স্পর্শের_ভাষা part – 14.

0
1130

স্পর্শের_ভাষা part – 14.
writer – তানিশা

নাদিয়া : আমি তিন্নির সাথে দেখা করতে এসেছি।

আরাফ : কেন? ( ভ্রু কুচকে )

নাদিয়া : ওর সাথে আমার কথা আছে।

আরাফ : কোনো কথা নেই, বের হও আমার বাড়ি থেকে। নাহয় ধাক্কা দিয়ে বের করতে বাধ্য হবো। ( রাগী চোখে )

— নাদিয়ার সাথে আরাফের ব্যবহার দেখে আনহা তাকে বলল,,,

আনহা : ভাইয়া এটা কোন ধরনের ব্যবহার? ভাবি যদি জানতে পারে, তোমার খবর আছে।

আরাফ : কিসের খবর আছে? এসব কুটনিদের সাথে এমন ব্যবহারই করতে হয়। নাহয় এই কুটনি গুলো দিশেহারা হয়ে থাকে আমাদের মতো নিরিহ মানুষদের সংসার ভাঙ্গার জন্য।

আনহা : ভাইয়া চুপ করো, নাদিয়া আপু কারো সংসার ভাঙ্গতে আসেনি। ও আমাদের বাসায় মেহমান। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : কিসের মেহমান ও আস্ত একটা কুটনি।

— আনহা, আরাফকে শান্ত করার চেষ্টা করে। আরাফ কিছুতেই শান্ত হচ্ছেনা, নাদিয়ার কাছে এসে তার হাত ধরে টেনে দরজার কাছে নিয়ে বলল,,,

আরাফ : এই মেয়ে এখনি বের হও আমার বাড়ি থেকে।

নাদিয়া : আনহা তিন্নিকে ডাকো তো,,

— আনহার দিকে তাকিয়ে। আজ তিন্নির জন্য আরাফ তাকে এতটা অপমান করছে। তিন্নি কোথায় গিয়ে বসে আছে? প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নাদিয়ার। তিন্নি সিরি বেয়ে নিচে নেমে এসে বলল,,,

তিন্নি : ডাকতে হবেনা, আমি এসেছি। আরাফ ওর হাত ছাড়েন।

— তিন্নিকে দেখে আরাফ থমথমে হয়ে নাদিয়ার হাত ছেড়ে তিন্নির কাছে এসে কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি এখানে কিভাবে এলে? তোমাকে তো রুমে লক করে এসেছি।

তিন্নি : তো কি হয়েছে? বাসায় কি মানুষের অভাব আছে নাকি? বাবা রুমের দরজা খুলে দিছে।

— বলেই তিন্নি নাদিয়ার দিকে তাকালো। নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর কাছে যেতে লাগলে আরাফ তিন্নির হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো? রুমে আসো, তোমার সাথে কথা আছে।

তিন্নি : আপনি যান, ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমি আপনার সাথে পরে কথা বলছি।

— আরাফ তিন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,,,

আরাফ : এই মেয়ের সাথে তোমার কোনো কথা নেই। তুমি আমার সাথে এক্ষণি রুমে যাবে।

তিন্নি : আশ্চর্য! আপনি এমন রিয়েক্ট করছেন কেন?? এটা কোন ধরনের অভদ্রতা আরাফ?? আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এসেছে, আমার সাথে দেখা করার জন্য। আপনি আমাকে রুমে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?

— আরাফ থেমে গিয়ে তিন্নির হাত ছেড়ে দিয়ে বিষময় নিয়ে বলল,,,

আরাফ : তুমি তো বলছিলে ও তোমার কোনো ক্লায়েন্ট হবে। এখন বেস্ট ফ্রেন্ড কেন বলছো??

তিন্নি : আপনি কি রিয়েক্ট করেন সেটা দেখার জন্য ইচ্ছে করেই বলেছি। আপনি কি ভেবেছেন ও আপনার অফিসে সাধারণ একজন স্টাফ? না ওকে আমি বলেছিলাম আপনার কোম্পানিতে জব নিতে।

— আরাফ স্তব্ধ হয়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো। তিন্নি তার সাথে এমন করলো কেন? আরাফ অবাক হয়ে বলল,,,

আরাফ : কেন তিন্নি?

তিন্নি : তার আগে আপনি বলেন? আজ ওকে চড় মেরে অফিস থেকে অপমান করে কেন বের করে দিয়েছেন? ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে )

— আরাফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নিকে যদি সে সত্যিটা বলে তিন্নি কি তাকে বিশ্বাস করবে? কখনোই করবেনা। তার উপর নাদিয়াকে কতবার সবার সামনে কুটনিও ডেকে ফলেছে। এখন তো সে তাকে কিছুতেই বিশ্বাস করবেনা। নাদিয়া কুটনিটা এখন উল্টাপাল্টা যা বলবে তিন্নি তার সব কথাই বিশ্বাস করবে। কি করবে সে এখন??

তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, সে সত্যিটা বলতে এতো ভয় পাচ্ছে কেন? নাদিয়া তিন্নির কাছে এগিয়ে এসে বলল,,,

নাদিয়া : কি হলো জিঙ্গেসা কর?

তিন্নি : আরাফ আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?

আরাফ : আমার যা ভাল মনে হয়েছে, আমি তাই করেছি। ( মাথা নিচু করে )

তিন্নি : আপনার কি এখনো মনে হচ্ছে? একটা মেয়েকে চড় মেরে তাকে অপমান করে কাজটা আপনি ঠিক করেছেন?

আরাফ : জানিনা।

তিন্নি : কেন ওর সাথে এমন করলেন?

আরাফ : আমি যদি সত্যিটা বলি তুমি কখনো আমাকে বিশ্বাস করবেনা, জানি তুমি আমাকেই ভুল বুঝবে। তাই বলতে ইচ্ছুক না। তিন্নি একটা কথা বলতে চাই, আমি একবার ভুল করেছিলাম, একই ভুল বারবার করতে চাইনা। ভুল থেকে মানুষ অনেককিছু শিখে। আমিও শিখেছি, তোমাকে হারানোর বেদনা আমাকে শিখিয়েছে যাকে ভালবাসবো, তার প্রতি অটুট বিশ্বাস নিয়ে হৃদয় উজাড় করে ভালবাসবো। আমি সক্ষম হয়েছি কিনা জানিনা, তবে এতটুকু বলবো, সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।

— কথা গুলো বলে আরাফ এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না। সিরি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। চোখদুটি ছলছল হয়ে আসছে তার, পিছনে ফিরে তাকানোর শক্তি নেই। হয়তো তিন্নির আর তার সম্পর্কের ইতি টানবে আজ, হয়তো বা তিন্নি আবারও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে তাকে। কি হতে চলেছে এখন আরাফ নিজেও জানেনা। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ছাদে চলে গেছে। অন্ধকার রাতে আজ চাঁদের ঝলমলে আলো নেই। এই অন্ধকার রাতের মতো কি আরাফের জীবনটাও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে? হয়তো, কারণ তিন্নিকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেই তার দম বন্ধ হয়ে আসে।

আরাফ চলে যেতেই তিন্নি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছে আরাফ অনেক কষ্ট পাচ্ছে সাথে তিন্নিও। নাদিয়া তিন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে বলল,,,

নাদিয়া : তোর জামাই আর তুই তো বলবিনা বসার জন্য, থাক আমি নিজেই বসে পরি।

তিন্নি : sorry… আরাফের পক্ষ থেকে। ( নিচের দিকে তাকিয়ে ) আসলে বৌভাতের অনুষ্ঠানে ও তোকে খেয়াল করেনি। তাই এরকম আচরণ করেছে।

নাদিয়া : হয়েছে,, স্বামীর এতো গুণগান করতে হবেনা। অবশ্য এতে ভাইয়ার কি দোষ? সব দোষ তো তোর। তোর কারণে ভাইয়া আজকে আমাকে চড় মেরেছে। ( নিজের গালে হাত দিয়ে ) তোর কারণে যা হয়েছে। তুই আমাকে sorry বলবি।

তিন্নি : তোকে sorry বলতে হবে? আমার জন্য এতটুকু করতি পারবিনা তুই। ( রাগী চোখে )

নাদিয়া : আচ্ছা যা বলতে হবেনা, এবার আসল কথায় আসি??

— আনহা কিছুক্ষণ তাদের কথাবার্তা শুনে তাদের মাঝে বসে বলল,,,

আনহা : কিসের কথা? তোমরা দুজন আমাকে ফেলে কি গোলমাল পাকিয়েছো বলোতো?

নাদিয়া : আনহা আর বলোনা, ফাজিলটা আমাকে ভাইয়ার সামনে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে। ভাইয়া যদি সত্যিটা জানতে পারে আমি ওনার সামনে কিভাবে যাবো? ( চিন্তিত হয়ে )

আনহা : আগে বলো কি হয়েছে।

নাদিয়া : বেচারি তিন্নি শর্তে হেরে গেছে, আর আমি জিতে গেছি। যদিও একটা থাপ্পড় খেয়েছি তাতে কোনো সমস্যা না। আহারে তিন্নির জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, তার পরিকল্পনা সফল হয়নি। ( দুষ্টামির হাসি দিয়ে )

তিন্নি : হয়েছে, আপনাকে আমার কষ্ট উপলব্ধি করতে হবেনা। এখন অফিসে কি হয়েছে দয়া করে বলবেন? নাকি এখনো বলবেন না??

— শর্তের কথা শুনে আনহা অনেক আগ্রহী হয়ে আছে, কি হয়েছে শুনার জন্য। তিন্নি চোখ গরম করে তাকাতেই নাদিয়া বলল,,,

নাদিয়া : আরে বলছি তো এমন করছিস কেন?

আনহা : আপু রহস্য নিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে সোজাসুজি তাড়াতাড়ি বলো। আমার তড় সৈছেনা।

নাদিয়া : তাহলে বলেই ফেলি,, আরাফ ভাইয়া আর তিন্নির মধ্যে কি হয়েছিল সেটা শুধু আমি আর নীলিমা জানতাম। বৌভাতের অনুষ্ঠানে একটা বিষয় খুব ভালভাবেই লক্ষ করে ছিলাম সেটা হচ্ছে আরাফ ভাইয়ার কান্ড। সেদিন ভাইয়া তার হাত এক মুহূর্তের জন্য ছাড়েনি। এটা তো বুঝতে পারছিলাম ভাইয়া তাকে অনেক ভালবাসে। তো আমি তিন্নিকে বুঝাতে চাইলাম, ভাইয়াকে একটা সুযোগ দেয়া দরকার। কিন্তু ফাজিল মেয়ে নারাজ। কথায় কথায় তিন্নি বলে ফেললো,,,

– তুই দেখেনিস মাত্র ৭ দিনের মধ্যে ওনি আবারও আমার আত্মসম্মানকে দূমড়েমূচড়ে দিয়ে নিজের ভিতরে থাকা রূপটাকে দেখিয়ে দিবে।
– এমনটা নাও হতে পারে তিন্নি, আমি দেখেছি ভাইয়া তোকে কতটা ভালবাসে।
– যদি এমনটাই হয়?
– আচ্ছা বল আমি কিভাবে প্রমাণ করতে পারি ৭ দিন পর তুই নিজেই সম্পর্কটাকে মেনে নিবি?

তখন তিন্নি বলল ভাইয়ার অফিসে একটা জব নিতে, নিলাম। বলল ভাইয়ার আশেপাশে সারাক্ষণ ঘুরাঘুরি করতে করলাম। বৌ পাগলা বেটার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতেই বেটা রেগে ফায়ার হয়ে বলল,,,

– এই মেয়ে তোমাকে কতবার বলবো আমার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করবেনা। কাজ করতে এসেছো, কাজ শেষ করে চলে যাও।

প্রথমে তো পুরো ভয় পেয়ে গেছিলাম। পরক্ষনে তিন্নির কথা ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে তার শিখানো কথা গুলোই বললাম,,,

– স্যার ঘুরাঘুরি করলে সমস্যা কি?
– আমি বিবাহিত, আমার ঘরে বৌ আছে।
– আপনার বৌ তো আপনার সাথে কথাই বলেনা। ফারহান নামের একটা ছেলের সাথে ওর রিলেশন আছে, যার সাথে আপনাদের বিয়ের আগে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ঐ মেয়ের সম্পর্কে,,

আর কিছু বলার আগে ভাইয়া কষিয়ে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো। তাকিয়ে দেখি ওনি প্রচন্ড রেগে আছে, পারলে আরও কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতো। ওনি রেগে আমাকে বলল,,,

– আমার বৌয়ের সম্পর্কে তোমার কোনো আইডিয়া আছে ও কেমন মেয়ে? ওকে পেয়ে আমি ধন্য, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষদের মধ্যে একজন। ওর চরিত্র এতটাই নিখুঁত মাঝেমাঝে আমি নিজেকে ওর যোগ্য মনে করিনা। তুমি ওর সম্পর্কে এতো বাজে কথা বলার সাহস পেলে কোথায়? এক্ষণি বেরিয়ে যাও অফিস থেকে, নাহয় থাপ্পড়াইয়া সব দাঁত ফেলে দিবো। বেয়াদব মেয়ে,,
– আপনি তো বলেছিলেন ও একটা দুশ্চরিত্রা মেয়ে। আপনার থেকে শুনেই আমি বলেছি। আপনি আমাকে চড় মেরেছেন তাইনা? এখন দেখবেন আপনার বৌয়ের কাছে আপনার নামে কিভাবে পেঁচ লাগাই। আমাকে চড় মারার শাস্তি তো পেতেই হবে। আপনাদের সম্পর্ক যদি আমি তুরিতে শেষ না করেছি, তাহলে আমার নাম নাদিয়া না।

কথা গুলো বলে আমি ওনার অফিস থেকে বেরিয়ে গেছি। ওনি ভয়ে রিতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছিল, এটা ভেবে আমি যদি তিন্নির কাছে ওনার নামে উল্টাপাল্টা পেঁচ লাগাই তিন্নি ওনাকে ছেড়ে চলে যাবে। ওনি আমার সম্পর্কে সব তথ্য বের করার চেষ্টা করতে করতে বাসায় ফিরতে সন্ধা হয়ে গেছে। আমি যখন তোমাদের বাসায় আসছি, আমাকে দেখে মনে হয় ভয়ে ভাইয়ার পুরো কলিজার পানি শুকাইয়া গেছে।

— বলেই নাদিয়া হো হো করে হেসে দিলো। আনহা তিন্নির সামনে এসে হাঁটুগেরে বসে তার দুহাত ধরে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,

আনহা : ভাবি এবার কি আমার ভাইয়াটাকে ক্ষমা করা যায়? আমি জানি ভাইয়া অনেক কষ্ট পাচ্ছে।

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে