#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_১১
#মুসফিরাত_জান্নাত
এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায় ঐশী।শূন্য দৃষ্টিতে তাকায় ভোরের আকাশে।এক ঝিলিক সোনা রোদ ছড়িয়ে আছে নীলাভ অম্বরের কোলে।উড়ন্ত পাখির ঝাঁক ডানা ঝাপটে চলছে খাদ্যের সন্ধানে।একটু একটু করে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে শহর জুরে।ঐশী এসব পরোখ করে আনমনে ঠোঁট ছোঁয়ায় গরম চায়ের কাপে।অলস সকালের এই বেলায় চা-টা বেশ মজাদার লাগে তার নিকট।হটাৎ তার মুঠোফোনটি বেজে ওঠে।ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকায় সে।কৃত্রিম পর্দায় ভেসে ওঠে অসংরক্ষিত একটি রবি নাম্বার।ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়।অপর পাশ থেকে সালামের জবাব নিয়ে এক পুরুষ কণ্ঠ বলে,
“ওলাইকুম আসসালাম ম্যাম।আপনার নামে একটি পার্সেল আছে।আপনার বাসার নিচে আমি দাঁড়িয়ে আছি।কাইন্ডলি এসে রিসিভ করবেন।”
ভ্রু কুটি করে ঐশী।সাথে বিষ্মিতও হয়।সে তো কোথাও কোনো কিছু অর্ডার করে নি।তবে পার্সেল পাঠালো কে?ছোট করে উত্তরে সে আসছি বলে কল কেটে দেয়।
চিন্তিত মুখে নিচে নামে সে।বাসায় কোনো দাঁড়োয়ান না থাকায় নিজেই চাবি দিয়ে মুল গেইটের তালা খোলে।পার্সেল রিসিভ করে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের স্বাক্ষর দিয়ে যথারীতি উপরে চলে আসে।মনে তখনো খুঁতখুঁতে ভাব রয়েই গিয়েছে।এই অসময়ে কে তার নামে পার্সেল পাঠালো?সযত্নে করা প্যাকিং বাক্স ওপেন করতেই নিশ্চিন্ত হয়।সাথে অধরের কোণে ফুটে ওঠে এক টুকরো হাসি।একটা সুন্দর দোলনা স্থান পেয়েছে ভিতরে।চাইলে ঘরে অথবা করিডোরেও ঝুলিয়ে রাখা যাবে দামী এই দোলনাটি।গোল এই দোলনাটির অর্ধেকটা জুড়ে রশির নেট বিদ্যমান।এই রশিগুলো সাজানোর জন্য কিছু কাপড়ের ফুলও পাঠিয়ে দিয়েছে।সাথে নরম গদি ও তিনটি ছোট কুশন রয়েছে।এই গিফট পাঠানো মালিকটা যে সাদাত তা বুঝতে বাকি থাকে তা ঐশীর।সাদাতকে বিয়ে করার দরুন তার মনে জন্মানো কালো মেঘগুলো ক্রমেই সড়ে যায়।তার স্থলে হানা দেয় সুভ্র এক অনুভুতির।যা স্বচ্ছ প্রণয়ের আসক্তিতে আস্তে ধীরে টেনে নিয়ে যায় তাকে।লোকটা কতো খেয়াল রাখে তার।সেদিন দোলনা প্রিয় বুঝতেই তার নামে এতো চমৎকার দোলনা পাঠিয়ে দিয়েছে।আনমনেই হেসে ওঠে সে।করিডোরে ঝুলানোর ইচ্ছা জাগলেও ঘরের এক কোনে অতি সন্তর্পনে দোলনাটা ঝুলিয়ে দেয় ঐশী।পছন্দমতো ডেকোরেশন এর কাজ সাড়ে।অতঃপর প্রথম বারের মতো চড়ে বসে তার বৈধ প্রেমিকের পাঠানো দোলনায়।প্রশান্তিতে মনটা ছেয়ে যায়।অধর প্রশস্ত হয় অজান্তেই।মনে মনে সে বলে ওঠে,
“শেষ হয়ে যাবে বলে আপনার দেওয়া প্রথম গিফট চকোলেটটা না খেয়ে আজও যত্নে রেখে দিয়েছি।এটাকে কি করে করিডোরে ঝুলাই বলেন?ওখানে ঝুলালে তো এতে রোদ স্পর্শ করতো,বৃষ্টি ছুঁয়ে দিতো।অথচ এটা স্পর্শ করার হক একান্ত আমার।ওদের দখলে গেলে ঈর্ষা জাগতো না আমার?একান্ত ব্যক্তিগত আপনার দেওয়া একটা ক্ষুদ্র জিনিসও আমার নিকট অযত্নে থাকবে না স্যার।”
কথাগুলো আওড়ে কিছু সময় ওভাবেই কাটায় ঐশী।মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে শিরা উপশিরায়।হারিয়ে গিয়েছে কল্পরাজ্যে।যেখানের একমাত্র দখলদার সাদাত।
দোলনার খপ্পরে পড়ে তখন নিয়ে আসা চায়ের কথা বেমালুম ভুলে বসেছে সে।মস্তিষ্কে সেটা জেগে উঠতেই চায়ের কাপটা হাতে নেয়।কাপের তাপমাত্রাই বলে দিচ্ছে এটা স্বাদহীন ঠান্ডা শরবতে রুপ নিয়েছে।
কাপটা হাতে নিয়ে কিচেনের উদ্দেশ্যে প্রথম কদম ফেলতেই সেখানে উপস্থিত হয় তাবাসসুম।হাতে তার এক গাদা পোশাক।ঘরে সদ্য ঝুলানো দোলনাটা দেখে তার চোখ চড়কগাছ।বিষ্ময়ের উর্ধ্বে পৌঁছে সে বলে,
“এটা কি দেখছি আমি!এটা কখন কিনলি তুই?”
ভ্রু কুটি করে ঐশী।স্বগোতক্তি কণ্ঠে বলে,
“দেয়ার মতো মানুষ থাকতে কিনতে যাব কোন দুঃখে?সে পাঠিয়েছে।”
দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয় তাবাসসুম,
“ওয়াও! হাও রোম্যান্টিক বইনা।তলে তলে জল এতোদূর গড়াইছে।জাঁদরেল থেকে সে!অথচ কিছু টেরও পেলাম না।”
তাবাসসুমের রসিকতাপূর্ণ বুলিতে কিঞ্চিৎ লজ্জা পায় ঐশী।দ্রুতই নিজেকে ধাতস্থ করে সে।নইলে তার রক্তিমা চেহারা দেখে তাবাসসুম আরও উস্কানি পেয়ে বসবে।
হাতে আনা পোশাকগুলো বেডের উপর রেখে দোলনার দিকে এগিয়ে যায় তাবাসসুম।দোলনার নরম দেহে চড়ে বসে বলে,
“আহ কি আড়াম!দোলনাটা সেই হইছে রে।”
হৈ হৈ করে ওঠে ঐশী।
“তোকে ওখানে বসার পারমিশন কে দিয়েছে?ওঠ তাত্তাড়ি।আমার সাধের সব জিনিসে তোর ভাগ না বসালে চলে না তাই না?”
থতমত খায় তাবাসসুম।ঐশীর এমন রুপ সে আগে কখনো দেখেনি।তড়িৎ উঠে দাঁড়ায়।চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে ঐশী।নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
“আমার সব জিনিসে তোর ভাগ থাকলেও ওনার পাঠানো কোনো কিছুতে নেই।ভুলেও আর ওটা স্পর্শ করবি না।ঈর্ষা জাগে আমার।”
হতভম্ব হয়ে যায় তাবাসসুম।কিছুটা সময় নেয় পুরোটা বুঝতে।অতপর হেসে দিয়ে বলে,
“বাব্বাহ!প্রেমে তো ভালোই পড়েছিস দেখছি।কয়েকদিনেই এতো রঙ বদল?খারাপ নাহ!”
কোনো জবাব দেয় না ঐশী।তাবাসসুম মিটমিট করে হাসতে থাকে।তা দেখে রুষ্ট হয় ঐশী।স্বগোতিক্ত গলায় বলে,
“এই সাত সকালে এসব নিয়ে এসেছিস কি করতে?”
সম্বিত ফিরে তাবাসসুমের।গম্ভীর হয়ে বলে,
“দেখ তো কোন ড্রেসটাতে আমাকে বেশি মানায়?”
অবাক হয় ঐশী।সন্দিগ্ধ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“হটাৎ এটা জিজ্ঞেস করছিস কেনো?”
“আরে দরকার আছে।বলনা কোনটাতে বেশি সুন্দর লাগে আমাকে।”
গুটি পাঁচেক থ্রি পিচ বিছানার উপর মেলে ধরা।তার দিকে এক পলক তাকায় ঐশী।অভিজ্ঞ ভাব ধরে ল্যাভেন্ডার রঙা একটা ড্রেস সিলেক্ট করে দেয়।গুনগুন করতে করতে হেলেদুলে ড্রেসটা নিয়ে আয়রন করতে চলে যায় তাবাসসুম।সন্দিহান হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে ঐশী।আজকে তো কোনো বিশেষ পার্টি বা অনুষ্ঠানও নেই।তবে পোশাক নিয়ে এতো ঐকান্তিক কেনো মেয়েটি?
_________
শীতের রিক্ততাকে বিদায় জানাতে মাঘ মাসের শেষের দিকে বেলা দ্বি প্রহরে একটু তপ্ততার দেখা মেলে।শহুরে জীবনের ঘনবসতি পূর্ণ এই যান্ত্রিকতায় শীত বিদায় নেয় একটু আগে আগেই।যার দরুন দিনপঞ্জিকায় শীতকালের অবস্থান থাকলেও অলস দুপুরে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়েছে সাদাত।গাড়িতে গ্যাস ভর্তি করতে পাম্পে এসেছিলো সে।লম্বা লাইন বলে দিচ্ছে তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় লাগবে।এই সময়টায় কোথাও একটু জিরিয়ে নেয়ার জন্য নিকটস্থ রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে সে।বিশ্রাম নেয়ার সাথে লাঞ্চ এর কাজটাও পূর্ণ করে ফেলতে চায়।পাঁচতারা এই রেস্তোরাঁর ভেতরে প্রবেশ করতেই এসির শীতল পরশ গায়ে ছড়িয়ে যায়।বাহ্যিক প্রশান্তি অনুভব করে সে।কিন্তু ভেতরটা কেমন অস্বস্তিতে ভরে ওঠে।তিক্ত হয়ে যায় অভ্যন্তরীন অনুভুতি।সামনের টেবিলে বসা রমনীই তার এই অনুভুতির প্রধান কারণ।এই মেয়েটির চোখে পড়ার আগেই দ্রুত কেটে পড়া দরকার।নয়তো ছ্যাচড়ার মতো তার পিছে পড়ে থাকবে । লম্বা পা ফেলে প্রস্থান করতে যায় সাদাত।কিন্তু খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারে না।রমনীর চোখে বিদ্ধ হয়ে যায় একটু পরেই।জনসম্মুখে নাম ধরে ডেকে ওঠে মেয়েটি।রেস্তোরাঁর ভিতরে কিছু সংখ্যক মানুষ থাকায় এড়িয়ে যেতে পারে না সাদাত।তীব্র অনিচ্ছা সত্বেও পিছু ফেরে সে।হাতের ইশারায় কাছে ডাকে মেয়েটি।অলস ভঙ্গিতে এগিয়ে যায় সাদাত।একটি চেয়ার টেনে তাকে বসার আহ্বান জানায় মেয়েটি।ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সাদাত।তিক্ত কণ্ঠে বলে,
“তোমার সাথে খুচরা কথা বলার মতো পরিস্থিতি আমার নেই শায়লা।আশা করছি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর করবে না।”
স্মিত হাসে মেয়েটি।বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
“আরে খবর রাখো না কিছু?পরিস্থিতি এখন পাল্টে গিয়েছে।বসো তো।”
“মানে!”
বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে সাদাত।আশেপাশে অনেক মানুষ রয়েছে।এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা বেমানান।কি একটা মনে করে বসে পড়ে একটা চেয়ার টেনে।ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার দেয়।স্মিত হাসে মেয়েটি।রগড় করে বলে,
“আজকাল কি তোমার টেম্পার একটু বেশি হট থাকে নাকি?অপরিচিত লোককেও ঝাড়ি দিতে ভুলো না।”
বিরক্ত হয় সাদাত।মেয়েটার কি মাথা গিয়েছে নাকি?অপরিচিত লোককে সে আবার কবে ঝাড়ি দিলো।তটস্থ চোখে তাকিয়ে থাকে সাদাত।সে যে শায়লার কথার অর্থ বুঝতে সক্ষম হয় নি তা অনুভব করে মেয়েটি।লম্বা শ্বাস টেনে বলে,
“আরে ওইদিন রাতের বেলায় অন্য একটা নাম্বার দিয়ে যে কল দিলাম তোমাকে।রিসিভ করেই কি গরম।আমি তো ভয়ে ফোনই সুইচড অফ করে ফেলেছিলাম।যদি আবার আগের ন্যায় রাগ দেখাও।”
বিষ্ময়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে যায় সাদাত।সেদিন রাতে কল দেয়া মেয়েটি তবে শায়লা ছিলো? সে তো ঐশী ভেবেছিলো।তাই তো ভাবে,সিন্থিয়ার দেয়া ঐশীর ফোন নাম্বারটা ভিন্ন হলো কেনো।আর ঐশী তো তার সান্নিধ্যেই থাকতে চায় না, সেই বা তাকে কল দিবে কেনো।সে কি একটু বেশিই ভেবে বসেছিলো?নিজের বোকামি ভাবনার দরুন লজ্জিত হয় সাদাত।নিজেকে ধাতস্থ করে ফেলে সে।নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,
“কল দিয়ে কথা না বললে ঝারি না দিয়ে কি করতাম?তা কল দিয়েছিলে কেনো?আবারও বিরক্ত করার জন্য?”
সাদাতের কণ্ঠে তীব্র অবজ্ঞা।অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মেয়েটি।শিক্ষা জীবনের পাঁচটি বছর এক সাথে এক প্রতিষ্ঠানে পড়েছে তারা।সাদাতের অন্যন্য ব্যক্তিত্ব ও অপরুপ সৌন্দর্যের দরুন তাকে অনেক মেয়েই প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।তার মধ্যে শায়লা অন্যতম।পা’গলের মতো সাদাতকে পছন্দ করতো মেয়েটি।হাজার বার অপমান করার পরও পিছু লেগে ছিলো সে।অথচ পাত্তা দেয় নি সাদাত।শিক্ষা জীবন শেষে নিজের সিমটাও বদলে ফেলে সে।সাদাতের আর হদিস পায় নি শায়লা।অতি কষ্টে সেদিন সাদাতের নাম্বার কালেক্ট করে কল দেয়।অথচ কথা বলার সাহস করে উঠতে পারে নি।যদি চিনে ফেলে তবে ব্লক খাওয়ার ভয়ে ফিরতি কলও ধরে নি।ফোন সুইচ অফ করে ফেলেছিলো।তারপর কে’টে গিয়েছে অনেকদিন।ঘটে গিয়েছে জীবন মোড়ের পরিবর্তন।হয়েছে অনুভুতির রঙবদল।আজ এই অবেলায় যে এভাবে দেখা হবে কল্পনা করে নি সে।কিছুটা দ্বিধা যুক্ত কণ্ঠে মেয়েটি বলে,
“ওসব বাদ দাও না সাদাত।আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।কিছুদিন পরই লন্ডনে মুভ করছি আমরা।”
“ওহ! কংগ্রাচুলেশনস।”
“ধন্যবাদ।এই উপলক্ষে যদি আজকের লাঞ্চের বিলটা আমি দিতে চাই,এই আবদারটা ফেলবে না আশা করি।”
নাকচ করার হাজারও ইচ্ছে থাকার পরও কি একটা ভেবে রাজি হয়ে যায় সে।মেয়েটার কোনো কথা তো শোনেনি কখনো।চলে যাওয়ার এই অবেলায় রাখুক না এই একটা আবদার।নিজের ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় প্রশান্তিতে হেসে ওঠে মেয়েটি।বিল মিটিয়ে একত্রে বের হয় সেখান থেকে।রাস্তার জ্যামে বসে এই দৃশ্য দেখে ফুঁসে ওঠে একটি প্রাণ।সকালে বোনকে দোলনা থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজের ভিতরেই অনুশোচনা জাগে ঐশীর।তাই তো সেরকম দেখতে আরেকটা দোলনা কিনতে মার্কেটের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছিলো সে।এখনের এই দৃশ্য দেখে তিক্ততায় মনটা বিষিয়ে ওঠে তার।আচমকা সেদিকে চোখ যায় সাদাতের।নিজের আপন রমনীকে একা একাই রাগান্বিত হওয়ার কারণটা ধরতে পারে না সে।শায়লার থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ঐশীর রিকশায় চড়ে বসে।রুষ্ট হয়ে মুখ উল্টো দিকে ফিরিয়ে নেয় ঐশী।অবাক হয় সাদাত।মেয়েটির হলো টা কি?তার এক হাত নিজের হাতে পুড়তেই সিটকে হাত সড়িয়ে নেয় ঐশী।বিষ্মিত সাদাত দ্বিধা ভরে বলে,
“এমন করছো কেনো?দোষটা কি আল্লাহর বান্দার বলবে তো?”
এতোক্ষণ অন্য একটা মেয়ের সাথে সময় কাটিয়ে এখন এমন ভাব নিচ্ছে যেনো কিচ্ছু হয় নি।রাগে ফুসে ওঠে ঐশী।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এখানে কি আপনার?যান ওই মেয়ের সান্নিধ্যে সময় কাটান।”
এতোক্ষণে অভিমানিটির রুষ্ট হওয়ার কারণ ধরতে পারে সে।ঐশীর আর একটু কাছ ঘেষে রগড় করে বলে,
“আর ইউ জেলাস?”
প্রতিবাদ করে ঐশী।
“একদমই না।”
সাদাত ভ্রু নাচিয়ে মজা করে বলে,
“আমার কেনো যেনো তাই মনে হচ্ছে।”
“বয়েই গিয়েছে আপনাকে নিয়ে জেলাস হতে।আপনি কে?যে আপনাকে নিয়ে জেলাস হতে যাবো।”
মুখ উল্টা দিকে রেখেই বলে ঐশী।সাদাত বোঝে রাগটা বেশ ভালোই জমেছে ঐশীর।কিছু একটা ভাবে সে।নরম স্বরে পুরোটা ব্যাখ্যা করে।ঐশীর অভিব্যক্তি হয়তো একটু পরিবর্তন হলো।লোকটিকে অন্য কারো সান্নিধ্যে দেখলে কেনো যেনো ঈর্ষা জাগে তার।প্রচুর হিংসা হয়।মেয়েটির অভিব্যক্তি হয়তো বুঝলো সাদাত।তার এক হাত নিজের হাতে পুড়ে নিয়ে মোহনীয় কণ্ঠে সে বললো,
“আমাকে কোনো মেয়ের সান্নিধ্যে দেখলে তুমি এতোটা রুষ্ট হবে পূর্বে জানলে কোনো মেয়ের সাথে লাঞ্চ করা তো দূরে থাক,চোখ তুলে তাকানোরও স্পর্ধা করতাম না আমি।”
কি ছিলো এই কথা গুলোর মাঝে?যা নিমিষেই মন জুড়িয়ে দিলো ঐশীর।শব্দগুলো তোলপাড় তুলে দিলো হৃদয়ে।তিরতির করে কেঁপে উঠলো বুক।সে স্পষ্ট বুঝলো,মনের জমা অভিমান দুরে কোথাও পালিয়ে গিয়েছে।এমন মধুর বুলি শোনার পরও কি আর রাগ থাকে?সাদাতের দিকে এক পলক তাকালো সে।মুহুর্তেই প্রানটা ভরে গেলো।ঠোঁটের কোনে সুক্ষ্ম হাসির দল খেলে গেলো।আনমনেই বলে উঠলো,
“ভুল বোঝার জন্য দুঃখিত।আসলে আপনাকে অন্য কারো সান্নিধ্যে দেখলে ঈর্ষা জাগে।রাগ লাগে আমার।”
স্মিত হাসে সাদাত।কিছু একটা ভাবে সে।নিরব থাকে কিয়ৎক্ষণ।অতপর তার গম্ভীর কন্ঠে স্পষ্ট করে বলে,
“তুমি না হয় এভাবেই হুটহাট ঈর্ষান্বিত হইয়ো।রাগ ভাঙানোর জন্য আমি থাকবো।”
সাদাতের বলা কথাগুলো মেয়েটি শুনলো কিনা বোঝা গেলো না।তবে স্পষ্ট হাসি ফুটে উঠলো তার অধরে।জ্যাম ছুটে গেলো।গাড়ি চলতে শুরু করলো।হুড তোলা রিকশার ভিতরে পাশাপাশি বসে যাত্রা করলো একজোড়া কপোত কপোতি।তাদের একত্রে দেখলে কে বলবে এদের সম্পর্কে অগাধ দুরত্ব?
চলবে