#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_11
তিনজন মিলে ক্যানটিনে বসে কফি খাচ্ছে…হঠাৎ করে তিয়াসার চোখ ক্যানটিনের ঠিক সামনে একটা দোকানের পাশে চোখ পরলো… যেখানে একটা বৃদ্ধ লোক হাতে গুনা কয়েকটা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে… সবার কাছে গিয়ে গিয়ে হয়তো ফুল গুলো তাদের কিনতে বলছে…সবাই লোকটিকে এড়িয়ে চলে যাচ্ছে…কিছুটা দুরে হলেও লোকটির মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে তিনি খুব করে চাচ্ছেন ফুল গুলো বিক্রি করতে… হয়তো এটাই উনার একমাত্র রোজগার এর পথ… একটা ছেলে বৃদ্ধ লোকটির সামনে দাড়ালো…ছেলেটির শুধু পিছনের দিকে দেখা যাচ্ছে…. ছেলেটি সব গুলো ফুল কিনে নিলো…আর ওই বৃদ্ধ লোকটির মুখে এক খুশির আভা ভেসে উঠলো…
গালে হাত ঘটনা টা উপভোগ করলো তিয়াসা…ছেলেটি পিছনে ঘুরা মাত্রই তিয়াসা গাল থেকে হাত সরিয়ে একটু নড়েচড়ে বসলো…।
তন্নী আর সেতু তিয়াসার ভঙ্গিতে গালে হাত দিয়ে তিয়াসার দিকে তাকিয়ে আছে…
তন্নী+সেতু: দেখা হলো…???
তিয়াসা: দেখখখ তোররা যা ভাববছিসস সেটটা কিন্তু না…।
তন্নী:আমরা কি ভাবছিলাম…?
সেতু: হ্যাঁ বল আমরা কি ভাবছি…!
তিয়াসা: আমি কি বুঝিনা নাকি… তোরা কেনো এমন করে তাকিয়ে আছিস….দেখ আমি কিন্তু শুধু ওই লোকটাকে আর ফুল গুলো দেখছিলাম…
সেতু: কোন লোকটাকে দেখছিলি রে..? লোক তো দুজন ছিলো… এক হলো ফুল ওয়ালা আর দুই হচ্ছে আমাদের স্যাররর তাশরীফ আহমেদ দূরন্ত…।
তিয়াসা: অবশ্যই ফুল ওয়ালা আর ফুল গুলোকে দেখছিলাম… আর স্যার কে তো আমি দেখিই নি…।
তন্নী+সেতু: ওহহহ আচ্ছা তাই বল…
তিয়াসা: সতি বলছি বিশ্বাস কর… অনেক ক্ষন যাবৎ দেখছিলাম লোকটা ফুল গুলো বিক্রি করার জন্য এর ওর কাছে যাচ্ছিল… তখন স্যার এসে উল্টো দিক হয়ে দাড়িয়ে ফুল গুলো কিনে নিলো… সেটাই দেখছিলাম…
তন্নী: হুমমম ভাইয়া এরকমই…!
তিয়াসা+সেতু: ভাইয়াআআ…??
তিয়াসা আর সেতুর এতো জোরে চেচানো তে বেচারি তন্নী তো ভয় গেয়ে গেছে… নিজের বুকে বিসমিল্লাহ বলে ফু দিয়ে…
তন্নী: না মানে…এখন তো ক্লাস টাইম বা ভার্সিটি টাইম না..তাই আরকি ভাইয়া বললাম.. যে হারে আমার বান্ধবীরা স্যার এর প্রতি ক্রাশ খাচ্ছে…
.
.
.
তন্নী বাসায় ফিরে ড্রেস চেন্জ না কররেই সোফায় শুয়ে পরলো…. তন্নীর মা [ তাহমিনা বেগম ] এগিয়ে এসে: তোকে না কতোবার বলেছি ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেস না হয়ে শুবি না…।
তন্নী: পাচঁ মিনিট মা প্লিজজজ…
তন্নীর মা: এক মিনিট ও না.. আগে ফ্রেস হয়ে আয়…তারপর খেয়ে শুবি..।
তন্নী: হুহহহ…তুমি শুধু আমার সাথেই পারো…তোমার ছেলের সাথে তো পারো না… তোমার ছেলে তোমার কথা শুনে….??
তন্নীর মা: কিসের মধ্য কি পান্তা ভাতে ঘী… তোর ভাইয়া কে নিয়ে পরলি কেনো এখন…??
তন্নী: তা নয়তো কি…? ভাইয়া কে তো দুবছর ধরে বিয়ে করতে বলছো…করছেনা তো… তোমার কথা তাহলে কোথায় শুনে..? আর আমাকে তো তোমার বাবার আর ভাইয়ার সব কথা শুনে চলতে হয়… তাহলে বুঝো আমার উপর কতো প্রেসার পরে…!
তন্নীর মা: এই চুপপপ কর… মাথাটা নষ্ট করে দিবি নাকি… তোরা দুই ভাই বোন কেউ কারো থেকে কম না…!
.
.______
.
তিয়াসা টিভি তে কার্টুন দেখতেছে…আর রাইসা মানে তিয়াসার ভাবি সারা রুমে পায়চারি করছে…,
রাইসা: আজ আসুক বাড়িতে ওর একদিন কি আমার সাত দিন… কতো বড় সাহস ওর আমার ফোন রিসিভ করে বলে কি..? আমি ব্যস্ত আছি… পরে ফোন দিবো… সারা দিনেও ফ্রি হয়নি নাকি…?
রাইসার এই বকবকানি তে তিয়াসা আর পারছে না নিজের প্রিয় কার্টুন এ মনোযোগ দিতে …
তিয়াসা: ওফফফ ভাবি কি হয়েছে…কাকে এসব বলছো…?
রাইসা: কাকে আবার ওই বজ্জাত টাকে…
তিয়াসা: বজ্জাতটাই আবার কি করলো গো ভাবি…?
রাইসা: জানো আমি দুপুরে ফোন দিয়েছিলাম খেয়েছে কিনা জানার জন্য… সে বলে কি আমি বিজি আছি পরে ফোন দিবো…
তিয়াসা: ইশশশ পরে অর তোমায় ফোন করেনি না..?
রাইসা: করলে কি আর আমার এখন এতো চিন্তা করতে হতো…।
তিয়াসা: থাক ভাবি চিন্তা করোনা…ভাইয়া একদম ঠিক আছে… হয়তো কোনো কাজ করছে..!
রাইসা: চিন্তা কি সাধে করছি গো.. জানো আজ অফিস যাওয়ার সময় ফুরফুরে মেজাজে সেজে গুজে গিয়েছে… সেইটাই তো ভয়.. কি এমন কাজ করছে যে আমার ফোন ইগনোর করতে হলো…!
তিয়াসা: ওহহহ ভাবি প্লিজ রিলাক্স… এসব কি ভাবছো উল্টা পাল্টা….
কিছুক্ষন পর….
তিয়াসা: ভাইয়া তুমি এতোক্ষনে আসলে ভাবি তো চিন্তা করে করে অস্থির হয়ে গেলো…!
তিসান: কেনো…??
তিয়াসা: সেটা তো ভাবি জানে.. যাও রুমে গিয়ে ভাবি কে জিঙ্গেস করো…[ মুখ টিপে হেসে ]
তিসান মনে মনে: আল্লাহ তুমি ভালো জানো আজ কপালে কতো নাম্বার সংকেত আছে…
তিয়াসা তিসান এর সামনে হাত দিয়ে তুরি বাজিয়ে..
তিয়াসা: এই ভাইয়া কি ভাবছো…??
তিসান: ভাবছি.. আজ মনে হয় সুনামি হবে… আমি মিটিং এ ছিলাম তখন রাইসা ফোন দিয়েছিল..ওর সাথে কথা বলতে পারিনি… আর মিটিং শেষ হতে হতে রাত হয়ে গেছে… তারপর ডিরেক্ট তো বাড়িতেই ফিরলম…।
তিয়াসা: তুমি রুমে যাও তোমার এতো সাজুগুজো কোথা থেকে আসে..সব বের করবে…হা হা হা…,
তিসান: দাত কেলিয়ে হাসছিস… এই তুই সত্যিই আমার বোন তো…?
তিয়াসা: সেটা তো আব্বু আর মা ভালো জানে…
.
.____
.
সাতদিন পর…ভার্সিটিতে….!
তিয়াসা বেঞ্চে বসে আছে… সবাই মিলে গল্প করছে সেকেন্ড পিরিয়ডের ক্লাস শুরু হতে আরো পনেরো মিনিট…দিশার গ্যাং এর সবার মুখে এক শয়তানির হাসি ফুটে উঠেছে… হয়তো ওরা নতুন কোনো প্ল্যান করছে… এই সাতদিন তিয়াসার সাথে পেরে উঠেনি… তিয়াসা সব সিচুয়েশন খুব সহজে সামলে নিয়েছে… আর দিশাকে সবার সামনে এক্সপোজ করে দিয়েছে… স্যার প্লাস ক্লাসের সবার সামনে বার বার অপমানিত হয়েছে দিশা… অবশ্য সেটা নিজের দোষেই…।
তিয়াসা কথা বলার সময় পায়ের কাছে কিছু ফিল করলো… মনে হচ্ছে পায়ের উপর দিয়ে একে বেকে চলছে… পায়ের দিকে তাকিয়ে তিয়াসা চিৎকার করেই অজ্ঞান হয়ে গেলো….
এটাই তিয়াসার একমাত্র উইকনেস… যেটা দেখলেই ভয়ে লাফালাফি শুরু করে..আর সেই জিনিস টা তিয়াসা এতো কাছে… তাও আবার পায়ের উপর…
চলবে….