স্পর্শের_ভাষা part – 15 ( শেষ পর্ব )
writer – তানিশা
— তিন্নির চোখদুটি ছলছল হয়ে আসছে। সে আজ আবারও শর্তে হেরে গেছে। হেরে গেছে আরাফের প্রতি তার ঘৃণা, জিতে গেছে তিন্নি জন্য আরাফের হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা। এতো ঘৃণা, অবহেলা, অবজ্ঞার পরেও আরাফ তাকে এতটা ভালবাসে। ভাবতেই তিন্নি স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। যে আরাফ মুহূর্তের মধ্যে তার আত্মসম্মানকে দূমড়েমূচড়ে শেষ করে দিয়ে ছিল। আজ সেই আরাফ তার আত্মসম্মানে একটা আচ লাগতে দেয়না। তার সম্পর্কে একটা বাজে মন্তব্য শুনার জন্য প্রস্তুত না। আরাফের মতো একজন জীবন সাথী থাকতে আর কি বা চাওয়ার থাকতে পারে তার? তিন্নি চোখদুটি বন্ধ করে আনহাকে বলল,,,
তিন্নি : এতো সহজে কি ক্ষমা করা যায়?
আনহা : ভাবি please… ( করুণ গলায় )
নাদিয়া : এই তুই কি মানুষ নাকি অন্যকিছু? এতো কিছুর পরেও বলছিস ক্ষমা করা যায়না?
তিন্নি : আমি কখন বললাম ক্ষমা করিনি?
— কথাটা বলেই তিন্নি নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তিন্নির চোখে নোনাজল টলমল করছে। এই নোনাজল কষ্টের না পরম সুখের। নিজের ভালবাসার মানুষটাকে আজ আপন করে নিতে পারবে অটুট বিশ্বাস আর ভালবাসার সাথে। সেই সুখে কাঁদছে তিন্নি। আনহা তাকে কাঁদতে দেখে বলল,,,
আনহা : ভাবি তুমি কাঁদছো কেন?
তিন্নি : কিছু কান্না মনের সুখ আর আত্মতৃপ্তি থেকে আসে আনহা।
— নাদিয়া তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,,
নাদিয়া : তোর মনে তো সুখের রঙ্গ লেগেছে। আর আমি যে এতো কষ্ট করলাম, বিনিময়ে আমি কি পেলাম?
তিন্নি : কি চাই তোর?
নাদিয়া : তোর জামাই আমাকে কতবার কুটনি ডেকেছে, তার জন্য তুই আমার হয়ে প্রতিশোধ নিবি। বুঝলি? তোর জামাইকে বলবি আমাকে বাসায় গিয়ে sorry বলতে। সম্মানের সাথে খুব সুন্দর আয়োজন করে, তোদের বাসায় আমাকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে। নাহলে তোরা কখনো সুখী হবিনা। এটা আমার অভিশাপ।
আনহা : ভাবি খাবারের আয়োজন করো তো, আপুকে এখনি নিমন্ত্রণ করে খাইয়ে দেই। আমি চাইনা আমার ভাইয়া ভাবির সংসার ঘরার আগে মিটে যাক।
— আনহার কথা শুনে তিন্নি আর নাদিয়া দুজনে হেসে দিলো। নাদিয়া হাসতে হাসতে বলল,,,
নাদিয়া : আরে বাবা আমি দুষ্টামি করছি। আচ্ছা আজকে আসি।
তিন্নি : রাতের খাবারটা খেয়ে যা,,
নাদিয়া : না, যখন তোর জামাই আমাকে sorry বলবে তখন খাবো।
তিন্নি : আমি তাহলে ওনাকে ডেকে নিয়ে আসি।
নাদিয়া : এখন না, আগে কিছুক্ষণ ভাইয়াকে জ্বালিয়ে নে তারপর।
— বলেই নাদিয়া চোখটিপ মেরে হেসে দিলো। আনহা আর তিন্নির থেকে বিদায় নিয়ে নাদিয়া চলে গেলো।
তিন্নি সেই কখন থেকে আরাফের অপেক্ষা করে যাচ্ছে। কিন্তু তার আসার কোনো নামই নেই। ছাদে বসে এতক্ষণ কি করছে সে? তিন্নির কি এই মুহূর্তে ছাদে যাওয়া ঠিক হবে? ভাবতে ভাবতেই ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
রাত প্রায় ১.০০ টা বাজে, আরাফ এখনো ছাদে বসে আছে। আনহা অনেকবার ডেকে গেছে, রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। আরাফ যায়নি। বসে বসে ভাবছে, তিন্নি কি এখনো আছে? নাকি তাকে ছেড়ে চলে গেছে? হয়তো চলে গেছে। এতকিছুর পর তিন্নি এখানে থাকবে, এটা আশা করাও তার বোকামি। তিন্নিকে ছাড়া কিভাবে থাকবে সে? ভাবতেই চোখদুটি ছলছল হয়ে আসছে। আরাফ দুহাত দিয়ে তার চোখের জল মুছতে লাগলে পেছন থেকে তিন্নি বলে উঠলো,,,
তিন্নি : সারারাত কি এখানে বসেই কাঁদবেন? নাকি রুমে যাবেন?
— আরাফ পেছনে ফিরে তিন্নিকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তিন্নি এখনো এই বাড়িতে আছে এটা কিভাবে সম্ভব?? আরাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি মনে মনে ভাবছে, এতো সহজে আত্মসমর্পণ করা কি ঠিক হবে?? অবশ্য ওনাকে একটু জ্বালালে ব্যাপারটা মন্দ হয়না। তিন্নি ভ্রু দুটি নাচিয়ে আবারও বলল,,,
তিন্নি : কি ভাবছেন? এখনো যাইনি কেন? কয়েক দিন অপেক্ষা করেন, আগে ডিবোর্সটা হোক তারপর চলে যাবো।
আরাফ : কি ভেবেছো? তুমি ডিবোর্স চাইলেই আমি দিয়ে দিবো? কখনোই দিবো না। তুমি যত দূরে যাওনা কেন? সারাজীবন আমার স্ত্রী হয়েই থাকতে হবে।
তিন্নি : যখনের টা তখন দেখা যাবে। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে তাই যেতে পারিনি, কাল সকালেই ঘুম থেকে উঠে চলে যাবো।
— তিন্নি কথাটা বলতেই আরাফ তার কাছে এসে তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদোকাঁদো গলায় বলতে লাগলো,,,
আরাফ : তিন্নি please আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি জানিনা নাদিয়া কুটনিটা তোমাকে কি বলেছে। আমি শুধু এতটুকু জানি, আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া থাকা এখন আর আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। please…
— আজ আরাফের প্রতিটা #স্পর্শের_ভাষা তিন্নিকে বলে দিচ্ছে, সে কতটা অনুতপ্ত, তিন্নির ভালবাসা পাবার জন্য আজ সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে আছে। আরাফের বুকে মাথা রাখতেই তিন্নি অনুভব করতে পারছে, তার হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দন যেন বলে দিচ্ছে তিন্নিকে সে কতটা ভালবাসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেকে আরাফের থেকে ছাড়িয়ে নিলো তিন্নি। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,,
তিন্নি : আপনার প্রতিটা স্পর্শে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
— আরাফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার কাছে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। এতদিনে তিন্নির মনে তার জন্য একটুও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলোনা। আরাফকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিন্নিরও কষ্ট হচ্ছে। সাথে প্রচন্ড হাসিও পাচ্ছে তার। তিন্নি নিজের হাসিটাকে থামিয়ে রেখে বলল,,,
তিন্নি : অনেকে ভেবে দেখলাম আপনার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আরাফ : আমি অনুতপ্ত তিন্নি।
তিন্নি : কিসের জন্য নাদিয়াকে কুটনি ডেকেছেন সেই জন্য??
আরাফ : না, আমার ভুলের জন্য।
তিন্নি : ওহহ,, আমি ভাবছি নাদিয়াকে কুটনি ডেকেছেন তার জন্য হয়তো।
আরাফ : ওকে আমাদের মাঝে টানছো কেন? ওকে কি বলেছি সেটা দিয়ে কি করবে?
তিন্নি : সেটাই তো নাদিয়া তখন সন্ধায় এসে বলে গেলো। আপনি আমার সম্পর্কে একটাও বাজে মন্তব্য শুনতে পারেননা। আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমার নাকি আপনাকে ক্ষমা দেওয়া উচিৎ, আরও কতো কি। তখন ভাবলাম আপনাকে ভালবেসে, আপনার বুকে মাথা রেখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিবো। কিন্তু না আপনি তো সেই কখন থেকে নাদিয়াকে কতো কিছু বলে যাচ্ছেন। পরক্ষনে ভাবলাম যেই মেয়েটা আপনাকে সাপোর্ট করতে এসেছে, আপনি তাকেই বারবার কুটনি ডেকে যাচ্ছেন। তাহলে আপনার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব হবে? নাদিয়াকে আমাদের মাঝে না টানলে তো হচ্ছেনা। আগে আপনি ওকে বাসায় গিয়ে সরি বলে আসবেন। তারপর নাহয় আমাদের সংসারটা ভালবাসা ময় করে তুলবো। কি বলেন? ওকে বাসায় গিয়ে সরি বলে আসবেন তো? নাকি আমি আপনাকে ডিবোর্স দিয়ে চলে যাবো?
— বলেই তিন্নি মিটমিট হসতে লাগলো। আরাফ আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি কি বলল কিছুই বুঝতে পারলো না। নাদিয়া তো আরাফকে অফিসে বলে এসেছে সে তিন্নির কাছে তার নামে অনেক কিছু ভুলভাল বলবে। তাদের সংসার নাকি তুরিতেই ভেঙ্গে দিবে। তাহলে নাদিয়া তার সাপোর্ট করেছে এটা কিভাবে সম্ভব হবে? অবশ্য আরাফকে সাপোর্ট করার মতো সে এমন কিছুই করনি। বরং নাদিয়াকে অপমান করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে। কিন্তু নাদিয়া তাকে সাপোর্ট করবে কেন? নাকি আরাফ কিছু ভুল শুনলো?? কিছু মাথায় ঢুকছে না। আরাফকে চুপ থাকতে দেখে তিন্নি আবারও বলল,,,
তিন্নি : কিছু বলছেন না যে?
আরাফ : নাদিয়া আমাকে সাপোর্ট করবে কেন? ( অবাক হয়ে )
তিন্নি : সেটা পরে বলবো। আগে বলেন ওর বাসায় গিয়ে ওকে সরি বলে আসবেন তো? ও বলেছে, ওকে সরি না বললে নাকি আমরা সুখী হবোনা।
আরাফ : তোমাকে পাবার জন্য একশো বার বলবো, হাজার বার বলবো। যদি ক্ষমা না করে প্রয়োজনে ওকে আমাদের বাসায় কিডন্যাপ করে নিয়ে আসবো, এটা কোনো ব্যাপারই না।
— আরাফের কথা শুনে তিন্নি হো হো করে হেসে দিলো। আরাফ ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,,,
আরাফ : ভালবাসো আমায়?
— তিন্নি আরাফের কাছে এসে তার দুপায়ের উপর ভর করে তিন্নির দুহাত দিয়ে তার গলায় জড়িয়ে ধরলো। নিজের অজান্তে আরাফের হাত দুটি তিন্নি কোমরে চলে গেলো। আরাফ তিন্নির চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে, এই চোখে আরাফের জন্য স্পষ্ট ভালবাসা দেখতে পাচ্ছে। আরাফের এতটা কাছে আসায় তিন্নির হৃদয়ের স্পন্দন গুলো খুব জোরে ধকধক করছে। সাথে তার ঠোঁট দুটিও কাঁপছে। আরাফ মুচকি হেসে আলতো করে নিজের ঠোঁটদুটি তিন্নির ঠোঁটে ছুয়ে দিলো। সাথে সাথেই তিন্নি চোখদুটি বন্ধ করে আরাফের বুকে মাথা রেখে তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরাফ তাকে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে বলল,,,
আরাফ : একবার নিজের মুখে বলোনা আমাকে ভালবাসো।
তিন্নি : ভালবাসি। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আপনার ভালবাসার মানুষটার পা ব্যথা হয়ে গেছে।
— আরাফ তিন্নিকে তার বাহুডোর থেকে ছেড়ে দিয়ে তিন্নির দুই বাহু ধরে ভ্রু কুচকে বলল,,,
আরাফ : এতক্ষণ বলনি কেন?
তিন্নি : এতো কথা না বলে, আমাকে কোলে নিয়ে রুমে চলেন। আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। ( আরাফের শার্টের বোতামে ধরে )
আরাফ : সবকিছু আমার কাছে আসার বাহানা তাইনা?? ( মুচকি হেসে )
তিন্নি : নিতে হবেনা। আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।
— তিন্নি রেগে চলে যেতে লাগলো। আরাফ তার হাত ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এনে কোলে তুলে নিয়ে বলল,,,
আরাফ : আমার মতো একটা আদর্শ স্বামী থাকতে আমার বৌ হেটে যাবে। এটা কখনো সম্ভব?
— তিন্নি আরাফের বুকে আলতো করে একটা ঘুষি দিয়ে রাগী চোখে বলল,,,
তিন্নি : নামান আমাকে।
আরাফ : একেবারে রুমে গিয়ে। ( মুচকি হেসে )
সমাপ্ত
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ? )
Very nice ?? ?? ?…. অনেক সুন্দর হয়েছে আপু।