স্বপ্ন সারথি পর্ব: ০৪

0
1004

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা

স্বপ্ন সারথি পর্ব: ০৪
টি এ অনন্যা

প্রিয়ন হাসপাতালে আছে শুনেই শাহানাজ কান্নাকাটি শুরু করে দেন। সন্তানকে নিয়ে তার অস্থিরতা এখন কান্নায় রূপ নিয়েছে। তা দেখে অনিক হায়দার সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
“তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? এভাবে কান্নাকাটির কোনো মানে আছে বলো?”
শাহানাজ কান্নারত অবস্থায় চেচিয়ে বললেন, “আমার ছেলেটার কোনো খোঁজ নেই সেই বিকাল থেকে। এখন সে জানালো হাসপাতালে আছে তাও তুমি এভাবে শান্ত থেকে আমায় জিজ্ঞাসা করছ আমি পাগল হয়েছি কি-না? তুমি কি মানুষ? ”
“আমার উপর রেগে যাচ্ছ কেন? আমার কথাটা তো শুনবে আগে।”
“আর কী শুনা বাকি আছে বলতে পারো আমায়।”
“আরে এমন তো হতে পারে যে ও অন্য কোনো কারণে গিয়েছে হাসপাতালে। ও তো সকালে বলেই গেল জরুরি কাজে বের হয়েছে।”
“ওর কি কোনো কাজ হাসপাতালে থাকতে পারে বলে তোমার মনে হয়। ”
মোবাইলে প্রিয়নের নাম্বারে পুনরায় ডায়াল করতে করতে বললেন, “আচ্ছা দাঁড়াও আমি আবার দেখছি কল করে। তোমার ছেলে তো কলই রিসিভ করে না। এখন ফোনের সুইচ অন।”
শাহানাজ মোবাইল নিজের হাতে নিয়ে বললেন, “দাও আমার ছেলেকে আমিই কল দিচ্ছি।”

ক্রিং…ক্রিং…ক্রিং….
মেয়ের দুঃশ্চিন্তায় যখন রেহানা পাগলপ্রায় তখন কলিং বেলের আওয়াজে ক্ষণিকের মধ্যে সদর দরজা খুলেই দেখতে পেলেন পূর্ণতাকে। মরুভূমির প্রখর রোদে কোনো তৃষ্ণার্ত পথিক যেমন পানির সন্ধান পেলে ঝাপিয়ে পড়ে তেমনই মেয়ের বুকে অশ্রুসিক্ত নেত্রে ঝাপিয়ে পড়েন রেহানা। মেয়েকে পেয়ে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেন তিনি।
এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আগেই টের পেয়েছিল পূর্ণতা। কিন্তু সেটা যে এত বেশি হয়ে যাবে তা বোধগম্য ছিল না তার। মায়ের এমন কান্না দেখে নিজেও আপ্লুত হয়ে যায় পূর্ণতা। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে রেহানাকে নিয়ে ভিতরে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কী হয়েছে মা? তুমি এভাবে কাঁদছ কেন?”

বিকেল থেকে পূর্ণতাকে ফোনে না পাওয়ার পর থেকেই তিনি কান্না করতে করতে এখন হেঁচকি উঠে গেছে৷ কথা বলতেও পারছে না তিনি।
তাই দেখে প্রীতুলা বলল, “আপু তুমি কোথায় ছিলে সারা বিকেল। মা তোমার জন্য চিন্তা করে জানো না? তাছাড়া তুমি সকালে রাগ করে না খেয়ে বেরিয়ে গেলে। এজন্যই তো মায়ের দুঃশ্চিন্তা ছিল বেশি। একটা কল করে তো জানাতে পারতে।”
“আরে কোথায় রাগ করেছি। আসলে আজ তো আমি মোবাইল নিয়ে যাইনি। কল করব কী করে? ”
“তুমি রিয়ানার আপুর মোবাইল দিয়ে তো একটা কল দিতে পারতে। আমাদের কি চিন্তা হয় না নাকি? আর মা তো আমাদের জন্য চিন্তায় থাকে জানো না?
পূর্ণতা মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” সরি মা আমি বুঝতে পারিনি এতটা দেরি হয়ে যাবে। তাছাড়া খেয়াল ছিল না যে রিয়ানার সাথে মোবাইল আছে।”

এতক্ষণে মেয়েকে কাছে পেয়ে কিছুটা শান্ত হয়েছেন রেহানা। তবুও কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন, “কোথাও গেলে তো ভুলে যাস মায়ের কথা। সন্তান ঘরে না ফেরা পর্যন্ত মায়ের মন কতটা অস্থির থাকে তা বুঝবি না তোরা।”
” মা, আমার লক্ষী মা আর কেঁদো না। আমি তো এমনিতেও বিকেলে বাসায় ফিরি। কতক্ষণ আর হয়েছে! এইটুকু সময়ে এমন করছ কেন মা? আমি কি হারিয়ে গিয়েছি?”
“সেটাই তো ভয়। সকালে রাগ করে না খেয়েই বের হয়ে গেলি। সারাদিন একটা কল দিলি না৷ এরপর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো আর তুই বলছিস এই কতক্ষণ সময়! তুই জানিস এই কতক্ষণ সময়ই আমার কাছে কত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল যতক্ষণ না তোকে আমি কাক্সহে পেয়েছি!”

মায়ের মুখে রাগের কথা শুনে পূর্ণতা কপট ঝাঁঝালো স্বরে বলল, “তুমিও বলছ আমি রাগ করেছি। মা’গো তুমি আমার সবচেয়ে বড় প্রিয়জন। তুমি জানো না প্রিয়জনের উপর রাগ হয় না যা হয় তা অভিমান। রাগ করলে মানুষের রাগ ভাঙানো যায় না কারণ তা পাথরের চেয়ে কঠিন হীরকের চেয়ে ধারালো। কিন্তু অভিমান! সে তো বরফের মতো যা নিমেষেই গলে যায়।”
কথাগুলো বলতে পূর্ণতার গলা যেন ধরে আসছিল। তার মনের ভেতর সুপ্ত থাকা কষ্টের লেলিহান আগ্নেয়গিরি যেন বের হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু পূর্ণতা তার কৃত্রিম হাসির আড়ালে লুকিয়ে রাখে সব।
রেহানা রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হয়েছে তোর দার্শনিক কথা। মায়ের মন এত কিছু মানে না। এবার বল কোথায় ছিলি সারা বিকেল?”
“রিয়ানা একটু শপিংয়ে গিয়েছিল মা। খুব জোর করছিল ওর সাথে যাওয়ার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে কলেজ থেকে ছুটির পর ওর সাথে গিয়েছিলাম।”
“আমাকে কল করে বললে তো আর আমার দুঃশ্চিন্তা হতো না তাই না? কতবার রিয়ানাকে কল করেছি সেও রিসিভ করেনি।”

পূর্ণতা পাশে বসা থাকা প্রীতুলার কান টেনে ধরে বলল, “প্লিজ মা তুমি কষ্ট পেও না । আর এমন হবে না। এই দেখো কান ধরেছি।”
প্রীতুলা কানে হাত দিয়ে চেচিয়ে উঠে বলল, “আপু আমার কান ছাড়ো। নিজের কান ধরো। ভালো হচ্ছে না কিন্তু।”
পূর্ণতা মাকে শান্ত করার জন্য মজার ছলে বলল, “আরে আমার কান আর তোর কান আবার কী! একটা ধরলেই হয়।”
প্রীতুলা নিজের কান হতে পূর্ণতার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “মা দেখেছ তোমার মেয়ের কাণ্ড। ও কবে যে বড় হবে?”
রেহানা চোখের নোনাজল মুছতে মুছতে মুখে স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে বসা থেকে উঠে বললেন, “পূর্ণতা আর দুষ্টুমি নয়। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আজ তোর জন্য তোর প্রিয় চিংড়ি ভুনা আর সরষে ইলিশ রান্না করেছি।”
পূর্ণতার বরাবরই ইলিশ মাছ আর চিংড়ির প্রতি লোভ। সে অন্য মাছ তেমন পছন্দ করে না। তাই মায়ের মুখে রান্নার কথা শুনেই ছুট লাগায় ওয়াশরুমের দিকে।

” দেখেছো তোমায় বলেছিলাম না কান্নাকাটি করো না। ও হয়তো অন্যকাজে গিয়েছে হাসপাতালে। ওর কিছু হলে তো আমাদের যেতে বলত।”
“আমি তো মা। আমার মতো করে তুমি বুঝবে না ছেলের খোঁজ না পেলে মন কেমন কু ডাকে।”
“আচ্ছা এবার তাহলে যাও রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও।”
“না, আগে ও আসুক। ওকে না দেখা পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না।
” আচ্ছা তাহলে বসো। আমি কফি করে আনছি তোমার জন্য।
শাহানাজ বেগম কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর প্রিয়ন কল রিসিভ করে জানায় অন্য একজনের অসুস্থতার কারণে গিয়েছে। অনিক হায়দার নিজের জন্য এবং শাহানাজের জন্য কফি নিয়ে আসার একটু পরে কলিং বেল বেজে উঠে।

চলবে………..
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আপনার মন্তব্য লেখার অনুপ্রেরণা।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share