#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_13
ওপাস থেকে: ওয়া আলাইকুম আসসালাম…
ভীতুর ডিম কি এতোক্ষন মায়ের আচল এর নিচে লুকিয়ে ছিলে …?
তিয়াসা: ও তাই তো বলি এটা আবার কোন পাগল… এই আপনার কয়টা সিম কার্ড বলেন তো একেক সময় একেকটা দিয়ে ফোন দেন মেসেজ করেন…।
দূরন্ত: বাহহহ..তুমি তো আমার কন্ঠ টা মনের ভিতর গেথে রেখছো…একটু কন্ঠ শুনলেই বুঝতে পারো…।
তিয়াসা: আমার বয়েই গেছে… কেনো ফোন দিয়েছন স্যার…?
দূরন্ত: কে স্যার কার স্যার…?
তিয়াসা: মেমোরি লস হয়েছে নাকি…আপনি যে আমার স্যার সেটা ভুলে গেছেন..?
দূরন্ত: এখন তোমাকে কোনো স্যার ট্যার ফোন দেইনি…এখন তো…
দূরন্তর সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়েই..
তিয়াসা: আচ্ছা ভাইয়া বলেন কেনো ফোন দিয়েছেন…??
দূরন্তর মন চাচ্ছে দেয়ালের সাথে কপাল টুকে টুকে মরে যেতে…কিন্তু দুরন্ত মরে গেলে বেচারি তিয়াসা বিদবা হয়ে যাবে..তাই দূরন্ত নিজেকে সামলে নিলো…।
দূরন্ত:এই কে তোমার ভাই..আর কোন জন্মের ভাই হ্যাঁ..একদম আমাকে ভাইয়া ডাকবেনা… বুঝলে…??
তিয়াসা: রিলাক্স ভাইয়া… এতো তাড়াতাড়ি বুঝালে কি করে বুঝবো বলেন…?
দূরন্ত: এই তুমি আবার ভাইয়া ডাকলে…তার থেকে বেটার স্যার বলেই ডেকো…
তিয়াসা: ঠিক আছে ভাইয়া স্যরি… স্যাররর…[ মুখ টিপে হেসে ]
দৃরন্ত: এই ভিতুর ডিম এর রানী খুব সাহস না..? সাপ দেখেই অজ্ঞান হয়ে যায়… হা হা…
তিয়াসা: এই দেখুন…
তিয়াসা আর কিছু বলার আগেই..
দূরন্ত: সত্যিই…তাহলে ভিডিও কল করি…?
তিয়াসা: ধ্যাতেরি… আপনি আমায় ভিতুর ডিম কেনো বলেন হ্যাঁ… আমি সাপ দেখে ভয় পায় কিন্তু অজ্ঞান হওয়ার মতো এতো টাও ভয় পাই না…
দূরন্ত: তাহলে অজ্ঞান হলে কিভাবে…?
তিয়াসা: কিভাবে আবার… সব সময় তো সাপ দূর থেকে দেখে ভয় পেতাম.. লাফালাফি করতাম… এটাই জীবনের প্রথম যে সাপ আমার পায়ের উপর ছিল…আপনিই বলেন আমি অজ্ঞান হবো না..?
দূরন্ত: ভিতুর ডিম এর সাথে বোকার ডিম ও এডড হলো… কোনটা রিয়াল আর কোনটা প্লাস্টিক চিনতে পারো না..?
তিয়াসা: দুরর ভয় পাওয়ার সময় এতো কিছু খেয়াল থাকে নাকি…।
দৃরন্ত: আচ্ছা তুমি সাপ দেখলে সামনে থাকা মানুষ টাকে কি জড়িয়ে ধরো বা ধরবে…?
তিয়াসা: মানে…?
দূরন্ত: না মানে এপ্লাই করতাম আরকি…।
তিয়াসা: আপনি কি বারবার ভুলে যান যে আমি আপনার স্টুডেন্ট…
দূরন্ত: এটার আগেও যে আমাদের একটা সম্পর্ক আছে সেটা কি তুমি ভুলে যাও…?
তিয়াসা: কিসের সম্পর্ক হ্যাঁ… রিহান ভাইয়ার বন্ধু আপনি.. সেই সুবাদে আপনি আমার ভাইয়া..কিন্তু কিছুক্ষন আগে আপনি ভাইয়া বলে ডাকতে বারন করেছেন..তো সেই সম্পর্ক বাদ…
দূরন্ত: দুররর…রাখছি..ভালো থেকো….!
কথা টা বলতে যতক্ষন তার আগেই ফোনটা কেটে দিয়েছে দূরন্ত.. আর তিয়াসা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে.. কেনো দূরন্ত ওর উপর অধিকার খাটায় ওর প্রতি এতো কর্নসান্ট… যদিও এসবে তিয়াসা কখনো সায় দেইনি..দূরন্ত নিজে থেকেই করেছে…।
দূরন্ত ছেলে হিসেবে ওতো টাও খারাপ না.. আর দেখতে তো আরো নয়.. তিয়াসার সাথে বয়সের যথেষ্ট ডিফারেন্স আছে…. তবুও হয়তো দুজনের প্রতি দুজনের ভালো লাগা কাজ করে… তিয়াসা এখনো সিওর না যে এটা দূরন্তর প্রতি ওর শুধুই ভালো লাগা নাকি তার থেকেও বেশি কিছু.. কিন্তু ও এতোদিনে এটা বুঝে গেছে ওর প্রতি দূরন্তর শুধু ভালো লাগা নয়..তার থেকেও বেশি কিছু..।
তিয়াসা এসব ভাবছে আর মনে মনে হাসছে.. হঠাৎ মনের মাঝে প্রশ্ন জেগে উঠলো… যদি দূরন্তর প্রতি ওর ভালো লাগার থেকে বেশি কিছু ফিল করে..আর সেটা কি ওর আব্বু আর ভাইয়া মেনে নিবে… হ্যাঁ হয়তো নিবে..কারন তিয়াসা ছোট্ট থেকেই সবার আদরের দুলালি… যা চেয়েছে তাই পেয়েছে…আর দূরন্ত কে অপছন্দ করার মতো কোনো কারন নেই….শুধু বয়স এর ডিফারেন্স বাদে…
আর রিহার বিয়ের মধ্যে দূরন্ত আর তিয়াসার মাঝে যা হয়েছে..সেটা কোইনসিডেন্সলি আর তিয়াসার কিছুটা বেখায়ালি পনার জন্য হয়েছে..।
পরেরদিন ভার্সিটি তে….
ক্লাস শেষে সেতু তন্নী আর তিয়াসা একসাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে… আজ তন্নীর আবদার সবাই মিলে ক্যাফে যাবে এবং সবাকে ওর ওনারে আইসক্রিম খাওয়াবে…. সেতু বা তিয়াসা তন্নী কে না করতে পারেনি..কারন ওরা তিনজনে এখন ব্রেস্ট ফ্রেন্ড….
ক্যাফে গিয়ে তিয়াসা কিছুটা দৌড়ে গিয়েই লাস্টের কর্নারের টেবিলে গিয়ে বসলো…কারন টেবিলের ডেকোরেট করা হয়েছে তিয়াসার ফেবোরিট ফ্লাওয়ার দিয়ে… আর টেবিলের উপর ও ফেবোরিট কালারের লাইটিং…
সেতু: এই তিয়াসা তুই যে দৌড়ে এসে এখানে বসলি..? এই টেবিলটা তো অন্য কারো জন্যও বুক করা থাকতে পারে…. দেখছিস না কি সুন্দর করে ডেকোরেট করা…।
তিয়াসা সেতুর কথা শুনে মন খারাপ করে টেবিল থেকে উঠতে নিলেই…
তন্নী: আরে উঠছো কেনো…?এটা তোমার জন্যই…
তিয়াসা: আমার জন্য মানে…??
তন্নী: না মানে…আসলে আমাদের জন্যই…এটা অন্য কারো জন্য বুক করা থাকলে এখানে তাদের নাম লেখা থাকতো…।
সেতু: হুমম তা ঠিক… কিন্তু…
তন্নী:এই সেতু তোর মধ্যে এমন গোয়েন্দা গোয়েন্দা গন্ধ পাচ্ছি….!
সেতু: এই দিকে শোন…
তন্নী কিছুটা এগিয়ে গেলো সেতুর দিকে..সেতু তন্নীর কানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে : কি চলছে বল তো…কিছু একটা গড়বর তো নিশ্চয় আছে..
তন্নী: চুপ করে বস তো তুই…
তিয়াসা সেতু আর তন্নীর ফিসফিসিয়ে কথা বলা বেশ কিছুক্ষন ধরে খেয়াল করছে…কিন্তু কি কথা বলছে সেটা বুঝতে পারছেনা…।
তিয়াসা: এই কি এমন গোপন কথা বলছিস রে ফিসফিসিয়ে…
তন্নী: আসলে সেতু বলছিলো.. ওই যে অফ হোয়াইট কালারের শার্ট পরা ছেলে টাকে নাকি ওর খুব পছন্দ হয়েছে…
তিয়াসা: ওই যমুনা সেতু নতুন ফ্রেন্ড পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি…? হ্যাঁ ভুলবিই তো আমি তো এখন পুরোনো হয়ে গেছি…!
তিয়াসার কথা শুনে সেতু এবং তন্নী গালে হাত দিয়ে দুজনে তিয়াসার দুপাশে বসলো….।
ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিয়াসা চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝালো কি হয়েছে…?
সেতু আগের বঙ্গিতেই বসে কিছুটা তিয়াসার দিকে ঝুকে: এই প্রেমে ট্রেমে পরলি নাকি…?
তিয়াসা সেতু আর তন্নীর কথা আর শুনে হাসবে নাকি কাদবে ভেবে পাচ্ছে না..
তিয়াসা: হোয়াটটট…???
তোরা কি পাগল হয়ে গেছিস….।
সেতু: আমরা পাগল না হলেও তুই মেবি দেওয়ানা হয়ে গেছিস… তুই যে সব কথা বলছিস বা ডায়লগ দিচ্ছিস… সে সব তো প্রেমিক প্রেমিকাদের ডায়লগ….।
তিয়াসা: কোন ডায়লগ এর কথা বলছিস…?
সেতু: ওই যে আমি তো এখন পুরোনো হয়ে গেছি…ওই ডায়লগ টা…।
তিয়াসা: আল্লাহ তুমি এক প্লেট বিরিয়ানী দাও খেয়ে আমি বাসায় চলে যাই…।
সেতু: এই তুই কি কথাটা আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছিস..?
তন্নী: এই সেতু তুই থাম তো… তিয়াসা এখনো প্রেমে পরেনি তবে পরতেছে…।
তিয়াসা: তোরা কি আমাকে এসব বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছিস…যদি তাই হয় তাহলে আমি চললাম…
কথাটা শেষ করে তিয়াসা টেবিলের উপর হাত দিয়ে ভর করে উঠবে…তখন সেতু আর তন্নী দুজনে তিয়াসার দুহাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো…।
তন্নী:ওকে রিলাক্স…এসব বাদ দে..কি খাবি বল তো…
তিয়াসা মুখটা গম্ভীর করে অন্য পাশ ফিরে তাকালো…!
তন্নী: হয়েছে ঢং করা…? এই নে খাবার অর্ডার কর…!
তিয়াসার দিকে মেনু কার্ডটা এগিয়ে দিতে দিতে…,
তিয়াসা মেনু কার্ড হাতে নিয়ে দেখছে…আর ওমনিই সেতু নিয়ে নিল কার্ডটা…।
তন্নী: কি হলো এটা…?
সেতু: কিচ্ছু হয়নি হবে…আমার পছন্দের খাবার অর্ডার করা হবে…
তিয়াসা: না অামার ফেবোরিট খাবার….।
তন্নী: হ্যাঁ হ্যাঁ আজ তিয়াসার জন্য এখানে আসা ওর ইচ্ছে মতোই সব হবে..
সেতু: এই তাহলে তুই শুধু তিয়াসা কেই নিয়ে আসতি…আমাকে নিয়ে আসতে গেলি কেনো…??
তন্নী: তোদের দুজনের মাঝে আমি বলি হতে চাইনা…তোরা দুজনেই তোদের পছন্দের খাবার অর্ডার কর প্লিজজজজ….!
অতঃপর সেতু আর তন্নী খাবার অর্ডার করে দিলো..এখন তিয়াসার পালা… তিয়াসা ও খাবার অর্ডার করে দিলো… ওয়েটার ওদের তিনজনের খাবার অর্ডার নিয়ে চলে যেতে নিলো…
তখনই একজন পিছন থেকে বলে উঠলো… লাস্ট অর্ডার করা সেইম খাবার টা আরো একটা করে দিবেন…।
চলবে…..
…..বানান ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন…..