স্পর্শের_বাহিরে_তুমি Part-22

0
1791

#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_22

তন্নী কে দাড় করিয়ে রেখে…তিয়াসা একটু সাইটে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দূরন্ত কে ফোন করলো… এক রিং হতেই ফোনটা কেটে দিল দূরন্ত… তিয়াসা পর পর তিনবার ফোন দিল.. আর দূরন্ত কন্টিনাউসলি ফোন কেটেই চলেছে… চতুর্থ বারের ফোনটা রিসিভ হলো.. কিন্তু তিয়াসা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে..

দূরন্ত: বিজি আছি এখন…,

ব্যাসসস এইটুকু বলেই ফোনটা কেটে দিলো… তিয়াসার যে কিছু বলার থাকতে পারে সেটা দূরন্তর কাছে কোনো ফ্যাক্ট’ই করেনা….!

তিয়াসা তন্নী কে কিছু না বলে ডিরেক্ট গাড়িতে গিয়ে বসলো… গাড়িতে বসে আছে তিয়াসা বারবার একটু আগের ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে… আর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে…গাল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই হাতের উল্টো পিঠে পানি মুছে নেই তিয়াসা…

কলিং বেল একের পর এক বাজিয়ে চলছে তিয়াসা….রাইসা হাত মুছতে মুছতে দরজা খুলে দিলো..

তিয়াসা: কি করো বাসায় সারাদিন..? দরজা খুলতে এতো সময় লাগে…?

রাইসা: রান্না করছিলাম… ওভেন বন্ধ করে আসতে একটু সময় লেগেছে… তুমি তো কফি খাবে তাই না…??

তিয়াসা:না লাগবে না…

বলে তিয়াসা রুমে চলে গেলো… তিয়াসা যেভাবে রাইসার সাথে কথা বলছে তাতে রাইসার রাগ করাটা স্বাভাবিক ছিল…কিন্তু করেনি..যদিও তিয়াসা আজ প্রথম রাইসার সাথে রুডলি কথা বলেছে… হয়তো তিয়াসার কোনো কারনে মন খারাপ তাই এভাবে কথা বলেছে….রাইসা রাগ না করে মুখে হাসি নিয়ে তিয়াসার জন্য কফি নিয়ে রুমে গেলো…

.
.
তিয়াসা ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে..দেখে রাইসা হাতে কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে… তিয়াসা আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না… গিয়ে রাইসা কে জড়িয়ে ধরলো…

রাইসার আন্দাজ’ই ঠিক… কোনো কারনে হয়তো মন খারাপ..তিয়াসা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বেড এর উপর বসিয়ে দিলো..হাত থেকে কফির মগটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে তিয়াসার পাশে বসলো…তিয়াসা নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে… তিয়াসার হাতের উপর নিজের হাত রেখে..
রাইসা: কি হয়েছে.. আমাকে কি বলা যায়…?

তিয়াসা: ও আমার সাথে এমন কেনো করছে… আমি আর পারছিনা…
কেদে কেদে…

রাইসা: দূরন্তর সাথে কিছু হয়েছে..কোনো কারনে ঝগড়া হয়েছে কি….??

তিয়াসা: না.. ও তো আমায় পরিক্ষার আগে থেকে ইগনোর করে চলছে… আমি ভেবেছিলাম পরিক্ষার জন্য হয়তো… কিন্তু তা নয়.. এখন আগের থেকেও বেশি ইখনোর করছে.. আমার ভালো কথাতেও অযথা রিয়াক্ট করে….!

রাইসা: হয়তো ও কোনো মেন্টাল প্রবলেমে আছে…

তিয়াসা: আমি তো ওকে অনেকবার জিঙ্গেস করেছি..কিন্তু ও কোনো উত্তর দেইনি..

রাইসা: পাগলি কোথাকার তাই এভাবে কাদতে হয়…? আমি তোমার ভাইয়া কে বলবো এ ব্যাপারে… তোমার পরিক্ষা শেষ হয়ে থার্ড ইয়ারে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে… তবুও দূরন্তর বাড়ি থেকে বিয়ের ব্যাপারে কোনো কথা বলছেনা..সেটা আমিও কিছুদিন যাবৎ ভাবছি…




রাতে তিসান দূরন্ত কে ফোন করে… দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই রিসিভ করে…
দূরন্ত:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া…

তিসান: ওয়া আলাইকুম আসসালাম…

দূরন্ত: কেমন আছেন?

তিসান: ভালোই তো ছিলাম.. কিন্তু তিয়ার চোখের পানি খারাপ থাকার জন্যই যথেষ্ট…

দূরন্ত:…….!

তিসান: তোমার সাথে কি তিয়াসার ঝগড়া হয়েছে কোনো কারনে…?

দূরন্ত: না ভাইয়া তেমন কিছু হয়নি..তিয়াসা কি কিছু বলেছে…?

তিসান: না বলেনি… তোমাদের মাঝে যদি কোনো ঝামেলা হয়ে যাকে তাহলে মিটিয়ে নিয়ো..কারন তোমার বাবা বিয়ের ডেট ফিক্সড করার ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল… এখন যদি তোমরা এমন ঝামেলা বাদাও তাহলে বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে এগোবে কি করে…।

দূরন্ত: আমি বাবার সাথে কথা বলবো… এখনো আমি বিয়ের জন্য প্রিপেয়ার না..

তিসান: মানে… তুমি কি বলতে চাচ্ছো…?

দূরন্ত: প্লিজ আমাকে সাত দিন সময় দিন…তারপর আমার উত্তর জানাবো…

তিসান: নতুন করে তোমার ডিসিশন নিতে হবে এ ব্যাপারে…? আমি শুধু তিয়ার জন্য তোমার এক কথায় রাজি হয়েছিলাম… কিন্তু কেনো জানি আজ……!
যাকগে তুমি ডিসিশন নাও তার জন্য যাস্ট সাত দিন’ই সময়…আমার বোন এতো ফেলনা নয় যে তোমার কাছে চাপিয়ে আমার বোনকে বিয়ে দিতে হবে…


দূরন্ত তিসান এর ফোন কেটে ড্রয়িং রুমে গেলো… ড্রয়িং রুমে যেতেই তন্নী টিভির রিমোট হাতে মুঠোবন্ধি করে ফেললো…।

দূরন্ত গিয়ে সোফায় তন্নী পাশে বসলো.. সেখানে তার বাবা মা দুজনেই উপস্থিত…

দূরন্ত: বাবা মা তোমাদের দুজনকেই আমার কিছু বলার আছে…

দূরন্তর বাবা মা দুজনের দিকে দুজনে তাকাচ্ছে.. তারা ভাবছে দূরন্ত হয়তো বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলবে… তারা দূরন্ত কে পারমিশন দিলো..দূরন্তর যা বলার আছে বলতে পারে…

দূরন্ত কিছু বলার আগেই
তন্নী: এই ভাইয়া তুমি থামো.. আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তো… তিয়াসার সাথে তোমার কি কিছু হয়েছে..?.আজ ওকে আপসেট লাগলো…!

দূরন্ত: তুই থামবি..??

দূরন্তর চাহনীতে তন্নী একটু নড়েচড়ে বসলো…!

দূরন্ত: আসলে..আমি চাইছিলাম..

দূরন্তর মা: হুমম বল লজ্জা পেতে হবেনা… আমরাও চাচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি তিয়াসা কে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে…

দূরন্ত: তোমরা এ ব্যাপারে আর তিয়াসার বাবা কিংবা ভাইয়ার সাথে কোনো কথা বলো না… আমার সাথে কথা হয়েছে..

দূরন্তর বাবা: ঠিক বুজলাম না তোমার কথা..?

দূরন্ত: আমি ওনাদের জানিয়েছি সাত দিন পর ডেট জানাবো…

দূরন্তর বাবা: এটা কোন ধরনের কথা.. যেখানে তিয়াসার পরিক্ষার পরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল.. সেখানে ওর থার্ড ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে.. এখন আবার তুমি সাত দিন পর ডেট জানাবে..এই সিধান্ত নিয়েছো…।

.
,,
.

দুদিন পর…

তন্নী আর সেতুর জোরাজুরিতে তিয়াসা ওদের সাথে ক্যান্টিনে আসছে… তিয়াসা উপরে উপরে যতোই নরমাল থাকার চেষ্টা করোক..কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে…কিছুক্ষন পর তিয়াসার মনে হলো ওকে কেউ ফলো করছে… মানে অনেকক্ষন যাবৎ কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে… কিন্তু আশে পাশে তাকিয়েও কাউকে দেখতে পেলো না…

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে