#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
স্বপ্ন সারথি পর্ব-১৪
টি এ অনন্যা
“তূর্ণ তুই কি আজও ক্যাম্পাসে যাবি না? রেডি হসনি কেন?”
“না, মামনি শরীরটা ভালো লাগছে না। আর তুমি এভাবে বলছ কেন? আজও মানে কী? আমি তো গতকালও গিয়েছি।”
মাসুদ পানি পান করে হাতের গ্লাসটা টেবিলে রেখে বললেন, “তূর্ণ, তুমি কাল ক্যাম্পাসে যাওনি। বাসায় ফিরে তোমার মামনিকে মিথ্যে বলেছ কিন্তু আজও আমার সামনে মিথ্যে বলছ? সন্ধ্যায় বললে শরীর ভালো না তাই তোমাকে আমরা স্পেস দিয়েছি। তার মানে এই নয় যে তোমাকে আমরা কিছুই জিজ্ঞাসা করব না। কী হয়েছে তোমার? তুমি তো কখনো মিথ্যা বলতে না!”
তূর্ণ খাবার খাওয়া বন্ধ করে জিজ্ঞাসা করল, “তোমাদের কে বলেছে আমি ক্লাসে যাইনি?”
তূর্ণর মা জবাবে বললেন, “যেই বলুক কথা তো মিথ্যে নয় তাই না?”
তূর্ণ গম্ভীরমুখে জবাব দিলো, “হুম।”
তূর্ণ টিস্যুতে হাত মুছে উঠে যেতে নিলে চেয়ারে হাত লাগলে ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে। তা দেখে লিপি তার হাত ধরে বসিয়ে বললেন, “হাত কেটেছিস কেন তুই?”
তূর্ণ তাড়াতাড়ি নিজের ডান হাত লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে। মাসুদও অবাক হন লিপির কথায়। গতকাল রাতে লিপি যখন বলেছিলেন তূর্ণর ঘরের ফ্লোরে ছড়িয়ে থাকা রক্তের ফোঁটা তখন ভেবেছিলেন তেমন কিছু না। সকালে তা ভুলেও গিয়েছিলেন। কিন্তু লিপি ঠিকই লক্ষ্য করেছেন ছেলেকে। তূর্ণর ডান হাতের তালুতে মাঝ বরাবর অনেকটা ক্ষত।
গতকাল পূর্ণতার সাথে রাগ করে আসার সময় তূর্ণ ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ নিয়ে এসেছিল। বাসায় এসে যাতে আর পূর্ণতার কথা মনে না পড়ে। তূর্ণ ভাবে পূর্ণতা হয়তো তূর্ণকে চায় না। তাই তার কাছ থেকে সে দূরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আপাতত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঘুমের ওষুধ নিতে বাধ্য হয়। খাটের উপর বসে পূর্ণতার কথা ভাবতে ভাবতে রাগে জেদে ওষুধের পাতা হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দেয়ার কারণে পাতার ধারালো কোণা হাতের তালুতে ঢুকে যায়। তবে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় সে ব্যথা তূর্ণ বেশি একটা টের না পেলেও রক্তকণিকা ঠিকই ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে আর ফ্লোরে তার কয়েক ফোঁটা পড়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তূর্ণ ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
তূর্ণ চাইছে না এখন পূর্ণতার ব্যাপারে কিছু বলতে। তাই শুধু বলল, “ওইতো বেখেয়ালে ওষুধের পাতা লেগে কেটে গেছে। তেমন কিছু না এটা।”
লিপি ছেলের হাত নিজের কাছে নিয়ে আফসোস করে বললেন, “এতখানি ডেবে গেছে তাও তোর কাছে কিছু না তাই না? এখন তো বড় হয়ে গেছিস। মা’কে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করিস না।”
তূর্ণর হাত মাসুদের সামনে নিয়ে বললেন, “দেখো তোমার ছেলের কাণ্ডটা!”
মাসুদ কাজের মেয়েকে ডেকে বললেন সেফটি বক্সটা এনে দিতে। এরপর তূর্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুই ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলি কেন কাল?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
তূর্ণ অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে উত্তর দিলো” মাথা ব্যথায় ঘুম হয়নি পরশু রাতে তাই।”
লিপি ছেলের হাত দেখে এতক্ষণে কেঁদে কেটে অস্থির। সারারাত ঘুমাতে পারেননি তিনি ছেলের চিন্তায়। রাতে বারবার ডেকেও দরজা খোলাতে না পেরে অপেক্ষা করেছেন সকালের জন্য। গত সসন্ধ্যায় ছেলের উপর রাগ করে কিছুই খেয়াল করেননি।
মাসুদ বললেন, “তূর্ণ তুই কি জানিস বাবা-মা সন্তানের চোখ-মুখ দেখলেই তাদের মনের খবর পায়?”
“কেন বাবাই? আমি আবার কী করলাম। এভাবে বলছ কেন? ”
মাসুদ তূর্ণর হাত ড্রেসিং করে ছোট করে ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বললেন, “তোর মুখ বলছে এক আর চোখ বলছে আরেক। মাথা ব্যথায় ঘুম হয়নি সেটা তো তুই কাল সকালে বলিস নাই। আর ব্যথার জন্য তোর মাইগ্রেনের ওষুধ নিতে পারতি কিন্তু ঘুমের ওষুধ কেন নিতে হলো? সত্যি করে বল কী হয়েছে তোর? আমরা তোর বাবা-মা। তোর ভালোর জন্য সব করতে পারি। ”
লিপি কান্নাভেজা গলায় বললেন, “বল বাবা কী হয়েছে তোর। কারো সাথে কোনো সমস্যা থাকলেও আমাদের জানা প্লিজ। ”
তূর্ণ উঠে গিয়ে বলল, “সময় হলে সব বলব মামনি। আমাকে কিছুদিন একটু একা থাকতে দাও। কিছু জিজ্ঞাসা করো না বাবাই। তবে এইটুকু ভরসা রাখতে পারো তোমাদের ছেলে কখনো খারাপ কিছু করবে না।”
কথা শেষ করেই হনহনিয়ে উপরে চলে যায় তূর্ণ। তূর্ণর যাওয়ার পানে হা হয়ে তাকিয়ে থাকেন মাসুদ এবং লিপি।
আজ পাঁচদিন হয়ে গেল তুর্ণ ক্যাম্পাসে আসে না কারও কল রিসিভ করে না। এর মাঝে সাইফ একদিন তূর্ণর বাসায় গিয়েছিল। সেদিন বলেছে পরেরদিন থেকে আসবে। কিন্তু তারপর দুদিন পার হয়ে গেছে তাও তূর্ণর দেখা মিলেনি। পূর্ণতা প্রতিদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত কখন তূর্ণ আসবে। তূর্ণকে অনেক দিন সে কল করেছে। কিন্তু এখনো তার ফোন সুইচ অফ। আরেকদিন লিপিকে কল দিয়ে তূর্ণর সাথে কথা বলতে চায়। আর তূর্ণ! সে তো নানান ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কথা-ই বলে না। তাই সে রাগে আর কল করেনি। একদিকে নিজের বাবার চিন্তা অন্যদিকে তূর্ণর অযৌক্তিক রাগ দেখানোটা মোটেও ভালো লাগছে না পূর্ণতার। সেদিন তো সে তূর্ণকে রাগ করার মতো কিছুই বলেনি। বরং তূর্ণই যা করেছে তা তার জন্য পূর্ণতা রাগ করতে পারত। তাছাড়া পূর্ণতা তো এখনো তূর্ণের ভালোবাসাকে অস্বীকার করে প্রত্যাখ্যান করে দেয়নি। হ্যাঁ বা না কিছু না শুনেই অকারণে মেয়েদের মতো রাগ দেখানোর কী কোনো মানে আছে! তবে তূর্ণর সাথে রাগ করলেও তার দেয়া কবিতাটা পূর্ণতা রোজ পড়ে। একবার নয় বারবার পড়ে আবার তা যত্ন করে রেখে দেয়।
পূর্ণতা এখন আর আগের মতো চঞ্চল নেই। বন্ধু আড্ডায় সবাইকে দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখে না। সে একা একা থাকতেই পছন্দ করে বেশি এখন। তূর্ণর দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে না আসা আর পূর্ণতার অন্যমনস্কতা তাদের বন্ধু সার্কেলে খুব ভাবায়। তাদের মনের কোণে সৃষ্টি করে তূর্ণ এবং পূর্ণতাকে নিয়ে সন্দেহ।
“আচ্ছা সাইফ তুই তো সেদিন তূর্ণদের বাসায় গেলি। তোকে কিছু বলেনি?”
“মনিকার প্রশ্নের উত্তরে সাইফ বলল, ” না, সেদিন তো বলল দুদিন অসুস্থ ছিল তাই আসেনি। পরেরদিন থেকে আসবে।”
“কই এলো না তো। আমার কী মনে হয় জানিস তূর্ণ আর পূর্ণতার মাঝে কিছু চলছে।”
“তুই কী করে বুঝলি? তোকে কি পূর্ণতা কিছু বলেছে?”
“আর গাধা দেখিস না তূর্ণ যেদিন থেকে ক্যাম্পাসে আসে না সেদিন থেকে পূর্ণতার ব্যবহারও পাল্টে গেছে। ও কেমন যেন মনমরা থাকে। আর একটু অন্যমনস্ক। এসব দেখলেই তো তার মনে কী চলছে বুঝা যায়। ”
সাইফ আস্তে করে বলল, “সবার মন বুঝিস কিন্তু যে তোর পাশে তার মনটাই বুঝলি নারে। তোর জন্য তার মনের ছটফটানি, অন্যমনস্কতা তোর চোখে পড়ে না।”
মনিকা ধমকের স্বরে বলল, “এই মিনমিন করে কী বলছিস? জোরে কথা বলতে পারিস না?”
সাউফ মনে মনে বলল, “এই কথা জোরে বললে তুই তো আর আমায় আস্ত রাখবি না। কী যে নিয়ম তোর বন্ধুকে ভালোবাসার মানুষ ভাবা যায় না। হাউ ফানি!”
মনের কথা মনে রেখে মনিকার মুখ চেপে ধরে বলল, “এই চুপ আস্তে কথা বল। এটা লাইব্ররী। ওই দেখ বড় বড় করে লেখা আছে জোরে কথা বলা বা হাসা নিষেধ। এটা কিন্তু তোর নিজের বাড়ি না।”
মনিকা কিছুটা চেচিয়ে উঠে বলল, “এই মানে কী? আমার নিজের বাড়ি কি আমি চেচাই?”
সাইফ আবার সতর্ক করে বলল, “আস্তে আস্তে। তোর জন্য লাইব্রেরিয়ান আমাকে সহ দৌড়াবে।”
মনিকা এবার আস্তে বলল, “তোর জন্য রিনি-ই ঠিক আছে। তোকে পিটিয়ে সোজা রাখবে।”
“রিনিকে আমি সেই অধিকার দিব না। কিন্তু যাকে দিতে চাই সেই তো এখনো আমায় বুঝতে পারলো না। হায়রে গেবন! নিমপাতা হয়ে গেল!”
মনিকা মুচকি হেসে বলল, “কেন দিবি না রিনিকে অধিকার? ও তো খুব ভালোবাসে তোকে। কতভাবে তোকে বোঝানোর চেষ্টা করে মেয়েটা তুই বুঝিস না ওকে। আচ্ছা আমায় বল তো তুই যাকে বুঝাতে চাস তার কি এমন আছে যা রিনির নেই।”
সাইফ চেয়ারে হেলান দিয়ে মনিকার চোখে তাকিয়ে বলল, “তার আছে নিরহংকার, সুন্দর এবং পবিত্র একটা মন। আচ্ছা রিনি আজ আসলো না কেন?”
“ওর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মারা গেছে। সেখানে যাবে ওরা।”
“আচ্ছা চল ক্লাসে যাই।”
প্রতিদিন পূর্ণতা, সাইফ আর মনিকা ক্লাস শেষে একসাথে বেরোয় এবং একসাথে যায়। ওদের তিনজনের বাড়ি একই দিকে। কিন্তু আজ ক্লাস শেষে পূর্ণতাকে খুঁজে পাচ্ছে না সাইফ ও মনিকা।
চলবে……
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আপনার গঠনমূলক মন্তব্য লেখার অনুপ্রেরণা।