স্বচ্ছ প্রণয়াসক্ত পর্ব-২৭

0
803

#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_২৭
#মুসফিরাত_জান্নাত

পাকা রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি চলছে আপন গতিতে।রাস্তার মাঝে হটাৎ গাড়ির গাদার স্তুপ জমতেই গাড়ি ব্রেক কষে সাদাত।যার ফলে ঝাকুনি দিয়ে সামনে হেলে পড়ে ঐশী।রাস্তার এদিকটায় হুট করে জ্যামে আবৃত হওয়ায় বিরক্ত হয় সাদাত।তার চেয়েও বেশি বিরক্ত হয় ঐশীর খামখেয়ালিপনায়।সে বার বার বলেছে গাড়িতে উঠেই যেনো সিট বেল্ট বেঁধে নেয় ঐশী।কিন্তু প্রত্যেকবারই এই একই ভুল করে সে।বিরক্তিতে চ সদৃশ্য শব্দ উচ্চারণ করে সাদাত।নিজের সিট বেল্ট খুলে ঐশীর দিকে অনেকটা ঝুঁকে যায়।বিব্রত বোধ করে ঐশী।ভ্রু কুঁচকে বলে,

“লজ্জার মাথা খেয়েছেন নাকি?দিনের বেলায় রাস্তার মাঝে একি শুরু করলেন?”

ঐশীর কথায় হতভম্ব হয়ে যায় সাদাত।তার এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যটা যে মেয়েটি অন্য এঙ্গেলে টেনে নিয়েছে তা বেশ বোঝে সে।ভ্রু কুটি করে ঐশীর দিকে তাকায় সে।কণ্ঠে কাঠিন্যতা মিশিয়ে বলে,

“লজ্জার মাথা আমি খাইনি,মিজের পুরো মাথা খেয়েছো তুমি।কতবার বলেছি গাড়ি উঠে সিট বেল্ট লাগাতে?এখন যদি ব্যাথা পেতে বিষয়টা কেমন হতো?”

বাক্যগুলো উচ্চারণের ফাঁকে ঐশীর সিট বেল্ট লাগিয়ে নিজের সিটে এসে বসে সাদাত।নিজের ভুলভাল চিন্তা ও তার বহিঃপ্রকাশে খানিকটা লজ্জিত হয় ঐশী।লজ্জা লুকাতে মুখ ঘুরিয়ে জানালার কাচ গলিয়ে বাহিরে তাকায় সে।সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে সাদাত।সময়টা সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই।আলোয় রাঙা আভা বিদায় নিয়েছে একটু আগে।সেই সাথে তাদের মাঝে থেকে একটা চিন্তাও কেটে গিয়েছে।ঐশীর পিসিওডি শনাক্ত হওয়ার পাঁচদিন পার হয়েছে আজ।হরমোন পরীক্ষার রিপোর্ট গুলো আজ ডাক্তারকে দেখাতে এসেছিলো তারা।সব রিপোর্ট নরমাল আসায় পূর্বের দেওয়া ঔষধ ও নিয়ম কানুন মেনে চলার পরামর্শ দেন ডাক্তার।সেখান থেকে ফিরতি পথে বাড়ি ফিরছে তারা।কয়েক মিনিট পর জ্যাম ছুটে যেতেই আবারও গাড়ি চলতে শুরু করে।

খুব দ্রুতই বাড়ি ফেরে তারা।সেদিন থেকে আজ অবধি ঐশীর কাছে ভরসার অবলম্বন হয়ে থাকতে শশুর বাড়ি রয়ে গিয়েছে সাদাত।ব্যাপারটায় ঐশী খানিকটা লজ্জাবোধ করলেও সাদাতের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।আজ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সারপ্রাইজড হয় তারা।বাসায় রাসেল ও তাবাসসুম উপস্থিত হয়েছে।দীর্ঘদিন পর বোনের আদুরে মুখখানা দেখে দৌড়ে যায় ঐশী।তাবাসসুমকে জাপ্টে ধরে সে।তাবাসসুমও নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ঐশীকে।দীর্ঘদিন পর বোনের দর্শন প্রাপ্তি ও নিজের বর্তমান দুঃখের বহিঃপ্রকাশ হয় ঐশীর চোখ ছাপিয়ে।তার রেশ দেখা যায় তাবাসসুমের চোখেও।বোনের কষ্ট ভাগ করে নিতেই যে তার বাবার বাড়ির আঙিনায় পদার্পণ।তাছাড়া এতো ব্যস্ততা ঠেলে কীভাবেই বা সে আসতো?তাবাসসুম বোনের মুখখানায় আদুরে স্পর্শ বুলিয়ে বলে,

“কতো ঝামটে গিয়েছিস তুই।আমি প্রথম যখন শুনেছিলাম তখনই আসতাম।কিন্তু শাশুড়ীকে অসুস্থ অবস্থায় একা বাসায় ফেলে আসতে পারিনি।আজ ননদকে শশুর বাড়ি থেকে এনে রেখে এসেছি।আর তোর ভাইয়া তো জানিস সারাদিন ব্যস্ত থাকে।বাসায় ফিরেও অনেক রাত করে।আজ বিকেলে রোগী দেখাটা বাতিল করে তবেই এসেছে।”

চোখ মুছে ঐশী।হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,

“এতোটা সিরিয়াস কিছুও হয়নি আমার আপু।এতো তাড়াহুড়োর দরকার ছিলো না।আমি ঠিক আছি।”

“হু ঠিক থেকেই তো শরীরের এই অবস্থা বানিয়েছিস।আর পন্ডিতি করতে হবে না তোকে।”

কিছুটা ধমকের সুরে কথাটা বলে তাবাসসুম।দমে যায় ঐশী।বোনের পাশে চুপচাপ বসে থাকে সে।তাবাসসুম কঠোর হয়ে বলে,

“এখন আমি এসে গিয়েছি।তুই সুস্থ হওয়ার আগ অবধি আর যাচ্ছি না কোথাও।কিভাবে অনিয়ম করিস তাই দেখবো আমি।”

তাবাসসুমের কথার বিপরীতে শুকনো ঢোক গিলে ঐশী।সাদাতের প্যারাতেই এই কয়দিনে চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে সে।এর উপর আবার তাবাসসুম যোগ দিলে তার কি হবে এই চিন্তায় কাহিল হয়ে যায় সে।রাসেলের দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে সে বলে,

“আপনি বসুন দুলাভাই।আমি ফ্রেশ হয়ে নাশতা নিয়ে আসছি।”

কথাটা বলে চলে যায় ঐশী।সেদিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে তাবাসসুম।অপরদিকে দুই ভায়েরা কুশল বিনিময় করে বসে পড়েছে পাশাপাশি সোফায়।ঐশীর রিপোর্ট সহ প্রেসক্রিপশনটা খুঁটিয়ে দেখছে রাসেল।সাথে টুকটাক কথাও বলছে সাদাতের সাথে।ওদের দিকে মনোযোগ দেয় তাবাসসুম।ধাতস্থ কণ্ঠে রাসেলের উদ্দেশ্যে তাবাসসুম বলে,

“এইযে তুমি।রিপোর্ট নিয়ে নাড়াচাড়া না করে কি করলে আমার বোনটা জলদি সুস্থ হবে তাই বলো।”

প্রতিউত্তরে হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলো রাসেল।ঐশীর অসুস্থতার খবর শুনে এই কয়টা দিন কতোটা ছটফট করেছে তাবাসসুম তা সে খানিকটা হলেও দেখেছে।তাই ঐকান্তিক হয় সে।গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“এই রোগ নিরাময়ের প্রধান উপায়ই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।ডাক্তার যেমনটা বলে দিয়েছে নিয়মিত ব্যায়াম,ডায়েট ও মেডিসিন নিয়ে ওজনটা কমিয়ে ফেলতে হবে।তবে একটা বিষয় মোস্ট ইমপোর্ট্যন্ট ওজন কমাতে গিয়ে নিজের শরীরের ক্ষতি করা যাবে না।স্বাস্থ্য সম্মত ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হবে।অন্যথায় শরীরে পুষ্টির অভাবে অন্য রোগ দেখা দিবে।”

গভীর মনোযোগ দিয়ে রাসেলের কথাগুলো শুনলো তাবাসসুম ও সাদাত।তাবাসসুম আবারও জিজ্ঞেস করলো,

“কোন খাবারগুলো খেলে বেশি উপকারে আসবে?মানে ওজনও কমবে আবার শরীরে ঘাটতিও দেখা দিবে না?”

“স্বাস্থ্যকর খাবারগুলিতে মনোযোগ দিতে হবে বেশি করে।তাজা ফল, শাকসবজি, লেবু এবং গোটা শস্য যোগ করতে হবে।ডায়েটে প্রোটিনের স্বাস্থ্যকর অংশ নিশ্চিত করতে হবে।ফলমুল ও শাক সবজির সাথে খেজুর এবং ডিম সহ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা,বিভিন্ন ধরনের বাদাম এগুলোও যোগ করতে হবে।মটরশুটি সহ বিভিন্ন ডাল জাতীয় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য,প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে হবে।পেঁপে পিরিয়ড নিয়মিত করতে হেল্প করে।তাই খাদ্য তালিকায় পেঁপে রাখা বেশ উপকারে দিবে।ওজন কমানোর জন্য ডিমের কুসুমটা স্কিপ করা হলেও ডিমের কুসুম ও বাদাম বায়োটিন প্রসিদ্ধ খাবার,যা চুল ঝরে পড়া ও স্কিনের বিভিন্ন জটিলতা যেমন, শুষ্কতা,ভংগুর নখ,চুল ইত্যাদি সমস্যা এড়াতে হেল্প করে।যেহেতু পিসিওডি এর জন্য প্রচুর চুল ঝরে পড়া সহ অনেকের স্কিন প্রবলেম দেখা দেয় সেক্ষেত্রে কুসুমটাও খেতে হবে।আর যেকোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার,ঘন চর্বি ও দুগ্ধজাত খাবার,চকোলেট,কফি,চিনি দিয়ে তৈরি খাবার এভয়েড করে চলতে হবে।গরুর মাংস,খাসির মাংস এসবের বদলে মুরগী,কবুতর এমন হোয়াইট মিট খেতে হবে।কিন্তু কোনো খাবারই পরিমানে বেশি খাওয়া যাবে না।আর পারত পক্ষে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খুব কম খাবে।এইতো।”

এসব নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ আলোচনা করলো তারা।রাসেল বুঝিয়ে দিলো রোগটা অতোটা জটিল না হলেও দীর্ঘ মেয়াদী পুষিয়ে রাখলে মাঝে মাঝে অনেক জটিলতা দেখা দেয়।যেমন,উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, কোলেস্টেরল এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন বিপাকীয় সিনড্রোম,গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব,গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস,নিদ্রাহীনতা,টাইপ 2 ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক ব্যাধি,
অস্বাভাবিক জরায়ু রক্তপাত,চিকিৎসা অযোগ্য ব্রণ, হরমোনের সমস্যা,দীর্ঘস্থায়ী লিভারের প্রদাহ
এমনকি অনেক রেয়ার ক্ষেত্রে এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।তাই মোটেও একে অবহেলা করা যাবে না।বরং নিয়মিত ঔষধ সেবন ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।আর ওজন নিয়ন্ত্রণটা যে সবচেয়ে জরুরী এবং পেটের মেদ ঝরানোর দিকে বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে তাও বুঝিয়ে দিলো সে।সব মনোযোগ দিয়ে শুনলো তাবাসসুম ও সাদাত।রাসেলের কথা অনুযায়ী একটা আদর্শ ডায়েট চার্ট বানিয়ে ফেললো তারা।আত্মীয়ের মাঝে একটা ভালো মানের ডাক্তার থাকার গুন এটা।সব রোগের চিকিৎসা তিনি দিতে না পারলেও কোন অসুখে কোন ডাক্তার দেখাতে হবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কি এসব জ্ঞান ভালোই দিতে পারে।
______
সময় গড়িয়ে ধরনীর বুকজুরে রাত নেমেছে অনেক পূর্বেই।ঐশীর ডায়েট প্ল্যানের জন্য খাবারের সময়টা আটটার মাঝে সীমাবদ্ধ।খাওয়া শেষে টুকটাক আলাপ করে দশটার মাঝে বিছানায় চলে যায় ঐশী।সারাদিনের ক্লান্তি কমাতে কয়েকদিন হলো তাড়াতাড়ি বিছানায় যায় সে।তাছাড়া নিদ্রাহীনতার সমস্যা এড়াতে রাতের সময়টায় মোবাইল ফোন সহ সকল কৃত্রিম পর্দার আলো চোখে ফেলতে নিষেধ করে গিয়েছে রাসেল।মোবাইলের কৃত্রিম পর্দার এই আলোক রশ্মি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।যার দরুন সকালে বেঘোরে ঘুমায় সে।তাই অভ্যাস পরিবর্তন করতে দুলাভাইয়ের এঁটে দেওয়া নিয়মগুলো যথাযথ পালন করছে ঐশী।সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানায় পিঠ দেওয়ার সাথে সাথেই চোখে ঘুম নামে তার।কিন্তু ঘুম নামছে না পাশে শুয়ে থাকা সাদাতের চোখে।আজ রাতের খাবারে বিভিন্ন আইটেমের ভাজি পোড়া খাবার, বিরিয়ানি, তৈলাক্ত খাবারগুলো স্থান পেয়েছিলো মেন্যুতে। রাসেল ডিনার শেষে চলে যাবে জন্যই এতো আয়োজন করা হয়েছিলো।আর রাসেলের উপস্থিতির জন্য ঐশী খাবে না জেনেও এসব খেতে নাকচ করতে পারেনি সাদাত।চক্ষুলজ্জায় বাধ্য হয়ে রাসেলের খাবারে সঙ্গী হতে হয়েছে তাকে।যা এখন সমস্যা সৃষ্টি করছে তার পেটে।গ্যাস বৃদ্ধি পেয়ে পেটের মাঝে পেইন হচ্ছে তার।অতিরিক্ত গ্যাস বাড়ায় পেট ফুলেও গিয়েছে খানিকটা।পেটে ব্যাথার দরুন মোচড়া মুচড়ি করছে সে।পাশে সাদাতের ক্রমাগত নড়াচড়া করায় ঘুমানোর একটু পরেই জাগ্রত হয় ঐশী।ঘুম জড়ানো চোখে পিট পিট করে তাকায় সে।সাদাতকে উশখুশ করতে দেখে জড়িয়ে আসা কণ্ঠে ঐশী জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে?”

“গ্যাস বেড়েছে।গ্যাস্ট্রিকের মেডিসিন আছে?”

বিরক্তমিশ্রিত গলায় জবাব দেয় সাদাত।ঐশী নিজের মেডিসিন বক্সের দিকে ইশারা করে বলে,

“হ্যাঁ।ওখানটায় আছে।একটা খেয়ে নিন।রিলিফ পাবেন।”

তড়িৎ উঠে পড়ে সাদাত।সাথে সাথে একটা অঘটন ঘটে যায়।অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বৃদ্ধিতে ও শোয়া থেকে ওঠায় পেটে একটু চাপ লাগায় স্বশব্দে বায়ুদূষণ হয়।হতভম্ব হয়ে যায় সাদাত।এটা কি করলো সে?তার বৈবাহিক জীবনে প্রথম বউয়ের সামনে এই অঘটন ঘটালো সে।লজ্জায় মাথা কাটা যায় তার।চোখ দুটো প্রশস্ত করে বিছানার দিকে তাকায় সে।ভড়কে যায় ঐশীও।সাদাতের সাথে পরিচয়ের এতোগুলো বছরে একবারও লোকটিকে এলোমেলো বা অপরিপাটি অবস্থায় দেখেনি সে।সেখানে বায়ুদূষণ করা তো অনেক দূরের চিন্তা।এছাড়া সাদাতের আচরণে মুগ্ধ হয়ে তাকে সেলিব্রিটির ন্যায় ধরে নিয়েছিলো ঐশী।পছন্দের তারকাদের চিন্তায় যেমন বায়ুদূষন করার কল্পনা কারো মাথায় আসে না,সাদাতের জন্যও ঐশীর মাথায় এই কল্পনা কখনো আসেনি।কিন্তু তার কল্পনাকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে সাদাতের এহেন কর্মে বিষ্মিত হলো সে।চোখের ঘুম মুহুর্তেই পালিয়ে গেলো।চোখ বড় বড় করে লোকটির দিকে তাকালো সে।বিষ্মিত হয়ে সে বলে,

“স্যার আপনিও পাদেন?”

ঐশীর প্রশ্নে বিষম খেলো সাদাত।একেতো এমন লজ্জা, তার উপর মেয়েটির এমন বোকা চণ্ডী মার্কা প্রশ্নে প্রতিক্রিয়া দিতে ভুলে গেলো সে।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো কেবল।এই প্রশ্নের কি জবাব দিবে সে?সাদাতের এমন প্রতিক্রিয়া শূন্য ভাব দেখে নিজের করা প্রশ্ন বিশ্লেষণে বসলো ঐশী।ব্যাপারটা খোলাসা হতেই আচমকা হাসি পেলো তার।ফিক করে হেসে সে বললো,

“ওই দ্যাখেন,আমিও না কতো বোকা।আপনি কি এলিয়েন নাকি যে পাদবেন না?”

কথাটা বলে থমকালো ঐশী।নিজের কথায় নিজেই বিভ্রান্ত হলো যেনো।হাসি থামিয়ে মিনমিন করে বললো,

“এলিয়েনরা পাদে কি না তা তো জানি না।তাহলে এমনটা বললাম কেনো?”

ঐশীর নিজে নিজেই এমন ফালতু কথাবার্তায় সাদাত যেনো কোমায় চলে গেলো।এসব কি বলছে মেয়েটি।হতভম্বের মাত্রা বেড়ে লজ্জা পালালো।নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো সে।গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

“এরপর গবেষণারত বিজ্ঞানীদের বলবে এলিয়েনদের বায়ুদূষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেনশন করতে তারা যেনো মিস না করে।তাহলেই ওই বিষয়ে জানতে পারবে।স্টুপিড কোথাকার।”

ধমকে সুরে কথাটা বলে মেডিসিন খেয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো সাদাত।ভ্যাবলাকান্তের মতো সেদিকে তাকিয়ে রইলো ঐশী।
_______
এলার্মের কর্কশ শব্দ কানে বাজতেই লাফিয়ে ওঠে ঐশী।বেলা ছয়টা বাজে।গতরাতে মেডিসিনের তড়িৎ কার্যকরিতা লক্ষ হতেই ফজরের সময় জাগতে হবে না বুঝে গিয়েছিলো ঐশী।যেহেতু ছয়টার পর ঘুমানো নিষেধ তাই ঠিক ঠিক ছয়টায় এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো সে।এখন জাগ্রত হয়ে বিষ্মিত হয় সে।পাশে সাদাত নেই।সাথে তার ব্যবহার্য জিনিস পত্রও নেই।বিষ্মিত হয়ে করিডোরে যায় ঐশী।সেখানেও সাদাতের উপস্থিতি নেই।চিন্তা আরও বৃদ্ধি পায়।অবশেষে সারা বাড়ি খুঁজেও সাদাতকে না পেয়ে সাদাতের নাম্বারে ফোন দেয় সে।কিছু সময় রিং হতেই কল ধরে সাদাত।গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“আমি বাড়ি চলে এসেছি।দীর্ঘদিন শশুর বাড়ি থাকা বেমানান।এখন থেকে নিজের কেয়ার নিজে নেওয়া শিখো।নিয়ম মিস করো না যেনো।আর আপু যেহেতু এসেই গিয়েছে।তাই আমি আর যাবো না ওখানে।”

সাদাতের কথাগুলো শুনে আশ্চর্যান্বিত হয়ে ঐশী শুধায়,

“কিন্তু কাওকে না জানিয়ে গেলেন কেনো?”

প্রশ্নটা শুনে দ্বিধায় পড়ে যায় সাদাত।সে কি করে বলবে রাতের ঘটনায় লজ্জা পেয়ে ও বাড়ি ছেড়ে এসেছে সে।ঐশীদের পাশের রুমেই ঘুমায় তার শশুর শাশুড়ী।তার বায়ুদূষণের শব্দ না পেলেও নিজস্ব লজ্জার একটা ব্যাপার আছে তো নাকি?এজন্যই তো কাওকে কিছু না জানিয়ে চলে এসেছে সে।বিষয়টা এড়িয়ে ধাতস্থ কণ্ঠে সে বলে,

“প্রয়োজনীয় কাজ ছিলো,তাই কাওকে জানাতে পারিনি।তুমি জানিয়ে দিও।”

কথাটা বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় সে।তপ্ত শ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,

“রোগীর সান্নিধ্যে থেকে নিজেই রোগী হয়ে যাচ্ছিলাম।তাতেও সমস্যা ছিলো না।তাই বলে গ্যাস বেড়ে বায়ুদূষণের মতো লেইম রোগ হতে হবে?আল্লাহ বাঁচাইছে রাতে বৃষ্টি ছিলো।তাছাড়া শশুর শাশুড়ী শুনলে লজ্জায় মাথা কাটা যেতো।”

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে