স্পর্শের_ভাষা part – 7

0
1005

স্পর্শের_ভাষা part – 7
writer – তানিশা

— তিন্নি রেগে আরাফের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে আছে। ইমরান তিন্নিকে একা দেখে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,,

ইমরান : Hi… কেমন আছো?

তিন্নি : ভালো, আপনি?

ইমরান : ভালো ছিলাম, তোমাকে দেখার পর আরও ভালো লাগছে।

— কথাটা শুনার সাথে সাথে আরাফ ভ্রু কুচকে ইমরানের দিকে তাকিয়ে আছে,,,

তিন্নি : মানে বুঝলাম না?

ইমরান : মানে যার সামনে শাড়ি পরা এতো pretty.. একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে, তার ভালো না লেগে উপায় আছে?

তিন্নি : এটা আপনার ধারণা, অবশ্য আপনার আশেপাশে এমন অনেক অরুচির রুগি আছে। যাদের শাড়ি পরিহিত মেয়েদের ভাললাগে না।

— কথাটা বলে আরাফের দিকে তাকালো। আরাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কারণ সে বুঝতে পারছে তিন্নি কথাটা তাকেই বলেছে,,,

ইমরান : really… এমন কেউ আছে নাকি? তাহলে সেই অরুচি রুগির choice.. পুরাই third class…

— বলেই ইমরান হো হো করে হেসে দিলো। আরাফের দিকে তাকাতেই তিন্নির প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। কারণ ইমরান জানেই না সে কাকে অপমান করছে। আরাফ তিন্নির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন সে চোখ দিয়ে তাকে গিলে খেয়ে ফেলবে।

ইমরান : by the way… তোমাকে না দেখলে জানতামই না মানুষ কখনো এতটা perfect… হতে পারে।

তিন্নি : মানুষ কখনোই perfect… হয়না। সবার মাঝে কিছুনা কিছু অসম্পূর্ণতা থেকে থাকে।

ইমরান : হয়তো। আচ্ছা আমার একটা কাজ আছে, একটু পরে আসছি।

তিন্নি : ok…

— ইমরান চলে যেতেই আরাফ এসে তিন্নিকে চোখ রাঙ্গিয়ে জিঙ্গেসা করলো,,,

আরাফ : আমি অরুচির রুগি?

তিন্নি : অবশ্যই।

আরাফ : তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।

তিন্নি : আপনি অপমানের যোগ্য হলে তাতে আমার কি?

— কথাটা বলতে বলতে একটা ছেলে এসে তিন্নিকে বলল,,,

সাব্বির : আপনি মালিহা মুন তিন্নি right…??

তিন্নি : হ্যাঁ, আপনি?

সাব্বির : আমি সাব্বির। আপনার সাথে কি একটা selfee… নিতে পারি??

— আরাফ ছেলেটা দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। চেনা নেই, জানা নেই কোথা থেকে উড়ে এসে ছবি তুলতে চলে আসলো। তিন্নি বলল,,,

তিন্নি : sorry… ভাইয়া আমি অপরিচিত কারো সাথে ছবি তুলি না।

সাব্বির : please… madam একটা selfee…

তিন্নি : বললাম তো ভাইয়া sorry… বিরক্ত করবেন না।

সাব্বির : please madam.. just একটা selfee

— আরাফ বুঝতে পারছে, তিন্নি ছেলেটার প্রতি বিরক্ত হচ্ছে। তাই সে কিছুটা রাগী সুরে ছেলেটাকে বলল,,,

আরাফ : আসেন ভাই আমার সাথে selfee তুলেন।

সাব্বির : আজব তো! আপনার সাথে তুলতে যাবো কেন? ( অবাক হয়ে )

আরাফ : আমার বৌয়ের সাথে ছবি তুলা যে কথা, আমার সাথে ছবি তুলা একই কথা। তাই আসেন একসাথে ছবি তুলি। ( এগিয়ে গিয়ে )

সাব্বির : sorry… madam যে বিবাহিত আগে জানতাম না।

— বলেই ছেলেটা চলে গেলো। তিন্নি হা করে আরাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরাফ এটা কি বলল? এমন তো না যে সে কিছু মুহূর্তের মধ্যেই তাকে মেনে নিবে। তিন্নিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরাফ বলল,,,

আরাফ : হা বন্ধ করো, মুখে মশা ঢুকবে। এতো অবাক হবার কিছু নেই। মিথ্যা এই জন্য বলেছি ছেলেটা যেন আর তোমাকে disturb.. না করে। এখানে খুশি হবার মতো কিছু নেই। ( অন্য দিকে তাকিয়ে )

— তিন্নির এবার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আরাফের উপর। তাই সে রেগে গিয়ে বলল,,,

তিন্নি : আপনাকে বলেছি ছেলেটা আমাকে disturb… করে। আমাকে ওনার হাত থেকে বাচান। একবারও কি আপনার কাছে help… চেয়েছি? আমি এক্ষণি ঐ ছেলেকে গিয়ে বলবো আপনি মিথ্যা বলেছেন।

আরাফ : তুমি কোথাও যাবেনা, আমার সাথে থাকবে।

তিন্নি : আপনি আমার কে? যে আপনার সাথে থাকতে হবে।

— বলেই তিন্নি হাটতে লাগলো। আরাফ তার পিছুপিছু গিয়ে তার হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?

তিন্নি : আপনাকে বলতে বাধ্য না। আমার হাত ছাড়েন।

আরাফ : হাত ছেড়ে দিলেও তোমার পিছনেই থাকবো। কারণ তুমি আমার responsibility…

— আরাফ তার হাত ছেড়ে পিছুপিছু হাটতে লাগলো। কারণ কেউ যেন তিন্নিকে ডিস্টার্ব না করে। তিন্নি হাটতে হাটতে একপর্যায় তার দিকে ফিরে বলল,,,

তিন্নি : এখন কে কার পিছনে পরে আছে? ( ভ্রু কুচকে )

আরাফ : আমি তোমার পিছনে পরে আছি। কোনো সমস্যা?

তিন্নি : না ভালোই লাগছে। এতো অহংকারী একটা মানুষ আমার পিছনে পরে আছে বিষয়টা উপভোগ করার মতো।

— বলেই তিন্নি মুচকি হেসে আবারও হাটতে লাগলো। আরাফ আবারও তার পিছনে পিছনে হাটতে লাগলো। ভালোই লাগছে আরাফকে তার পিছনে হাটাতে।

তিন্নি, স্নেহা আর অনিকার সাথে বসে গল্প করছে। আরাফ দূর থেকে দাড়িয়ে মুগ্ধনয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নির হাত নাড়িয়ে কথা বলা, তার মুখে অদ্ভুত এক মায়া জড়ানো হাসি, মাঝেমাঝে কানের নিচে চুল গুজে নেয়া, তার সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্ব নিয়ে কখনো কোনো অহংকার না করা, খুব সহজেই সবাই আপন করে নেয়া, প্রত্যেকটা সম্পর্ককে এতটা প্রাধণ্য দেয়া, আর সবাই এতটা ভালবাসা। সত্যি তিন্নি অনেক সুন্দর, মন এবং সৌন্দর্য দুইদিক থেকে। আরাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি তার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,,

তিন্নি : কি ব্যাপার? ক্রাশ খেয়েছেন? নাকি ভালো লেগেছে? কোনটা? ( ভ্রু নাচিয়ে )

আরাফ : তেমন কিছুনা। পার্টি তো প্রায় শেষ, বাসায় যাবেনা??

তিন্নি : হ্যাঁ চলেন সবার থেকে বিদায় নিয়ে আসি।

— আরাফ আর তিন্নি সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। আরাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে, তিন্নি তার পাশের সিটে বসে আছে। জানালার কাঁচ খোলা, তিন্নি তার বা হাত জানালার উপরে রেখে মুখটা হালকা বের করে অন্ধকার রাতের চলন্ত গাড়িতে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো বাতাস গুলো উপভোগ করছে। হঠাৎ তিন্নির মোবাইল বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখে তার মা কল করেছে,,,

তিন্নি : মা তুমি এখনো জেগে আছো কেন? তোমার জন্য বাবাও হয়তো ঘুমায়নি। তুমি জানোনা বাবার ঠিকমতো ঘুম না হলে বাবা অসুস্থ হয়ে যায়?

মা : চিন্তা করিসনা, তোর বাবা ঘুমিয়ে আছে। তোরা কি বাসায় ফিরেছিস??

তিন্নি : না মা এখনো গাড়িতে আছি। একটু পরে পৌঁছে যাবো। তুমি এখন ঘুমিয়ে পরো। কালকে কথা হবে।

— তিন্নি কল কেটে দিলো। আরাফ সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি সবার অনেক খেয়াল রাখো। তাইনা??

তিন্নি : খেয়াল রাখিনা, ভালবাসি। কাছের মানুষ গুলোকে ভালবাসলে খেয়াল রাখতে হয়না, এটা আপনাআপনি চলে আসে।

আরাফ : কি জানি, হয়তো।

তিন্নি : নিজের কাছের মানুষ গুলোকে একবার ভালবাসার চেষ্টা করে দেখেন, তখন উপলব্ধি করতে পারবেন ভালবাসায় কতটা আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

— তিন্নি আবারও জানালায় হাত রেখে বাহিরে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আরাফ বলে উঠলো,,,

আরাফ : কালকে তৈরি থেকো খালামনির বাসায় যাবো।

— তিন্নি অনেকটা অবাক হয়ে আরাফের দিকে ফিরে তাকালো,,,

তিন্নি : হঠাৎ আমাদের বাসায় যাবেন?

আরাফ : খালামনির কথা মনে পরছে তাই।

তিন্নি : আগে মনে পরতো না?

আরাফ : পরতো, কিন্তু তখন তো তুমি পাশে ছিলেনা, তাই সম্পর্ককে কিভাবে গুছিয়ে নিতে হয় না জানতাম না। এখন শিখতে চাইছি।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে