#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা
স্বপ্ন সারথি পর্ব-০৮
টি এ অনন্যা
“আব্বু দেখো তূর্ণ এসেছে। আর মনিকা, রিনি এবং সাইফও এসেছে তোমাকে দেখতে।”
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল কেমন আছেন এখন?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আজ একটু ভালো আছি বাবা।”
“আংকেল আপনি কী এত চিন্তা করেন বলেন তো? আপনার বয়সী লোক থাকবে স্ট্রং। আর আপনি স্ট্রোক করলেন!”
“বাবা তুমি বুঝবে না ওসব। আরে দাঁড়িয়ে কেন? কী হলো? বসো তোমরা সবাই। পূর্ণ মা তোর মাকে বল ওদের জন্য নাস্তা দিতে।”
“আচ্ছা আব্বু বলছি। তুমি শুয়ে থাকো। তোরা বস একটি। আমি একটু আসছি।”
সাইফ বলল, “আংকেল আমাদের নিয়ে এত ভাবতে হবে না। আপনি শুয়ে থাকুন।
পূর্ণতার বাবা মোশাররফ একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। হঠাৎ একদিন মালিক উধাও হয়ে যায়। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিগত কয়েক মাসের বকেয়া বাকি। মালিক উধাও হয়ে যাওয়ার চার পাঁচদিন পরে জানা যায় কোম্পানির মালিক বিপুল পরিমাণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই অন্য একজনের কাছে কোম্পানি বিক্রি করে বাহিরে চলে গেছে। এখন নতুন মালিক এসে তাদের বকেয়া পরিশোধ করতে চায়নি। কিন্তু শ্রমিক এবং কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়ে তিনি বেতন পরিশোধ করেন ঠিকই কিন্তু সকল পুরনো শ্রমিক ছাটাই করে দেন।
মাত্র কয়েকমাস আগে একটা ঝামেলায় পড়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসেছেন তারা। এসেই এই চাকরিটা পেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে এখন তার এই চাকরিটা চলে যাওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়ে স্ট্রোক করেন তিনি। পূর্ণতা তারা বাবাকে হাসপাতাল থেকে এনে চারদিন পরে আজ ক্যাম্পাসে যায়। তার সাথে তার বন্ধুরা এসেছে চারজন। তাদের মধ্যে অন্যতম রিয়াদুল হাসান তূর্ণ। এর আগেও ওরা সবাই এসেছিল পূর্ণতাদের বাসায়। তবে তূর্ণর সাথে মোশাররফ হোসেনের সখ্যতা বেশ গভীর। এমনকি তূর্ণর ফ্যামিলির সাথেও পূর্ণতাদের ভালো সম্পর্ক। তাই তূর্ণ এসেই মোশাররফের পাশে খাটে বসে কথা বলতে শুরু করে।
মনিকা, রিনি ও সাইফ পূর্ণতাকে বাধা দেয় ওদের জন্য এখন নাস্তা না বানাতে। কারণ ওরা তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাবে। কিন্তু পূর্ণতা ওদের বসিয়ে রেখে চলে যায়।
পূর্ণতা সারা বাড়ি খুঁজেও তার মাকে না পেয়ে ছাদে গিয়ে দেখতে পায় ঠিকই তিনি ছাদে আছেন।
“আম্মু, তুমি এখানে! আর আমি তোমাকে সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজলাম। আব্বুকে একা ঘরে রেখে এখানে কী করছ তুমি? ”
রেহানা ছাদের ফ্লোর থেকে একটা পাত্র হাতে নিয়ে উৎকণ্ঠিত স্বরে বললেন, “কেন কী হয়েছে? তোর আব্বুর কি আবার ব্যথা উঠেছে? তুই কখন এলি?”
“না আব্বুর কিছু হয়নি। আমি এসেছি একটু আগেই মাত্র।”
“রোদ পড়ে এসেছে তাই তোর বাবাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে একটু আগে মাত্র এসেছি এগুলো নিতে।”
পূর্ণতা তার মায়ের হাতে থাকা পাত্রে গরম মশলার মতো কিছু একটা দেখতে পেল। কিন্তু তা গরম মশলা না তা বুঝা যাচ্ছে। তাই সে জিজ্ঞাসা করল, ” এগুলো কী শুকিয়েছ তুমি? গরম মশলা? ”
“আরে না। এগুলো হলো অর্জুন গাছের বাকল। তোর ছোট খালামনি বলল অর্জুন গাছের বাকল নাকি হৃদরোগের জন্য অনেক উপকারী। শুকিয়ে রেখে সংরক্ষণ করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই বাকল ভিজিয়ে রাখা পানি খেলে তোর আব্বুর উপকার হবে।”
“হ্যাঁ আম্মু আমিও জানতাম। বইতে পড়েছিলাম। ”
“তুই জানতি তাহলে আমাকে বলিস নাই কেন এই কয়দিন? ”
“বললেই কী হতো বলো? তুমি আব্বুকে এগুলো খাওয়াতে পারবে? আব্বু তো এসব ভেষজ উদ্ভিদে বিশ্বাস করে না আর খায়ও না।”
“বিশ্বাস না করলেও খেতে হবে। এবার আমি কায়দা করে খাওয়াব তাকে। তার ভালোর জন্য এইটুকু আমাকে করতেই হবে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে তা দেখা যাবে। কিন্তু তুমি এই গাছ কোথায় পেলে? আশেপাশে আমি এই গাছ দেখিনি।”
“পাশের বাসার ভাবিকে বলেছিলাম। উনিই তো এনে দিলেন সকালে। তার বাবার বাড়ির পাশেই আছে গাছ আছে। ”
“আন্টি আবার কষ্ট করে তাদের বাড়ি গেল এগুলো আনতে! সত্যিই আন্টিটা অনেক ভালো।”
রেহানা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “হ্যাঁ রে সেদিন উনি তার স্বামীকে ডেকে না দিলে তোর বাবাকে নিয়ে আমার হাসপাতালে যাওয়া হতো না। কী যে হতো আল্লাহ জানে!”
পূর্ণতা হঠাৎ চেচিয়ে বলল, “ওহ-হো আম্মু আমি তো ভুলেই গেছি তোমাকে ডাকতে এসে। আমার বন্ধুরা এসেছে আব্বুকে দেখতে। ”
“ছিঃ ছিঃ তুই আমাকে আগে বলবি না! কী ভোলা মন তোর! ছেলে মেয়েগুলো কী ভাববে এখন? চল তাড়াতাড়ি। ”
পূর্ণতা তার মাকে ঘরে পাঠায় তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে আর সে নিজে নাস্তা তৈরি করার জন্য রান্নাঘরে যায়।
পূর্ণতার মাকে দেখে সবাই সালাম দেয়। মনিকে তাকে এনে পাশে বসিয়ে কথা বলতে শুরু করে।
রেহানা বললেন, “দেখো তোমরা পূর্ণতার কাণ্ড সে আমাকে ডাকতে গিয়ে ভুলেই গেছে তোমাদের কথা। সে আমার সাথেই গল্প জুড়ে বসেছে৷ এখন বলল তোমরা এসেছ।
সাইফ মজা করে বলল, ” হা হা হা আন্টি ওর কথা আর কী বলবেন? সে তো আমাদের দাদী। এই বয়সেই সব ভুলে যায়।
তূর্ণ সাইফের কথায় তাল মিলিয়ে বলল, ” কী যে বলিস শুধু দাদী না। আমাদের জ্ঞান দানকারী দাদী! ”
সবাই হো হো করে হেসে উঠে। মনিকা বলল, “ভাই চুপ থাক তোরা। ও এসে শুনতে পেলে তোদের কান মলে দিবে।”
সাইফ বলল, “এহহ আজ ওর কান মলাব আন্টি আংকেলকে দিয়ে। সবসময় আমাদের উপর মাদবরি করে। আজ আমাদের দিন। আন্টি আংকেল আছে আমাদের সাথে।
সবার কথার মাঝে তূর্ণ হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে, “আন্টি প্রীতুলা স্কুল থেকে এখনো ফেরেই? ওকে দেখতে পাচ্ছি না তো।”
রেহানা উত্তরে বললেন, “আজ স্কুল ছুটির পর স্যারের বাসায় পড়তে যাবে। তাই দেরি হচ্ছে।”
রিনি বলল, “আন্টি ওকে কোনো একটা ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করিয়ে দিলে পারতেন। প্রাইমারি স্কুলে কী আর ভালো পড়া হয়? ও একটা ব্রাইট স্টুডেন্ট। ওর জন্য প্রোপার কেয়ার দরকার। ”
রিনির কথা শুনে রেহানা ও মোশাররফ কিছুটা লজ্জিত হলেন। কারণ মোশাররফ এর বতুন চাকরি, নতুন জায়গায় এসে সব কিছু নতুন করে শুরু করা, সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার সামর্থ্য নেই প্রীতুলাকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর। রিনি তা হয়তো বুঝবে না। কারণ সে ধনী পরিবারের আলালের ঘরের দুলালী।
রিনির কথার জবাবে তূর্ণ বলল, “দেখ রিনি প্রাইমারি স্কুলগুলোকে তুই যতটা নগণ্য ভাবছিস আসলে কিন্তু এখন আর তা নেই। তুই নিজেও জানিস না প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়া কত ছাত্রছাত্রী অনেক ভালো রেজাল্ট করে। এমনকি পরবর্তী শিক্ষাস্তর গুলোতেও তারা তাদের উজ্জ্বল মেধার প্রতিফলন দেখায়। ওই ইংলিশ মিডিয়ামের এক গাদা বইয়ের মাঝেই শুধুমাত্র মেধা থাকে না প্রাথমিক বিদ্যালয়েও থাকে। আর আমি মনে করি মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোই যোগ্য। প্রীতুলার জন্য এটাই ঠিক আছে। বাচ্চাদের কাধে এত এত বইয়ের বোঝা না ঝুলিয়ে দিয়ে তাদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়াই শ্রেয়।”
রিনি তুর্ণর ব্যাখ্যা শুনে তার বিপরীতে আর কিছুই বলতে পারল না। সাইফ আর মনিকাও তূর্ণকে সমর্থন জানায়।
রেহানা এবং মোশাররফ নিজেরাও এভাবে করে ভাবেননি। তাদের মুখে তূর্ণর কথায় দেখা মিলল হাসির ঝলক। যদিও তূর্ণ কথাই ঠিক তবুও তাদের কাছে মনে হচ্ছিল তূর্ণ যেন তাদের হয়ে রিনিকে জবাব দিলো।
পূর্ণতা নাস্তা নিয়ে এলে সবাই আর কিছুক্ষণ কথা বলে আড্ডা দেয়। প্রীতুলা আসার পর সবাই পূর্ণতাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
“আচ্ছা পূর্ণর মা তোমার কাছে পূর্নর ঐ বন্ধু তূর্ণ ছেলেটাকে কেমন লাগে?”
“ও মা এ আবার কেমন প্রশ্ন? ভালোই তো লাগে। খুব ভালো একটা ছেলে। শুধু তূর্ণ কেন পূর্ণর সবগুলো বন্ধুই তো খুব ভালো। ”
আরে সেটা না। মানে অন্যভাবে বুঝাতে চাচ্ছি আমি। শুধু বলো তূর্ণকে সব দিক থেকে কেমন লাগে তোমার? ”
“আমি আসলে বুঝতে পারছি না তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছো?”
“মানে এমন যদি হয় পূর্ণর সাথে তূর্ণর বিয়ে দেওয়া যায় তাহলে কেমন হয়!”
রেহানা অবাক হয়ে শোয়া থেকে উঠে মোশাররফ এর দিকে বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “কী আবোলতাবোল বলছো তুমি এসব তুমি? তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”
মোশাররফ মুচকি হেসে বললেন, “হ্যাঁ আমার শরীর ঠিক আছে। দাঁড়াও আমি তোমাকে বলছি সব।”
“হ্যাঁ বলো।”
চলবে……..
অনেক দিন পরে দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমার মোবাইল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই সমস্যা ছিল।