#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_19
তিয়াসা মায়ের মুখের উপর আর কোনো কথা না বলে…রুমে এসে কাদতে লাগলে… দু চোখে যেনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে…এই কদিনে দূরন্তর প্রতি এতোটাই আসক্ত হয়ে গেছে..যে দূরন্ত ছাড়া কিছু ভাবতে পারেনা…
.
.
তিয়াসা দূরন্তকে ফোন করে…দূরন্ত ফোন রিসিভ করতেই
তিয়াসা: আপনার সমস্যা কি বলেন তো…?
দূরন্ত: কিসের সমস্যা..?
তিয়াসা: আমার যে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে প্রায়..সে দিকে আপনার কোনো খেয়াল আছে…?
দূরন্ত:এমা তুমি বড় হয়ে গেলে কবে…আমি তো টেরই পাইনি…
তিয়াসা: রাগ উঠাবেন না… আপনার এসব কথা আমার অসহ্য লাগছে…।
দূরন্ত: সত্যি বলছি..আমি তো বিয়ের জন্য প্রপোজাল দিতে চাইছিলাম..কিন্তু তোমার নাকি এখনো বিয়ের বয়স’ই হয়নি…।
তিয়াসা: ওহহহ প্লিজ… বি প্র্যাকটিক্যাল… আমি এখন কি করবো তাই বলেন…?
দূরন্ত:ওমমম… আইডিয়া… তুমি সুন্দর করে সেজেগুজে উনাদের সামনে যাবে..ব্যসস হয়ে গেলো…!
তিয়াসা: আপনি কি চাইছেন আমার বিয়েটা হোক…?
দূরন্ত:ধুরর পাগলি..দেখতে আসলেই কি বিয়ে হবে নাকি…।
তিয়াসা: হ্যাঁ এই কনফিডেন্স নিয়ে ঘুমান…ঘুম থেকে উঠে দেখবেন অন্য কারো সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে…
দূরন্ত: সেটা আমি বেচে থাকতে সম্ভব নয়..
।
,
।
পরেরদিন যথা সময়ে তিয়াসা কে দেখতে আসে… এবং তারা তিয়াসাকে খুবব পছন্দ করে…. এখন দুই পরিবারের সিধান্ত ছেলে এবং মেয়ে দুজন দুজনকে দেখবে দেন বিয়ের ব্যপারে এগোবে..আর সেটা হবে তিনদিন পর.. আর যদি সব ঠিকঠাক থাকে তবে ওই দিন’ই এনগেজ করে রাখবে…. এটাই মূলত দুই পরিবারের ভাবনা….!
তিয়াসা কোনো ভাবেই ওই আর ছেলে পক্ষের সামনে যাবেনা…এটাই ওর একমাত্র সিদ্ধান্ত… কিন্তু তিসান তিয়াসাকে ইনসিওর করেছে…তিয়াসা না চাইলে কিছুই হবেনা… তিয়াসার উপর কিছু চাপিয়ে দেয়া হবেনা…. তিয়াসার ডিসিশনেই সব হবে…তবে তিয়াসার থেকে ডিসিশন নেয়া হবে ছেলেকে দেখার পর..তার আগে নয়… তিসান তিয়াসাকে বলেছে ছেলেকে দেখার পরেও যদি তিয়াসার মনে হয় ও এই বিয়ে করবে না তো বিয়ে হবেনা…
তিয়াসা তিসান থেকে প্রমিজ করে নিয়েছে… তিসান এর কথার যেনো কোনো নড়চড় না হয়…।
।
,,
।
পরেরদিন রাতে তিয়াসা হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো… খুব অস্থির লাগছে তিয়াসার..কারন একটু আগে তিসান কাকে যেনো ফোনে বলছিল… তিয়াসার ইনগেজ করে রাখবে সে জন্য নাকি রিসোর্ট ও বুক করা হয়েছে… তিয়াসার খুব কষ্ট হচ্ছে সবাই ওর সাথে চিটিং করছে… কেউ কারো কথা রাখছেনা…তিয়াসার ভাবনার মাঝেই দূরন্তর ফোন এলো…
ফোন রিসিভ করে তিয়াসা সব দূরন্ত কে বললো…
দূরন্ত: তো কি হয়েছে…??
দূরন্তর থেকে এমন উত্তর শুনে তিয়াসর মাথা গরম হয়ে গেলো…
তিয়াসা: ওই আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর আপনার কোনো হেলদোল নাই…
দূরন্ত: হেলেদুলে বুঝি তোমার বিয়ে আটকানো যাবে…?
তিয়াসা: দেখেন এমনিতেই ডিস্টার্ব আছি…আপনার এসব কথা বন্ধ করেন…
দূরন্ত: ওকে ভিডিও কল দিচ্ছি…
তিয়াসা:আচ্ছা আপনি এতো নরমাল আছেন কি করে…?
দূরন্ত: সিকরেট..শুনবে..? আল্লাহ এবং আমার ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস এবং ভরসা আছে..তাই…!
.
.
,,
.
.
দুদিন পর…
তিয়াসাকে লেহেঙ্গা প্লাস কিছু অর্নামেন্টস পরিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে বসিয়ে রেখেছে…তিয়াসার এতো ভারি সাজ অসহ্য লাগছে… তিয়াসা বসে আছে ঠিকি মনটা পড়ে আছে দূরন্তর কাছে…মুখের মধ্যে স্পষ্ট ফুঠে আছে বিরক্ত এর ছাপ….তিয়াসার ছটফটানি দেখে…
রাইসা: মুখটা এমন গম্ভীর করে রেখেছো কেনো..লোকে কি ভাববে বলোতো…?
তিয়াসা: প্রথমত জোর করে মুখে ক্লোজআপ হাসি রাখতে পারবো না… দ্বিতীয়ত লোকের কথা ভাবার আমার কোনো দায় নেই.. যেখানে তোমরাই আমার কথা ভাবলে না..!
রাইসা তিয়াসার সাথে কথা না বাড়িয়ে… announcement place এ নিয়ে আসলো তিয়াসা কে… এতো আলো এতো মানুষ সব যেনো তিয়াসার কাছে মৃল্যহীন… আস্তে আস্তে গেস্টদের আনাগুনা শুরু হয়ে গেছে…
কিছুক্ষন পর…
তিয়াসা লক্ষ করলো মেন ডোরের কাছে তন্নী ভিতরে ঢুকছে.. ওর বয়সি একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে… তিয়াসা তন্নীকে ডাকার আগেই তন্নী এক সাইটে চলে গেলো… তিয়াসা ভাবছে ও তো ফ্লেন্ড সার্কেলের কাউকে তো ইনভাইট করেনি তাহলে…?
তিয়াসা উঠে তন্নীর কাছে যাবে…কিন্তু রাইসা আটকে দেই…
কিছু সময় পর তন্নী নিজেই তিয়াসার কাছে আসে… তিয়াসা কে হাগ করে…
তন্নী : তোকে খুবব সুন্দর লাগছে রে তিয়াসা…
তিয়াসা:এই তোকে তো ইনভাইট করিনি..তাহলে তুই কি বিনা ইনভিটিশনেই চলে এসেছিস…?
তন্নী: নারে বিনা ইনভিটিশনে না…না মানে..আসলে..
তিয়াসা: হেয়ালি না করে বল…
তন্নী: আসলে..তোর বিয়ের কথা চলছে আমার ভাইয়ের সাথে… বিশ্বাস কর আমি জানতাম না… যখন জেনেছি তখন কিছু করার ছিল না….।
তন্নীর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে..
তিয়াসা:খুবব শখ না তোর..আমাকে ভাবি করার.. কর ভাবি দেখবি কতো মরিচ এ কতো ঝাল.. তুই তো সব জানতি তাহলে…
তন্নী: বিশ্বাস কর প্লিজ….
তিয়াসা: চুপ কর.. আমাকে যদি দূরন্তর থেকে আলাদা হতে হয়..তাহলে তোকেও ইফাদ এর থেকে আলাদা করে দিবো…
তিয়াসার এমন হুকমিতে রীতিমতো তন্নী ভয় পাচ্ছে… এবং মনে মনে খুব হাসছে…!
তিয়াসা: ওই তোর হনুমান ভাইয়ের নাম্বার দে… চামচিকার খুব শখ না আমাকে বিয়ে করার… রাম ছাগল এর ব্যান্ড বাজিয়ে বিয়ের শখ গুজিয়ে দিবো..
তন্নী সেখান থেকে দ্রুতগামী চলে গেলো..কারন বেশীক্ষন সেখানে থাকলে ফেট ফেটে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে…!
.
.
তিয়াসা ছটফট করতে করতে দূরন্তকে ফোন করলো… কিন্তু দূরন্ত ফোন রিসিভ করেনি… সাথে সাথে তিয়াসা আবার দূরন্তকে ফোন করে… দূরন্ত ফোনটা কেটে দিয়ে… বুকে হাত রেখে কাশতে কাশতে ড্রয়ার থেকে মেডিসিন বের করে খেয়ে নিলো… মিনিট পাচেঁক পর দূরন্ত কিছুটা স্বাভাবিক হয়… হাতে গড়ি লাগাতে লাগাতে দূরন্ত বেড়িয়ে পরলো…!
অন্যদিকে তিয়াসা আরো আপসেট হয়ে পরেছে…কারন দূরন্ত ফোন রিসিভ না করে কেটে দিলো…।
তিয়াসা এতোটাই বিভোর যে চোখের সামনে ক্লো থাকতেও খুজে পাচ্ছে না…
৩০ মিনিট পর
বসে থাকতে থাকতে তিয়াসার ধৈর্যের বাদ ভেঙ্গে গেছে…কোথাকার কোন হরিদাস পাল এখনো তার আসার সময় নেই… তার জন্য নাকি এতো সময় বসে থাকতে হবে…তিয়াসা চেয়ার থেকে উঠে যাবে তখন মেন ডোরের দিকে তাকাতেই তিয়াসার চোখ প্লাস পা স্থির হয়ে গেলো… সেখান থেকে পা নাড়ার বা চোখ সরানোর ক্ষমতা তিয়াসার নেই… আস্তে আস্তে তিয়াসা চেয়ারে বসে পরলো.. মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে…
যেটা দূরন্তর চোখ এড়াইনি.. দূরন্তর চোখ তিয়াসার উপর আর তিয়াসার চোখ দূরন্তর উপর…. দূরন্ত যেতে যেতে তিয়াসা কে চোখ টিপ এর সথে ফ্লাইং কিস দিয়ে সাইটে চলে গেলো.. সাথে তো মিষ্টি হাসি আছেই…।
দূরন্ত কে হ্যান্ড সেক করে তিসান ওয়েলকাম করলো…!
এতোক্ষনে তিয়াসা রিলাক্স…. মনে প্লাস মুখে হাসি ফুটে উঠেছে… যদিও তিয়াসার আগেই এসব বুঝার কথা ছিল…কিন্তু এসব ভাবার মতো সময় পাইনি… এখন তিয়াসার কাছে সব ক্লিয়ার… নিজেকে নিজের কাছে খুব বোকা বোকা লাগছে তিয়াসার…সব কিছু ভেবেই বোকা বোকা একটা হাসি ফুঠে উঠে তিয়াসার ঠোঁটের কোনে….
চলবে….