#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_১৮
#মুসফিরাত_জান্নাত
একটা ট্রে তে করে চা নাস্তা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঐশী।টেবিলের উপর ট্রে রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সাদাতের পাণে।তার হাতে নিজের মুঠোফোন দেখে চমকে ওঠে ঐশী।তড়িৎ হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে বলে,
“এই আপনি অনুমতি ছাড়া আমার ফোন নিয়েছেন কেনো?জানেন না, অন্যের ব্যক্তিগত ফোন তার অনুমতি ব্যতিরেকে ধরতে নেই।”
ঐশীর রাগান্বিত চেহারার বিপরীতে কুটিল হাসি দেয় সাদাত।ঐশীর মতো করেই রগড় করে বলে,
“তুমিই বা পারমিশন ব্যতিত আমার ছবি দেখছিলে কেনো?জানো না,অন্যের ব্যক্তিগত ছবি তার অনুমতি ব্যতিরেকে দেখতে নেই।”
পুরুষটির এমন কথা শুনে স্তম্ভিত ঐশী নিমজ্জিত হয় প্রগাঢ় লজ্জায়।দ্রুত মাথা নিচু করে ফেলে সে।রক্তিমা আভা ছেয়ে যায় তার মেদুর গালে।পুরো শরীর অবশ হয়ে আসে।লোকটি তবে ধরে ফেলেছে সে যে ওনার ছবি দেখছিলো?এই ভয়ই তো সে পেয়েছিলো।কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,
“বিষয়টি এমন নয়।হুট করে ওই ছবিটা সামনে চলে আসছিলো।”
“আল্লাহ তাই?তা তোমার ফোনেই বা আমার ছবি স্থান পেলো কেমনে?এটাও কি হুট করে পেয়েছে?”
সাদাতের এহেন প্রশ্নে থতমত খায় ঐশী।এটার কি জবাব দিবে সে?সাদাতের সাথে যে কথায় পেরে উঠবে না তা স্পষ্ট বোঝে সে।তাই বৃথা চেষ্টা বাদ দিয়ে দমে যায় একেবারে।অন্যদিকে মুখ করে নিজের লজ্জা নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।কিছুটা বিড়বিড়ও করে সে।সাদাতের ছবি সে দেখলে দেখেছে।লোকটার বুঝতে হবে কেনো?আর বুঝলেও বা মুখের উপর এভাবে বলতে হবে কেনো?বদমাশ কোথাকার!ঐশীর লজ্জিত চেহারা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে সাদাত।নিষ্কম্প নয়নে তাকিয়ে থাকে ঐশীর পাণে।লজ্জা নিবারণের জন্য মেয়েটিকে কিছুটা সময় দেওয়ার পূর্বেই হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।দুই হাতে জড়িয়ে ধরে ঐশীর কোমড়খানা।তার কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচু কণ্ঠে বলে,
“যে ব্যক্তির পুরোটার দখলদারিত্বই আমার।তার কোনো কিছুতে কি পারমিশন নেওয়ার আদৌ প্রয়োজন পড়ে?”
আকষ্মিক ঘটনায় বিমুঢ় ঐশী চক্ষুদ্বয় প্রশস্ত করে ফেলে।কিঞ্চিৎ সময় নেয় নিজেকে ধাতস্থ করতে।পরক্ষণেই লজ্জায় মিইয়ে যায়।চোখ মুখ খিঁচে ফেলে।সাদাতের এতো নিকট স্পর্শ পেতেই অন্য রকম এক অনুভুতির শিহরণ খেলে যায় শরীর জুরে।কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠে সে।শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়।নিজেকে নিয়ন্ত্রণের আপ্রাণ চেষ্টা চালায় সে।কিন্তু লজ্জারা ধাই ধাই করে বৃদ্ধি পায়। লজ্জা আড়াল করতে সাদাতের গলায় মাথা ঠেকায় সে।স্মিত হাসে সাদাত।সম্মোহনী কণ্ঠে বলে,
“তুমি চাইলে আমাকে দেখতেই পারো।জোর করবো না ঠিকই।কিন্তু বাঁধাও দিবো না।”
সাদাতের কথাগুলোর মাঝে হয়তো শীত খেলা করছিলো।যার দরুন কেঁপে উঠছিলো রমনী।ভিন্ন এক শিহরণে শরীরের পশম জেগে উঠছিলো।শ্বাস প্রশ্বাসেও ভিন্ন অনুভুতির মিশ্রণ হচ্ছিলো।যা এই প্রথম বারের মতো অনুভব করে ঐশী।স্বচ্ছ প্রেমের অনুভুতি কি তবে এমনই হয়?জানে না ঐশী।জানার চেষ্টাও করে না।সে তো ব্যস্ত নিজেকে সংযত করতে।
তার এই অনুভুতির স্থায়ীত্ব খুব বেশি সময়ের জন্য হলো না।
“আপু তুই তো পাকোরার প্লেটটা রেখে এসেছিস।”
কথাগুলো বলতে বলতে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো তুষার।বোন ও দুলাভাইয়ের ঘনিষ্ঠ অবস্থা দেখে থমকে গেলো সে।তড়িৎ ঘুরে দাঁড়ালো।সাদাত ও ঐশী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।দ্রুত নিজেদের মাঝে যথাযথ দুরত্ব বৃদ্ধি করে দাঁড়ালো।বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে হাঁসফাঁস করতে লাগলো তারা।তুষারও বেশ বিব্রত হয়েছে।এমন একটা অবস্থা দেখবে আগে জানলে রুমেই ঢুকতো না সে।লজ্জা লুকাতে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সে।সাদাতও মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ততা দেখালো।ঐশী কিছুটা সময় নিয়ে পাকোড়ার প্লেটটা নিয়ে এসে নাস্তার টেবিলে যোগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।এ যেনো লজ্জা ঢাকার নিরব মিছিল।
_______
সময়ের বহমান স্রোতে দেখতে দেখতেই কে’টে গেলো অনেকগুলো দিন।সেদিনের পর সাদাত আর এ বাড়ির ত্রি সীমানা মাড়ায় নি।ঐশীও এর মাঝে একটি বারের জন্যও কলেজ যায় নি।যার দরুন সাক্ষাৎ হয় নি তাদের।এই সময় গুলোতে ঐশী সারাক্ষণ বাবার পাশে পাশে থেকেছে।কখন কি লাগে না লাগে,ঠিকঠাক ওষুধ খাওয়ানো ও নিয়ম কানুন পালনের তদারকি করেছে।তাবাসসুমের অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা চলায় বাবার সেবায় খুব একটা সময় দিতে পারেনি সে।এ নিয়ে বড় আফসোস তার।তাবাসসুমের আফসোসটা অবশ্য মিটানো আর সম্ভব হলো না।আনোয়ার খাঁন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন তাবাসসুমের বিবাহ কার্য দ্রুতই সম্পন্ন করবেন।বড় ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেয়েকে বিয়ে দিবেন তিনি।যেই ভাবনা সেই কাজ।হবু বেয়াই পক্ষকে ডেকে একত্রে বসে সুনির্দিষ্ট একটি দিন তারিখ ঠিক করলেন তিনি।সেই অনুযায়ী আগামী শুক্রবার বিয়ে।বৃহস্পতিবার হলুদ সন্ধ্যার আয়োজন করা হবে।হাতে সময় মাত্র পাঁচদিন।এর মাঝে সবকিছু গুছিয়ে নিতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে সবার।এই মুহুর্তে এসে সবচেয়ে ব্যস্ত দেখাচ্ছে তুষারকে।বয়সে সবার ছোট হয়েও দ্বায়িত্বের খাতিরে যেনো সবচেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে সে।বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড ছাপানো ও আত্মীয় স্বজন সহ সর্বত্র দাওয়াতের কার্য সহ কমিউনিটি সেন্টারের এপয়েন্টমেন্ট সেই সামলে নিচ্ছে।সাথে অবশ্য তার ছোট চাচাও সঙ্গ দিচ্ছে।শরীরের এই অবস্থা নিয়ে বাবাকে কোনো ধরনের ঝামেলায় না ফেলতেই তার এতো ধকল।এটা অবশ্য তাবাসসুমের প্রতি নিজের করা বেয়াদবির প্রায়শ্চিত্ত স্বরুপ নিজের সিদ্ধান্তও বটে।বড় বোনের উপর চড়াও হওয়াটা যে কতোটা বেমানান ও আদব বহির্ভূত কাজ তা সাদাতের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করেছিলো সে।তারপর থেকে তাবাসসুমের প্রতি পূর্বের চেয়েও অধিক শীতল হয়েছে তুষার।বোনের বিদায়ের সন্নিকটের এই মুহুর্তে এসে বড় ভাইয়ের ন্যায় দ্বায়িত্বপরায়ন হয়ে উঠেছে অষ্টাদশে পদার্পণকারী পুরুষটি।তুষারের এই কর্তব্যপরায়ণ আচরণে সালেহা খাঁনম ও আনোয়ার খাঁন দুজনেই বেশ খুশি হন।এই প্রথমবারের মতো নিজের তিন সন্তানকে কাছে ডেকে নেন তিনি।তাবাসসুম ও ঐশীকে নিজের দুই পাশে স্থান দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।অতপর তুষারকে কাছে ডেকে নিয়ে বলেন,
“আমি সবসময় আমার দুই মেয়েকে নিজের পাশে বসিয়ে রাখি বলে কি তুই মনে কষ্ট পাস বাবা?”
স্মিত হেসে মাথা নাড়ায় তুষার।
“না আব্বু।আমি একটুও এতে মনে কষ্ট পাই না।বরং ভালো লাগে এটা ভেবে যে অন্য আর পাঁচ দশটা মানুষের মতো মেয়ে বলে আপুদের তুমি অবহেলা করো না।”
অধর জোরা প্রশস্ত করেন আনোয়ার খাঁন।পুরোনো স্মৃতি চারণ করে বলেন,
“আমি ওদের এতো ভালোবাসি কেনো জানিস?কারণ কন্যা সন্তানদের কপাল গাড়ির চাকার মতো।কখন কোন দিকে মোড় নেয় বলা কঠিন।আমার আদরে গড়া সন্তানগুলো বিয়ের পর পরের ঘরে কেমন থাকবে তার নিশ্চয়তা আমি কখনোই দিতে পারবো না।তাই নিজের কাছে রাখা সময়টায় ওদের বেশিই আগলে রাখি।জানিস,আমার আজও মনে পড়ে যেদিন তাবাসসুমের জন্ম হলো।আর আমি প্রথম বাবা হলাম।ছোট ছোট হাত,ছোট পা গুলো দিয়ে কেমন আলতো করে নড়াচড়া করতো।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম।আনাড়ি দুই হাত মেলে কোলে নিতাম ওকে।কারণে অকারনে বাবা হওয়ার স্বাদ ক্ষনে ক্ষনে লুফে নিতাম।তার দু বছর পর ঐশী হলো।বাবা হওয়ার আনন্দটা সেই প্রথম বারের মতোই অনুভুত হলো।আমার প্রাপ্তির খাতায় আরেকটি কন্যা সন্তান।বিশ্বাস কর আবারও কন্যা সন্তান হয়েছে বলে কখনো মুখ ভার করিনি আমি।মনে একটু কষ্ট লাগেনি।বরং আগলে নিলাম দুই হাতে।তারা দুইজনে সম্পূর্ণভাবে বড় হওয়ার পূর্বেই তিন বছরের মাথায় তুই হলি।তোর জন্মটা যেনো আরও বিশেষ হয়ে উঠলো।আমি ও তোর মায়ের আনন্দের পাশাপাশি সমান আনন্দ লুফে নিলো তোর দুই বোন।তাবাসসুমের তখন পাঁচ বছর বয়স।ভাই হয়েছে বলে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেললো।ওর সাথে না বুঝে ঐশীও তাল মেলালো।তোকে কোলে নেয়ার জন্য সে কি বায়না ধরতো তাবাসসুম।ওর দেখাদেখি ছোট্ট ঐশীও জেদ করতো ভাইকে কোলে নিবে।তোর যত্নে আমাদের চেয়ে ওরাই যেনো বেশি আগ্রহ খুঁজে পেতো।ওদের নিজেদের খাবার নিয়ে গিয়ে তোর মুখে ধরে আধো আধো কন্ঠে তোকে খেতে সাধতো।তুই কি আর ওসব শক্ত খাবার খেতে পারবি।কখনো মুখের ভিতর খাবার পুরে না দেয় এই ভয়ে সব সময় চোখে চোখে রাখতাম ওদের।”
এটুকু বলে থামলেন আনোয়ার খাঁন।পুরানো স্মৃতিচারণ করে একটু হাসলেন তিনি।অতপর আবারও বললেন,
“সবার আদরেই বড় হলি তুই।দেখতে দেখতে ওরাও যে কবে বড়ো হয়ে গেলো টেরও পেলাম না।এক কন্যা বিয়ে দিয়ে ঘরে রেখেছি।আর আরেক কন্যাকে বিয়ে দিয়ে শশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।সময় কতো দ্রুত যায়।”
একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি।
“জানিস একটা পরিবারের গল্প ঠিক যেনো একটা বৃহৎ বট গাছের মতো।পিতা মাতা যদি শিকড় হয় তবে পুত্র সন্তানেরা তার মূল কাণ্ড, যা শিকড়ের সাথেই সীমাবদ্ধ থাকে।আর ছড়িয়ে পড়া ডালপালা গুলো হলো কন্যা সন্তান।যা শিকড়ের পাশাপাশি কান্ডের উপরও নির্ভরশীল।শিকড় এদের পুষ্টি দিলে কাণ্ড আশ্রয় দেয়।ডালপালাগুলো যেমন শিকড় থেকে মূল কাণ্ড থেকে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে।এরাও তেমন বিয়ে হয়ে পরের বাড়িতে ছড়িয়ে থাকে।ডালপালাগুলো যেমন মূল কাণ্ড থেকে সম্পূর্ণরুপে ছিন্ন হওয়ার আগে এদের দেহে প্রাণ কেড়ে নেওয়া সম্ভব হয় না।বেশ জীবন্ত হয়েই বেঁচে থাকে।বাড়ির মেয়েগুলোও তেমনই বাবা।তাই আমি চাই আমার যত্নে গড়া এই ডালপালা দুইটাকে কখনো যেনো ছিন্ন করিস না তুই।তাহলেই ওরা জীবন্ত থাকবে।আমার অতি যত্নে গড়া কন্যা দুইটা আমাদের জীবনে তোর আগে আগমন করলেও শেষবেলায় তোর উপরেই নির্ভশীল।ওদের বাবার বাড়ি,ওদের জন্মস্থান, বেড়ে ওঠার এই জায়গা থেকে কখনো বঞ্চিত করিস না।আমার অবর্তমানেও না।ওদের দেখে রাখিস তুই।তোর ছোটবেলায় ঠিক যেভাবে বুকে তুলে আগলে রেখেছে তোকে।তুইও সেভাবে ওদের আগলে রাখিস।আমার এই জীবনের এই একটাই চাওয়া,আমার সন্তানেরা যেনো কখনো ছিন্ন না হয়।শেষ বয়সেও যেনো তোদের এভাবেই একত্রে দেখতে পাই।তাহলে আমি ম’রে গিয়েও নিশ্চিন্ত থাকবো।”
চোখের ভিতরে পানি টলমল করছে আনোয়ার খাঁনের।কথার সমাপ্তি টেনে চোখ মুছলেন তিনি।ভারাক্রান্ত হলো সকলের মন।পরিবেশটা কেমন মুহুর্তেই ভারী হয়ে উঠলো।তুষার বাবাকে আশ্বস্ত করে বললো,
“তুমি চিন্তা করো না আব্বু।আমার মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আমি আপুদের আগলে রাখবো।এটা আমার ওয়াদা।আর ভাই হিসেবে তাদের সাথে যতোই ঝই ঝামেলা হোক না কেনো,ভালো তো ঠিকই বাসি তাই না বলো।তোমারও তো একটা বোন আছে।তার প্রতি নিজের অনুভুতি দিয়েও তো বুঝতে পারো আপুদের আমি ঠিক কতোটা ভালোবাসি।”
মাথা দোলালেন আনোয়ার খাঁন।ছেলের কথায় যুক্তি পেলেন।তার বোনকে তিনি এখনো আগলে রেখেছেন।তার ছেলেও এটা শিক্ষা পেয়েছে।বোনেদের ফেলবে না নিশ্চিন্ত হন তিনি।কিন্তু কান্না আটকে পাল্টা জবাবে কিছু বলতে পারলেন না তিনি।অকারণেই আজ যেনো খুব কান্না পাচ্ছে তার।তার বুকের এক পাশটা যে শূন্য হয়ে যাচ্ছে।তা তো কেও জানে না।বিয়ের আমেজ নিয়ে সবাই ব্যতি ব্যস্ত থাকলেও পিতা মাতার মনে চলা হাহাকারটা তো আর দৃষ্টিগোচর হয় না।সেই খাঁ খাঁ শূন্যতাই যেনো চোখের পানি দিয়ে পূর্ণ হতে চাইছে আজ।দুই হাতে দুই মেয়ের মাথায় হাত বোলালেন তিনি।না চাইতেও আরও চারজোরা চোখ ভিজে উঠলো।ঐশী,তাবাসসুম,সালেহা খাঁন,তুষার সবার চোখেই পানি।বাড়ির বড় কন্যার বিয়োগ যাত্রার পূর্বেই যেনো শূন্য হয়ে গেলো পুরো বাড়ি।হেলে পড়লো সব দায় দ্বায়িত্ব।সবকিছু অগোচরেই ফেলে এক প্রহর ঝিমিয়ে কাটিয়ে দিলো সবাই।
_______
দেখতে দেখতে কেটে গেলো মাঝের কয়টা দিন।আজ তাবাসসুমের হলুদ সন্ধ্যা।বাড়ির ছাদে ছোট পরিসরে করা হচ্ছে হলুদের আয়োজন।সারা বাড়ি হরেক রকমের আলোয় সজ্জিত হয়েছে।সাথে সজ্জিত হয়েছে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত সকল নর নারীর দল।সেই দলে যোগ দিয়েছে ঐশীও।ফুল পাতার কাজের ভারী সবুজ পাড়ওয়ালা হলুদ রঙা শাড়ি পড়েছে সে।কোমড় অবধি লম্বা চুলগুলো খুলে দিয়েছে আজ।ঠোঁটে কড়া লিপস্টিকের প্রলেপ লাগিয়েছে।হাত ভর্তি সবুজ ও হলুদ রেশমী কাচের চুড়ি কম্বিনেশন করে শোভা পাচ্ছে।মুখশ্রী জুরে কৃত্রিম প্রসাধনীর কমতি নেই।পরিপূর্ণ সাজ সজ্জায় অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারি হয়ে উঠেছে সে।ছাদের প্রবেশ দ্বারে পা ফেলতেই সর্বপ্রথম ঐশীর দিকে নজর যায় সাদাতের।অপার্থিব সৌন্দর্যের অধিকারি এই নারীর মাঝে আবারও আটকে যায় সে।দৃষ্টি বেসামাল হয় অকারণেই।নিজের বেখেয়ালেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঐশীকে পর্যবেক্ষণ করে সাদাত।ঐশীর গাঢ় রঙে রাঙা ঠোঁট দুটি ভিষণ করে টানে সাদাতকে।ক্ষণেই মস্তিষ্কে চারা দেয় নিষিদ্ধ এক বাসনা।সংযত রাখা চরিত্রটা বেহায়া হয়ে ওঠে আজ।তার চারিত্রিক সার্টিফিকেট আজ হয়তো একেবারেই মূল্যহীনই হয়ে গেলো।এ মেয়েটা যে তাকে সংযত থাকতে দিচ্ছে না।বেসামাল করে দিচ্ছে তাকে।নিষিদ্ধ প্রেমের টানে উন্মাদ করে দিচ্ছে যেনো।তপ্ত শ্বাস ছাড়ে সাদাত।ধাতস্থ পায়ে ঐশীর দিকে এগিয়ে যায় সে।
নিজের দিকে কারো আগমনের আভাস পেতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ঐশী।সাদাতের দৃষ্টি দেখে ক্ষনেই মিইয়ে যায়।না চাইতেও কেমন লজ্জিত হয় সে।যা আরও বেসামাল করে দেয় সাদাতকে।ধাতস্থ কণ্ঠে সে বলে,
“এই শাড়ি ও সাজ সজ্জা এখনি পরিবর্তন করে আসবে তুমি।যাও।”
থতমত খেলো ঐশী।চোখ দ্বয় প্রশস্ত করে বললো,
“কিন্তু কেনো?”
“আমি বলেছি তাই।”
“মানে কি?”
সাদাত এইবার কণ্ঠ কঠিন করে বলে,
“মানে এইটা তোমার এই সাজ সজ্জা আমার পছন্দ হচ্ছে না।বেসামাল হয়ে যাচ্ছি আমি।”
শেষ উক্তিটি ঠিকমতো বুঝে উঠতেই লজ্জায় মিইয়ে গেলো ঐশী।দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো তড়িৎ।সাদাতের দ্রুত বেগে পতিত শ্বাস প্রশ্বাসকে হারিয়ে দিলো তার নিশ্বাসের গতি।এক ছুটে পালিয়ে গেলো সে।আর সামনে এলো না সাদাতের।ভাবখানা এমন,তার সামনে পড়লেই যেনো সর্বনাশ হয়ে যাবে।কঠিন সর্বনাশ।অথচ তার উচাটন শরীর মনও খুব করে চায় এই সর্বনাশটা একবার হোক।হলেই বা ক্ষতি কি?সে তো তার স্বামীই।তার একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ।
চলবে