স্পর্শের_বাহিরে_তুমি Part-16

0
1915

#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_16

দূরন্ত আজ সেজে গুজে ফুলটুস প্রিপারেশনে বাসা থেকে বের হয়েছে… মানে অন্য দিনের থেকে একটু সতেজ লাগছে দূরন্ত কে… দূরন্তর মনটা আজ উড়ু উড়ু করছে… কখন সে তার ভালো বাসার খাচায় তিয়াসা কে বন্দি করতে পারবে…।


তিয়াসা ঝুম লেকের পাশে একটা বেঞ্চে বসে আছে…. তন্নী ফোন দিয়ে ডেকেছিল তিয়াসা কে…কিন্তু এখন অবদি তন্নীর কোনো খবর’ই নেই… তিয়াসা এবার বেঞ্চ থেকে উঠে এদিক ওদিক পায়চারী করছে…..আর এক হাতে বারবার উড়না পেচিয়ে যাচ্ছে….।



দূরন্ত বাইক থেকে নেমে লুকিং গ্লাসে হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নিলো…আর হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে সামনের দিকে রওনা দিলো…কিছু একটা ভেবে দাঁড়িয়ে গেলো…ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট বক্স প্যান্টের পকেটে নিয়ে নিল….!

তিয়াসা এদিক থেকে ওদিক হাটা চলা করার এক পর্যায়ে দূরন্ত কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে….আর দূরন্ত স্টাচো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে… কারন তিয়াসার চোখে আটকে গেছে দূরন্ত…

এভাবে দূরন্তকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিয়াসা দুকদম পিছিয়ে গেলো…দূরন্ত কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো…এবং হাতে একটা শপিং ব্যাগ দেখে..বাজিয়ে দেখার জন্য জিঙ্গেস করলো…

তিয়াসা: স্যার আপনি এখানে কারো সাথে দেখা করতে এসেছেন কি…??

দূরন্ত: হ্যাঁ তোমার ম্যাডাম এর সাথে..!

তিয়াসা: এ্যাআআআ…..

দূরন্ত: হ্যাঁ… দেখবে চলো তোমার ম্যাডাম লেকের ওই পাশে আছে..তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই…!

তিয়াসার বুকের মাঝে ধক করে উঠলো দূরন্তর কথা শুনে… দূরন্ত কথাটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলছে যার কারনে তিয়াসা কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে…

দূরন্ত: চলো… তোমার ম্যাডাম এর সাথে পরিচিত হবে না…?

তিয়াসা: না.. আপনি যান… আমিও এখানে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি…।

দূরন্ত: ওহহহ… সে তো এখনো আসেনি..দু মিনিট লাগবে চলো…।

তিয়াসা মনে মনে: তুই যা না তোর পেত্নির সাথে দেখা করতে..আমায় কেনো টানছিস…।
চলেন আপনার পেত..না মানে প্রিতী গার্ল কে দেখে আসি…
মুখে ক্লোজ আপ হাসি টেনে…।

দূরন্ত মনে মনে হাসছে…তিয়াসার মুখ দেখে হাসি পাবার’ই কথা…যা বানিয়েছে না মুখটাকে… তিয়াসা চেয়েছিল দূরন্ত কে রাগাতে… কিন্তু দূরন্ত উল্টো তিয়াসা কেই রাগিয়ে দিলো…।

তিয়াসা দুমিনিট হেটেই : স্যার আপনার সে কোথায়…?
দাতে দাত চেপে দূরন্তর দিকে বিরক্তির চোখে তাকিয়ে…

দূরন্ত: খুব এক্সসাইটেড মনে হয় তুমি..?

তিয়াসা: এক্সসাইটেড থাকবো না কোন দেশের পেত্নি সেটা দেখতে হবে তো…
বিড়বিড় করে…!

দূরন্ত: এবার চোখ বন্ধ করো…সামনেই তোমার ম্যাডাম আছে…।

তিয়াসা: তার জন্য চোখ বন্ধ করতে হবে কেনো…? পারবো না আমি…।

দূরন্ত: ওকে না পারলে…
কথাটা শেষ করে একহাত দিয়ে তিয়াসর চোখ আটকে দিলো…আর এক হাত দিয়ে তিয়াসা কে সামনের দিকে নিয়ে গেলো….।

দূরন্ত: এবার চোখ খুলতে পারো…।

তিয়াসা চোখ খুলে সামনে পানি দেখতে পেলো… দূরন্তর দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে রেগে…
তিয়াসা: কোথায় আপনার পেত্নি…এখানে তো পানি ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছি না.. আপনার পেত্নি কি পানির নিচে আছে নাকি…?

দূরন্ত: এই একদম ওকে পেত্নি বলবে না…ও তো আমার মনের রাজ্যর পরী…ভালো করে পানির দিকে তাকাও ঠিক দেখতে পাবে….

তিয়াসা দূরন্ত কে কপি করে: এই একদম ওকে পেত্নি বলবেনা..ও তো আমার মনের রাজ্…
এই টুকু বলতেই পানির দিকে তাকিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো…। তিয়াসা একবার পানির দিকে তাকাচ্ছে আর একবার দূরন্তর দিকে…

তিয়াসা: এই মজা করছেন আমার সাথে..? এটা তো আমার ছবি..!

দূরন্ত: মজা কেনো করতে যাবো…ওই টাই তোমার ম্যাডাম আর আমার ছোট্ট পরী…।

তিয়াসা: দেখুন আমি কিন্তু আর ছোট্ট নেই..বড় হয়ে গেছি…।

দূরন্ত: তুমি নিজেকে কেনো ভাবছো..? আমি তো আমার পরীর কথা বলছি…।

তিয়াসা: তাহলে থাকেন আপনি আপনার পরীকে নিয়ে…
কথা শেষ করে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো… এক কদম সামনে এগোতে হাতে টান অনুভব করলো পিছন থেকে…
পিছন থেকে দূরন্ত তিয়াসার হাত ধরেছে…কিন্তু তিয়াসা দূরন্তর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো…দূরন্ত ও তিয়াসার পিছন পিছন চলে এলো… তিয়াসা মুখটা ফুলিয়ে বেঞ্চে বসে আছে…

দূরন্ত পকেট থেকে বক্স বের করে তার থেকে রিংটা নিয়ে তিয়াসার সমনে হাটু গেড়ে বসে…
” ইউ উইল ম্যারি মি..??”

তিয়াসা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না.. ও ঠিক শুনেছে তো..? কারন এতোক্ষন যদিও দূরন্ত মজা করেছে..তার জন্য কিছুটা মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তিয়াসার…এক মূহুর্তে মন খারাপ ব্যানিস হয়ে গেলো… আর মুখে খুশির আভা ভেসে উঠলো..

তিয়াসা বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়ালো..আর দূরন্ত পূর্বের ন্যায় হাটু গেড়ে তিয়াসার সামনে বসেই আছে… তিয়াসা মুখে কিছু না বললেও নিজের অজান্তে হাতটা বাড়িয়ে দিলো দূরন্তর দিকে… সব কথা হয়তো মুখে বলতে হয়না… চোখের ভাষা আর কিছু কাজ কর্ম আকার ইঙ্গিতে বুঝা যায় স্পষ্ট… আর তিয়াসার এভাবে হাত এগিয়ে দেয়াতে দূরন্তর তার উত্তর খুজে পেয়েছে….

তিয়াসা হাত বাড়াতেই দূরন্ত টুপ করে তিয়াসার আঙ্গুলে রিংটা পরিয়ে দিলো….।

তিয়াসা না একটা কথা বললো না একবার দূরন্তর দিকে তাকালো…সেখান থেকে চলে গিয়ে আবার অন্য একটা বেঞ্চে বসলো…।

তিয়াসার এমন লাজুকতাই দূরন্ত বার বার ঘায়েল হয়ে যায়…।

দূরন্ত বেচারা আর কতোক্ষন এখানে এভাবে বসে থাকবে…ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে তিয়াসর পাশে গিয়ে বসলো… তিয়াসা পাশে না তাকিয়ে দেখলেও ফিল করতে পারছে দূরন্তকে…. তিয়াসা উড়নায় হাত পেচিয়ে মুখটা অন্য পাশ ফিরেই তাকিয়ে রইলো…. না এবার আর দূরন্তর সহ্য হলোনা… কি এমন হয়েছে যে এতো লজ্জা পেতে হবে… দূরন্ত ভেবে পাচ্ছে না কি এমন করেছে যে তিয়াসা দূরন্তর চোখে চোখ রাখতে পারছে না….।

দূরন্ত: এই লজ্জা মাখা মুখটা কিন্তু আমাকে সিগন্যাল ভাংতে বাদ্য করবে…তার জন্য কিন্তু দায়ী থাকবে তুমি…!

দূরন্তর এমন কথা শুনে তিয়াসা আর চুপ করে অন্য পাশ ফিরে তাকিয়ে থাকতে পারলো না…

তিয়াসা: কিসের সিগন্যাল ..?

দূরন্ত: আসলে লজ্জা পেলে তোমাকে স্টোবেরী টমেটো এবং আপেল এর মতো লাগে…ইচ্ছে কক….

আর কিছু বলার আগেই দূরন্তর কাদে কিল ঘুসি পরতে লাগলো..!

দূরন্ত: এই এই কি করছো…??

তিয়াসা: যানন আপনার সাথে কথা বলবো না..

দূরন্ত: আহহহ কি শান্তি…এতো দিনে তোমার জান হতে পারলাম…

তিয়াসা: ইশশ শখ কতো… জানন বলিনি যান বলেছি…

দূরন্ত: আমি কিন্তু আমার উত্তর এখনো পাইনি…

তিয়াসা: কিসের উত্তর….??

দূরন্ত: ওহহহ তুমি মনে হয় ইংলিশ বুঝো না…তাহলে বাংলায় বলি…??

তিয়াসা: আমি যদি ইংলিশ না বুঝি…তাহলে আপনিও মনের কথা বুঝেন না হুহহ…!

দূরন্ত: ওহহহ আচ্ছা তুমি মনের ভাষায় উত্তর দিয়েছো…নট ব্যাড… এখন থেকে আমার ফিড ব্যাক চাই….

তিয়াসা: যেমন…??

দূরন্ত: এই যে আমি তোমায় এতোদিন ধরে ভালোবাসি তার ফিড ব্যাক…

তিয়াসা: এহহহ..মনে হয় কয় বছর ধরে আপনি আমায় ভালোবাসেন…

দূরন্ত: হ্যাঁ তাই তো…তোমার সেই এসএসসি তে বিদায়ের শাড়ি পড়া ছবি দেখেই ভালোবাসি…

তিয়াসা: সেই ছবি দেখলেন কোথায়…?

দূরন্ত: ফোনে দেখেছি… রিহান এর ফোনে…. তখন তোমার চুল গুলো ছোট ছোট ছিলো… কয়েকটা চুল এলো মেলো হয়ে কপালে পরে ছিলো… আমার খুব করে ইচ্ছে করছিল…কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিতে….

তিয়াসা: কারো ছবি দেখেই কাউ কে ভালোবাসা যায়…??

দূরন্ত: এটা বলবোনা যে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি… কিন্তু প্রথম দেখেই ভালো লেগেছিলো… সেই ছবিটা আমার ওয়ালপেপার ছিলো… দিনে যে কতো বার তোমার ছবি গুলো দেখা হতো হিসাব নেই… শুধুমাত্র তোমার ছবিই দেখেছি দু বছর…আর তারপর তো রিহার বিয়েতে তোমায় প্রথম দেখলাম… চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে দোলনায় দোল খাচ্ছিলে… আর আমি পিছন থেকে দেখছিলাম তোমায়.. কেনো যানি আমার মন বলছিল সেই ছবির মেয়েটাই তুমি হবে…আমার বুঝতে কিছুটা সুবিধা হয়েছিল কারন আমি জানতাম তুমি আসবে..
আর রিহার বিয়েতেই ভালো লাগা থেকে তোমায় পুরোপুরি ভালোবেসে ফেলেছিলাম…!

তিয়াসার চোখ খুশিতে চিকচিক করছে… তিয়াসা ভাবতেও পারছেনা একটা ছেলে ওকে এতোদিন ধরে ভালোবেসে এসেছে… শুধু এক তরফা….।

তিয়াসা: সত্যিই….??
খুশিতে…

দূরন্ত: হুমমম আমার পরী সত্যিই ..!



দূরন্ত: তোমার হাতটা কি ধরতে পারি…??

তিয়াসা: হুমমম…
বলে হাতটা দূরন্তর হাতের উপর রাখলো…

দূরন্ত: চলো সামনে হাটি…!



.
.
চলে আসার সময় দূরন্ত তিয়াসার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো…তিয়াসা বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে চুড়ি..আর চকোলেট…চুড়ি রিং আর চকোলেট তিনটায় তিয়াসার পছন্দের….

.
.
__________
.

পরেরদিন…
তিয়াসা দূরন্তর দেয়া চুড়ি পড়ে…আর কিছু চকোলেট নিয়ে ফুরফুরে মনে ভার্সিটিতে গেলো….।

তিয়াসা আর সেতু তো এক সাথেই গিয়েছে… কিছুক্ষন পর তন্নী ও এলো…তন্নী তিয়াসার পাশে বসে তিয়াসা কে হালকা করে ধাক্কা দিলো….তিয়াসা কে কিছু বলার স্কুপ না দিয়ে…

তন্নী: জানিস স্যার সেদিন আমায় ফোন দিয়ে তোকে ঝুম লেকে ডেকে পাঠিয়েছিলো…. আমি প্রথমে না করেছি… এতো বার করে বললো আসলে স্যার তো তাই না করতে পারিনি….।

সেতু: এই তোকে দিনদিন কেমন যেনো রহস্যে ঘেরা লাগছে… তোর কাজ কর্ম কথা বার্তা আমার কাছে সুবিধার লাগেনা…

তন্নী: ওই গোয়েন্দা গিন্নি তোর রহস্যে ঘেরা নাকটা কেটে ফেল..তাহলেই এতো গন্ধ পাবিনা…!

তিয়াসা: এই চুপ কর তোরা….
তিয়াসা সবাইকে চকোলেট দিয়ে এসে…তন্নী আর সেতু কেও দিলো… আর ওমনিই সেতু খপ করে হাতটা ধরে ফেললো…., সেতু আর তন্নী দুজনেই তিয়াসার দিকে তাকিয়ে আছে…..

সেতু: এই এগুলো পরেছিস কেনো…? কে দিয়েছে…?

তন্নী: ভাবি নিশ্চয় ভাইয়া দিয়েছে তাই না…??

তিয়াসা:একসাথে দুজনের প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিবো..
বলছি বলছি ওয়েট….

তিয়াসা আর কিছু বলার আগেই দূরন্ত ক্লাসে চলে এলো..দূরন্ত ক্লাসে এসেই তিয়াসার দিকে তাকালো…তিয়াসার হাতের দিকে তাকিয়ে দূরন্তর মনটা খুশি খুশি লাগছে…কারন দূরন্তর দেয়া রিং আর চুড়ি পড়ে আছে তিয়াসা…হয়তো দূরন্ত ভেবেছিল তিয়াসা রিংটা খুলে রাখবে…কিন্তু দূরন্তর ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে…এক ধাপ এগিয়েই তিয়াসা চুড়িও পরে এসেছে….



তিয়াসা আর দূরন্তর টক ঝাল মিষ্টি প্রেমেতেই কেটে গেলো সাত দিন..আর সাথে তো আছেই তন্নী আর সেতুর ফোড়ন… আর রাতে ফোনালাপ…

আজকে শুক্রবার ভার্সিটি অফ থাকায় দূরন্ত আর তিয়াসার সামনাসামনি দেখা হয়নি… কিন্তু ভিডিও কলে কথা হয়েছে…।

রাতে তিয়াসা করিডোরে দাঁড়িয়ে দূরন্তর সাথে কথা বলছে…. কথা বলার এক পর্যায়ে…

দূরন্ত: এই তুমি আমার আপনি থেকে তুমি করে কবে বলবে…??

তিয়াসা: আপনি’ই ঠিক আছে… তুমি করে বলতে কেমন যেনো আন ইজি লাগে….!

দূরন্ত: আমার তো খুব মন চায় তুমি আমাকে তুমি করে বলবে…

তিয়াসা: তুমি করে বললে খুব খুশি হবেন…?

দূরন্ত: আবার জিগায়…!

তিয়াসা: শুধু খুশি হবেন নাকি তার থেকেও বেশি…??

দূরন্ত: এই ধরো খুশির ঠেলায় মরেও যেতে পারি….

দূরন্তর লাস্ট কথা শুনে তিয়াসা স্তব্দ হয়ে গেলো…কোনো কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে… চোখ দিয়ে না চাইতেও টুপটুপ করে পানি পরছে…!!

চলবে……

…..বানান ভুল ক্ষমা করবেন দয়া করে…আর অনেকে তো এখনই চিন্তাই পরে গেছে তিয়াসা আর দূরন্তর আলাদা হওয়া নিয়ে… সেই চিন্তা আরো কয়েকটা পর্বের পর থেকে কইরেন…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে