স্পর্শের_ভাষা part – 11

0
1090

স্পর্শের_ভাষা part – 11
writer – তানিশা

— নানারকম ফুল আর ঝাড়বাতি দিয়ে বাড়ির চারপাশে সাজিয়েছে। পুরো বাড়ির ভিতরটা লাল, সবুজ, হলুদ, সাদা রঙ্গের নানান ফুলের সমারোহ দিয়ে বৌভাত অনুষ্ঠানের জমজমাট আয়োজন করেছে। পার্লারের মেয়েরা তিন্নিকে সকাল থেকে সাজাতে ব্যস্ত। লাল খয়েরি রঙ্গের একটা বেনারসি শাড়ি পরিয়েছে, সাথে গা ভর্তি গহনা। এসব দেখে তিন্নি প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। কি দরকার একটা অসম্পূর্ণ সম্পর্ককে নিয়ে এতটা হৈচৈ করার, লোক দেখানো এতো আয়োজন করার?? আনহা এসে তিন্নিকে দেখে তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বলল,,,

আনহা : ভাবি আজ যদি মা বেচে থাকতো, তোমাকে এই রূপে দেখে এতটা খুশি হতো যার কোনো সীমানা থাকতো না। তোমাকে এতোটা সুন্দর লাগছে যা বলে বুঝাতে পারবোনা। যেন সর্গ থেকে নেমে আসা একটা অপ্সরী।

তিন্নি : আটা ময়দা মেখে ভূত বানিয়ে দিয়েছে, আর তুমি বলছো অপ্সরী? ( বিরক্ত নিয়ে )

আনহা : আজকের দিনটাই সহ্য করে নাও। please… ( করুণ দৃষ্টিতে )

তিন্নি : আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কি এখানেই বসে থাকতে হবে?

আনহা : না, নিচে চলো। অনেক মেহমান চলে এসেছে।

তিন্নি : হুম চলো।

— সকাল থেকে বাসায় মেহমান আসতে শুরু করেছে, এখনো আসছে। বলেছিল ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করবে। এটাকে ছোটখাটো অনুষ্ঠান বলে? আনহা তিন্নিকে নিচে নিয়ে এসে আরাফের পাশে বসিয়ে দিলো। আরাফ পাশ ফিরে তিন্নির দিকে তাকাতে তার চোখদুটি আটকে গেলো। হা করে অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। তিন্নিকে দেখে তার যেন হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার উপক্রম। মেয়েটা এতোটাই সুন্দর যতবার আরাফ দেখে ততবার তার প্রেমে পরে যায়। তিন্নি আড়চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলল,,,

তিন্নি : হা বন্ধ করেন, নাহয় মুখে মশা ঢুকবে।

— আরাফ তিন্নির বাম হাতটা তার দুই হাতের মাঝে টেনে নিয়ে বলল,,,

আরাফ : ঢুকলে ঢুকবে, তোমাকে পাবার নেশায় দুএকটা মশা খেতেই পারি। তাতে সমস্যা কি??

তিন্নি : ছিঃ,, খাটাশ একটা।

— বলেই তিন্নি আরাফের দিকে তাকিয়ে তার হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। আরাফ হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,,,

আরাফ : এমন করছো কেন?

তিন্নি : হাত ছাড়েন। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : যদি না ছাড়ি? ( মুচকি হেসে )

তিন্নি : আমি এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হবো।

আরাফ : গিয়ে দেখাও।

— তিন্নি সাথে সাথে রেগে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলো। পাশে দাড়িয়ে থাকা তিন্নির মা বলল,,,

তিন্নির মা : কি হয়েছে? উঠলি কেন?

তিন্নি : আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

তিন্নির মা : তাড়াতাড়ি বস, নাহয় থাপ্পড়াইয়া সব দাঁত ফেলে দিবো ফাজিল মেয়ে।

তিন্নি : মা!

তিন্নির মা : বাড়ি ভর্তি মেহমান দেখছিসনা বেয়াদব মেয়ে, ফাজিল কোথাকার।

— পাশে বসে আরাফ হেসে কুটকুট হয়ে পরছে, তার হাসি যেন থামছেই না। তিন্নি আরাফের দিকে রেগে তাকিয়ে আছে, ইচ্ছে করছে একটা লাঠি দিয়ে আরাফের মুখে বারি দিয়ে তার মুখের হাসিটা বন্ধ করে দিতে। সাথে সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে মাথা ন্যাড়া করে দিতে। তিন্নি রেগে আবারও আরাফের পাশে বসে পরলো। আরাফ দুষ্টামির হাসি দিয়ে বলল,,,

আরাফ : কি হয়েছে যাবেনা? নাকি আমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা?

তিন্নি : একদম চুপ থাকেন। নাহয় কিছু একটা দিয়ে বারি দিয়ে আপনার মুখটা বোচা করে ফেলবো। এতো কথা কিভাবে বলেন? ছাগলের মতো সারাক্ষণ ম্যা ম্যা করতে থাকেন। পাগল ছাগল কোথাকার। ফাজিলের হাড্ডি, অস্বস্তিকর লোক একটা।

— তিন্নি প্রচন্ড রেগে ফোঁপাতে লাগলো। আরাফের মুখটা চুপসে গেলো। এই মুহূর্তে তার চুপ থাকাই ভালো, এটা ভেবে আরাফ আর তার সাথে কথা বললনা।

কখন থেকে সেই একই জায়গায় বসে থাকতে থাকতে তিন্নি বিরক্ত হয়ে গেছে। একের পর এক মেহমান এসে তিন্নিকে দেখে তার গুণাবলি করে যাচ্ছে। তিন্নির প্রচন্ড অস্বস্তিকর লাগছে। কিছুদিন পরে সে আরাফের সাথে থাকবেই না তাহলে কেন সবার সামনে আরাফের স্ত্রী বলে তাকে পরিচিত করা হচ্ছে? যে সম্পর্কটা তিন্নি মন থেকে মানতে পারছেনা, এটাকে নিয়ে এতো আয়োজন কেন??

দুপুরের খাবারের সময় হলে, আনহা আর তার কয়েকজন বান্ধুবি মিলে বড় একটা প্লেটে অনেক রকমের খাবার সাজিয়ে আরাফ আর তিন্নির সামনে নিয়ে আসলো। বৌভাত অনুষ্ঠানে স্বামী স্ত্রী একই প্লেটে খাবার খাওয়া নিয়ম। এক প্লেটে খাবার খেলে নাকি স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা বাড়ে। প্রতিটা অঞ্চলে কিছু ভিন্ন নিয়ম থাকে। এটা তাদের আঞ্চলিক নিয়ম। তিন্নির মুখে স্পষ্ট বিরক্তি ভাব দেখা যাচ্ছে। কে বানিয়েছে এই নিয়ম? তিন্নির মা এগিয়ে এসে তিন্নিকে বলল,,,

তিন্নির মা : কি হলো? দুজনে খাওয়া শুরু কর।

তিন্নি : মা সব কিছুতে এমন বাড়াবাড়ি না করলে হয়না?? ( করুণ দৃষ্টিতে )

তিন্নির মা : এটা বাড়াবাড়ি না, এটা আমাদের সমাজের নিয়ম।

আরাফ : শাশুড়ি মা সমাজের এই নিয়মটা যে বানিয়েছে, তাকে অনেক ধন্যবাদ।

— বলেই আরাফ একগাল হেসে দিলো। তিন্নি তার দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আরাফের সাথে একই প্লেটে খাবার খেলো।

রাত প্রায় ৯ টা বাজে, অনুষ্ঠান শেষে তিন্নির পরিবার সহ একে একে সব মেহমান চলে গেলো। আনহা তার বান্ধুবিরা মিলে তিন্নিকে আরাফের রুমে নিয়ে গেলো। বাসর ঘরটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে, মনে হচ্ছে বিছানার চারপাশ লাল ও সাদা গোলাপ দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে। বিছানার উপরের দিকের নীল রঙ্গের দেয়ালটাই লাল ফুল দিয়ে লিখে রেখেছে আরাফ তিন্নির বাসরঘর। তার চারপাশে সোনালি রঙ্গের বেলুন দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। রুমটা দেখে তিন্নির চোখদুটি আটকে গেলেও মুহূর্তের মধ্যে সামলে নিলো নিজেকে। আনহা তিন্নির দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটি নাচিয়ে বলল,,,

আনহা : ভাবি কেমন হয়েছে?

তিন্নি : অনেক সুন্দর। ( একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে )

আনহা : তুমি ভাইয়ার অপেক্ষা করো, আমরা চললাম।

— আনহা তার বান্ধুবিদের নিয়ে চলে গেলো। তিন্নি বিছানায় বসে বিছানার চাদরে একবার হাত বুলিয়ে নিলো। হয়তো আবেগের বসে। এই সময়টার জন্য তিন্নি অনেক অপেক্ষা করেছিল, অনেক স্বপ্ন ছিল তার এই সময়টা জোড়ে। কিন্তু আজ সময় কতটা বদলে গেছে। তিন্নির মনে এখন আর আরাফকে নিয়ে কোনো চাহিদা বা স্বপ্ন নেই। আছে একরাশ রাগ, ঘৃণা, অভিমান। আরাফের কথা মনে পরতে তিন্নির কাল রাতের কথা মনে পরলো। কাল রাতে আরাফ তিন্নির সাথে ঘুমানো নিয়ে যা অত্যাচার করেছিল, আজ সে এমনটা মোটেও হতে দিবেনা। আরাফ আসার আগে তিন্নি উঠে গিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় এসে শুয়ে পরলো। এখন তার কাছে নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। আজ আরাফ তাকে বিরক্ত করতে পারবে না, সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চোখ দুটি বন্ধ করে ঘুমাতে যাবে। তখনি দরজার ওপাশ থেকে আরাফের বাবা দরজা হালকা ধাক্কা দিয়ে তিন্নিকে ডাকতে লাগলো,,,

বাবা : তিন্নি মা দরজাটা খুলবি? একটা দরকার ছিল।

— তিন্নি অনেকটা চিন্তিত হয়ে শুয়া থেকে উঠে বলল,,,

তিন্নি : বাবা কিছু হয়েছে??

বাবা : হ্যা মা। দরজাটা খুল তারপর বলছি।

তিন্নি : আসছি বাবা।

— তিন্নি দরজা খুলে দেখে আরাফ তার বাবার পেছনে দাড়িয়ে মিটমিট হাসছে। তিন্নি বুঝতে পারছে দরজাটা ইচ্ছে করে আরাফ তার বাবাকে দিয়ে খুলিয়েছে। কারণ আরাফ একা আসলে কখনোই সে দরজাটা খুলতো না। তবুও তিন্নি তার শশুড়কে জিঙ্গেসা করলো,,,

তিন্নি : কি হয়েছে বাবা? কেন ডাকলেন?

আরাফ : কিছুনা, এমনি ডেকেছে। অনেক রাত হয়েছে বাবা তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।

— বলেই আরাফ রুমে ঢুকে পরলো। তিন্নির মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে। আরাফের বাবা চলে যেতেই আরাফ দরজা লক করে ফেললো। তিন্নি আরাফের সাথে কোনো কথা না বারিয়ে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছে। আজকে তার আর শান্তির ঘুম হবেনা। অশান্তির মূল কারণ, শয়তানে জম চলে এসেছে রুমে। আরাফ তার পিছনে বেলকুনিতে গিয়ে তিন্নিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

আরাফ : তুমি কি ভেবেছিলে আমাকে ছাড়া একা একা বাসর রাত কাটাবে, আর তা আমি হতে দিবো। কখনো না।

তিন্নি : কথায় কথায় জড়িয়ে ধরেন কেন? দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে পারেন না?

আরাফ : কখনোই না। এসবের অভ্যাস করে নাও।

— তিন্নি আরাফের হাতটা তার কোমর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই, আরাফ আরও শক্ত করে চেপে ধরলো। আরাফ তিন্নির ঘারের কাছে তার মুখ নিতেই আরাফের গরম নিশ্বাস এসে তিন্নি ঘারে পরছে। আরাফ তিন্নির গলায় একটা চুমু খেয়ে তার খোপা করা চুল গুলো খুলে দিলো। তিন্নি শিহরে উঠে চোখদুটি বন্ধ করে আরাফের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরাফ দুহাতে তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে তার খোলা চুল গুলোতে মুখ গুঁজে বলল,,,

আরাফ : এমন ছটফট করছো কেন??

তিন্নি : এমন বজ্জাত শয়তান যদি আমাকে সাপের মতো পেঁচিয়ে রাখে আমি কি খুশিতে নাচবো নাকি? ছাড়েন আমাকে। ( দাঁতে দাঁত চেপে )

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে