Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"স্বপ্ন হলেও সত্যিস্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১১

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১১

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১১
আফসানা মিমি

—-“আমি আসলেই একজন ব্যর্থ পুরুষ, ব্যর্থ প্রেমিক। যে কিনা নিজের ভালবাসাটা ভালবাসার মানুষটার কাছে জাহির করতে পারিনি। কি করবো আমি? ওকে ছাড়া আমার একেকটা মুহূর্ত দমবন্ধকর অনুভূতির ন্যায় কাটছে। কি করে ওকে বুঝাবো আমি যে কতটা ভালবেসে ফেলেছি ঐ নিষ্পাপ চেহারার অধিকারী মেয়েটাকে! ও তো বুঝেও যেন বুঝে না। আচ্ছা মেয়েরা নাকি বুঝতে পারে যে কোন ছেলে তার দিকে কি নজরে তাকিয়েছে! তাহলে ও কেন আমার ফিলিংসগুলো বুঝার চেষ্টা করছে না? আমি না হয় ব্যর্থ প্রেমিক বলে বলতে পারছি না কিছু। কিন্তু ও তো বলতে পারে তাই না? অবশ্য বলবেই বা কি করে! মেয়েদের তো আবার বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না! আমার ভালবাসাটা কি এভাবেই গুমরে গুমরে মরতে থাকবে আস্তে আস্তে? বলতে পারব না তাকে?”—

—“হে আল্লাহ্! আমাকে সহ্যশক্তি দাও! এ দহন যে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কাউকে ভালবাসলে কি এতটাই খারাপ লাগে? এতটাই কষ্ট হয়? এভাবেই বুকের ভিতরটা অঙ্গারের মতো জ্বলতে পুড়তে থাকে সারাক্ষণ? তাহলে আমি বলব এ ভালবাসা ভালো না। যে ভালবাসা মানুষকে স্বস্তি দেয় না।”—

—“এই মেয়ে! তুমি এতো পাষাণ কেন? তুমি কি একটুও বুঝতে পারোনি যে কেউ একজন বুভুক্ষের মতো তোমার দিকে তাকিয়েছিল এক পলক তোমার চোখে দৃষ্টি বিনিময় করার জন্য! বুঝতে পারোনি এতোদিনের তৃষ্ণার্ত আঁখিদুটো তোমাকে দেখে তৃষ্ণা মেটাচ্ছিল! নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করেছো মেয়ে? আমাকে কষ্ট দিয়ে কি সুখ পাচ্ছো তুমি? নাকি আমার প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছো তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য! তবে বলব আমাকে কষ্ট দিয়ে যদি তুমি এতই সুখ পাও, তাহলে কষ্ট দাও আরও কষ্ট দাও। মাথা পেতে নিতে রাজী আছি আমি। এটাই যে আমার পাওনা! তোমাকে সন্দেহ করে, তোমার গায়ে হাত তুলে যে ভুল আমি করেছি তার মাশুল বুঝি সারাজীবন দিয়ে যেতে হবে তাই না? এটারই যোগ্য আমি। তোমার ভালবাসা পাওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। আমার মতো কেউ ডিজার্ভ করে না তোমার পবিত্র ভালবাসা।”—

—“সবসময় তোমার মুখোমুখি বসে খেতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল আমার। তুমি চলে যাওয়ার পর খাওয়ার সময় অজান্তেই তোমার চেয়ারটায় চোখ চলে যেত। যেন মনে হতো আমার সামনেই বসে আছো তুমি। আজকের করা কাণ্ডটাই বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করেছি। আমাকে এতটাই ঘৃণা করো যে আমার মুখোমুখি বসে খেতেও তোমার রুচিতে বাধছিল! কল্পনাতেও ভাবিনি তোমার কাছে এতটা ঘৃণিত আমি।”—

—“আচ্ছা মিমি সত্যিই কি আমি তোমার কেউ না? জানো কথাটা শুনে বুকের ভিতর যেন আস্ত একটা পাহাড় ধসে পড়ার সমান ব্যথা পেয়েছি। তবে তোমার চোখেমুখে যে ভালবাসার আভাস পেয়েছিলাম সে সবটাই কি মিথ্যে ছিল?”—

—“এই মেয়েটা আমাকে পুরোপুরি পাগল বানিয়ে তবে ক্ষান্ত হবে। এতটা ভালবাসে তবুও একটাবারের জন্যও মুখ ফুটে বলল না! মেয়েটার মাঝে আসলেই যাদু আছে। মুহূর্তের মাঝেই আমাকে কাবু করে ফেলার ক্ষমতা তার আছে। আজকের ঘটনার পর থেকে যেন আমাকে চৌম্বকের ন্যায় টানছে তার কাছে বারবার যাওয়ার জন্য। ঐ তপ্ত ঠোঁটজোড়ার স্বাদ নেওয়ার জন্য ক্ষণে ক্ষণে মনটা আকুলিবিকুলি করছে। কন্ট্রোল শ্রাবণ! কন্ট্রোল! তোকে এমন কন্ট্রোললেস হওয়া মানায় না। উফফ! বারবার যেন চোখের তারায় রিপিট হয়ে ঐ ঘটনাটায় চলছে। ওর তপ্ত নিঃশ্বাস যেন আমাকে পুড়ে ছারখার করে দিচ্ছে এখন পর্যন্ত। ভুলতে পারছি না কিছুতেই।”—

—“আসলেই মেয়েদেরকে বিশ্বাস করতে নেই। ওদের একজনকে রেখে আরেকজনের কাছে যেতে মন একটুও বাধা দেয় না। একজনের সাথে ব্রেক-আপ করতে না করতেই আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ঘৃণা করি ঐসব মেয়েদের।”—

—“কাউকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসা চরম ভুল। সে ভুলের মাশুল গুনতে হয় সারাটিজীবন। যেমনটা এখন আমি গুনবো। ওকে মনপ্রাণ উজার করে ভালবেসে মনে হয় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছি আমি। ওর মতো মেয়েদেরকে শুধু ঘৃণাই করা যায়, ভালবাসা যায় না। ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না এরা।”—

—“হায় আল্লাহ্! এ আমি কি করলাম! আমার ভালবাসাটাকে আমি অবিশ্বাস করলাম! এই আমার ভালবাসার নমুনা! মিমি ঐ ছেলেটার বেস্টফ্রেন্ড! তাও আবার সেই ছোট্টবেলা থেকে। আর আমি কি না কি মনে করে কত বাজে বাজে কথা ওকে বলেছি(!) মাফ করবে তো ও আমাকে!(?) তবে আমারই দোষ কোথায়? যা আমার পছন্দ নয় তাই এই মেয়েটা সবসময় করে আসছে। ও কেন বুঝে না যে ওকে অন্যকারো সাথে দেখলে আমার কলিজা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়! কেন বুঝে না যে ওকে কারো সাথে আমি ভাগ করতে পারব না! ওকে নিয়ে আমি একটু বেশিই পজেসিভ।”—

—“সেদিনের ঐ ঘটনার পর থেকে মেয়েটা আমার সামনে আসেনি একবারের জন্যও, ভুল করেও না। ওকে না দেখতে পেয়ে আমার অস্থিরতা যেন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে দিন দিন। কি করব আমি!(?) কিভাবে ওর নাগাল পাব? হাতের ফাঁক গলে মেয়েটা বেরিয়ে যাচ্ছে। ধরার সুযোগই দিচ্ছে না আমাকে। এমন করে চলতে থাকলে মরে যাব আমি, স্রেফ মরে যাব। ওর বিরহে কোনদিন না জানি পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরা লাগে!”—

—“ওর মনটা একটু নরম করে দাও না আল্লাহ্! ওকে একটু বুঝিয়ে দাও যে ওর জন্য আমার নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে। অস্থিরতায় ভুগতে থাকি সকাল সন্ধ্যা সারাটাক্ষণ।”—

—“আর চারদিন মাত্র আছি নিজের দেশে, দেশের মাটিতে। দেশের মাটির গন্ধ পাব না তিনটা বছর। দেখতে পাব না আমার কোন আপনজনদের। মায়ের শরীরের গন্ধটা মিস করব খুব। বাবার সঙ্গটা মিস করব অনেক। মিস করব আদরের ছোট বোনটাকে। আর মিস করব আমার পাগলীটাকে, আমার ভালবাসাটাকে। বলা হয়নি ওকে কতটা ভালবাসি। হয়তো আর সুযোগও পাব না বলার। হয়তো চোখের দেখাটাও দেখতে পাব না শেষবারের মতো। আমার না বলা ভালবাসার কথাটা বোধহয় বলা হবে না। ঐ মায়াবী মুখটা দেখা হবে না তিন বছরেরও বেশি সময়। যাওয়ার আগে বোধহয় একবার ক্ষমাও চাইতে পারবো না। এই অপরাধবোধ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে তিনটা বছরের প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা ক্ষণ। ভালো থেকো ভালবাসাটা, ভালো রেখো নিজেকে। যাতে করে আমিও একটু ভালো থাকতে পারি। তোমার ভালবাসা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।”—

—“আজ এতদিন পর পাগলীটাকে দেখে মনে হয়েছিল যেন মরুভূমির প্রান্তরে একটু পানির খোঁজ পেয়েছি। হৃদয়টা আমার সাহারা মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করছিল এতদিন ওকে না দেখতে পেয়ে। যখন বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদছিল তার চোখের পানির একেকটা ফোটা যেন আমার বুকের গভীরে ঢুকে ছ্যাঁত করে ওঠছিল বারবার। যেমনটা হয় গরম তেলে কয়েক ফোটা পানি পড়লে। পোড়া বুকটা শান্ত হওয়ার পরিবর্তে যেন আরও দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে এরপর থেকে। এত কাঁদছিল কেন ও? কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে সেই মুহূর্তটা মনে করে। মাত্র দুইদিন, আর কেবলমাত্র দুইদিন আছি প্রিয় মানুষগুলোর সাথে। যাওয়ার আগে কি শেষবারের মতো ওর মুখটা দর্শন করে যেতে পারবো? যদি মরে যাই তাহলে এই অতৃপ্ত বাসনাটা নিয়েই মরতে হবে আমার।”—

ডায়েরিটা পড়ার সময় কখনো হাসি পেয়েছে, কখনো রাগ হয়েছে, আবার কখনো বা কান্নাও পেয়েছে। চোখে টলমল পানি নিয়ে ঝাপসা চোখেও ডায়েরিটা পড়েছি। এখন আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। কলিজাটা যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে লেখাগুলো পড়ে। আর মাত্র দুইদিন আছে সে! আর দেখতে পাব না তার মুখটা! এতোগুলো দিন কিভাবে পার করব আমি তার বিরহে? আমার, আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। এতোদিনের সব রাগ, ক্ষোভ, অভিমান সব কোথায় যেন ভ্যানিস হয়ে গেছে। এক দৌড়ে ছুটে তার কাছে চলে যেতে ইচ্ছা করছে। কি করা উচিৎ আমার? এখন কি করবো আমি? হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে মনে মনে আউড়াতে লাগলাম ‘এখনই যাব আমি তার কাছে, এখনই যাব। আর দেরি করবো না এক মুহূর্তও। এমনিতেই অনেক দেরি করে ফেলেছি। পাছে তাকে না আবার হারিয়ে ফেলি!’

ব্যালকনিতে যাওয়ার দরজাটা খুলে সেখানে গিয়ে দেখলাম শ্রাবণের কক্ষে আলো জ্বলছে কিনা! দেখি জ্বলছে না। জ্বলবেই বা কি করে! প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে যে! সাথে ঝড়ো হাওয়া আর মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি। এখন তার কাছে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? বেশ রাত হয়েছে মনে হচ্ছে! দোটানায় পড়ে গেলাম। মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে তার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামছি আর ভাবছি সে কি আমাকে ভুলে যাবে দূরদেশে গিয়ে?! হাজারো মানুষের মাঝে হঠাৎ করে আমাকে কি কখনো মনে পড়বে তার? নাকি নতুন কাউকে পেয়ে আমাকে তার অস্তিত্ব থেকে মুছে ফেলবে!? এটা ভাবতেই চোখ ভরে গেল পানিতে। অবশ্য এখন এই বৃষ্টিতে কোনটা চোখের পানি আর কোনটা বৃষ্টির পানি পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যাবে একটু। বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা যেন শরীরে শেলের মতো বিঁধছে। এত্তো ঠান্ডা পানি! কাঁপা কাঁপা পায়ে তার কক্ষের সামনে এসে থামলাম। কক্ষের দরজা খুলা হাট করে। বিদ্যুতের আলোয় দেখতে পেলাম ঘরের ভেতরের পর্দাগুলো বাতাসে উড়ছে। থাই গ্লাসের কারনে পশ্চিমপাশের বাহিরটা পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। সেদিক থেকেও আলোকছটা আছড়ে পড়ছে। এবং সেই আলোতেই দেখতে পেলাম একটা অবয়ব থাই গ্লাসে হেলান দিয়ে বসে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাকে দেখলাম। বৃষ্টির পানি বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা হওয়ায় প্রচুর শীত লাগছে। শরীরের সব লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেছে ঠাণ্ডায়। পলকহীন চোখে এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছি। হঠাৎই হন্তদন্ত হয়ে অবয়বটাকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। মুহূর্তেই বুকের রক্ত ছলকে উঠলো। সারা শরীর যেন অজানা উত্তেজনায় শিহরিত হতে লাগলো। মাথার ভিতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকেই আমার বাম বাহুটা ধরে একটা হেঁচকা টানে ভিতরে নিয়ে গেল। টাল সামলাতে না পেরে তার বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তার হৃদয়ের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিটা হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি। দ্রিম দ্রিম করে যেভাবে হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে মনে হয়ে বেড়িয়ে আসবে। আমাকে ধরে রুমের ভেতরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে একটা তোয়ালে এনে চুল মুছতে মুছতে বললো

—এই মেয়ে, পাগল হয়ে গেছো তুমি? এভাবে রাতবিরাতে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে? আবারও অসুখ বাধাতে মন চায়ছে তোমার, না? এখানে কতক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছো?

তার কোন কথাই আমার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না। শুধু তার মুখের নড়চড় খেয়াল করলাম। কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছে সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে।

—মুখের দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন? যা জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব দাও! এতো রাতে এখানে কি করছিলে? তাও আবার এই বাঁধভাঙা বৃষ্টিতে!
—আপনার কাছে এসেছিলাম।
—তাহলে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন? আর তাছাড়া এই রাতের বেলা আমাকে তোমার কি দরকার পড়লো? সকালে বললে হতো না?
তার কথার প্রতিউত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম
—সত্যিই কি পরশু চলে যাবেন আপনি?

আমার প্রশ্ন শুনে কেমন যেন একটু চমকে গেল। মোমবাতির হালকা আলোয়ও তা স্পষ্ট টের পেলাম আমি। তার চোখমুখে একটা মেদুর ছায়া লক্ষ্য করলাম। বুকের ভেতর খুব যন্ত্রণা নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকলে যেমন একটা ভাব চেহারায় ফুটে উঠে! তেমনি শ্রাবণের মুখেও আমি সেই ভাবটা পরিলক্ষিত করলাম। বেদনায় জর্জরিত থমথমে মুখটা বড়ই নজরকাড়া লাগছে আমার কাছে। ইশ! ভাবতেই বুকের ভেতর সুচ ফুটার যন্ত্রণা হচ্ছে। তাকে তিনটা বছরেরও বেশি সময় দেখতে পাব না। শ্রাবণের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে ভাবনার রাজ্য থেকে বেড়িয়ে আসতে হলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

—তা দিয়ে তোমার কি কাজ? আমি চলে গেলেই তো বাঁচো তুমি। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছো আমার কাছ থেকে। যেন আমার সংস্পর্শে আসলেই তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে!

আচমকা আমি তাকে জড়িয়ে ধরে তার পেটে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। মানুষটা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই ভেতরটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে জড়িয়ে ধরলেও কে অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হয়তো এখনো ধাতস্থ হতে পারেনি যে আমি হঠাৎ এমন আক্রমণ করে বসবো। কান্নার বেগটা যেন ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। হঠাৎই তার কাঁপা কাঁপা হাত আমার মাথায় টের পেলাম। আবার সাথে সাথেই নামিয়ে নিল। তার কাছ থেকে আমাকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো

—এমন পাগলামো করছো কেন মিমি? আমি চলে গেলেই বা তোমার কি? আমি তো তোমার কেউ না।

শ্রাবণের কথাটা শুনেই আমার কলিজায় মোচড় মারলো। সত্যিই কি শ্রাবণ আমার কেউ না!? যদিও আমার এ অবস্থায় কোন কিছু বুঝার উপায় নেই। কিন্তু তবুও শ্রাবণের কথার মাঝে যেন স্পষ্ট অভিমান ঝরে পড়ছে লক্ষ্য করলাম। পাগলটাকে কি করে বুঝাই আমার মনের অব্যক্ত কথাগুলি? কি করে বুঝাই যে ওকে ছাড়া আমি কতটা অসহায়! কতটা একা! হঠাৎ শ্রাবণের কথায় আমার ভাবনার চরকি মাঝপথে থেমে গেল। দেখলাম সে হাঁটু গেড়ে আমার সামনে ফ্লোরে বসে আছে। তার চোখ দুটো অস্থিরভাবে পায়চারী করছে আমার চোখেমুখে।তার চোখে যেন হাজারো না বলা কথাগুলো স্পষ্ট ভেসে ভেসে উঠছে। আর যা কিনা আমি পড়তে পারছি অনায়াসেই।

—চুপ করে আছো কেন মিমি? কিছু তো বলো!
—আপনি কেন চলে যাবেন শ্রাবণ? কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছেন আপনি আমাকে? এতোই ঘৃণা করেন আমাকে যে, যার জন্য আমার মুখ যাতে দেখতে না হয় সেজন্য দূরে চলে যাচ্ছেন!
—আমি দূরে দূরে থাকলেই তো তোমার সুবিধে, তাই না? তবে আমার দূরে যাওয়া তোমায় এতো পোড়াচ্ছে কেন মিমি? বলো আমি তোমার কে?

শ্রাবণের এমন কথায় আমার ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। মনে মনে বললাম ‘আপনি আমার সব শ্রাবণ! আমার হাসি, আমার কান্না, আমার মন খারাপের কারণ, আমার ভালো থাকার কারণ, সব!’ কিন্তু কথাগুলো গলা পর্যন্ত এসে আঁটকে রইলো। ঠোঁট পর্যন্ত এসে পৌঁছানোর আগেই গিলে ফেললাম মনের অব্যক্ত কথাগুলো।
কিন্তু শ্রাবণ কেন বুঝতে পারছে যে আমি তাকে কতটা ভালবাসি! আমার জীবনে তার স্থান কতটুকু সে কেন তা উপলব্ধি করতে পারছে না? সে কি বুঝেও না বুঝার ভান করছে? কিন্তু এতে তার কি লাভ হচ্ছে? বরং দুজনেই সমানতালে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছি। আমার আচরনে কি সে টের পাচ্ছে না আমি তাকে কতটা চাই!? সব কথাই কি মুখ ফুটে বলে দিতে হয়? কিছু কথা কি বুঝে নিতে পারে না? সেই ক্ষমতা কি আল্লাহ্ তার মাঝে দেননি?

হঠাৎই আমার মনে এবং মস্তিষ্কে রুখ চেপে গেল। সে যেহেতু বলবেই না তার মনের কথা তাহলে আমি কেন আগ বাড়িয়ে নির্লজ্জের মতো বলতে যাব শুধুশুধু? আমার কি দায় পড়েছে বলার!? আমিও বলবো না। জিদ চেপে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমার সাথে সাথে শ্রাবণও উঠে দাঁড়ালো আমার সম্মুখে। তার দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। আচমকা ডান হাতে সবল হাতের জোরালো টান খেয়ে শ্রাবণের বাহুর সাথে ধাক্কা খেলাম প্রবল বেগে।

চলবে………

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ