স্পর্শের_বাহিরে_তুমি Part-23

0
1729

#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_23

তিয়াসার কেনো যেনো মনে হচ্ছে… দূরন্তর দুটো চোখ ওর উপর স্থীর আছে…কিন্তু আশে পাশে তাকিয়ে দূরন্ত কে পেলো না… আনমনেই তিয়াসার একটা দীর্ঘশ্বাস বেলিয়ে এলো..!

তিয়াসার মাথা ব্যাথা করছে বলে.. ও তন্নী আর সেতুর কাছ থেকে চলে আসে….প্রতিদিনের মতো আজ ও গাড়ির এক কোনে বসে চোখের পানি ফেলছে.. এটা যেনো প্রতিদিনের রুটিন…তিয়াসা গাড়ির গ্লাস টা নামিয়ে রেখেছে.. যেতে যেতে রাস্তার পাশ দিয়ে একটা ছেলে আর মেয়েকে হাত ধরে হাটতে দেখে… দূরন্তর সাথে কাটানো মূহুর্ত মনে পরে যাই তিয়াসার… পিছন থেকে লোকটাকে প্রায় দূরন্তর মতোই লাগছে…তিয়াসার গাড়িটা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক নজর বাহিরে তাকায়….এক মূহুর্তর জন্য তিয়াসার পৃথিবী থমকে যাই…কারন ছেলেটা দূরন্ত…কতোটা দিন পর দূরন্তকে এমন হাসি খুশি দেখাচ্ছে… তিয়াসার সাথে একটু আকটু কথা হলেও সেটা রেগে বিরক্ত নিয়ে বলেছে..

তিয়াসা গাড়িটা পার্ক করতে বলে গাড়ি থেকে নেমে দূরন্তর সামনে গিয়ে দাড়ালো…
তিয়াসা দূরন্তর সামনে দাড়াতে দূরন্ত কিছুটা আনইজি ফিল করছে… যেটা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে…

তিয়াসা: মনে হচ্ছে অনেক ভালো আছেন…??

দূরন্ত কিছু বলবে তার আগেই দূরন্তর হাত ধরে
মেয়েটি: এই মেয়েটা কে গো..? চেনো ওকে..??

দূরন্ত: নবনী ও হচ্ছে…
দূরন্তর কথা শেষ করতে না দিয়ে..

তিয়াসা:থাক আপনাকে আর কষ্ট করে বলতে হবেনা…আমিই বলছি.. ম্যাম আমি হচ্ছি তিয়াসা… আর আপনার হাতের মুঠোয় বন্ধি করা মানুষটি হচ্ছে আমার খুব কাছের এবং প্রিয় একটি স্যার..আমার ভার্সিটি টিচার…

তিয়াসা জোর পূর্বক মুখে হাসি রেখে কথা গুলো বললো.. তিয়াসার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাদতে..এবং দূরন্তর কাছে জবাবদিহি চাইতে কেনো ওর সাথে এমন করলো..কি ভুল ছিল ওর যার জন্য এতো বড় শাস্তি দিল…??..কিন্তু দূরন্তর সামনে ভেঙে পরলে চলবে না.. দূরন্তর খুশিতে কি করে তিয়াসা আপসেট হবে.. দূরন্তর খুশিই যে ওর খুশি….

তিয়াসা: কনগ্রাচোলাশন ফর ইউর নিউ লাইফ… বি হ্যাপি স্যার এন্ড ম্যাম…!

কথা বলা শেষেই তিয়াসা পিছন ঘুরে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো… আর এক সেকেন্ড সেখানে দাড়ালে হয়তো চোখের পানি আটকে রাখতে পারতো না তিয়াসা….।



তিয়াসার নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে নিজের কাছে… হয়তো ওর জন্য ওর পরিবারের সম্মানহানী হবে… যে বাবা আর ভাই তিয়াসার সুখের জন্য চোখ বন্ধ করে দূরন্ত কে বিশ্বাস করেছিল…হয়তো সেই বিশ্বাস এর মর্যাদা দূরন্ত দিতে পারবেনা বা চাইনা… ছোট থেকে না চাইতেই সব পেয়েছে… দূরন্ত কেও পেতে চলেছিল না চাইতেও.. মুখ ফুটে বলতে হয়নি দূরন্তর কথা… কিন্তু…………….!!

তিয়াসা নিজের পরিবারের কারোর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা.. সব সময় অপরাধ বোধ কাজ করে…।


,

করিডোরের রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে তিয়াসা…. মাথাটা খুব করে ব্যাথা করছে… হয়তো ব্লাক কফি কিংবা বাম লাগালে কিছুটা রিলিফ লাগতো… কিন্তু না তিয়াসা এখন নিজের মাঝে থাকবে.. নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে… এটায় হয়তো একমাত্র কারন দূরন্ত কে কিছু সময় এর জন্য ভুলে থাকা…

প্রায় ৩০ মিনিট পর তিয়াসার ফোন ব্রাইব্রেট হচ্ছে… তিয়াসা চোখ খুলে তাকানোর প্রয়োজনবোধ করলো না কলটা কে করেছে… না দেখেই রিসিভ করে
তিয়াসা: আসসালামা আলাইকুম…

দূরন্ত: ওয়া আলাইকুম আসসালাম…কেমন আছো…??

তিয়াসা: আলহামদুলিল্লাহ ভালো… আপনাকে তো জিঙ্গেস করার প্রশ্নই উঠেনা আপনি কেমন আছেন… কারন আপনি এতোটাই ভালো আছেন যে আপনাকে এখানে ওখানে না দেখলে জানতাম ই না…

দূরন্ত: হুমম ভালোই আছি..

তিয়াসা: হ্যাঁ সব সময় যেনো এই রকম ভালো আর হাসি খুশি থাকেন.. এটাই আপনার জন্য আমার প্রার্থনা….!

কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে…
দূরন্ত: তিয়াসা তোমাকে কিছু বলার ছিল আমার…

দূরন্তর মুখ থেকে তিয়াসা ডাকটা শুনে আরেক মূহুর্ত্তের জন্য তিয়াসা থমকে গেলো… এই দূরন্ত কে আর তার কথা বার্তা বড্ডো অচেনা তিয়াসার কাছে… যে দূরন্ত মনের ভুলেও তিয়াসা বলে ডাকেনি সে আজ তিয়াসা বলে ডাকছে… এতেই প্রমান হয়ে যাচ্ছে তিয়াসার থেকে কতোটা দূরে চলে গেছে দূরন্ত…

তিয়াসা: আমাকে আর নতুন করে কিছু বলতে হবেনা… আমি জানি আপনি কি বলবেন.. সেটা এই কদিনে স্পষ্ট বুজতে পেরেছি… লাস্ট একটা কথা রাখবেন প্লিজ…?

দূরন্ত:কি কথা…?

তিয়াসা: ভয় পাওয়ার কিছু নেই… আপনি যে কথাটা আমায় বলবেন.. সেটা আমার ভাইয়াকে একটু কষ্ট করে বলে দিবেন প্লিজ… এটা আমার ভাইয়া কে নিজের মুখে বলার শক্তি আমার নেই…।
আসলে কি বলেন তো… এই সম্পর্ক শুরু করার কথাটাও আমাকে বলতে হয়নি… আপনার থেকে সব শুনেই আমার পরিবার শুধুমাত্র আমার সুখের কথা ভেবে… আমার কাছ থেকে না জেনেই আমার মুখে হাসি ফুটানোর সিধান্ত নিয়েছিল.. আর আমি চাই এটা শেষ করার দায়িত্ব আপনার’ই থাক….!

দূরন্ত: হুমম তুমি যেটা চাও সেটাই হবে…

তিয়াসা: হা হা হা… স্যরি স্যরি… হাসি পেয়ে গেলো..ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ…!


,,,

,,,,,,

দৃরন্তর থেকে স্পষ্ট ভাবে কথাটা না শুনলেও ওর বুঝতে বাকি নেই ধৃরন্ত ওকে কি বলতে পারে..আর ওর চাওয়াটাও বুজতে পেরেছিল… তাই তো নতুন করে দূরন্তর থেকে কথাটা শুনার মতো সাহস পেলো না… তিয়াসার খুব করে কাদতে ইচ্ছে করছে… আর ও তাই করবে..আজ আর চোখের পানি আটকে রাখবেনা.. যে টুকু কষ্ট জমে আছে সে টুকু যেনো চোখের পানির সাথে বেরিয়ে চলে যায়…. বিছানায় গিয়ে বালিশে মুখ গুছে কাদছে তিয়াসা… যাতে কান্নার আওয়াজ টা বাহিরে না যায়…..!



দূরন্ত তিসান এর সাথে কথা বলে পিছনে ঘুরতেই ওর বাবা সজোরে পর পর তিনটা থাপ্পড় মারলো…. আর সাথে সাথেই দূরন্তর গাল বেয়ে টুপ টুপ করে পানি পরতে লাগলো… গালে হাত দিয়ে অসহায় এর মতো তার বাবার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো….এখন যে দূরন্ত কারোর চোখেই চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা…সেটা যে ওর নিজের জন্যই হয়েছে…

দূরন্তর বাবা: তোমাকে নিয়ে ছেলে হিসেবে সব সময় গর্ব হতো… আজ তুমি সব গর্ব আশা ভরসা ধুলোয় মিশিয়ে দিলে… সেই সাথে একটা মেয়ের স্বপ্ন ও… একটা পরিবারের মান সম্মান…। তোমাকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা… শুধু মাত্র তোমার জন্য দুপরিবারের সম্মান হানি হবে… সবার কাছে আমাদের কতোটা ফেস লস হবে সেটা তোমার ধারনার বাহিরে…আমি জানি না তুমি কেনো এমন ডেসপারেট সিধান্ত নিলে আর জানতেও চাইনা…কিন্তু তুমি আমায় কখনো বাবা বলবে ডাকবে না… তোমার মতো ছেলের মুখ থেকে বাবা ডাকটা যেনো আমার শুনতে না হয়….

দূরন্ত: বাবাআআআ….

দূরন্ত বাবা: বাবা বলে ডাকার অধিকার টা আমি কেড়ে নিলাম… আমার যে কোনো ছেলে আছে সেটা এখন থেকে আমি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো…!

.
.
তিসান নক না করেই তিয়াসার রুমে আসে…তিয়াসা বালিশে মুখ গুছে তখনো কাদছে… রুমে কারো উপস্থিত টের পেয়ে চোখ মুখ মুছে উঠে বসে…

তিসানকে দেখে অনেকটা রাগান্বিত লাগছে…

তিসান এগিয়ে এসে তিয়াসার মাথায় হাত রাখে…তিয়াসা তিসানকে আগলে ধরে… চোখের পানি গাল বেয়ে নামার আগেই তিসান নিজ হাতে মুছে দেয়…

তিসান: একবার তো তোর পছন্দ তোর ডিসিশন এর উপর আমরা ভরসা করেছিলাম… এবার কি তুই আমাদের উপর ভরসা করতে পারবি… তোর ভাইয়া তোকে প্রমিজ করছে আর কখনো তোর চোখে পানি আসতে দিবেনা…

তিয়াসা: কিন্তু ভাইয়া….

তিসান: প্লিজ তিয়াসা কোনো কিন্তু বলিস না… কখনো তো তোর কোনো চাওয়া পাওয়া অপূর্ন রাখিনি…তোর ইচ্ছেতেই সব হয়েছে… কিন্তু তোর সাথে আমাদের পরিবারের সাথে যা হলো… সেটা আমাদের জন্য কতোটা ফেস লস হবে বুজতে পারছিস… আমার বোন এতোটা ফেলনা নয়.. যে তাকে কেউ রিজেক্ট করবে… ওর থেকেও বেটার কাউকে তুই ডিজার্ভ করিস…আর আগামি সাত দিনের মধ্যে সেটা আমি দেখিয়ে দিবো… এটা আমি ওই ছেলেটাকে চ্যালেঞ্জ করেছি..

তিয়াসা: ভাইয়া এসব তুমি কি বলছো…?

তিসান: তুই কি আমার বাবার এবং আমাদের পরিবারের অসম্মান চাস…??

তিয়াসা: আমি কখনো এমনটা চাইনি…

তিসান: তাহলে তুই আমাদের উপর ভরসা রাখ…

তিয়াসা কি করে মুখের উপর না করবে… দূরন্ত কে তো না চাইতেই পেতে চলেছিল…কিন্তু দূরন্ত যে এতো দ্রতগতিতে পাল্টে যাবে সেটা কল্পনার বাহিরে ছিলো… হয়তো এটাই নিয়তি… আর নিয়থির উপর নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে তিয়াসা… মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি জানায় তিয়াসা… যে পরিবার তার জন্য এতো কিছু করতে পারবে.. সেই পরিবারের মান সম্মান এর জন্য তিয়াসা কে তো এইটুকু করতেই হবে….

চলবে….
[ বানান ভূল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন কেমন ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে