স্পর্শের_ভাষা part – 12
writer – তানিশা
আরাফ : ছেড়ে দিচ্ছি, রুমে চলো।
— বলেই আরাফ তিন্নিকে তার বাহুডোর থেকে ছেড়ে তাকে টেনে কোলে নিয়ে রুমে হাটা শুরু করলো। তিন্নির ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলতে। আরাফ তিন্নিকে বিছানায় নামিয়ে দিয়ে বলল,,,
আরাফ : এখন কি ঘুমাবে? নাকি চাঁদ দেখতে ছাদে যাবে?
— তিন্নি আরাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,,,
তিন্নি : কি ভাবেন নিজেকে? আপনি বলবেন আর আমি দৌড়ে আপনার পিছনে পিছনে চলে যাবো?
আরাফ : আমার মতো একটা আদর্শ স্বামী থাকতে তুমি দৌড়ে যাবে কেন? আমি তোমাকে পাজকোলে করে সিরি বেয়ে ছাদে নিয়ে যাবো। তুমি শুধু বলো দেখবা কিনা?
তিন্নি : আপনার দেখতে ইচ্ছে হলে আপনি যান। আমাকে বিরক্ত করবেন না, আমি এখন ঘুমাবো। ( বিরক্ত নিয়ে )
— তিন্নি বিছানা ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসে পরলো। দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে চিন্তা করতে লাগলো, কিভাবে আরাফের হাত থেকে বাচা যায়। আরাফ তিন্নির সামনে গিয়ে বলল,,,
আরাফ : মুখের থেকে হাত সরাও।
— তিন্নি মুখের থেকে হাত সরিয়ে অবাক হয়ে বলল,,,
তিন্নি : কেন?
আরাফ : তুমি মুখ ঢেকে রাখলে আমি চাঁদ দেখবো কিভাবে?
তিন্নি : চাঁদ কি আমার মুখে লেগে আছে? ( রেগে গিয়ে )
আরাফ : আজব!! চাঁদ তোমার মুখে লেগে থাকবে কেন? তুমি আমার চাঁদ সুন্দরী। তোমার মুখের দিকে তাকালেই তো চাঁদ দেখা যায়।
— আরাফ তাকে এতটা বিরক্ত করছে যে, সে আর সহ্য করতে পারছেনা। এতটা প্যারা নেয়া সম্ভব না। তিন্নির ইচ্ছে করছে আরাফের হাত, পা, মুখ সব বেধে তাকে নির্জন কোনো জঙ্গলে ফেলে আসতে। তিন্নি প্রচন্ড রেগে নিজের চুল গুলো টেনে ধরেছে, ছিড়ে ফেলার জন্য। আরাফ তিন্নির হাতদুটি ধরে বলল,,,
আরাফ : কি হলো মাথা ব্যথা করছে? আসো মাথায় তেল দিয়ে বিলি করে দেই।
তিন্নি : হ্যা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। আমার মাথায় তেল দেবার প্রয়োজন নেই, আমি একটু ঘুমাতে চাই। আমাকে কি শান্তিতে ঘুমাতে দিবেন? নাকি দিবেন না??
— তিন্নির চোখদুটি রাগের চোটে লাল হয়ে গেছে। আরাফ বুঝতে পারছে তিন্নি প্রচন্ড রেগে আছে, তাকে এই মুহূর্তে বিরক্ত না করলেই ভালো হবে। আরাফ কিছুটা নিচু সুরে বলল,,,
আরাফ : sorry… তোমাকে বিরক্ত করার জন্য। তুমি বিছানা গিয়ে শুয়ে পরো।
তিন্নি : বিরক্তি হচ্ছি বুঝতে পারছেন, তার জন্য শুকরিয়া। আর আমি এখানেই ঘুমাবো।
আরাফ : আমি যেহেতু বলছি তুমি বিছানায় ঘুমাবে, তারমানে তুমি বিছানায় ঘুমাবে।
— বলেই আরাফ আবারও তিন্নিকে কোলে তুলে নিলো। তিন্নি চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,,,
তিন্নি : কথায় কথায় এভাবে কোলে তুলে নেন কেন?? আমাকে কি আপনার ছোট বাচ্চা মনে হয়??
আরাফ : তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার থেকে ৪ বছরের বড়। সেক্ষেত্রে তো তুমি আমার অনেক ছোট তাইনা?? আর আমার বৌকে আমি কোলে নিচ্ছি তোমার সমস্যা কোথায়??
— বলেই আরাফ তিন্নিকে বিছানায় নামানোর সময় তার গালে ছোট একটা চুমু খেয়ে একগাল হেসে দিলো। সাথে সাথে যেন তিন্নি রোবটের মতো শক্ত হয়ে গেছে। আরাফ এটা কি করলো? এতটা বাড়াবাড়ি তিন্নির সহ্য হচ্ছে না। কিছু একটা করতে হবে। তিন্নি ভাবছে কি করা যায়? তখনি আরাফ বলল,,,
আরাফ : তুমি ঘুমিয়ে পরো, আমি আসছি।
— বলেই আরাফ বাথরুমে গেলো। বাথরুমে যাওয়ার পর তিন্নির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। তিন্নি বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমের দরজাটা আস্তে করে বাহির থেকে লক করে দিলো। যে আরাফ টেরই পেলো না। তিন্নি পরম শান্তিতে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলো। এখন আর আরাফ তাকে জ্বালাতে পারবেনা, এখন তার শান্তিতে ঘুম হবে। আরাফ বাথরুম থেকে বের হবার জন্য দরজা খুলতে গেলো দেখে দরজা খুলছে না। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরে আরাফ বুঝতে পারলো, দরজা বাহির থেকে লক করা। দরজা বাহির থেকে কিভাবে লক হলো? ভাবতে ভাবতেই তিন্নিকে ডাকতে লাগলো,,,
আরাফ : তিন্নি? এই তিন্নি? ও বৌ? ও আমার কলিজা বৌ তুমি শুনতে পাচ্ছোনা?
— তিন্নি বিরক্ত নিয়ে বাথরুমের দরজার দিকে তাকালো। আরাফ এভাবে ডাকাডাকি করলে সে ঘুমাবে কিভাবে? আরাফ দরজা ধাক্কা দিয়ে তিন্নিকে ডেকেই যাচ্ছে। তিন্নি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে উঠে বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে বলল,,,
তিন্নি : একদম ডাকাডাকি করবেন না। অনেক সখ না আপনার বাসর করার?? এখন বাথরুমে বসেই বাসর করেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
আরাফ : তিন্নি please দরজাটা খুলো। এখানে বসার মতোও জায়গা নেয়, আমি সারারাত কিভাবে থাকবো? আমি তোমাকে আর বিরক্ত করবোনা। please… ( অনেক বিনয়ী হয়ে )
তিন্নি : আপনাকে বিশ্বাস করিনা।
আরাফ : ok promise… করছি, তোমাকে আর বিরক্ত করবোনা।
তিন্নি : ok…
— তিন্নি দরজাটা খুলে দিলো। আরাফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো, বাসরঘরে কোনো বৌ তার স্বামীর সাথে এমন করে এটা তার জানা ছিলনা। তিন্নি সেদিকে তোয়াক্কা না করে সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। আরাফ চাইলেও এখন কিছু করতে পারবেনা, কারণ সে তাকে ওয়াদা করেছে বিরক্ত করবেনা।
ভোর সারে ৫ টায় তিন্নি ঘুম থেকে উঠে দেখে আরাফ বিছানায় নেই। লোকটা এতো সকাল কোথায় গেলো? সেখানেই যাক অবশ্য তাতে তিন্নির কিছু যায় আসেনা। তিন্নি উঠে ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে রান্না ঘরের যাওয়ার জন্য সিরি বেয়ে নিচে নামলো। নিচে আসতেই দেখে আরাফের বাবা আর আরাফ একসাথে বাসায় ঢুকছে। তার শশুড় একজন নামাজি ব্যক্তি এটা সে ভালো করে জানে। কিন্তু আরাফের মাথায় টুপি দেখে তিন্নি কিছুটা অবাক হলো। হয়তো সেও তার বাবার সাথে মসজিদে গেছে। বাহহ আরাফের মধ্যে এতটা পরিবর্তন? বিষয়টা নিয়ে তিন্নি সত্যি অনেক অবাক। তাহলে আরাফকে কি সে একটা সুযোগ দিবে?
আরাফের অফিসে নাদিয়া নামের একটা মেয়ে নতুন জয়েনিং করেছে। মেয়েটা কিছুক্ষণ পর পর কিছু একটা বাহানা দিয়ে আরাফের কেবিনে বারবার আসছে। আরাফ প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। তার উপর তিন্নিকে বারবার কল করছে কিন্তু সে রিসিভ করছেনা। বিকেলে আরাফ বাসায় গিয়ে দেখে তিন্নি রুমে নেই, বাথরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। আরাফ দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলো,,,
আরাফ : তিন্নি দরজা খুলো।
— হঠাৎ আরাফের এমন ডাকে তিন্নি কিছুটা চমকে উঠলো। এই লোকটার জন্য বাথরুমে গিয়েও তার শান্তি নাই। আরাফের এমন চেঁচামেচিতে তিন্নি খেয়াল করেনি, বাথরুমের ফ্লোর অনেক পিচ্ছিল হয়ে আছে। তিন্নি ফ্রেস হয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতে যাবে তখনি ধপাস করে ফ্লোরে পরে গিয়ে পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলো,,,
তিন্নি : আহহ,,
আরাফ : তিন্নি কি হয়েছে?
তিন্নি : দেখেন না? পরে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি। ( রেগে গিয়ে )
আরাফ : কিভাবে দেখবো দরজা বন্ধ তো। দরজাটা খুলো আমি দেখছি।
তিন্নি : খুলবো কিভাবে আমি নড়তে পারছিনা।
আরাফ : আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
তিন্নি : আপনাকে কিছু করতে হবেনা। আমি উঠার চেষ্টা করছি।
— বলেই তিন্নি অনেক কষ্টে দরজাটা খুললো। দরজা খুলতেই আরাফ তাকে কোলে নিয়ে বিছানায় আধশোয়া করে পিছনে একটা বালিশ দিয়ে বসিয়ে দিলো। তিন্নির পায়ে হাত দিয়ে দেখতে দেখতে বলল,,,
আরাফ : কোন পায়ে ব্যথা পেয়েছো?
— তিন্নি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল,,,
তিন্নি : আনহাকে ডাকেন।
আরাফ : কেন?
তিন্নি : চোখে দেখেননা? আমার পরনের ড্রেসটা ভিজে গেছে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।
আরাফ : আমি থাকতে আনহাকে ডাকবো কেন? আমি তোমার ড্রেস চেঞ্জ করবো। এটা আমার অধিকার আমি তোমার একমাত্র আদর্শ স্বামী।
— তিন্নি আরাফের দিকে এমন ভাবে তাকালো মনে হচ্ছে সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। তিন্নি আরাফকে কিছু না বলে নিজেই চেঁচিয়ে আনহাকে ডাকতে লাগলো,,,
তিন্নি : আনহা? এই আনহা?
— আরাফ রুমে থাকলে আনহা তাদের রুমে আসেনা। নতুন বিয়ে হয়েছে তাদেরও তো নিজেদের মতো সময় কাটানোর একটা ব্যাপার আছে। আনহা রুমে এসে বলল,,,
আনহা : কি হয়েছে ভাবি? ডাকছো কেন?
তিন্নি : আমাকে একটু হেল্প করো, আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।
আরাফ : আনহা তুই তোর রুমে যা। আমি ওর হেল্প করবো।
তিন্নি : আনহা তুমি যাবেনা।
আরাফ : আনহা তোকে যেতে বলেছি।
তিন্নি : ও যাবেনা।
আরাফ : আমি বলছি ও যাবে।
তিন্নি : আপনি বুঝতে পারছেন না? আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।
আরাফ : আমি থাকতে আনহা কেন করবে? আমি তোমার হেল্প করবো।
তিন্নি : আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।
আআরাফ : এটা আমি সবসময় করি।
— আনহা একবার তিন্নির মুখের দিকে তাকাচ্ছে একবার আরাফের মুখের দিকে। তাদের ঝগড়া করতে দেখে আনহা বলল,,,
আনহা : তোমরা ঝগড়া করো আমি বরং চলে যাই।
— আনহা চলে যেতেই আরাফ আলমারি থেকে একটা ড্রেস এনে তিন্নিকে বলল,,,
আরাফ : এটা পরবে?
— তিন্নির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। রাগে গজগজ করে বলল,,,
তিন্নি : আপনার কি নিম্নতম লজ্জাবোধ বলতে কিছু নেই?? আনহার সামনে বলছেন আমার ড্রেস চেঞ্জ করবেন। ছিঃ,, আমি এখন আনহার সামনে যাবো কি করে? ( মাথা নিচু করে )
আরাফ : এখানে লজ্জার কি আছে? আমি তোমার স্বামী। আর বিয়ের পর লজ্জা শরম সব চলে যায় এটা তুমি জানোনা? এতো লজ্জা নিয়ে থাকলে দুজনে দুজনের কাছে আসবো কি করে? আমাদের বাচ্চাকাচ্চা হবে কিভাবে? আমার বাবার বুঝি নাতিনাতনি দেখতে ইচ্ছে করেনা?
— তিন্নি হা করে মাথা তুলে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে বাচ্চাকাচ্চার কথা কোথা থেকে আসলো? তিন্নি আরাফকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,,,
তিন্নি : একদম আজেবাজে কথা বলবেন না। আপনি রুম থেকে বেরিয়ে যান, আমি নিজেই চেঞ্জ করে নিবো।
আরাফ : আমি যাবোনা।
তিন্নি : ঠিক আছে যাওয়ার দরকার নেই। আমি ভেজা শরীর নিয়ে এভাবেই বসে থাকবো।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)