স্বচ্ছ প্রণয়াসক্ত পর্ব-০৮

0
1125

#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_৮
#লেখিকা_মুসফিরাত_জান্নাত

সুবিশাল অন্তরীক্ষে আঁধার নামতেই দেখা মেলে ভরা পূর্নিমা রজনীর থালার ন্যায় চন্দ্রিমার।সময় গড়ানোর সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় তার উজ্জ্বলতা।
আবার নিমিষেই ঢেকে যায় ঘন কালো আঁধারে।
হটাৎ সাঁই সাঁই করে বাতাস বয়।ঝড়ো হাওয়ায় এলোমেলো করে দেয় অযত্নে পড়ে থাকা রাস্তার ধুলিগুলোকে।শেখ নীড়ের সামনের গলিতে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে ওঠে দুটি নেড়ি কুকুর।ফেব্রুয়ারীর আকাশে সাধারন নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে বৃষ্টির আগমনী বার্তা পেতে ছুটে চলে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার আগেই টুপটাপ করে ঝড়ে পড়ে আকাশের কান্না।বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেয় শহরের আনাচ কানাচ।সাথে ভিজে যায় প্রেমিক পুরুষের মন।মুঠোফোনের স্ক্রিনে গভীর মনোযোগ দিয়ে সে দেখে চলেছে একটি ক্যামেরা বন্দী।অতি সন্তর্পণে তা রঙ তুলির আঁচরে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে।অনভিজ্ঞ হাতের অতি যত্নে গড়া আঁচরও তার নিজস্ব গঠন হারাচ্ছে।নির্দিষ্ট আকৃতি থেকে বিকৃতি হওয়ায় রঙ মিশ্রিত কাগজটি সড়িয়ে নতুন আরেকটি বসাচ্ছে সাদাত। পরের বার আরও মনযোগী হচ্ছে সে।তবুও বিফলে যাচ্ছে তার উদ্দেশ্য।বার বার ব্যর্থ হওয়ায় কপাল চাপড়ে সাদাত।মুখ ঘুচে বলে,

“চিত্রশিল্পীরা একটা জিনিস বটে।এই কঠিনতম কাজ এতো সুক্ষ্মভাবে কেমনে সম্পাদন করে এরা?”

ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে সে।চোখ দুটো বন্ধ করতেই চোখে ভাসে বাসের সিটে হেলান দেওয়া ঐশীর ক্লান্ত বদন।মন এলোমেলো করা কুচকুচে তীলক।বাইরের ঝুম বৃষ্টি।মুহুর্তেই অন্যরকম এক প্রেরণা লাভ করে সে।ভালোলাগার উত্থাল ঢেউ খেলে হৃদয়ে।টগবগ করে যুবকের তাজা র’ক্ত।অদম্য ইচ্ছাশক্তি মস্তিষ্কের সুপ্ত স্মৃতি কোষ নাড়িয়ে দেয়।মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া কালীপ্রসন্ন ঘোষের কবিতা।সটান হয়ে উঠে দাঁড়ায় সে।নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলে,

‘পারিবো না’–এ-কথাটি বলিও না আর,
কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার;
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পারো কি না পারো করো যতন আবার
একবার না-পারিলে দেখো শতবার।

পারিবে না বলে মুখ করিও না ভার,
ও কথাটি মুখে যেন না শুনি তোমার।
অলস অবোধ যারা
কিছুই পারে না তারা,
তোমায় তো দেখি নাকো তাদের আকার
তবে কেন ‘পারিবো না’ বলো বারবার?

জলে না-নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার,
হাঁটিতে শিখে না কেহ না-খেয়ে আছাড়,
সাঁতার শিখিতে হলে
আগে তবে নামো জলে,
আছাড়ে করিয়া হেলা হাট’ আর বার;
পারিবো বলিয়া সুখে হও আগুসার।”

গুটি গুটি পা ফেলে এগিয়ে যায় সে।বাইরে ঘন বর্ষন।বৃষ্টির এই ছন্দবদ্ধ ধ্বনি আরও দক্ষ করে তোলে তাকে।পর পর অনেক গুলো কাগজ নষ্ট হওয়ার পর নির্দিষ্ট শেপ আসে।ঘন কালো চুলের অধিকারীনি একটা নারীর পোর্ট্রেট এঁকেছে সে।একটা সাদা মুখের অদল,যেখানে চোখ,নাক, ঠোঁটের মতো সুক্ষ্ম অঙ্গ জায়গা পায়নি।ইচ্ছে করেই মুখের অদলটাকে সম্পূর্ণ করে না সাদাত।তবে যা দিয়েছে তাও বা কম কিসে?গলার নিচের কুচকুচে কালো তিলটাকে শেষবারের ন্যায় এঁকে দেয় সে।তুলির সুক্ষ্ম আঁচরে পুরো চিত্রটি হয়ে ওঠে অমায়িক।সটান হয়ে দাঁড়ায় সাদাত।নিজের হাতে আঁকা চিত্রকর্মটি দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।এটাকেই হয়তো সৃষ্টি বলে।নিজ হাতে সৃষ্টির সাধ প্রথম বারের মতো উপভোগ করে সে।প্রাপ্তির জোয়ারে ভেসে যায় দুটো ঠোঁট।তার সর্বনাশের মুহুর্তটা অতি যত্নেই এঁকে ফেলেছে সে।পোর্ট্রেটটার নাম সে “সর্বনাশিনী” দেয়।ফ্যানের বাতাসে রঙটা শুকোতে দিয়ে এলোমেলো টিউব গুলো গুছিয়ে ফেলে।এগুলো সে সিন্থিয়ার রুম থেকে এনেছে।তার ছোট বোনের হবি ছবি আঁকা।সেই সুবাদে এসব রঙ তার কালেকশনে থাকে।সবকিছু গুছিয়ে এসবের মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে যায় সাদাত।
দরজা ভিরিয়ে দিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে নিথর হয়ে শুয়ে আছে সিন্থিয়া।সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ লেগে এসেছে তার।যার দরুন সে খেয়ালই করে না, তার শখের শিল্পের উপকরণগুলো নিয়ে কেও অতি যত্নে নিজের প্রতিভা ফুটিয়েছে।উহু এটা তার প্রতিভা নয়।এটা প্রেমিক পুরুষের প্রেমের পরীক্ষা।যা রসকষ হীন এক মানবের মনেও শিল্পী চেতনা জাগ্রত করেছে।
________
ঝুম বর্ষনের সাথে ঘুমের কানেকশনটা হয়তো একটু বেশিই।সেই সাথে মাঝে মাঝে কারেন্টের জ্বালাতন বৃদ্ধি পায়।এসব অবশ্য পল্লী অঞ্চলের গল্প।শহুরে বিদ্যুতের অব্দা লাইন হওয়ায় লোডশেডিং এর সমস্যা খুব একটা পোহাতে হয় না।তবুও আজকে ঠান্ডা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগেভাগেই ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই।বাইরের টিপটাপ শব্দ ঘুরের গভীরতা বাড়াচ্ছে।শুধুমাত্র টই টই করছে তাবাসসুম। রাতের নাস্তাটাও একটু দেরিতেই করেছে সে।অতপর ঐশীর ঘরে ঢোকে।এলোমেলো করে রাখা জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত হয়।পিকনিক থেকে ফিরে এসব ঐশীই এলোমেলো করে রেখেছে।বিছানার উপর লেপের উপর দিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে এখন।ঠুকঠাক শব্দ হওয়ায় ঘুম ছুটে যায় তার।বিরক্ত হয়ে সে বলে,

“সারাদিন বহুত প্যারা খেয়েছি আপু।এখন কি তোর জ্বালায় শান্তিতে ঘুমাতেও পারব না?”

“সারাদিনে কাজের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে বহুত অভিশাপ দিয়েছো।এবার এই চকোলেটটা খেয়ে গোল হও।অভিশাপগুলো ফিরিয়ে নেও।”

কথাগুলো রগড় করে টেনে বলে তাবাসসুম।ব্যাগের সাইড পকেট থেকে একটা চকোলেট বের করে বিছানার উপর ছুঁড়ে মা’রে সে।বোন ও বউয়ের রাগ ভাঙাতে পিকনিক স্পটেই এই চকোলেট দুইটা কিনেছিলো সাদাত।বাসে সবাই ঝিমাতে থাকলে অতি সংগোপনে ঐশীর ব্যাগের সাইড পকেটে ঢুকিয়ে দেয়।আর বোনের চকোলেট নিজ পকেটে নিয়ে বাসায় ফেরে।ঐশীর চকোলেটের উপর একটা কাগজ আটকে দিয়েছে সে।যাতে গুটি গুটি হরফে এসব লেখা ছিলো।কথাগুলো আরেকবার আওড়ে ঠোঁট চেপে হাসে তাবাসসুম।বোন জামাই তার কত্তো কেয়ারিং।

তড়িৎ উঠে পড়ে ঐশী।চকোলেটটা হাতে নিয়ে বিষ্মিত হয় সে।এটা যে সাদাতের কান্ড বুঝতে বাকি নেই কারো।কিন্তু পিকনিক স্পটে সে যে সাদাতকে অনেক অভিশাপ দিয়েছিলো তা সাদাত জানলো কেমনে!ভাবুক হয় ঐশী।ক্ষণেই মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।স্বামী হিসেবে সাদাতের দেওয়া প্রথম দান এটা।সারাদিনের ধকলটা নিমিষেই মিলিয়ে যায় তার।লোকটা তার মন ভালো করার জন্য চেষ্টা করেছে এটা মন্দ লাগেনি।বরং ভালোই লেগেছে।কেও তো খেয়াল রাখছে তার।স্পষ্ট হাসি দেখা যায় ঐশীর ঠোঁটের কোণে।
_________
ফেব্রুয়ারীর শুরুর দিকে কনকনে শীতের দাপট খানিকটা কমে যায়।আবার গরমের তাপদাহের আগমন হতেও ঢের দেরি থাকে।বসন্তকালের শুরু না হলেও আবহাওয়ায় নাতিশীতোষ্ণ ভাব বিদ্যমান ছিলো।যা হুটহাট অসময়ী বৃষ্টির ফলে চুপসে গিয়েছে।বেশ ঠান্ডা পড়েছে আজ।এর মাঝে একটা শাল গায়ে জড়িয়ে কলেজে উপস্থিত হয় ঐশী।শিক্ষাসফর শেষে একদিন বন্ধের পর দ্বিতীয় দিন বোটানি ডিপার্টমেন্টে ক্লাস শুরু হয়েছে আজ।একটু দেরী হওয়ায় প্রথম ক্লাসটা মিস হয় ঐশীর।দ্বিতীয় ঘন্টায় সাদাতের ক্লাস।এই মানুষটার সামনে আসতে বেশ বিব্রত লাগে ঐশীর।আর গতদিনের ঘটনাটা আরও বিব্রত করেছে তাকে।এরপরে আর সাদাতের ক্লাস করার ইচ্ছে নেই।লোকটার সামনে পড়লেই অস্বস্তি হবে তার।বন্ধুদের বিভিন্ন বাহানা দেয় ক্লাস বাঙ্ক মা’রার জন্য।অথচ নারাজ তারা।

“আজকের ক্লাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।কোনোভাবেই এই ক্লাস মিস দেওয়া যাবে না।সাদাত স্যার গুরুত্বপূর্ণ একটা সাজেশন দিবে আজ।”

বেঁকে বসে বলে সায়ান।অন্যরাও সায় মেলায় তাতে।ঐশী জবাবে বলে,

“তাইলে আমি একাই গেলাম।ক্লাস কর তোরা।সাজেশনটা আমাকে দিস।”

সিন্থিয়া বলে,

“এতো তাড়া কিসের তোর?জামাইয়ের লগে ডেট এ যাবি নাকি?তোর হাবভাব দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।”

অর্ক বলে,

“তা মনে হবে কেমনে?দেখ আন্টি আঙ্কেল কোনো সরকারি চাকরিজীবী ওয়ালা কাকুর গলায় ঝুলাই দিছে ওকে।ওরা কি রোম্যান্টিক হয় নাকি?ওরা তো ঘুষের টাকার উপর নাকে তেল মেরে ঘুমানোকে ডেটিং মনে করে।”

বিরক্ত হয় ঐশী।তেঁতো কন্ঠে বলে,

“একদম বাজে বকবি না।নাইলে কিন্তু থাবড় মে’রে কান ব্লক করে দিবো।”

জেবা রগড় করে বলে,

“বাব্বাহ জামাইয়ের উপ্রে এত্তো টান।তা তোর জামাইকে এল্লা দেখা দেখি।”

“আমার জামাই দেখার আগে তুই নিজের ভবিষ্যৎ দেখ।সাদাত স্যার এসে গেছে।ক্লাস শেষে যে তোদের কি হাল করমু মাইরি।শুধুমাত্র তোদের লিজ্ঞা আজক্যা আমার ক্লাস বাঙ্ক মারা হইলো না।পাঠার দল।”

সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে দরজার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে সাদাত।দাঁত কেলিয়ে হেসে নিজের সিটে চলে যায় ওরা।ক্লাসে সাদাত ঢুকতেই দাঁড়িয়ে যায় সকলে।হাতের ইশারায় সবাইকে বসতে বলে সাদাত।একটু কেশে গলা ঝেরে বলে,

“আপনারা সকলেই জানেন আজকের ক্লাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।তাই গভীর মনোযোগ দিয়ে ক্লাসটা শেষ করবেন এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নোট করে নিবেন।মনে রাখবেন,আজকে যা শেখানো হবে পরবর্তীতে তা বোঝানোর সুযোগ নাও হতে পারে।বোঝা গিয়েছে?”

“জ্বী স্যার।”

সবাই একযোগে মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়।নিজের মতো করে বুঝাতে শুরু করে সাদাত।তার বুঝানোর ভঙ্গিমা এতোই অমায়িক,যেকোনো অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীরও মনোযোগ কাড়তে সক্ষম।ঐশীও নিজের অস্বস্তি ভুলে পড়ায় মন দেয়।গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোটে টুকে নেয়।একজন বুঝানোতে ও অন্যজন বুঝতে ব্যস্ত থাকায় চোখে চোখ পড়ে না কারো।প্রায় ক্লাস শেষের দিকে নিজের লেকচার সম্পূর্ণ শেষ করে ঐশীর দিকে নজর দেয় সাদাত।যে যার মতো লিখতে ব্যস্ত।ঐশীও তাদেরই দলে যোগ দিয়েছে।মাথা উঁচু নিচু করার দরুন প্রেয়সীকে স্থির ভাবে পরোখ করার সুযোগ মেলে না তার।এতে খানিকটা বিরক্ত হয় সে।তবুও বাহ্যিক আচরণে নির্লিপ্ত থাকে।স্থান কাল ভুলে ঐশীর দিকে পূর্ণ নয়নে তাকায় সাদাত।নতমুখের ঘন কালো পাপড়ির আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে চঞ্চল দুটি চোখ।তিরতির করে মসৃন ঠোঁট নাড়াচ্ছে ঐশী।হয়তো নোট করা বিষয়টা মুখেও আওড়াচ্ছে।চোখ সড়িয়ে ফেলে সে।মেয়েটা এখনো বাচ্চাদের ন্যায় লেখার সময় বিড়বিড় করে দেখে আনমনেই হাসে সাদাত।আবারও তাকায় ঐশীর পানে।আচমকা তার দৃষ্টি আটকায় ঐশীর উন্মুক্ত গলার কুচকুচে কালো তিলটার দিকে।যেটা গতদিন উন্মা’দ করে দিয়েছিলো তাকে।তার ভিতরে চিত্রশিল্পীর গুন উদয় করেছে।আবারও তাল হারায় সে।সংযত রাখা দৃষ্টি দ্বিতীয় বারের মতো পতিত হয় বেহায়াপনায়।ইচ্ছে করে ওই স্থানটায় তার অবাধ্য অধর দিয়ে একবারের জন্য ছুঁয়ে দেয়ার।সম্পূর্ণ অধিকার থেকেও স্থান, কাল ছাড়াও অন্য কোথাও একটা বাধাপ্রাপ্ত সে।নিজের ইচ্ছাকে শাশিয়ে দ্রুতই চোখ সড়িয়ে ফেলে।নিজের চিন্তায় নিজেই লজ্জিত হয়।ভাগ্যিস ক্লাসের কেও তার মন পড়তে সক্ষম নয়।যদি এমনটা হতো তবে কেমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো।ঐশীই বা কি ভাবতো তাকে?সংযত রাখা ব্যক্তিত্বে কালিমা লেপ্টে যেতো।নাহ এখানে থাকা আর সম্ভব নয়।অনুভুতিরা অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।সবাইকে বাকিটুকু লিখে নিতে বলে বেড়িয়ে পড়ে সে।চমকিত হয় সকলে।এই প্রথম বার নিয়ম ভঙ্গ করলো সাদাত।ক্লাস শেষ হওয়ার ঘন্টা পড়ার আগেই বেরিয়ে গেলো।এর ওর দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে বিষ্ময় প্রকাশ করলো সবাই।তাদের বিষ্ময়ে বিষ্মিত হলো দূর ডালে বসা দাঁড় কাকটি।কা কা করে ডেকে ওঠে সে।গাছ থেকে পাড়া চঞ্চুতে আবদ্ধ ছোট ফলটা পড়ে যায় বেখেয়ালে। সাথে সাথে ভাইব্রেশনে কেঁপে ওঠে ঐশীর মুঠোফোন।ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করে স্ক্রিনে তাকাতেই তার চোখ চড়ক গাছ।সাদাত স্যার দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।অবাক হয় ঐশী।সাদাত তার নাম্বার পেলো কি করে?সিন্থিয়া দিয়েছে নিশ্চয়ই।কৌতুহল দমাতে না পেরে মেসেজটি ওপেন করে উৎসুক রমনী।চোখে জ্বলজ্বল করে তিনটি বাক্য।

“নিষিদ্ধ জায়গায় যদি সুদর্শনীয় তীলক থাকে, তবে তা উন্মূক্ত রাখতে নেই সর্বনাশীনি।দৃষ্টি বেসামাল হয় কারো।কাল থেকে হিজাব পড়ে আসবে।”

বিষ্ময়ে বিহ্বলে মুখের খেই হারিয়ে ফেলে ঐশী। শব্দগুলোর অর্থ বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লাগে তার।
অজান্তেই হাত চলে যায় নিজের গলার ছোট্ট কালো বিন্দুতে।ইশ কি লজ্জা!চোখ তুলে তাকাতে পারে না ঐশী।লজ্জায় মিইয়ে যায় একেবারে।রক্তিমা আভা ছড়িয়ে যায় তার মেদুর গালে।এটা কি বললো সাদাত?আদৌ লোকটা বুঝেছে এই কথায় কতোটা ইফেক্ট পড়বে লজ্জাবতী রমনীর উপর।এরপরেও কি আর সাদাতের সামনে দাঁড়ানোর শক্তি অবশেষ থাকবে তার?এমনিতেই সাদাতের সান্নিধ্যে অস্বস্তিতে পালিয়ে বেড়ায় সে।এরপর অস্বস্তিতে আর সামনে যাওয়াই হবে না।পুরুষটা এভাবে তাকে আড়ষ্ট না করলেও তো পারতো!

মনে মনে বিড়বিড় করে ঐশী,

“বদমাশ লোক একটা!”

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে