স্পর্শের_ভাষা part – 6

0
1030

স্পর্শের_ভাষা part – 6
writer – তানিশা

— তিন্নি রুমের দরজা নক করতে আরাফ ভিতর থেকে বলল,,,

আরাফ : কে?

তিন্নি : আমি, দরজা কি খোলা যাবে?

আরাফ : sorry… আমি ব্যস্ত।

তিন্নি : কি নিয়ে ব্যস্ত? খালামনির স্মৃতি?

— আরাফ চুপ করে বসে আছে। দরজার ওপাশ থেকে তিন্নি আবারও বলল,,,

তিন্নি : একটু কথা বলা যাবে?

— আরাফ কিছু না বলে বসা থেকে উঠে দরজা খোলে আবারও নিজের জায়গা গিয়ে বসে পরলো। তিন্নি তার রুমে ঢুকে আরাফের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে বলল,,,

তিন্নি : যেসব স্মৃতি আমাদের মনে কষ্ট সঞ্চারণ করে সেসব স্মৃতি ভুলে যাওয়া উচিৎ। যে স্মৃতি গুলো স্মরণ করলে আমাদের মনে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ পায় সে স্মৃতি গুলো মনে রাখা উচিৎ। যেমন মনে করেন,, আপনার মনে আছে কিনা আমি জানিনা, ছোটবেলা একবার ঝগড়া করে আপনি আমার চুলের বেণী ধরে টেনে ছিলেন। আর আমি কাঁদোকাঁদো গলায় খালামনির কাছে গিয়ে আপনার নামে নালিশ করেছিলাম

— তিন্নি কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই আরাফ বলতে লাগলো,,,

আরাফ : আর মা আমাকে লাঠি নিয়ে দৌড়ানি দিয়েছিল। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি ছেড়ে কই যেন চলে গেলাম, সারাদিন বাড়ি ফিরিনি। মা আমাকে সারাদিন খোঁজতে খোঁজতে বেহাল হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। যখন বাড়ি ফিরলাম মা জড়িয়ে ধরে কি কান্না। আর আমি ভেবেছিলাম বাসায় ফিরলে মা হয়তো আমাকে মারবে। মাঝেমাঝে কথাটা মনে পরলে প্রচন্ড হাসি পায়।

— কথাটা বলেই আরাফ হেসে দিলো। তিন্নি আরাফের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা এতটাও খারাপ না। আরাফ হাসতে হাসতে তিন্নির মুখের দিকে তাকাতেই তার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। তিন্নির থেকে মুখ ফিরিয়ে বলল,,,

আরাফ : আমার ক্ষুধা পেয়েছে।

তিন্নি : টেবিলে খাবার রেডি আছে। বাবা আর আনহা আপনার অপেক্ষা করছে।

— বলেই তিন্নি আরাফের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

সকালে আরাফ ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে দেখে, তিন্নি বাহিরে দাড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। আরাফের মনে কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে নিশ্চয় কোনো ছেলের সাথে লাইন মারছে। অন্য ছেলের সাথে লাইন মেরে এই বাড়ির বৌ হবার ইচ্ছা, বের করবে আরাফ। আজকেই সবার সামনে তিন্নির আসল চেহারা দেখিয়ে দিবে। ভাবতে ভাবতে আরাফ নিচে তিন্নির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে গেলো। ইশারায় তিন্নিকে লাউড স্পিকার অন কারতে বলল। তিন্নি হা হয়ে তাকিয়ে আছে, আরাফ আবারও ইশারায় লাউড স্পিকার অন করতে বলল। তিন্নি অন করতেই আরাফের ছোট খালামনির কন্ঠ ভেসে আসছে। আরাফ কিছুটা বিচলিত হয়ে চলে যেতে লাগলে তিন্নি তার হাত ধরে বলল,,,

তিন্নি : মা কি বলে একটু শুনবেন?

— আরাফ অন্য দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে। তিন্নি তার মাকে বলতে লাগলো,,,

তিন্নি : মা তখন কি যেন বলছিলে??

তিন্নির মা : বলছি, আমার আরাফের সাথে খারাপ ব্যবহার করবিনা। ওকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবি। ছেলেটা তো আমার কাছে আসেনা, আসলে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিতাম। আমার বোনের চোখের মনি ছিল সে।

তিন্নি : শুধু তোমার বোনের চোখের মনি? তোমার কিছু ছিলনা??

তিন্নির মা : কি যে বলিস তুই? ও তো আমার কলিজার টুকরা। বোনের ছেলে মেয়ে গুলো, নিজের সন্তানের থেকেও বেশি আদরের হয়। বুঝলি?

তিন্নি : বুঝেছি। আচ্ছা মা রাখছি, পরে কথা বলবো।

— তিন্নি কল কেটে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে আর আরাফ নিচের দিকে,,,

তিন্নি : যে মানুষটাকে আপনি নিম্ন পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য করেন, সে মানুষটাই আপনাকে একবার নিজ হাতে খাইয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় আছে। আপনাকে তার কলিজায় ঠাই দিয়েছে। এটাই হচ্ছে ভালবাসা। অবশ্য আপনি এসব বুঝবেন না। প্রত্যেকটা সম্পর্ক ভালবাসা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হয়, টাকা দিয়ে নয়। উমম আপনার কাছে ভালবাসার ক্ষমতা আছে কিনা জানিনা,, তবে টাকার ক্ষমতা অনেক আছে। একটা কথা মনে রাখবেন টাকা সবসময় সাথে থাকেনা, আর প্রিয়জন গুলো কখনো ছেড়ে যায়না। তাই সম্পর্ককে ভালবাসা দিয়ে মূল্যায়ন করতে শিখেন।

— কথাটা বলে তিন্নি বাসার ভিতরে চলে গেলো, আরাফ তিন্নির যাবার পানে তাকিয়ে রইলো। একটা মেয়ে সম্পর্ককে কিভাবে এতটা প্রাধন্য দিতে পারে? আর ছোট খালামনি কি সত্যি তাকে এতোটা স্নেহ করে? তাকে জানতে হবে। আরাফ তিন্নির পিছু পিছু গিয়ে বলল,,,

আরাফ : তিন্নি খালামনি কি সবসময় আমার কথা বলতো??

— তিন্নি নাস্তার আয়োজন করতে করতে বলল,,,

তিন্নি : কেন আপনার মনে নেই, যখনি আমরা নানুর বাসায় যেতাম। মা আমাদের একি প্লেটে খাইয়ে দিতো, এক সাথে গোসল করিয়ে দিতো। আমার জন্য নতুন জামা কিনলে আপনাকেও কিনে দিতো। আমাদের সবার জন্য এটি রকম খেলনা কিনতো। তাহলে তো মা আপনাকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতো। তাইনা?? আর মা কখনো সন্তানকে ভুলতে পারেনা। কিন্তু সন্তানরা পারে, যেমন আপনি। অবশ্য এটা আপনাদের মতো সন্তানদের ক্ষেত্রেই সম্ভব।

— তিন্নির কথায় আরাফকে চুপ থাকতে দেখে তার বাবা বলে উঠলো,,,

বাবা : আরাফ তোর খালামনি তোকে অনেক miss.. করে। তুই কি একবার ঘুরে আসবি তোর খালামনির বাড়ি থেকে?

আরাফ : আচ্ছা বাবা দেখি।

— আরাফ নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে গেলো। অফিসে বসে ভাবছে তার কি যাওয়া ঠিক হবে? আচ্ছা পরে ভেবে দেখবে। তখনি ইমরানের কল আসলো,,,

আরাফ : হ্যা দোস্ত বল,,

ইমরান : কালকের পার্টিতে তিন্নিকে নিয়ে আসিস।

আরাফ : তিন্নিকে কেন?

ইমরান : just friendly… নিয়ে আসবি।

আরাফ : sorry… আমি পারবো না।

ইমরান : কেন??

আরাফ : কেন এর জবাব দিতে পারবোনা, তোর এতো ইচ্ছে হলে তুই নিয়ে যাস।

— আরাফ বিরক্তি নিয়ে কল কেটে দিলো।

পরেরদিন আরাফ, ইমরানের বাসায় পার্টিতে গিয়ে দেখে তিন্নি স্নেহার সাথে আগে থেকেই বসে আছে। তিন্নিকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য আরাফের চোখ আটকে গেলো। পরনে সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের একটা সিল্ক শাড়ি, চোখে কাজল, কানে বড় বড় ঝুমকা, একপাশে সীঁথি করা খোলা চুল, এক হাতে অনেকগুলা সিলভার কালার স্টোনের চুড়ি পরেছে। এক কথায় অপূর্ব লাগছে। হঠাৎ তিন্নি আরাফকে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসলো। আরাফ এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নি আরাফের চোখের সামনে ডান হাতে একটা তুরি বাজিয়ে বলল,,,

তিন্নি : কি দেখছেন?

— আরাফের ঘোর কাটতেই সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকে তিন্নির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাই কিছুটা রাগী গলায় তাকে জিঙ্গেসা করলো,,,

আরাফ : তুমি এখানে কি করছো?

তিন্নি : বিকেলে স্নেহা বাসায় গিয়ে অনেক request করছিল এখানে আসার জন্য। তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলো।

আরাফ : request করছিল তাই চলে আসবে নাকি? এটা একটা অভদ্রতা তুমি জানোনা?

তিন্নি : এটা অভদ্রতা না, এটাকে সম্মান রক্ষা বলে। আর আমি বাবার থেকে বলেই এখানে এসেছি। ভদ্রতা, অভদ্রতা আমাকে শিখাতে আসবেন না। ভদ্রতা কাকে বলে আগে নিজেই ভালো করে শিখে নিন।

আরাফ : তুমি আমাকে ভদ্রতা শিখতে বলছো? ( রাগী চোখে তাকিয়ে )

তিন্নি : কেন আপনার মধ্যে ভদ্রতা বলতে কিছু আছে নাকি? ( ভ্রু কুচকে ) কই আমিতো জানিনা। তো কিভাবে আপনার মাঝে ভদ্রতা বিরাজমান আছে kindly… আমাকে বলবেন? আমি জানতে অনেক ইচ্ছুক। ( হাসি দিয়ে )

আরাফ : তোমাকে আমি পরে দেখে নিবো। ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে )

তিন্নি : এখন কি দেখতে পাচ্ছেন না? নাকি চোখে কাঠের চশমা লাগিয়ে রেখেছেন??

আরাফ : বাসায় আসো তারপর দেখছি।

— বলে আরাফ তিন্নির সামনে থেকে চলে গেলো। তিন্নি মিটমিট হাসতে হাসতে আরাফের পিছনে গিয়ে আবারও তার সাথে দাড়িয়ে গেলো। আরাফ পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : আমার পিছনে এসেছো কেন? নাকি আমাকে দেখে নিজেকে আর control… করতে পারছোনা??

তিন্নি : what…?? ( চোখদুটি বড় বড় করে )

আরাফ : yea… তাইতো আমার পিছনে পরে আছো।

তিন্নি : wait… করেন। দেখবেন একটু পরে কে কার পিছনে পরে আছে।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে