#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_18
তিয়াসা দূরন্তর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল…উল্টো দিক ঘুড়ে দাড়াতেই তিয়াসার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে
দূরন্ত: আমার লজ্জাবতি এভাবে লজ্জা পেয়ে যদি রংধনু হয়ে যাও তাহলে তো আমার ব্যাপারটা রিস্কি হয়ে যাবে…
দূরন্তর কথা শেষ হওয়ার আগেই তিয়াসা চোখ রাঙিয়ে দূরন্তর দিকে তাকালো… ডোন্ট কেয়ার ভাবে জিঙ্গেস করলো..
দূরন্ত: কি হলো ওভাবে তাকালে কেনো….??
তিয়াসা: এহহহ ন্যাকা ষষ্ঠি…কিচ্ছু বুঝেনা…
দূরন্ত দু কদম তিয়াসার দিকে এগিয়ে গিয়ে…
কি বুঝবো…???
তিয়াসা: আমার মাথা আর আপনার মুন্ডু বুঝেছেন…??
দূরন্ত: হা হা…
তিয়াসার হাত ধরে সামনের দিকে পা বাড়ালো….
।
।
।
দেখতে দেখতে তিয়াসার পরিক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে… এবং রেজাল্ট ও ভালো হয়েছে…।
তিয়াসার ভাবি রাইসা: আচ্ছা ননদীনি তুমি কি প্রেমে পরেছো হুমম হুমম…??
তিয়াসা:তুমি হঠাৎ আমার পিছনে পরলে কেনো বলো তো…? আর এসব তুমি কি বলছো এখনই আমার প্রেম বা বিয়ে করার বয়স হয়েছে নাকি…??
রাইসা: ওরে আমার খুকি রে… এখোনো নাকি তার প্রেম করার বয়স হয়নি… সত্যিই কাউকে ভালোবাসো না…??
তিয়াসা: সত্যিই কাউকে ভালো বাসলে তোমাকে সবার আগে বলবো কেমন….
হো তোমাকে বলি..আর তুমি সবাই কে বলে দাও.. স্পেশালি ভাইয়া কে… আগে আমি দূরন্তর কথা ভাইয়া আর আব্বু কে বলবো দেন তোমাদের….[ মনে মনে ]
রাইসা:তাহলে তো ভালোই… ননদীনির জন্য পাত্র খুজার সুযোগ পেলাম…
তিয়াসা: এই ভুত তোমার মাথায় কে ঢুকালো…?
রাইসা: কে আবার আফরিদ….
তিয়াসা: আফরিদটা আবার কে… সে যেই হোক… এসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা… সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে ভাবতে বলবো…
রাইসা: তুমি আফরিদ কে ভুলে গেছো…? তোমার লাস্ট বার্থডে তে এসেছিল…আমার ব্রেষ্ট ফ্রেন্ড আয়রার ছোট ভাই আফরিদ…।
তিয়াসা:ওহহহ…খেয়াল নেই…!
রাইসা: আফরিদ তোমাকে খুব পছন্দ করেছে… আয়রা আজ আমাকে ফোনে তাই বললো…ওরা নাকি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে… আমি মায়ের সাথে এভাবে ব্যপারে কথা বলেছি…।
তিয়াসা: ভাবি তুমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছো… কেবল তো ফাস্ট ইয়ার পেরিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে পা রাখলাম… তার আগেই কেনো আমার বিয়ে নিয়ে পরেছো…?
রাইসা: আরে পাগলি… বিয়ের কথা বললেই বিয়ে হয়ে যাই নাকি… তুমি এখন বিয়ে করতে না চাইলে বিয়ে হবেনা… আমি তো ওদের ডিরেক্ট না করতে পারিনা….
তিয়াসা: হুমমম বুঝলাম… তুমি ভাইয়া কে বলে দিও…আমি এখনই বিয়ে টিয়ে নিয়ে কিচ্ছু ভাবছিনা…।
রাইসা: আচ্ছা বলবো… প্লিজ রাগ করো না তিয়াসা…।
তিয়াসা:ওরে আমার ভাইয়ের সুইট বউ রাগ করবো কেনো… তুমি একদম ঠিক করেছো আমাকে এসব কথা বলে…তাই তো আমি আগে থেকেই তোমাকে আমার ডিসিশন জানিয়ে দিতে পারলাম…
রাইসা কে জড়িয়ে ধরে গালে ডিপলি একটা কিস করে…তিয়াসা রুমে চলে গেলো….।
তিয়াসা রুমে এসে দূরন্তর কথা ভাবছে…. রাইসা কে তো না করে দিলো ও কাউকে ভালোবাসে না… না করেছে কারন তিয়াসা নিজের মুখে তার ভাইয়া এবং আব্বু কে দূরন্তর কথা জানাতে চাই… অন্য কারো মুখ থেকে দূরন্ত আর তিয়াসার কথা শুনে যদি খারাপ কোনো রিয়াকশন করে তাই… তিয়াসা নিজের মুখে দূরন্তর কথা বললে হয়তো তেমনটা ঘটবেনা এটা তিয়াসার বিশ্বাস….
তিয়াসার মাথায় এখন আবার ফ্রি তে আরেক চিন্তা ডুকেছে… রাইসার বলা কথাটা… প্রত্যেক বাবা মা চাই তাদের সন্তানদের ভালো… আর যাদের মেয়ে আছে তারা তো চাই তার মেয়ের জন্য ভালো ঘর আর বর… এই দুটো যদি এক সাথে পেয়ে যাই…তাহলে প্রত্যেক বাবা মা তাদের মেয়েকে এমন ঘরে বউ করে পাঠাতে আপত্তি করবে না…. যদিও তিয়াসার ডিসিশন না নিয়ে এমন কিছু করবে বলে তিয়াসার মনে হয়না… তবুও একটা ভয় থেকেই যাই মনের মাঝে….।
।
।
পরেরদিন ভার্সিটি শেষে তিয়াসা তন্নী এবং সেতু ক্যানটিনে বসে ফোসকা খাচ্ছে… তিনজনে তিনজনকে কম্পিট করে ফোসকা খাচ্ছে… কে কতো ঝাল খেতে পারে…. একেক জনের অবস্থা নাজেহাল চোখ দিয়ে পানি পরার উপক্রম…. স্পেশালি তন্নীর বেচারি একদম ঝাল খেতে পারেনা…. তিনটে ঝাল মিক্সড ফোসকা খেয়ে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে…আর তিয়াসার অবস্থা তন্নীর থেকে কিছুটা বেটার….কারন তিয়াসা খুব বেশি না হলেও মোডারেটলি ঝাল খেতে পারে… কিন্তু কম্পিট এর সময় নিজের গতিসিমা থেকে বেড়িয়ে এসে সিভিয়ার পরিমান ঝাল খেয়ে ফেলেছে…. টেবিলের উপর চারটে পানির বোতল ছিল অলরেডি শেষ…. আর সেতু হচ্ছে উইনার…. তন্নী আর তিয়াসার অবস্থা দেখে অনেকটা খারাপ লাগছে সেতুর… তিয়াসা যে কিছুটা ঝাল খেতে পারে সেটা জানতো…তন্নী যে একেবারেই ঝাল খেতে পারেনা সেটা জানা ছিল না….।
সেতু তিয়াসা আর তন্নীর সামনে পানির বোতল রাখতেই তন্নী খুশি হয়ে নিতে যাবে তার আগেই বোতলটা কেউ একজন সরিয়ে নিলো….
তন্নীর এতো ঝাল লেগেছে যে কিছু করতেও পারছেনা কিছু বলতেও পারছেনা….তিয়াসার তো মাথা গরম হয়ে গেলো.. পাশের চেয়ারে বসা মানুষটাকে দেখে… পাশের চেয়ারে বসে দূরন্ত আরাম করে পানি খাচ্ছে… ঝাল লেগেছে তিয়াসা আর তন্নীর পানি খাচ্ছে দূরন্ত…
তিয়াসা পানির বোতলটা ছো মেরে দূরন্তর হাত থেকে নিয়ে নিজে পানি খেয়ে তন্নীর হাতে বোতলটা ধরিয়ে দিলো….।
দূরন্ত এখনো নো টেনশন ডো ফূর্তি মুডে বসে মোবাইলে গেমস খেলছে…
তিয়াসা: আপনি তো জল্লাদ এর খালাতো ভাই…
দূরন্ত:হোয়াটটট…?
তিয়াসা: অবশ্যই হ্যাঁ… দেখতেই পাচ্ছেন ঝালে দুটো মেয়ে কাদছে…তাদের মুখের সামনে থেকে পানি নিয়ে নিজে ঢগ ঢগ করে খেয়ে ফেললেন…
দূরন্ত: তার সাথে জল্লাদ এর খালাতো ভাইয়ের কি সম্পর্ক…??
তিয়াসা আর দূরন্তর কথা বলার মাঝে ওয়েটার ওদের সামনে আইসক্রীম রাখলো…আর ওমনিই তিয়াসা আর তন্নী খাওয়া শুরু করে দিলো..খেতে খেতে..
তিয়াসা: পরে বুজিয়ে বলবো কেমন…।
।
,
।
,
।
রাতে তিয়াসা পড়া কমপ্লিট করে… করিডোরে দাঁড়িয়ে দূরন্তর ছবি দেখছে… চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার করিডোর এর লাইট টাও অফ… শুধু ফোনের একটু আলো… ওই একটু আলোতেই দূরন্তর ছবিটা যেনো বেশি করে ফুটে উঠেছে…।
তিয়াসা একের পর এক ছবি দেখছে দূরন্তর… এই কয়দিনে হাজারের ও বেশি ছবি তুলেছে দূরন্তর…ম্যাক্সিমাম ছবি গুলোই ক্লাসে লেকচার দেওয়ার সময় তুলা…. দূরন্তর ছবি দেখার মাঝেই স্কিনে দূরন্তর নাম্বারটা ভেসে উঠলো… তিয়াসার ঠোঠের কোনে আপনাআপনি হাসি ফুঠে উঠলো…।
ফোন রিসিভ করে তিয়াসা সালাম দিলো… সালাম এর উত্তর দিয়ে জিঙ্গেস করলো…
দূরন্ত: কি করছে আমার তিয়া…??
তিয়াসা: কিছু না দাঁড়িয়ে আছি…আপনি…??
দূরন্ত: আমি আমার তিয়ার সাথে কথা বলছি… দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসে থাকো… পা ব্যাথা করবে তো…।
তিয়াসা: না করবে না… রাতে খেয়েছেন..??
দূরন্তর: না খাইনি খাবো… তুমি খেয়েছো তো…??
তিয়াসা:হুমমম….তাহলে খেয়ে নিন…
দূরন্ত: তোমার কি কোনো কারনে মন খারাপ… ক্লাসেও চুপচাপ লাগলো তোমায় আর এখানো… আসলে আমি স্যরি..এতোক্ষন আমি কাজ করছিলাম তাই ফোন বা টেক্সট করতে পারিনি…।
তিয়াসা: আরেহ না মন খারাপ হবে কেনো… এমনিইই… আপনি খেয়ে নিন…রাখছি…।
দূরন্ত: পাচ মিনিট পর… আগে বলো এমনিইইই কি…??
তিয়াসা: কি আবার কিছুই না… আপনাকে মিস করছিলাম…!
দূরন্ত: তাহলে তো অবশ্যই কোনো কারন আছে… কি কারন বলো আমায়…।
তিয়াসা: স্পেসিফিক কোনো কারন নেই বললাম তো…
দূরন্ত: ওকে জেনারেল কারন টাই নাহয় বলো..
তিয়াসা হেসে দিয়ে রাইসার বলা কথা বললো…আর এটাও বললো রাইসার কাছে দূরন্তর কথা কনভেস করেনি…আর কেনো করেনি সেটাও বলেছে দূরন্ত কে…
দূরন্ত: পাগলি তার জন্য আপসেট হওয়ার কি আছে…?? কোনো ব্যাপার না… আমি তো আরো ভেবেছিলাম তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো…তুমি তো আবার বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছো তোমার তো এখনো বিয়ের বয়স’ই হয়নি…কি আর করবো বড় হও তাড়াতাড়ি…তারপর’ই না হয়……….।
দুজনেই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে… হাসার মাঝখানে হঠাৎ দূরন্তর খাশি উঠলো ফোন লাইনে রেখেই দুমিনিট নাগাদ খাশতে খাশতে ওয়াস রুমে চলে গেলো দূরন্ত… আর তিয়াসা এখনো লাইনে থেকে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে…
পাচ মিনিট পর দূরন্ত ফ্রেস হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো তিয়াসা এখনো লাইনে আছে…
দূরন্ত:একদম চিন্তার কোনো কারন নেই..আমি একদম ঠিক আছি…
তিয়াসা: চিন্তার কারন নেই মানে..? হঠাৎ করে উইদ আউট রিজনে এতো খাশি হলো..তবুও চিন্তার কারন নেই…?
দূরন্ত: উইদ রিজনেই খাশি হয়েছে… আর সেই রিজনটা হলো হাসি… অনেক বেশি হেসেছি তো তাই…।
তিয়াসা: সত্যিই কি তার জন্য…??
দূরন্ত: হ্যাঁ তার জন্যই তো…!
তিয়াসা: আচ্ছা আর একটা কথাও না… তাড়াতাড়ি খেয়ে আমায় টেক্সট করবেন…।
দূরন্ত: আগ্গে মহারানী….।
।
।
।
এভাবে আরো ছয় মাস কেটে গেলো… এই ছয় মাসে তিয়াসা আর দূরন্তর বনডিংটা আরো স্ট্রং হয়েছে… ইটস্ ন্যাচারেলি…।
।
,
।
,,,,,,
।
,
তিয়াসার মা আ রাইসা হাতে কয়েকটা শাড়ি আর কিছু অর্নামেন্টস নিয়ে তিয়াসার রুমে এলো…তিয়াসা শুয়ে শুয়ে গান শুনছিল… তিয়াসা মা আর ভাবি কে দেখে উঠে বসলো…
তিয়াসা: ওয়াও শাড়ি গুলো তো খুব সুন্দর…।
রাইসা: কোনটা তোমার বেশি ভালো লেগেছে…
তিয়াসা বেছে একটা শাড়ি হাতে নিলো…।
তিয়াসার মা: তাহলে এই শাড়িটাই তুই কাল পরবি..।
তিয়াসা: কালকে কেনো..? কোনো ইনভিটিশন আছে…??
রাইসা: আরে না… কাল তোমায় দেখতে আসবে… মে বি ছেলের মা আর ফুপু আসবে দুজনে…
তিয়াসা: মা ভাবি এসব কি বলছে…? আমাকে তো একবার জিঙ্গেস ও করলে না….
তিয়াসার মা: যে ফ্যামিলি থেকে এই প্রোপোজালটা এসেছে তাদের মুখের উপর না করাটা ঠিক বেমানান দেখাই… তাই তাদের ডিরেক্ট না করেনি… কিন্তু তোর আব্বু বলেছে তুই যেটা চাইবি সেটাই হবে…কোনো জোর করা হবেনা তোকে….
চলবে…..