স্পর্শের_বাহিরে_তুমি Part-12

0
1977

#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_12

তিয়াসা অজ্ঞান হতেই সবাই ঘাবরে গেলো… হঠাৎ কিসের জন্য কারন ছাড়াই অজ্ঞান হয়ে গেলো..সেতু তিয়াসা কে নিজের কাছে আগলে ধরলো…আর তন্নী কি করবে বুজতে পারছেনা …. তন্নী গিয়ে পানি নিয়ে এলো… তিয়াসার চোখের উপর পানি ছিটিয়ে দিলো… হালকা করে গালে চাপর দিয়ে তিয়াসা কে ডাকতে লাগলো…,

সেতু: কি এমন হলো হঠাৎ তিয়াসা এমন চিৎকার করে উঠলো…? একমাত্র ভয় পেলেই তিয়াসা এমন চিৎকার করে… কিন্তু যেটা দেখে ভয় পাই সেটা এখানে আসবে কি করে…?

তন্নী: কি দেখে ভয় পাই তিয়াসা…??

সেতু: সাপ দেখে একমাত্র ভয় পাই ও… এটাই ওর একমাত্র দূর্বলতা..

তন্নী: সাপ কোথায় থেকে আসবে… আর আমরা তো কেউ দেখেনি…

ক্লাসের সবাই মিলে পুরো ক্লাস খুজতে লাগলো.. কিন্তু কোথাও কোনো সাপ খুজে পেলো না…।

তন্নী: তিয়াসার তো এখনো জ্ঞান ফিরলো না…আমি স্যার কে ডেকে নিয়ে আসি..,।

সেতু: হুমম তাড়াতাড়ি যাও…!

তন্নী স্যার কে ডাকার জন্য চলে গেলো … দিশা এগিয়ে এসে বেঞ্চের নিচে উকি ঝুকি দিয়ে খুজতে লাগলো…

দিশা: কই কিছুই তো নেই… এটা হয়তো ওর মনের ভুল…

সেতু: মনের ভুল নয়… নিশ্চয় ও কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে..।

দিশা:তাহলে হয়তো তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছে… কি নেকু টাইপের মেয়েরে বাবা তেলাপোকা দেখেই কুপোকাত হয়ে গেছে…হা হা…।

দিশা আর ওর চেলাপেলাদের হাসিটা অসহ্য লাগছে সেতুর কাছে… রেগে গিয়ে..
সেতু: এই একদম ফালতু কথা বলবে না… একটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে আর তোমরা মজা করছো…??

তন্নী গিয়ে দূরন্ত কে ডেকে নিয়ে এলো… দূরন্ত আসতে আসতে ততক্ষণে তিয়াসা মিটিমিটি করে চোখ খুলেছে..চোখ খুলে তাকিয়ে তিয়াসা সেতুর হাত শক্ত করে ধরে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো…তিয়াসার চোখ মুখে এখনো ভয় ছাপ ফুটে আছে..!

সেতু: কি হয়েছে তিয়াসা..? শান্ত হয়ে বস আগে…কি দেখে এতো ভয় পেলি বল তো..?

তিয়াসা: বেঞ্চের নিচে আমার পায়ের উপর সাপ ছিল…তোরা কেউ দেখিস নাই…

সেতু: এখানে সাপ আসবে কোথা থেকে… আর যদি আসতো ও তাহলে আমরা কি দেখতে পেতাম না বল..?

তিয়াসা: আমি সত্যি বলছি..তুই তো জানিস বল আমি সাপ কতোটা ভয় পাই… আম

তিয়াসার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে..
দিশা: হ্যাঁ তুমি সাপ বেশি ভয় পাও তো.. তাই এটা তোমার মনের ভুলই হবে…এখানে সাপ আসবে কি করে..? আর যদিও আসে তাহলে আমরা কেউ দেখতাম না..নাকি সাপ শুধু তোমার সাথেই দেখা করতে এসেছিল..?

দূরন্ত আর তন্নী ক্লাসে প্রবেশ করার সময় কথা গুলো শুনতে পেলো…দিশার এসব কথা শুনে দূরন্ত রেগে গেলো…

দূরন্ত: তোমার মন গড়া গল্প কেউ শুনতে চেয়েছে..? আর তুমি সেটা তিয়াসার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো…

দিশা: স্যার যদি ওর কথা সত্যিই হতো…তাহলে আর কেউ দেখলো না কেনো সাপ..?

দূরন্ত: তুমি কি বলতে চাচ্ছো ও মিথ্যা বলছে… যেখানে দেখছো ও ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে… তবুও তোমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে… চুপচাপ এখান থেকে যাও…।

দিশা: স্যরি টু সে স্যার.. আপনি তিয়াসার ব্যপারে একটু বেশিই কনসান্ট দেখান..!

দূরন্ত: এই মেয়ে তোমার তো বড্ডো সাহস.. তুমি বোধহয় জানো না টিচার এর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়…

দিশা: আপনিও মনে হয় জানেন না স্যার.. একজন টিচার আর স্টুডেন্ট এর সম্পর্কের লিমিট ঠিক কতোটা..

দূরন্ত: নাউ ক্রস ইউর লিমিট…তোমার ব্যপার টা পরে দেখছি কেমন….
তিয়াসা তুমি ঠিক কি দেখেছো ক্লিয়ার করে বলো..।

তিয়াসা: স্যাররর বিশ্বাসস করেনন আমমি সত্যি বলছিই.. আমি সাপ দেখেছিলাম বলেই এতো ভয় পেয়েছি..

দূরন্ত: ইয়েস আই এম ট্রাস্ট ইউ… কি হয়েছিল সবটা বলো..

তিয়াসা: আমরা সবাই গল্প করছিলাম… হঠাৎ তখন পায়ের কাছে শুরশুরি লাগে…আর মনে হচ্ছিল আমার পায়ের উপর কিছু একটা উঠে আসছে…আমি নিচের দিকে তাকাতেই সাপ দেখতে পাই…আর তখন আমি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়…এটাই একমাত্র আমার ভয়ের জায়গা…!

দূরন্ত: আচ্ছা সাপটা যখন তোমার পায়ের উপর উঠেছিল তখন তোমার পায়ে কি ঠান্ডা লেগেছিল…আর নরম কিছু অনুভব করছিলে কি…??

তিয়াসা: না তেমন কিছু মনে হয়নি তো… ঠান্ডা কিংবা নরম কোনো অনুভবই হয়নি…।

দূরন্ত: আচ্ছা তোমরা আর কেউ দেখোনি না…?

সবাই: না স্যার…

দূরন্ত: আচ্ছা তিয়াসা অজ্ঞান হয়ে পরে যাবার কতোক্ষন পর তোমরা সাপ টাকে খুজেছিলে…

সেতু: আমরা বিষয়টা বুঝে উঠার পরেই সবাই খুজেছিলাম…কিন্তু কিছু দেখতে পাইনি স্যার…!

দূরন্ত: যদি সত্যিই সাপ হতো তাহলে এতো তাড়াতাড়ি সবার চোখের আড়াল হতে পারতো না…!

দিশা: স্যারর সত্যিইই সাপপ না মানে… নকল সাপ আসবে কোথায় থেকে…?

দূরন্ত: নকল সাপের কথা কখনন বললাম আমি…?
আর দিশা তোমাকে বলছি এতো চিন্তা করতে হবেনা…আসল নকল নিয়ে সেটা একটু পরেই বের হবে…!

দিশা: মমমানে…?

দূরন্ত: ওয়েট এন্ড সি…!

দূরন্ত ক্লাস রুমের চারপাশটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো… কিন্তু কোনো কিছুই চোখে পরলো না… শুধু দিশার ভয় পাওয়াটা চোখে পরলো… যার জন্য দূরন্তর সন্দেহ টা আরো দীর হলো… কারন এই কইদিনে এটা ক্লিয়ার যে কোনো কারনে দিশা তিয়াসা কে পছন্দ করেনা… আর সেটার প্রমান দূরন্ত কয়েকবার পেয়েছে…ক্লাসের সবাইকে উদ্দেশ্য করে…

দূরন্ত: আচ্ছা শুনো…তিয়াসা যখন বলছে ও সাপ দেখেছে…তার মানে সত্যিই… ও ঠিকি বলছে… কিন্তু কথা হচ্ছে যদি সত্যিই সাপ হতো তাহলে এতো তাড়াতাড়ি সবার চোখের আড়াল হতে পারতো না… কারো না কারো চোখের সামনে ঠিক পরতো… আচ্ছা তন্নী তোরা কোনো বেঞ্চে বসেছিলি….!

ক্লাসের সবাই অবাক দৃষ্টিতে দূরন্ত আর তন্নীর দিকে তাকিয়ে আছে..কারন দূরন্ত কোনো স্টুডেন্টকে তুই বলে সম্বোন করেনা… সেতু একবার দূরন্তর দিকে তাকিয়ে তন্নীর দিকে তাকিয়ে আছে প্রশ্নের উত্তর এর জন্য… আর তিয়াসা সে তো দূরন্তর দিকেই তাকিয়ে আছে… এটা বুঝার জন্য যে স্যার এর হলো টা কি… স্যার আমার জন্য এতো টাই চিন্তিত যে এতো দিনের অভ্যাস তুমি থেকে বেরিয়ে এসে তুই করে বলছে কোনো স্টুডেন্ট কে…।

দূরন্ত সবার চাহনী খেয়াল না করলেও একজন এর চাহনীতে বুঝে গেছে.. কি হয়েছে আর কি হচ্ছে… ব্যপারটা সামলে নেয়ার জন্য…

দূরন্ত: এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো…? এটাই ভাবছো তো আমি কখনো কোনো স্টুডেন্ট কে তুই করে বলিনা..আজ কেনো বললাম… আসলে মুখ ফসকে ভুলে বলেছিলাম…।

তন্নী এবার একটু রিলাক্স… কিন্তু তিয়াসার কাছে ব্যপারটা ঠিক ক্লিয়ার হলো না…

দূরন্ত: তো যেটা বলছিলাম… চলো আমরা সবাই মিলে খুজি সাপটা কোথায় লুকিয়ে আছে….।

দিশা: স্যার খুজে কি কোনো লাভ হবে..? সাপ টা তো এতোক্ষনে চলে গিয়েছে…।

সেতু: ওহহ তোমাকে বলে গিয়েছে বুঝি…।

তন্নী: আচ্ছা তুমি কেমন মানুষ গো.. একটু আগে তো নিজেই তো বললে তিয়াস হয়তো তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছে.. ও ঢং করছে আর এখন বলছো সাপ এসেছিলো আবার চলেও গেছে…।

দূরন্ত: সাপটা এখনো রুমের বাহিরে যেতে পারেনি..এখানেই কোথাও লুকিয়ে আছে..তিয়াসা তোমরা কোন বেঞ্চে বসেছিলে..?

তিয়াসা আর সেতু কিছু বলার আগেই..
তন্নী: আমরা তিনজন সেকেন্ড বেঞ্চে বসেছিলাম…

দূরন্ত: আচ্ছা থার্ড বেঞ্চে কে কে বসেছিলো…??

দিশা: কেনো স্যাররর..?

দূরন্ত: তোমার সব মানে এবং কিন্তুর উত্তর পেয়ে…আর কিছু সময় ওয়েট করো..!

তিয়াসা: আমাদের পিছনের বেঞ্চে তো দিশা তিশা এবং কনা বসেছিল…

দূরন্ত: ওহহ আচ্ছা…

তন্নী কিছুটা এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে দূরন্ত কে জিঙ্গেস করলো : আমাদের দুজনের সন্দেহ কি ঠিক হতে চলেছে…??

দূরন্ত তন্নী কে কিছু না বলে…সবাই কে ভালো বেঞ্চের নিচের দিকটা খুজে দেখতে বললো..কিন্তু কেউ কিছুই খুজে পেলো না…
দূরন্ত এবার মূখ্য চাল টাই দিলো..আর সেটা হলো সবার ব্যাগ সার্চ করা…।

ব্যাগ সার্চ এর কথা শুনে..
তিয়াসা: স্যার আপনি কি বলতে চাইছেন সাপটা কারো ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে আছে…?

দূরন্ত: থাকতেও পারে…

দূরন্তর কথাটা বলতে যতক্ষন তার আগেই তিয়াসা বেঞ্চ থেকে নিজের ব্যাগটা ফেলে দিলো…

তিয়াসার এমন বোকামি দেখে দূরন্ত না হেসে পারলো না…।

তন্নী এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা তুলে নিলো…!

দূরন্ত: তাহলে কাজ টা শুরু করো..।

দিশা: নাআআ… ব্যাগ সার্চ করা যাবে না…

সেতু: এখানে তো আর কারো প্রবশেম হচ্ছেনা.. তোমার কেনো প্রবলেম হচ্ছে..?

দিশা: প্রবলেম কেনো হবে.. আমি বলতে চেয়েছিলাম মেয়েদের ব্যাগ এ তো পার্সনাল কতো কিছুই থাকে তাই…।

তন্নী: চিন্তার কারন নেই.. স্যার কিংবা ছেলেরা কেউ সার্চ করবে না..করবো তো আমরা মেয়েরা মেয়েরা…!

তন্নী.. সেতু..রুসা..এবং আরো কয়েকটা মেয়ে মিলে সবার ব্যাগ সার্চ করতে লাগলো.. দিশা ও ওদের সাথে সার্চ করতে চেয়েছিল..কিন্তু দূরন্ত এলাউ করেনি…সেই জন্য মুখটা গম্ভীর করে বসে আছে..আর কিছুটা ভয় ও পাচ্ছে হয়তো…
তন্নী ব্যাগ সার্চ করতে করতে একটা ব্যাগ নিয়ে দূরন্তর সামনে গেলো… আর সেখানে গিয়ে ব্যাগ থেকে একটা প্লাস্টিক এর খেলনা সাপ বের করলো..

তিয়াসা ভয়ে আবার চোখটা বন্ধ করে ফেললো..
সেতু: আরে ভিতুর ডিম..এটা রিয়েল না.. প্লাস্টিক এর…।

স্বাভাবিক ভাবেই জিঙ্গেস করলো..
দূরন্ত: এটা কার ব্যাগ…?

একে একে সবাই না করলো এটা তাদের না… শুধু একজন বাদে…আর সে হলো দিশা..।

দূরন্ত: এটা কি তোমার ব্যাগ..??

দিশা: হহহ্যাঁ…

তিয়াসা এবার বেঞ্চ থেকে উঠে এসে দিশার সামনে দাড়ালো…

তিয়াসা: তারমানে তুমি আমায় ভয় দেখিয়েছো…??

দূরন্ত: এটার জন্য আমার থেকে তুমি কোনো পানিশমেন্ট পাবেনা..এবংকি তোমাকে কিছু বলবো ও না…তোমার অভিভাবক কে ডেকে ভার্সিটির সব টিচার এর সামনে এটার বিচার হবে.. কি এমন শত্রুতা তোমার সাথে তিয়াসার সেটা সেদিন’ই শুনবো…। এটাও বিবেচনা করা হবে তোমার মতো বিপদজনক স্টুডেন্ট কে এই ভার্সিটিতে আদৌ রাখা হবে কিনা…!

দিশা: প্লিজজ স্যারর..আমার বাড়িতে কাউকে জানাবেন না প্লিজ..[ কেদে কেদে ]

দৃরন্ত: যাস্ট সাট ইউর মাউথ…
আর সেতু তুমি তিয়াসা কে বাড়ি নিয়ে যাও..আর ওকে বাড়ি পৌছে দিয়ে যেয়ো..

সেতু: ওকে স্যার…

.
.
.
_______
.
.
.

রাতে তিয়াসা সোফায় শুয়ে আছে..আর তিয়সার মা মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে…
তখন তিয়াসার ভাবি রাইসা খাবার এনে তিয়াসা কে খেতে বললো.. কিন্তু তিয়াসা খেতে নারাজ… তিয়াসার তিয়াসাকে টেনে উঠিয়ে বসালো..এবং নিজের হাতে তিয়াসা কে খাইয়ে দিলেন…।




তিয়াসা রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো..আননোন নাম্বার থেকে পাচ থেকে সাত বার ফোন এসেছে.. আর একটা মেসেজ ও এসেছে… মেসেজ ওপশনে গিয়ে মেসেজটা চেক করলো…যাতে লেখা আছে.. ” ফোন কি ধরবে নাকি বাড়িতে আসতে হবে…?? ”

তিয়াসা মনে মনে: পুরান পাগলে ভাত পাইনা.. নতুন পাগলের আমদানি… এটা আবার কোন আপদ রে বাবা… দুরর ভাল্লাগেনা..!

ওমনিই আবার তিয়াসার ফোনটা বেজে উঠলো.. ফোন রিসিভ করে…
তিয়াসা: আসসালামু আলাইকুম…!

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে