#স্পর্শ
#part_8
#sarika_Islam
দিয়া বাড়ি চলে আসে নিজেকে ঘর বন্ধি করে ফেলে।সেইদিনের পর প্রায় এক সপ্তাহ দিয়া ঘরেই থাকে পুরো একা হয়ে যায় না কারো সাথে কথা না ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে সে।নিজের রুমেও কাউকে আস্তে দেয়না সেও বাহিরে যায় না যেমন তেমন করে বেচে আছে এই আরকি।
আজ শুক্রবার দিয়া গোসল করে নতুন একটা থ্রিপিস বের করে পরলো।নিজ ঘর থেকে বের হয়ে নিচে আসলো।দিতি দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করছিলো দিয়াকে আজ এক সপ্তাহ পর নিচে নামতে দেখে খুব বেশিই খুশি হয়ে গেল।দিয়া খাবার টেবিলে বসে দিতিকে বলল,
-আজ বিরিয়ানি খাবো বানাবে?
দিতি মেয়ের মলিন হওয়া মুখশ্রীর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামনে গেল।মাথায় হাত দিয়ে বলল
-অবশ্যই বানাবো, তুই ঠিক আছিস তো?
দিয়া ঠোঁটের কোনে খানিকটা হাসি ঝুলিয়ে বলল,
-হুম,,যাও এখন কথায় সময় নষ্ট করো নাতো,
দিতি মেয়ের খুশি দেখে নিজেও এক ফালি হাসি নিয়ে রান্নাঘরে গেল বিরিয়ানি বানাতে।
দুপুরে তারা খাওয়াদাওয়া শেষ করে বসে আছে। দিয়ার এখন অনেক বোর ফিল হচ্ছে দিতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-শ্রেয়াকে আসতে বলি?
দিতি ফোন থেকে মাথা তুলে বলল,
-হুম বলো,
দিয়া শ্রেয়াকে ফোন করে আস্তে বলল শ্রেয়া বিকেল দিকে এসে হাজির।দুই বান্ধুবী ছাদে গেল বিকেলের দিকে এখন রোদ কিছুটা কমেছে।দিয়া ছাদের এক কোনে রেলিং ধরে দারিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশে কিছু কবুতর উড়ছে সারিবদ্ধ ভাবে একই সরলরেখায় আবার কিছু কিছু কবুতর ডিগবাজীও খাচ্ছে।তা দেখে দিয়া আনমনেই বলে উঠলো,
-আমিও যদি পাখি হতাম মন্দ হতো না!!কারো ফ্রেমে বন্দী থাকার চেয়ে এই মুক্ত আকাশে আজাদ পাখির মতো উড়া অনেকটা শ্রেয়।
শ্রেয়া দিয়ার এমন ভাবলেশহীন কথা শুনে দিয়ার দিকে তাকালো দিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
-তুই কি সত্যিই ঠিক আছিস দিয়া?
দিয়া মুখে আলগা হাসি দিয়ে বলল,
-ভালো আর রইলাম কই,যাকে ভালোবেসেছি সেই তো পর করে দিল,
-এখন?
দিয়া শ্রেয়ার দুই বাহু ধরে বলল,
-এখন এইসব সেন্টিনেস বাদ,,এখন থেকে বেক টু ওল্ড লাইফ ওকেহ!!
-পারবি?
-হুম অবশ্যই,
আরো কিছুক্ষন কথা বলে দুইজন নিচে গেল।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে দিতি তরিঘরি করে কোর্টে গেল কাজ এসে পরেছে। দিয়া আর শ্রেয়া বাসায় একা,দিয়ার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
-শ্রেয়া এখনও কি তুই শপে আছিস?
-হুম একাই সামাল দেই,
-আমিও ফিরে আসি?আরমানের জব ছেরে দিব,
শ্রেয়া দিয়ার হাতে হাত রেখে বলল,
-সেকি আসবি কেন?তুই এখন শুধু তোর প্রফেশনাল লাইফে ফোকাস কর।তোর ফিউচার ভাব আর কিছু না।
-হুম,
সকালে,
দিয়া রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য নিচে নামলো দিতিও এখন কোর্টে যাবে দিয়াকে এভাবে রেডি হওয়া দেখে ভ্রু কিছুটা কুচকে বলল,
-কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
দিয়া টেবিল থেকে আগুলে জ্যাম নিয়ে খেতে খেতে বলল,
-অফিসে,
দিতি দিয়ার এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,
-তুমি সেই অফিসে আবার যাবে?আরমানের সামনে?
-সবচেয়ে বড় কাম্পানি ‘Deabook’ মম,সবার স্বপ্ন সেখান যাওয়ার কাজ করার আর আমি তো সেখানে এস এ ডিজাইনার হিসেবে আছি।
দিতি দিয়ার কাছে এসে বলে,
-ঠিক আছে স্বপ্ন পুরোন করো কিন্তু যেই কাজ করেছ তা যেন আর না হয়,ড্রপ করে দিব?
-না,
বলে দিয়া একাই বেরিয়ে পরলো। হেটে হেটেই দিয়া কিছুদুর পর্যন্ত এগুচ্ছে। মাঝরাস্তায় একটা বাইক এসে দিয়ার সামনে থামলো দিয়া হুট করে থেমে গেল ভয়ও পেল কিছুটা।রেগে গিয়ে বাইকে বসা ছেলেটাকে বলল,
-ও হ্যালো মারার ইচ্ছা আছে নাকি?এইভাবে বাইক চালালে লাইসেন্স ক্যান্সাল করে দিব।
বাইকে থাকা ছেলেটি মাথা থেকে হেলমেট খুলল, দিয়া রায়ানকে দেখে অবাক হয়ে বলল,
-তুমি?
রায়ান বাইক থেকে নেমে দারিয়ে বলল,
-এইভাবে কেউ কাউকে থ্রেট দেয়?ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,প্লিজ লাইসেন্স ক্যান্সাল করেন না আপা,,
হাত জোর করে দিয়াকে বলল,দিয়া হেসে ফেলল,
-নটাংকি বাজ,
রায়ান বুকের মধ্যে হাত গুজে বলল,
-যাক হাসাতে তো পেরেছি,আসো ড্রপ করে দেই,
দিয়া রায়ানের বাইকে চরে অফিসে আসলো।রায়ানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে ঢুকলো,,লিফটের সামনে গেল সেখানে অলরেডি আরমান দারিয়ে অপেক্ষা করছে লিফট এর।দিয়া আরমানকে দেখে সামনে না যেতে চেয়েও সামনে গিয়ে দারালো।
-গুড মর্নিং স্যার,
বলে লিফটের দিকে মুখ করে দারালো। আরমান তার সাইডে ফিরে দিয়াকে দেখতে পেল।দিয়াকে আগের মতো একটুও দেখাচ্ছে না কেমন যেন শুকনা হয়ে গেছে আগের থেকে,, চোখগুলো ডেবে গেছে একদম অন্যরকম লাগছে।লিফট এসে থামলো, আরমান প্রথমে ভিতরে ঢুকলো দিয়া ঢুকছে না আবার আসলে সে যাবে আরমানের সাথে মোটেও যাবে না একই সাথে।লিফট বন্ধ হতে নিলে আরমান আবার খুলে দেয় লিফটের বাটন ধরে, দারিয়ে আছে যেন বন্ধ না হয় আর দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর না পেরে বিরক্তি হয়ে দিয়া ভিতরে ঢুকলো।আরমান ছেরে দিল লিফট উপরে উঠা শুরু করলো।দিয়া পুরো সোজা তাকিয়ে আছে ভুলেও আরমানের দিকে মুখ করে তাকাচ্ছে না।আরমান বারংবার আড়চোখে দিয়াকে দেখে যাচ্ছে।লিফট এসে পরলে দিয়া ফটাফট বের হয়ে গেল নিজের কেবিনে গিয়ে হাফ ছেরে বসলো।
-উফ উফ উফ আমি এভাবে থাকতে পারবো না উফ।বারবার আরমানের সম্মুখীন হতে আমি পারবো না উফফফ।।
ডেস্কের উপর মাথা রাখলো তখনি দরজায় টোকা পরলো।নীল ভিতরে ঢুকে বলল,
-আরমান ডেকে পাঠিয়েছে,
দিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
-কেন?
-নিজেই গিয়ে জিজ্ঞেস করো,
বলে চলে গেল আর কিছু বললও না।দিয়ার এখন কি করা উচিত? সেকি যাবে?নাকি যাবে না?নাহ যাবে এইটাতো প্রফেশনাল লাইফ নট পার্সোনাল।দিয়া উঠে বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা ঠিক করে হাতে কিছু ডিজাইনের পেজ নিয়ে বের হলো।
আরমানের রুমে নক করে ভিতরে ঢুকলো।নিচের দিকে তাকিয়েই আরমানের সামনে ডিজাইন গুলো দিল।আরমান উঠে এসে দিয়ার সামনে দারালো পকেটে এক হাত গুজে আরেক হাত দিয়ে পেজগুলো নারাচারা করতে করতে বলল,
-কেমন আছো?
-পেপারে সব ডিজাইন আছে ভালো না লাগলে বলবেন আবার ড্র করবো,
বলে দিয়া ঘুরে যেতে নিলে আরমান দিয়ার হাত ধরে ফেলে।দিয়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় আরমানের স্পর্শে।আরমান দিয়াকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে আনে দিয়া আরমানের বুকের উপর গিয়ে পরে।দিয়া চোখ খুলে আরমানের দিকে মাথা উচু করে তাকালো,, আরমান দিয়ার মুখের উপর পরে যাওয়া চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,
-সেইদিনের বিহেভিয়ারের জন্য আম সরি,
দিয়া আরমানের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছারাতে চেষ্টা করতে করতে বলল,
-ই,,ইটস ওকেহ,
-আসলে,,
কেউ দরজায় নক করলো আরমান আর কিছু বলতে পারলো না, দিয়াকে ছেরে দিয়ে কিছুটা দূরে দারালো দিয়া যেন এইবার শান্তি পেল ছাড়া পেয়ে।একজন ভিতরে ঢুকলো হাতে কিছু পেপার নিয়ে
-স্যার কিছু ডিজাইন,
বলে আরমানের সামনে ধরলো আরমান তার হাত থেকে নিয়ে দিয়ার দিকে তাকালো।দিয়া একদম দরজার কাছে গিয়ে বলল,
-হেভ এ গুড ডে স্যার,
বলে বের হয়ে গেল,
চলবে,,