#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_26
তিয়াসার চারপাশ অন্ধকার আর মাথাটা প্রচুর ঘুরছে… আসে পাশের সব মানুষকে ঝাপসা লাগছে আর কথা গুলো সব অস্পষ্ট শুনছে…তিয়াসার মাথাটা ভারী হয়ে আসছে ক্রমশ…
তিয়াসার সামনে একটা পেপার এগিয়ে দিলো রাইসা… বার বার তিয়াসাকে সাইন করতে বলে কিন্তু তিয়াসা কোনো রেসপন্স করেনা… তিয়াসা কে হালকা ধাক্কা দিয়ে..
রাইসা: কিরে কি হলো…? নে সাইন কর রেজিট্রি পেপারে….
বলে কলম এগিয়ে দিলো তিয়াসার দিকে… তিয়াসা হাতে কলম নিয়ে রাইসার দেখানো জায়গায় সাইন করে কলমটা ছেড়ে দিলো…
তিয়াসা মাথাটা তুলে রাখতে পারছেনা… খুব কষ্টে নিজেকে ঠিক রেখেছে… পুরো শরীর কন্ট্রোল লেস হয়ে যাচ্ছে… কোনো মতে তিয়াসা নিজেকে সামলে রেখেছে…
লীগালি বিয়ে হলেও ইসলামিক নিয়মে এখনো বিয়ে হয়নি…. কাজী সাহেব এসে ইসলামিক নিয়মে বিয়ে পরানো শুরু করে…তিয়াসা কে বার বার কবুল বলতে বলছে রাইসা.. কিন্তু সেইম ঘটনা রিপিট হলো.. রাইসা বার বার বলাতেও তিয়াসা কবুল বলছে না… না পেরে অবশেষে রাইসা তিসানকে ডেকে আনে… তিসান তিয়াসার পাশে বসে গালে হাত দিয়ে তিয়াসাকে নিজের দিকে ঘুরালো… তিয়াসা তিসান এর কাধে নিজের আশ্রয় খুজে নিল.. তিসান তিয়াসার গালে হালকা করে চাপড় দিয়ে তিয়াসাকে কবুল বলতে বলে… তিসান এর কথা গুলো তিয়াসার কানে লাইটলি যাচ্ছে.. তিয়াসা একটু একটু করে মাথাটা তুলে তিসান এর কথা নোটিশ করলো… বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে তিনবার কবুল বলে দিলো… তিয়াসার দুচোখের বাদ ভেঙে গেছে… কিছুতেই আর আটকে রাখতে পারছে না চোখের পানি… সেই সাথে নিজের শরীরটাকেও… তিয়াসার মনে হচ্ছে.. নিজের থেকে সব কিছু অনেক দূরে চলে যাচ্ছে.. ঠিক দূরন্তর মতো চাইলেও ধরে রাখতে পারছে না…অবশেষে নিজের শরীর এর কাছে হার মেনে নিল..তিয়াসা নিজের শরীরটা ছেড়ে দিলো তিসান এর উপর..
।
।
।
২-৩ ঘন্টা পর… তিয়াসা নড়েচড়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো… চার পাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিতেই তিয়াসার ধম আটকে মরার উপক্রম…কারন চার পাশে লাল গোলাপ আর বেলীফুল আর বেডের উপর জুই ফুল দিয়ে লাভ শেপ আকানো… আর রুমে ডিপ লাইটিং করা… লাল নীল সবুজ কালারের কমবাইন্ড আলো… আলো গুলো একেক সময় একেক জায়গায় পরছে…. রুমের চারপাশে এতো এতো ফুল আর লাইটিং এ তিয়াসার অস্থীর লাগছে… ইচ্ছে করছে সব এলোমেলো করে দিতে… যার জীবনটাই ঝড়ো হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে গেছে তার কাছে এতো সুন্দর সাজানো গোছানো রুমটা বেসলেস মনে হচ্ছে….
তিয়াসা এতো কিছু ভাবার মাঝে ভুলেই গিয়েছিল.. সে এখন ইফরাদের বাড়িতে আছে… আর এটা হচ্ছে সেই কাঙ্ক্ষিত রাত মানে বাসর রাত… কিন্তু তিয়াসার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত কারন যেখানে মানুষটাই অনাকাঙ্ক্ষিত সেখানে এই স্বপ্নের রাত কি করে কাঙ্ক্ষিত হয়……..??
তিয়াসা বেড থেকে উঠে ফ্লোরে দাড়াতেই মাথাটা ঝিম ধরে এলো…. নিজেকে সামলে নিয়ে তিয়াসা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে একে একে সব গহনা খুলে রেখে দিল… এক প্রকার টেনে টেনে খুলেছে গহনা গুলো… শাড়িটও বিরক্ত লাগছে তিয়াসার কাছে… অনেক ভারী লাগছে.. এমনিতেই তিয়াসা চলতে ফিরতে হিমসিম খাচ্ছে..তার মধ্যে এই শাড়িটা যেনো অক্টোপাস এর মতো আটকে ধরে রেখেছে…তিয়াসা নরমাল কোনো ড্রেস পরতে পারলে কমফর্ট ফিল করতো… কিন্তু এখানে তিয়াসার ড্রেসই মেবি নেই.. সেখানে কমফর্টটেবল ড্রেস তো দূরের কথা…এসব ভাবতে ভাবতে তিয়াসা মন খারাপ করে বেডের উপর গিয়ে বসলো..বেডে বসে পা দোলাতে দোলাতে ওয়ারড্রপ এর উপর কিছু শপিং ব্যাগ এর উপর চোখ পরলো… কিন্তু গিয়ে দেখার ইচ্ছেটা তিয়াসার নেই… হঠাৎ তিয়াসার মনে পরলো রাইসা একটা লাগেজে তিয়াসার প্রয়োজনীয় সব জিনিস প্যাক করেছিল… সেই লাগেজটা অবশ্যই দিয়ে দিয়েছে হয়তো… যেই ভাবা সেই খুজা… সারা রুম খুজেও তিয়াসা সেই লাগেজটা খুজে পেলোনা… তখন খেয়াল করলো কাবার্ড এর দরজা খোলা… তিয়াসা কৌতূহল এর বসে কাবার্ডটা খুলে তো হা… কারন তিয়াসার সব ড্রেসেস কসমেটিকস এবং প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুছিয়ে রাখা হয়েছে সুন্দর করে…একদম পরিপাটি… তিয়াসা সেখান থেকে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেলো…. ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেন্জ করে ওয়াস রুম থেকে বের হলো… তিয়াসার এখন কিছুটা রিলিভ লাগছে….
তিয়াসা ড্রেসিং এর সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল নিয়ে মুখ মুজছে… তখন দরজায় একটা আওয়াজ হলো… মানে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করেছে… কেউ একজন বলতে হয়তো ইফরাদ আর কে…?? এতোক্ষন তিয়াসা নিশ্চিন্তে থাকলেও.. এখন ভয়ে কুকড়ে আসছে হাত পা….এতো সহজে বিয়েটা ঠিকি করে নিয়েছে..কিন্তু এতো সহজে ইফরাদ কে মেনে নেয়া কি আদৌ সম্ভব…..??
তিয়াসা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে উড়নাটা তার গলায় নেই….সাথে সাথে হাতে থাকা টাওয়ালটা ফেলে দিয়ে..
তিয়াসা: যেখানে আছেন সেখানেই স্টাচু হয়ে দাড়ান… আর এদিকে ঘুরবেন না বলছি….।
ওয়াস রুমে যাওয়ার সময় উড়নাটা বেডের উপর রেখে গিয়েছিল…
কথাটা শেষ করেই বেডের উপর থেকে উড়নাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো…!
” কেনো ঘুরবোনা হুমম..? আমার বউ কে দেখার সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার….
তিয়াসা: খুবববব তো বলতেন আমাকে সময় দিবেন… সব কিছু মানিয়ে নেয়ার জন্য… কিন্তু বিয়ে হয়েছে তিন চার ঘন্টাও হয়নি এখনি অধিকার ফলানো শুরু করে দিয়েছেন….
তিয়াসা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে…কিন্তু সে কার সাথে কথা বলছে তার দিকেএকবার ফির্র তাকানোর প্রয়োজন ও মনে করলো না…
অধিকার এর কথায় যখন বললেন তখন আমি বলবো… আমার উপর আপনার কোনো অধিকার খাটবেনা… সেটা যতোক্ষন না আমি চাইবো… আর সেই অধিকার টা আদৌ আমি মন থেকে দিতে পারবো কিনা কোনো দিন সেটাও জানিনা… আর আপনি তো সব জেনে শুনেই আমাকে বিয়ে করেছেন… আমি আশা করবো আপনি কোনো বিষয়ে আমাকে ফোর্স করবেন না….।
কথাটা শেষ করে তিয়াসা ড্রেসিং এর কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো…টাওয়াল এর সাথে পা আটকে পরতে পরতে বেচে গেছে… কারন পিছনে থাকা মানুষটা পিছন থেকেই তিয়াসা কে আগলে নিয়েছে… পেটের মাঝ বরাবর হাত দিয়ে পিছন থেকেই আগলে নিয়েছে তিয়াসা কে….
চলবে….