবৃদ্ধি হারে তার প্রতি আমার ভালবাসা বেড়েই চলছিল। তখন কতটা কষ্ট হয়েছে আমার দিনগুলো পার করতে একমাত্র আল্লাহ্ জানতেন আর জানতো আমার বালিশ। এমন কোন রাত বাকি নেই যে রাতে কেঁদে আমি বালিশ ভেজাইনি। চোখ বন্ধ করলেই শুধু একটা অগোছালো ছেলের অবয়ব ভেসে ওঠতো চোখের তারায়। যে ছেলেটাকে প্রথমবার দেখেই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম ভালবাসলে একেই বাসবো, বিয়ে করলেও একেই করবো। বিয়ে না করতে চায়লে জোর করে করবো।(হালকা হেসে) কতটা ডেস্পারেট ছিলাম তার প্রতি! আর সেই আমিই কিনা ওকে নিঃস্ব করে চলে গিয়েছিলাম! একটাবারও ওর কথা ভাবিনি। কতটা স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম আমি ভাবলেই এখন কান্না পায়। আসল কথা হলো ওর ভালবাসা পাওয়ার কোন যোগ্যতা-ই আমার নেই। ডিজার্ভ করি না আমি ওর পবিত্র ভালবাসা।
কথাগুলো বলতে না বলতেই ঝরঝর করে কেঁদে দিল আপু। খুব খারাপ লাগছে আমার আপুর কান্না দেখে। দুইজন মানুষ দুইপ্রান্তে বসে থেকে কষ্ট পাচ্ছে। অথচ আগের সব ভুলে গিয়ে দুজনে ফের এক হলেই কোন কষ্ট থাকবে না তাদের জীবনে। আপুকে জিজ্ঞাসা করতে হবে ভাইয়াকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চায় কিনা! উত্তর যদি পজিটিভ হয় তাহলে একটা শেষ চেষ্টা করে দেখবো। তবে ভাইয়ার জন্যও ভয় লাগছে। আবার না রেগে যায় আপুর কথা বলাতে! রাগলে রাগুক। দুজনকে এক করতেই হবে। এট এনি কোস্ট।
চলবে…….