#স্পর্শ
#part_9
#sarika_Islam
সন্ধ্যার দিকে দিয়ার খুবি অস্বস্তি ফিল হচ্ছে কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে এর কারন ঠিক দিয়াও বুঝে উঠতে পারলো না।কেবিন থেকে বের হয়ে কফি সাইডে গেল সেখানে কিছুটা খোলামেলা পরিবেশ দক্ষিনা বাতাসও বয়ে চলে।দিয়া ফ্রেশ air নিতে সেখানে গেল।হয়ত মনের অস্বস্তি দূর হবে কিছুটা।
এক সাইডে দারিয়ে হাতে কফির মগ নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।কফির মগে চুমুক দিচ্ছে।তখনি ফোন আসলো রায়ান ফোন করেছে।দিয়া ফোন রিসিভ করলো,
-হ্যালো,
-হুম হ্যালো,কি করা হচ্ছে?
-এইতো কফি খাচ্ছি,
-আজ নিতে আসবো?নাকি একাই আসবে?
দিয়ার এভাবেও ভালোলাগছে না আবার একা বাসায় যাবে কেমন যেন লাগছে আজ। একটু ভেবে বলল,
-আচ্ছা পিক করে নিও,
-ওয়াহ দেটস গ্রেট,
দিয়া ফোন কাট করে দিল।ঘুরে দেখে আরমান পকেটে হাত গুজে দারিয়ে আছে দিয়ার দিকে তাকিয়ে।দিয়া আরমানকে ইগ্নোর করে সামনে বারতে নিলে আরমান প্রশ্ন ছুরে মারে,
-কার সাথে কথা বলছিলে?
দিয়া আরমানের প্রশ্নর কোন ধরনের উওর না দিয়ে ঘুরে বলল,
-আমার কাজ শেষ স্যার আমি তাহলে এখন আসি?
আরমান দিয়ার কিছুটা কাছে গিয়ে দারিয়ে বলল,
-নো,কাম টু মাই কেবিন,
বলেই চলে গেল,দিয়ার এখন খুব রাগ লাগছে কেন বারেবারে তার কাছে আসার আবার চেষ্টা করছে আরমান?দিয়ার মনের গহীনে আরমানের জন্য অনেক অভিমান জমা হয়ে আছে।দিয়া জোরে নিশ্বাস টেনে রিলেক্স করে নিজেকে আরমানের কেবিনের সামনে গেল।নক করে ভিতরে ঢুকলো সেখানে অলরেডি কয়েকজন আছে কাজ দেখাচ্ছে দিয়া হাফ ছেরে বাচলো।তাদের সামনে আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারবে না আরমান।সবার সাথে দারালো আরমান এক এক করে সবার ডিজাইন দেখছে আর তাদের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে।দিয়ার করা স্কেচ গুলো বের করে সবার সামনে প্রেজেন্ট করলো সকালে যেগুলো দিয়েছিল দিয়া।আরমান সেগুলো দেখিয়ে সবাইকে বলল,
-মিস দিয়ার মতো কাজ করো অবশ্যই ভালো হবে।
দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-দিয়ার এক একটা কাজ এক একটা জিনিস আমাকে খুবিই আকৃষ্ট করে তুলেছে।আই থিংক আমার জন্য দিয়া বেস্ট,
দিয়া সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে আরমানের দিকে তাকালো।আরমান সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আই মিন আমাদের কোম্পানির জন্য দিয়ার মতো ডিজাইনার বেস্ট।।
সবাই একমত করলো আরমানের সাথে।
রাত প্রায় নয়টা বেজে গেছে এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে।দিয়া ডিজাইন করতে ব্যাস্ত তখন রায়ান ফোন করলো।দিয়া পেন্সিল মুখের মধ্যে দিয়ে স্কেচের মধ্যে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করলো,
-হুম,
-কি হলো কাজ শেষ হয়নি?
-হ্যা হ্যা প্রায় শেষ,
-আমি কিন্তু নিচে,
-আসছি,
বলে দিয়া ফোন রাখলো সব ঠিকঠাক করে উঠলো যাওয়ার জন্য দরজা খুলে বের হতে নিলে খেল এক ধাক্কা।কিছুটা পরে যেতে নিলে আরমান ধরে ফেলে। দিয়া আরমানের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে। আরমানকে দেখলে যেন তার আর কিছুরই হুশ থাকে না।দিয়া সোজা হয়ে দারিয়ে যেতে নিলে আরমান পিছন থেকে বলে উঠে,
-ড্রপ করে দেই?
দিয়া আরমানের কাছে এসে ভ্রু কুচকে বলল,
-মানি কি এইসবের আরমান?
-মানি কি মানি?ড্রপ করে দিতে চাইলাম,
-নো থেংকস,তোমার এই sympathy র আমার কোন দরকার নেই।
আরমান দিয়া একিই লিফটে একসাথেই নামলো।দিয়া আরমানের সাথে তো কোন কথাই নেই পুরো নিরবতা কাজ করছে তাদের মাঝে।লিফট থেকে নেমে বাহিরে গেল রায়ান বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দারিয়ে ছিল।দিয়াকে দেখে হাত উচু করে হায় করলো।দিয়া রায়ানের সামনে গেল। আরমান পিছনেই ছিল দিয়ার,, রায়ান আরমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-তোমার বস?
দিয়া পিছে ফিরে আরমানকে দেখে ভরকে গেল ভয় পেয়ে গেল সে ভেবেছে আরমান চলে গেছে তার পিছে আসছে সেতো ভাবেইনি।দিয়া কিছুটা পিছে যেতে নিলে রায়ান ধরে ফেলে ধরতে গিয়ে কোমরে হাত পরে।আরমান রায়ানের হাত দেওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।রায়ান বলল,
-কি হলো দিয়া?
দিয়া ঠিকভাবে দারিয়ে বলল,
-হুম হুম বস,
রায়ান হাত বারালো আরমানের দিকে,
-হ্যালো আমি রায়ান,
-হায় আরমান,নাইস টু মিট ইউ,
বলে সেখান থেকে চলে গেল নিজের গাড়ির মধ্যে বসে পরলো।দিয়া তাকিয়ে দেখছে আরমানের দিকে। রায়ান বাইকে বসে হর্ন বাজাতে লাগলো,
-সিট দিয়া,
দিয়া বসে পরলো রায়ানের কাধে হাত রেখে।আরমান গাড়ির ভিতর থেকে ঠিক সব দেখছে আর জ্বলছে।গাড়ি নিয়ে চলে গেল রায়ানও এসে পরলো।
এভাবেই কাটলো আরো এক সপ্তাহ।
রায়ানের দিয়ার দিকে একটু একটু আগানো, আরমানের জেলাসি,,দিয়া আরমানেক ইগ্নোর করা এভাবেই দিনকাল যাচ্ছে।
দিয়া আজ ‘Deabook’ থেকে বিদায় নিবে আর সম্ভব না একিই ছাদের নিচে আরমানের সাথে থাকা।দিয়া আরমানের কেবিনে গেল একটা লেটার আরমানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-আমি resign করছি,
বলে যেতে নিলে আরমান রেগে উঠে দারায়।দিয়ার সামনে গিয়ে ওকে আটকায়,
-ও হ্যালো তুমি কি করছো এইসব?
-তোমাকে ইগ্নোর।
আরমান দিয়ার এমন শক্ত কথা শুনে কিছুটা ব্যাথিত হলো।দিয়ার দিকে মলিন ভাবে তাকিয়ে বলল,
-এতটা হেট করো আমায়?
-খুব,
বলে সেখান থেকে চলে গেল।আরমানও আর আটকালো না। তাকে তো হেটই করা উচিত সে যা করেছে তা মোটেও ঠিক করেনি দিয়ার সাথে।আরমানের সামনে থাকা টেবিলের উপর জোরে একটা লাথি মারে।
সন্ধায় দিয়া টিভি দেখছে হঠাৎ চকলেট খেতে মন চাইলো ফ্রিজ থেকে চকলেট নিল খাওয়ার জন্য,,মুখে দিল এক কামড় দেওয়ায় কেমন মুখ নুয়ে আসলো আর খেতে ইচ্ছে করছে না রেখে দিল।এখন মুখটা কেমন যেন করছে কিছু টকঝাল খেতে ইচ্ছে করছে বাসায় দিতিও নেই যে কিছু বানিয়ে দিতে বলবে।মনের আশাটা দমন করে দিল পুরোন করার মতো নয়।
দিতি ফিরলো এগারোটার দিকে একটু রাত করে।দিয়া টিভি দেখতে দেখতে সোফায়ই ঘুমিয়ে পরলো খুবি ঘুম পেয়েছিল তার।দিতি মেয়েকে সোফায় দেখে হাল্কা ভাবে ডাক দিতে লাগলো।দিয়া ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো,
-তুমি কখন আসলে?
-এইতো এখন,কি হয়েছে তোমার শরির খারাপ?
দিয়ার মাথায় হাত দিয়ে বলল দিতি।দিয়া হাল্কাভাবে হেসে বলল,
-নাহ
দিতি ঝাল পরাটা দিয়ার সামনে ধরলো,
-খাবে?
দিয়া খুশি হয়ে গেল সেটা নিয়ে টেবিলে বসলো দিতি ফ্রেশ হয়ে এসে মেয়ের সাথে বসল।দিয়া খুব মজা করে খাচ্ছে মুখে দিতে দিতে বলল,
-তুমি জানো আমার খুব ঝাল কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল,
হঠাৎ দিয়ার কেমন যেন লাগা শুরু হলো বমি চলে আসছে দিয়া মুখে হাত দিয়ে বেসিং এ দৌড় দিল।কিছুক্ষন পর অস্থির হয়ে এসে টেবিলে বসলো।দিতি দিয়ার এই অস্থিরতা দেখে বলল,
-কি হয়েছে?
-জানি না আজ কেমন যেন লাগছে।
-চলো ডাক্তারের কাছে যাই,
বলে উঠে দারালো।দিয়া উঠে উপরে যেতে যেতে বলল,
-দরকার নেই রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবো,
সকালে,
ফোনের রিং বাজাতে দিয়ার ঘুম ভাংলো ঘুমের চোখেই ফোন রিসিভ করলো,ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
-হ্যালো,
অপর পাশ থেকে আরমান বলল,
-এখন অব্দি ঘুমাচ্ছো?টাইম দেখেছ?সারে দশটা বাজে।কাম টু মাই অফিস hurry,,,
বলে ফোন কেটে দিল।দিয়া আরমানের এমন কথা শুনে হা হয়ে গেল কি হলো এইটা?জিদ্দে উঠে বসলো,
-উফ উফ উফ আমার কথা না শুনেই ফোন কেটে দিল উফ।নিজেকে কি ভাবে হ্যা?আমি যাবো না আমি বিদায় নিয়ে এসেছি আর পারাও দিব না।
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল নিচে ব্রেকফাস্ট করে সেখানেই বসে রইলো।সকাল পার হয়ে দুপুর হয়ে এসেছে দিয়া উঠে রুমে গেল গোসল করতে। বিছানার থেকে ফোন তুলে দেখলো 71টা মিসড কল আরমানের।দিয়া আবার ফোন উলটো করে রেখে দিল।শাওয়ার নিয়ে থ্রিপিস পরে নিচে গেল।
দিতি খাবার বেরে দিল এক লোকমা মুখে পুরতেই দিয়ার কেমন আবার বমি বমি ভাব হলো দিয়া খাবার টেবিল থেকে উঠে বেসিংএ গেল। দিতি মেয়ের পিছু পিছু গেল পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।দিয়া মুখে পানির ছিটে দিতে লাগলো ইচ্ছেমতো।চেয়ারে বসে চেয়ারের উপর মাথা রাখলো।এই খাবারের ঘ্রানটাও সহ্য হচ্ছে না টেবিল থেকে উঠে সোফায় বসে পরলো।দিতি দিয়ার এমন আনচান দেখে বলল,
-কি হয়েছে তোমার?
-জানি নাহ,
-চলো ডাক্তারের কাছে যাই,
-হুম,
বিকেলের দিকে দিয়া আর শ্রেয়া ডাক্তারের কাছে গেল।দিতির কাজ পরে গিয়েছিল বিধায় সে যেতে পারেনি।দিয়া আর শ্রেয়া ডাক্তারের কেবিনে বসে আছে রিপোর্ট এর জন্য।দিয়ার খুব নার্ভাস লাগছে কি হয় রিপোর্টে কে জানে!!
নার্স কিছুক্ষন পর রিপোর্ট এনে দিল।ডাক্তার রিপোর্ট চেক করে হাসি মুখে বলল,
– কংগ্রাচুলেশনস,ইউ আর প্রেগন্যান্ট।
দিয়া প্রেগ্ন্যাসির কথা শুনে অবাক হলো অনেকটাই অবাক হলো।শ্রেয়া হা হয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর দিয়া ডাক্তারের দিকে।ডাক্তার বলল,
-দিয়া আর ইউ ওকেহ?
দিয়া তরিঘরি করে বলল,
-হুম হুম আম ওকেহ,থে,,থেংক্স ডাক্তার।
রিপোর্ট হাতে নিয়ে উঠে দারালো। বাহিরে এসে খুশি হয়ে শ্রেয়াকে জরিয়ে ধরলো।
-শ্রেয়ু আমি মা হবো!!শ্রেয়ু আই কান্ট বিলিভ আমি মা হবো!!!
শ্রেয়াও খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলো।কিন্তু পরক্ষনেই বলে উঠলো,,
-দিয়া?কি হবে এখন?
দিয়া শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-এখন যা হবে দেখা যাবে,
বাড়ি আসলো দিতি ওর জন্য আগের থেকেই অপেক্ষা করছে।দিয়াকে দেখে দিয়ার সামনে গিয়ে বলল,
-কি হয়েছে?
দিয়া দিতির সামনে রিপোর্টটা দিল,,দিতি রিপোর্টটা দেখে দিয়াকে সজোরে একটা চর মারলো।দিয়া ছিটকে কিছুটা দূরে সরে গেল।
চলবে,,,,