#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
স্বপ্ন সারথি পর্ব-১১
টি এ অনন্যা
পূর্ণতা তূর্ণর দেওয়া হাতের মোড়ানো কাগজটা খুলে দেখল তাতে তূর্ণর লেখা একটা কবিতা,
আমি কেন তোকে ভালোবাসি?
খুঁজতে যাই আমি তার কারণ,
থাকতে চাই তোর পাশাপাশি,
উত্তরে বলে দেয় আমার মন।
শুধু এক জনম নয় হাজার জনম,
তোর বসত চাই আমার বুকের বাঁ পাশে,
তোর হৃদয়ের তরে নিবেদিত আমার মন।
পূর্ণ হোক জীবন তোর ভালোবাসার আবেশে।
তোর সুন্দর মনের প্রস্ফুটিত ভালোবাসা,
তোকে ভালোবাসার অন্যতম কারণ।
আমার অস্তিত্ব তোর মাঝে বিরাজমান,
তোর হৃদপিঞ্জরে শুধুই আমার আগমন।
ভালোবাসি ভালোবাসি অনেক বেশি,
বলি বলি করে মুখ ফুঁটে বলা হয় না।
আমি কেন তোকে ভালোবাসি?
তার অনেক কারণ এখনো অজানা।
পূর্ণতা বারবার কবিতাটা পড়ছিল। ওর মাঝে এক ভিন্ন অনুভূতির ধারা বইতে শুরু করে এই কবিতা পড়ার পর থেকে। কী এক অজানা টান তাকে বারবার টেনে নিচ্ছিল কবিতার শব্দগুলোর গহীনে!
পূর্ণতা কাগজটা ব্যাগে রেখে ক্লাসে চলে যায়। গিয়ে দেখে সাইফ, রিনি ও মনিকা গল্প করছে। পূর্ণতা চুপচাপ ওদের পাশে বসে তূর্ণর জন্য অপেক্ষা করে।
“কীরে তূর্ণ ফিরে এলি যে! তুই না বললি আজ জরুরি ক্লাস আছে। তাই না খেয়ে চলে গেলি।”
তূর্ণকে অসময়ে বাড়ি ফিরে আসতে দেখে অবাক তূর্ণর মা লিপি বেগম।
তূর্ণ সংক্ষেপে উত্তর দিল, “ক্লাস শেষ তাই চলে এসেছি। আমি উপরে গেলাম আমাকে কেউ ডাকবে না।”
তূর্ণ সিড়ি বেয়ে তার রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে পেছন থেকে লিপি জিজ্ঞাসা করলেন “কী হলো তোর? নাস্তা করেছিস?”
লিপির কোনো কথার উত্তর না দিয়েই তূর্ণ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। লিপি বুঝতে পারেন কিছু একটা হয়েছে। এখন ওকে একা থাকতেই দেওয়াই উত্তম। নাহয় যে রগচটা ছেলে কী না কী করে বসে বলা মুশকিল। তিনি হারে হারে চিনেন তার ছেলেকে। তূর্ণ ভালোর ভালো আবার যখন রেগে যায় তখন তার জেদ থামানো যায় না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
তূর্ণর জন্মের আগে এক ভাই মারা যায়। সুস্থ জন্ম নিলেও কিছুদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়ে লিপি বেগম এবং মাসুদ রানার প্রথম সন্তান তূর্য। এরপর পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানা আয় তূর্যর হার্টে ফুটো। অনেক ভালো চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করেও লাভ হয়নি। দু’মাস সতেরো দিনের মাথায় তূর্য বাবা-মায়ের কোল খালি করে ওপারে পাড়ি জমায়।
তূর্যের মৃত্যুর ঠিক এক বছর পরে একই দিনে তূর্ণ আসে লিপি এবং মাসুদের কোল এবং ঘর আলো করে৷ তাই তূর্ণের জন্মের পর থেকে তারা তূর্ণের প্রতি একটু বেশি-ই আবেগপ্রবণ। তূর্ণের সব রাগ জেদ হাসি মুখে মেনে নেন তারা। তাছাড়া গ্রাম্য ভাষায় কোনো সন্তানের আগে আরেক সন্তান মারা গেলে তাকে মুল্যের বলে। আর এসব মূল্যের বাচ্চারা একটু রাগি এবং জেদি হয়। তাই তূর্ণর বাবা-মা তূর্ণকে কখনো রাগ-জেদ নিয়ে শাসন করেন না তেমন। ও যখন রেগে থাকে তখন তারা সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না। পরে দেখা যায় তূর্ণর রাগ কমলে নিজেই সব জানায়।
বিকেলে একটা ক্লাস থাকা সত্ত্বেও পূর্ণতা দুপুরে ব্যাগ গুছিয়ে নেয় বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য। তা দেখে মনিকা জিজ্ঞাসা করে, “পূর্ণতা কী হয়েছে তোর? সেই সকাল থেকে মুখ ভার করে আছিস? কোনো কথা-ই বলছিস না যে!”
মনিকার কথায় পূর্ণতার প্রতিউত্তর না পেয়ে সাইফ জিজ্ঞাসা করে, “আংকেল এর কি কিছু হয়েছে? মন খারাপ কেন তোর?”
পূর্ণতা কী উত্তর দিবে? ওর মন পড়ে আছে তূর্ণর কাছে। পূর্ণতা ভেবেছিল ক্লাসের সময় ঠিক চলে আসবে তূর্ণ। কিন্তু খবর নেই তার। আর ও যাওয়ার আগে যে অবস্থা দেখেছে তূর্ণর চোখে তাতে কিছু একটা অঘটন না ঘটিয়ে বসে। পূর্নতাও গত একবছরে তূর্ণর স্বভাব গুলো ভালো করেই আয়ত্ত করেছে।
রিনি পূর্ণতাকে চুপ থাকতে দেখা পূর্ণতার বাহুতে ধরে বলল, “কীরে কী হয়েছে? বল আমাদের। তোকে এভাবে দেখতে কিন্তু ভালো লাগছে না। আজ তূর্ণ আসলো না আবার তুইও অফ হয়ে আছিস। আর তুই ব্যাগ গুছাচ্ছিস কেন?”
পূর্ণতা ব্যাগ কাধে নিয়ে বলল, “আব্বুর কিছু হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ উনি ভালো আছেন। তোরা থাক আজ আমার একটু দরকার আছে। বাসায় যেতে হবে। আমি গেলাম।
কথা শেষ করেই পূর্ণতা হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় ক্লাস হতে। কিছুই বুঝে উঠতে পারে না মনিকা, রিনি ও সাইফ। হা করে তাকিয়ে থাকে পূর্ণতার যাওয়ার পানে।
দুপুরের রান্না শেষে ঘর পরিষ্কার করছিলেন রেহানা। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠতেই সদর দরজা খুলে দেখলেন পূর্ণতা ফিরে এসেছে।
” কীরে তুই না সকালে বললি ল্যাব আছে আজ তোর। এত তাড়াতাড়ি যে ফিরে এলি!”
পূর্ণতা ভিতরে ঢুকে ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল, “হয়নি আজ। আম্মু আমাকে এক গ্লাস শরবত করে দিবে?”
“আচ্ছা তুই বসে বিশ্রাম নে একটু। আমি করে আনছি।”
পূর্ণতা ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর থেকে বারবার তূর্ণর নাম্বারে ডায়াল করেই যাচ্ছে। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। তা দেখে পূর্ণতার চিন্তা বেড়েই চলেছে। রেহানা চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। এরপর পূর্ণতা আবার কল দেয় তূর্ণর নাম্বারে। এবারো কলটা বেজেই বন্ধ হয়ে যায়। এবার রাগ করে ফোনটা সোফার উপরে ফেলে দিয়ে মোশাররফ এর ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
পূর্ণতা দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে মোশাররফ বিপরীত দিকে ফিরে শুয়ে আছেন। পূর্ণতা ভাবে তার আব্বু ঘুমিয়ে আছে। তাই সে পা টিপে টিপে ভিতরে গিয়ে মোশাররফ এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় এক নজর দেখার জন্য। কিন্তু মোশাররফ জেগেই ছিলেন। মেয়েকে দেখে উঠে বসেন।
“কীরে মা তুই কখন এলি?”
“এখনই এসেছি আব্বু। আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমাচ্ছ তাই তোমায় ডাকিনি।”
মোশাররফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “এই ভর দুপুরে কি আর আমার ঘুম আসবে? আমি কাজের মানুষ। সর্বদা এই সময়টাতে কাজে ব্যস্ত থাকতাম। এখন তো অসুস্থ বলে বাসায় পড়ে আছি।”
পূর্ণতা খাটের উপর বসতে বসতে বলল, “এভাবে কেন বলছো আব্বু? বাসায় পড়ে থাকা মানে কী?”
“আরে বেটি আমি তেমন কিছু বলিনি। তুই ফ্রেশ না হয়েই চলে এসেছিস আমাকে দেখতে? যা ফ্রেশ হয়ে নে। তোর মায়ের রান্না মনে হয় শেষ। একসাথে খাব আজ।”
পূর্ণতার ভালোবাসা, ভরসা এবং বিশ্বাসের অন্যতম জায়গা তার বাবার কোল। তূর্ণর জন্য আজ তার মনটা বড় অস্থির লাগছে। ভালো লাগার আশ্রয় হিসেবে মোশাররফ এর খাটের উপর বিছিয়ে থাকা পায়ের উপর শুয়ে পড়ে পূর্ণতা।
মোশাররফ তা দেখে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “কীরে মা কিছু বলবি? এভাবে শুয়ে পড়লি যে! মন খারাপ?”
পূর্ণতা মোশাররফ এর পায়ের উপর শুয়ে দু হাতে বাবার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল, “না আব্বু কিছু বলব না। আমার খুব খারাপ লাগছে আমাকে কিছুক্ষণ এভাবে থাকতে দাও না প্লিজ।”
“আচ্ছা ঠিক আছে থাক। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি তুই আমাকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছিস। ভাবিস না আমায় নিয়ে পূর্ণ। আমি ঠিক ভালো হয়ে যাবো।”
“আব্বু তোমার কোলে এত শান্তি কেন? এইখানে আসলে আমার সকল অস্থিরতা কমে যায়।”
রেহানা শরবত তৈরি করে ড্রয়িংরুমে গিয়ে পূর্ণতাকে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে নিজের রুমে এসে দেখেন তার মেয়ে বাবার কোলে শুয়ে আছে।
“দেখেছ তোমার মেয়ে কাণ্ড! আমাকে শরবত বানাতে বলে সে এখানে এসে বাবার কোলে শান্তি খুঁজছে। আর আমি তাকে খুঁজে বেড়াই। আমি জানতাম সন্তানেরা তার মায়ের কোলে শান্তি পায়। সব সুখ-দুঃখের কথা ভাগ করে মায়ের সাথে। কিন্তু তোমার মেয়ে হয়েছে পুরো উল্টা৷”
মোশাররফ মেয়েকে বললেন, “দেখেছিস পূর্ণ তোর মা আমায় হিংসে করছে। আমাদের বাপ বেটির ভালোবাসা তার সহ্য হচ্ছে না। হা-হা-হা।”
শরবতের গ্লাস হাতে পূর্ণতার সামনে দাঁড়িয়ে রেহানা বললেন, “এই নে তোর জন্য লেবুর শরবত করেছি। আগে এই শরবতটা খেয়ে গোসল করে আয়। পরে বাপ বেটি মিলে সুখ-দুঃখের গল্প করিস। ”
মোশাররফ স্ত্রীর কথায় সায় দিয়ে বললেন, “হ্যাঁ রে মা উঠে খেয়ে নে শরবত। যেই গরম পড়েছে এখন। বাইরে গেলে শরীরের খনিজ লবণ সব বেরিয়ে যায় ঘামের সাথে। ”
পূর্ণতা কিছুক্ষণ তার বাবার কাছে থাকার পর একটু শান্তি লাগছে। কিন্তু মনের অস্থিরতা কমেনি বরং ক্রমশ তা বেড়েই চলেছে। তবুও সে উঠে শরবত খেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
চলবে………