স্পর্শের_ভাষা part – 5
writer – তানিশা
— আরাফ অফিসে বসে ভাবছে, গ্রামের একটা নিম্ন পরিবারের মেয়ে তার সাথে এভাবে কথা বলবে এটা সে মেনে নিবেনা। তিন্নিকে একটা উপযুক্ত জবাব দিতে হবে তার। যতটা উচ্চ সুরে সে আরাফের সাথে কথা বলেছে, ঠিক ততটাই নিচু সুরে কথা বলতে বাধ্য করবে তাকে। তাকে এটা বুঝাতে হবে, সামান্য একটা গ্রামের মেয়ে হয়ে সে আরাফের যোগ্য হতে পারেনা। তিন্নির সাথে তার কালচারের কোনো মিল নেই। আরাফ কোন কালচারে মেয়েকে প্রত্যাশা করে সেটা তিন্নিকে জানতে হবে। কিন্তু কিভাবে? ভাবতে ভাবতে তার ফ্রেন্ড স্নেহার কথা মনে পরলো। স্নেহা এযুগের মর্ডান মেয়ে, তার সামনে তিন্নি পুরাই আনকালচার একটা মেয়ে। তিন্নিকে আজ খুব ভালভাবে তার অবস্থানটা বুঝিয়ে দিতে পারবে। কথাটা ভাবতেই তার এতো খুশি লাগছে। যখন তিন্নি সামনে স্নেহাকে নিয়ে দাড় করাবে, তখন তিন্নির অবস্থা দেখে কতটা খুশি লাগবে ভাবতেই আরাফ স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।
বিকেলে তিন্নি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে গল্প পড়ছে, গল্পের বই পড়তে সে একটু বেশিই পছন্দ করে। তখন বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। তিন্নি আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই, তাই সে নিজেই গেলো দরজা খোলার জন্য। দরজা খোলে দেখে আরাফের সাথে তিনটা ছেলে আর দুটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আরাফ স্নেহাকে একা নিয়ে আসেনি তার বাবা যদি অন্যকিছু ভাবে? তাই তার সব বন্ধু ইমরান, হাবিব, রায়হান, স্নেহা ও অনিকাকে নিয়ে এসেছে। আরাফের বন্ধুরা তিন্নিকে খেয়াল করেনি, একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় ঢুকেছে। তিন্নি তাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করতে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে তিন্নি নাস্তার ট্রে হাতে নিয়ে তাদের সামনে এসে নাস্তার ট্রেটা টেবিলের উপর রাখতে যাবে, আরাফের বন্ধু ইমরান তিন্নিকে দেখে বলে উঠলো,,,
ইমরান : আপনি মালিহা মুন তিন্নি right…??
— আরাফ ইমরানের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে, সে তিন্নির নাম জানলো কিভাবে?? “মালিহা মুন তিন্নি” নামটা শুনার সাথে সাথে স্নেহা আর অনিকা তিন্নির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেছে। তিন্নি কিছুটা বিষময় নিয়ে বলল,,,
তিন্নি : জ্বি, আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে??
ইমরান : কতো সালে মনে নেই আপনার একটা ছবি আমি newspaper… দেখেছিলাম। ঐই বছরের রেকেট খেলায় মেয়েদের মধ্যে আপনি আমাদের জেলার প্রথম বিজয়ী ছিলেন।
তিন্নি : maybe… ২০১৪ সালের কথা আপনার এখনো মনে আছে?? strange…
ইমরান : মনে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছুনা। আমি ইমরান আরাফের ফ্রেন্ড।
স্নেহা : Hi… আমি স্নেহা আর ও অনিকা।
তিন্নি : আমি আপনাদের দুজনকে চিনি। ( মুখে হাসি এঁকে ) আচ্ছা আপনারা কি সবাই ওনার বেস্ট ফ্রেন্ড? ( আরাফকে ইশারা করে )
ইমরান : হ্যা আমরা এখানে সবাই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনি বসুন আমাদের সাথে।
তিন্নি : no thanks… আপনারা বসে গল্প করেন, আমি চলে যাই। ( বলেই একগাল হেসে দিলো )
স্নেহা : এতো বড় একজন famous মানুষ আমাদের মাঝ থেকে চলে যাবে এটা কি মেনে নেওয়া যায়?
তিন্নি : আমি famous না, অতি নগণ্য একজন।
স্নেহা : বাংলাদেশের top fashion designer… যদি এই কথা বলে এটা মানা যায়? আপনি যদি অতি নগণ্য হোন তাহলে আমরা কি??
তিন্নি : আমি, আপনি, আমরা সবাই সমান, প্রত্যেকের নিজের একটা যোগ্যতা থাকে। যে কাজটা আপনি পারেন, সেটা হয়তো আমি পারিনা, যেটা আমি পারি, সেটা হয়তো আপনি পারেন না। তাই বলে আমি গণ্য, আপনি নগণ্য এটা কিন্তু ভুল। আর একটা কথা আমাকে তুমি করে বললে খুশি হবো।
স্নেহা : সত্যি তুমি অনেক ভাল, তোমার মনটাও অনেক সুন্দর।
তিন্নি : ধন্যবাদ, আপনারা সবাইও অনেক ভালো। আচ্ছা আপনারা নাস্তা করেন আমি পরে আসছি।
অনিকা : please… একটু বসো আমাদের ভাললাগবে।
— আরাফ ভ্যাবাচেকা খেয়ে একবার তিন্নির দিকে তাকাচ্ছে একবার তাদের দিকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এরা সবাই তিন্নিকে চিনে? আর তিন্নি famous বলতে কি বুঝাতে চাইছে। তিন্নি কি সত্যি বাংলাদেশের top fashion designer… দের মধ্যে একজন? প্রথম দিন সে তিন্নি সাথে যেভাবে কথা বলেছে তাকে নিম্ন, অখ্যাতি, অযোগ্য বলেছে। কই তিন্নি তো একবারও কিছু বলেনি?? আরাফ কি এটা সত্যি শুনেছে নাকি কিছু ভুল??
আরাফ : তিন্নি তুমি fashion designer…??
তিন্নি : হুম।
অনিকা : আরাফ তুমি এভাবে জিঙ্গেসা করছো কেন? যেন তুমি জানোনা??
আরাফ : এই প্রথম জানলাম।
স্নেহা : seriously…? তোমার ছোট খালামনির মেয়ে অথচ তুমি জানোনা?
— আরাফ কিছুই বলল না। কোথায় তিন্নিকে তাদের সামনে নিচু করার জন্য তাদের নিয়ে এসেছে। উল্টো তারা তিন্নিকে বিখ্যাত বানিয়ে দিয়েছে। আরাফের ইচ্ছে করছে সবকটাকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না, সে নিজেই তাদের নিয়ে এসেছে। এখন তো তিন্নির সাথে বসে সবকটা গল্প জুড়ে দিয়েছে। আরাফের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি।
রাত ৯ টায় আরাফ কফি জন্য রান্না ঘরে গিয়ে দেখে তিন্নি নিজ হাতে রান্নার আয়োজন করছে, তিন্নিকে দেখে আরাফ রান্না ঘরে না ঢুকে দরজা হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলল,,,
আরাফ : তুমি যে এতো বড় একজন designer.. কই আগে বলোনি যে? I mean… এমনটাও তো হতে পারতো, যে তোমার যোগ্যতা যাচাই করার পর তোমাকে আমি স্বীকৃতি দিতাম।
তিন্নি : আমি আপনার মতো মানুষকে নিজের যোগ্যতা দেখিয়ে বেরই না। আমার যদি কোনো যোগ্যতা থেকে থাকে সময় হলে আপনি নিজে দেখতে পাবেন। এখানে বলার কি আছে?? আর আমার খ্যাতিমান দেখে যদি আপনি আমাকে স্বীকৃতি দিতেন? তাহলে আমার খ্যাতিমানকে গণ্য করা হতো আমাকে না। আমি চাই আপনি আমাকে গণ্য করুন।
আরাফ : তো বাংলাদেশের top designer… হয়ে রান্না ঘরে কাজ করছো যে?? তুমি জানো তোমার অবস্থানটা এখন কোথায়??
তিন্নি : রান্না করাটা আমার ফ্যাশন, ভাললাগে রান্না করতে। আর অবস্থান বলতে কি বুঝাতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি।
আরাফ : really…?? তাহলে তোমার মুখ থেকে শুনি তোমার অবস্থানটা কোথায়? ( শয়তানি হাসি দিয়ে )
তিন্নি : আপনি এটাই বুঝাতে চাইছেন আমরা যারা রান্না করি, তাদের জন্য আপনি যখন ইচ্ছে তৃপ্তির সাথে খেতে পারেন। আর আমরা যদি রান্না করা ছেড়ে দেই। তাহলে আপনার মতো কিছু অহংকারী মানুষকে রান্না ব্যতিত সবকিছু গরুর মতো কাঁচা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হতো। এই দিক থেকে আমাদের অবস্থানটা কাজের লোকের জায়গায় না, সর্ব উত্তম জায়গা বহন করে। তাইনা??
— আরাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে কথায় কথায় তাকে অপমান করে, কিন্তু সে তার প্রতি উত্তরে কিছুই বলতে পারেনা।
তিন্নি : আর একটা কথা রান্নার কাজকে কখনো ছোট মনে করবেন না। বড় খালামনির হাতের রান্না অনেক স্বাদ ছিল, ওনি সবাইকে নিজের হাতের রান্না করে খাওয়াতেন। তাই বলে ওনার অবস্থানটা নিম্নস্তরে চলে যায়নি, সবার উচ্চ স্তরে ছিল। কারণ রান্না করতে পারাটা ছিল ওনার যোগ্যতা, আপনি ওনার ছেলে হয়ে রান্না করতে পারেন না এটা আপনার ব্যর্থতা।
— কথাগুলো বলে তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রান্না শুরু করলো। আরাফ কিছু না বলে চলে গেলো। তিন্নি রান্না করছে আর ভাবছে, আরাফ কিছু না বলে চলে গেলো কেন? সে তো মোটেও এমন না। কিছু না কিছু তো অবশ্য তিন্নিকে বলে যেতো। না বলে যাওয়ার কারণ কি? আরাফকে কি একবার জিঙ্গেসা করা ঠিক হবে?? রান্না শেষ করে খাবারের টেবিলে খাবার পরিবেশন করে দেখে আরাফ আসেনি। তাই সে আরাফের রুমে যায়, রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। সে ভাবছে দরজায় টোকা দিবে কিনা?
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)