#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#par_25
দেখতে দেখতে প্রায় বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে… আর মাত্র তিন দিন বাকি.. ইফরাদ এর ইচ্ছে সে তার হবু বউকে নিয়ে বিয়ের শপিং করবে..কিন্তু এতে তিয়াসার বিন্দু পরিমাণ ও ইচ্ছে নেই… বাড়ির সবার জোরাজুরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই ইফরাদ এর সঙ্গে শপিং এ গিয়েছে… অবশ্য একা যাইনি.. তিয়াসার সাথে রাইসা আর ইফরাদ এর সাথে আয়রা এসেছে… বাকি সবাই নরমাল হলেও তিয়াসার পক্ষে বিন্দু পরিমাণ নরমাল হওয়া সম্ভব হয়নি…
সবার সাথে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছে… কিন্তু কোনো জিনিসের দিকে ফিরেও তাকাওচ্ছেনা… তিয়াসা যে বরিং ফিল করছে সেটা ইফরাদ খুব ভালো করেই বুজতে পারছে… তিয়াসা যে শপিং এ এসেছে এতেই ইফরাদ খুশি.. খুশি থেকে মহা খুশি বলতে গেলে…।
!
!
তন্নী গিয়ে দূরন্ত কে তিয়াসার বিয়ের খবর জানাই… দূরন্ত কয়েক মূহুর্ত চুপ থাকে.. কিন্তু কিছুক্ষন পরেই চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করে উঠে.. তন্নীর দু কাধে হাত রেখে..
দূরন্ত: তুই সত্যি বলছিস.. তিয়াসার বিয়ে আজ বাদে দুদিন পরে.. সত্যিই ও বিয়ের জন্য নতুন জীবন শুরু করার জন্য রাজি হয়েছে…??
তন্নী: মনে হলো অনেক খুশি হয়েছো.? হ্যাঁ তাতো হওয়ারই কথা..যাক গে.. আর কি বললে রাজি হয়েছে কিনা…? কেনোই বা হবেনা বলো তো.. সার্থপর মানুষদের জন্য কেনো নিজের জীবন থামিয়ে রাখবে…ও যেটা করেছে একদম ঠিক করেছে…।
দূরন্ত: হ্যাঁ আমিও চাই ও এগিয়ে যাক সব ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করুক…।
তন্নী: থাক ওর ভালো তোমার আর চাইতে হবেনা…!
,
.
.
,
তিয়াসার মা তিয়াসা কে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে… তিয়াসার জন্য বানিয়ে রাখা সব গহনা দেখাচ্ছে…তিয়াসা কে একটা একটা করে গহনা পরিয়ে দিয়ে দেখছে কেমন লাগছে তিয়াসা কে.. তিয়াসা কে এমন চুপচাপ দেখে..
তিয়াসার মা: তুই যদি সব সময় মুখটা এমন কালো করে রাখিস.. তাহলে আমাদের কেমন লাগে বল তো… তোর মুখটা দেখলে আমাদের সবার বুকের ভিতর হা হা কার শুরু হয়…দেখ মা যা হবার হয়ে গেছে.. তুই এসব থেকে বেড়িয়ে আয় মা.. তোর নিজের জন্য না হলেও আমাদের জন্য…আমি জানি ঘটনাটা ঘটেছে খুব বেশি দিন হয়নি.. আর এতো তাড়াতাড়ি ভুলাও সম্ভব নয়… কিন্তু তোকে যে এভাবে আর দেখতে পারছিনা…।
তিয়াসা: বেশ তো ছিলাম.. কেনো বার বার সব মনে করিয়ে দাও…।
তিয়াসার মা: আসল…
কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই রাইসা রুমে প্রবেশ করে..হাতে তিয়াসার ফোন নিয়ে ..
রাইসা: এই তিয়াসা সেই কখন থেকে তোমার ফোন বাজছে… নাও ধরো..
তিয়াসা: কে ফোন করেছে…??
রাইসা: ফোনটা হাতে নিয়েই দেখো না কে…??
তিয়াসা: দরকারি ফোন না… রেখে দাও পরে আমি কল ব্যাক করে নিবো…
রাইসা: এতো বার ফোন করছে তবুও বলছো দরকারি না…?
তিয়াসার মা: কে ফোন করছে..?
রাইসা: ইফফফরাদ…
তিয়াসার মা: নে ফোনটা ধর…কোনো দরকারে হয়তো ফোন করছে..!
তিয়াসা মায়ের মুখের উপর না করতে পারলো না… ফোন নিয়ে বাহিরে চলে এলো…
তিয়াসা: আসসালামু আলাইকুম…
ইফরাদ: ওয়া আলাইকুম আসসালাম.. কেমন আছো..?
তিয়াসা: আলহামদুলিল্লাহ… আপনি…??
ইফরাদ: তাহলে আমিও আলহামদুলিল্লাহ… কি করছো..??
তিয়াসা: কিছুনা.. মার সাথে বসে ছিলাম..
ইফরাদ: আমি কি তোমায় ডিসটার্ব করলাম..?
তিয়াসা: না… কিছু বলবেন..??
ইফরাদ: হ্যাঁ.. না মানে.. আসলে.. এমনিই ফোন করেছিলাম..।
তিয়াসা: ওহহহ আচ্ছা তাহলে রাখি…
ইফরাদ: ওকেএএ… তিয়াসা..
তিয়াসা: হুমম.. বলেন…!
ইফরাদ: না.. ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ..।
।
।
প্রতিটা মেয়েরই বিয়ে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন থাকে মনের মাঝে..তিয়াসার ও ব্যতিক্রম নয়.. তিয়াসার মনের মাঝেও ছিল হাজারো স্বপ্ন তবে সেটা শুধুই দূরন্ত কে ঘিরে… কালকে তিয়াসার গায়ে হলুদ… এই হলুদিয়া অনুষ্ঠান নিয়েও কতো প্ল্যান প্রোগ্রাম ছিল… কিন্তু আজ সব বিষাদ ময় লাগছে তিয়াসার কাছে… তিয়াসার কল্পনার বাহিরে ছিল এই দিনটি যে ওর জীবনে আসতে পারে… একটা মানুষই যথেষ্ট সুন্দর জীবনটাকে তছনছ করার জন্য… আর সে হচ্ছে ভালোবাসার মানুষ যাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসা হয়.. তার কাছ থেকে এতো বড় প্রতারণাই জীবনকে বিষাদ ময় করে তুলার জন্যই যথেষ্ট…. ভেবেই তিয়াসার দুচোখ ঝাপসা হয়ে এলো..!
।
।
দুদিন পর..
আজ তিয়াসার বিয়ে…সারা বাড়িতে আলোর মেলা সবার মুখেই হাসি… শুধু তিয়াসার মুখে মেঘ নেমে আছে… যার চারপাশে শুধু আধার…।
যতোই বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে.. ততোই তিয়াসার মনে ভয়টা গাঢ় হচ্ছে.. ভয়টা দূরন্তকে চিরতরে হারানোর ভয়…আর নিজেকে হারিয়ে ফেলছে অতল অন্ধকারে..
চলবে…..