#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_2
তিয়াসা: আমি কোথায়…?
দূরন্ত: তুমি এখন পাহাড়ের উপর আছো… যা পাও তাই আকড়ে ধরো… না হলে পরে যাবে কিন্তু…
তিয়াসা এবার দূরন্তর শার্ট আকড়ে ধরলো…কিন্তু ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যপারটা বুঝতে পেরে…উপরের দিকে তাকালো…
? যখনই পরেছে নজর..
আমি তো হয়ে গেছি তোর ?
তিয়াসা: এই বজ্জাত বেটা আপনি আবার আমায় ধরেছেন… নামান বলছি নামান….
দূরন্ত: আগেও আবার কোনো দিন তোমায় ধরেছিলাম..?. আমার তো মনে পরছে না…
আর আমায় বজ্জাত বলছো… না ধরলে তো এতো ক্ষনে তোমার সব হাড় পাওডার হয়ে যেতো…
তিয়াসা: হলে হতো… আমাকে ছাড়ুনননন…[ চিৎকার করে ]
তিয়াসা চিৎকার করতেই দূরন্ত তিয়াসাকে ছেড়ে দেয়…আর তিয়াসা ধপাস করে নিচে পরে যায়….তিয়াসার চিৎকারে সবাই হাজির হয়… আর রিশা ওদের কান্ড দেখে খিলখিল করে হেসেই ফেললো…
তিয়াসা: ওই পেত্নির নানি তুই হাসছিস…? আগে আমাকে টেনে তুল…তারপর ওই বজ্জাতের হাড্ডির একদিন আর আমার যে কদিন…শালা খচ্চর ধরেছিস যখন এভাবে ছেড়ে দিয়ে আমার কোমড়ের ১৪ টা কেনো বাজিয়ে দিলি…
তিয়াসাকে টেনে উঠিয়ে দাড় করালো রিশা…উঠে দাড়িয়ে…
তিয়াসা: রিহানননন ভাইইইয়াআআআ….[ চিৎকার করে ]
তিয়াসার এমন চিৎকারে রিহান দৌড়ে এসে হাজির হয় ওর সামনে…
রিহান: কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
তিয়াসা: হ্যাঁ…এই বজ্জাত অসভ্য লোকটা কি করে তোমার ফ্রেন্ড হতে পারে…তাও আবার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড…
রিহান তো অবাকের সপ্তম আকাশে.. যে বন্ধু কিনা কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকায় নি পযর্ন্ত… সেই বন্ধুকে তার ছোট বোন কতো গুলো উপাধি দিয়ে দিলো…।
রিহান: কি হয়েছে আগে তাই বল…
দূরন্ত: আমি বলছি তোকে….
তারপর সব বললো রিহানকে এবং উপস্থিত সবাই শুনলো…
দূরন্তর বলা কথাতে কেউ দূরন্তর ভুল কিংবা দোষ খুজে পেলো না…
রিহান: এতে দূরন্তর দোষ কোথায় তিয়াসা… তুই পরে যাচ্ছিলি তাই তো তোকে ধরেছে…
তিয়াসা: তুমি জানো না ভাইয়া…এই অসভ্য লোক টায় ফুল দিয়ে…
তিয়াসাকে বলতে না দিয়ে…
দূরন্ত: হ্যাঁ তুমি যখন ফুল গুলো ঠিক করছিলে চেয়ারে দাঁড়িয়ে তখন দূর থেকে দেখে এগিয়ে আসি…কেবলই বলবো সাবধানে তার আগেই তো তুমি পরে গেলে তাই তো আমি তোমার ধরে ফেললাম…
তিয়াসা: হ্যাঁ ধরেই যখন ফেলেছিলেন তাহলে ছাড়লেন কেনো…?
দূরন্ত: তুমিইই তো ছাড়তে বললে… কতো বকলে আমায়..তাই তো ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম…
তিয়াসা:কি বাধ্য ছেলে… এক নাম্বারের শয়তানের নানা… বজ্জাতের হাড্ডি..শাকচুন্নীর জামাই..মিথ্যাবাদী..
দূরন্ত: শাকচুন্নীটা তুমিইইই হবে…[ মনে মনে ]
রিহান: প্লিজ বোন চুপ যা… এবার তো থাম…
তিয়াসা: তুমি আমার ভাইয়া না… তোমায় নিশ্চিত ভূতে ধরেছে… না হলে তুমি এতোক্ষনে এই খচ্চরটাকে পিটিয়ে রামছাগল বানিয়ে ফেলতে…।
দূরন্ত: এই মেয়ে কিসব ফালতু বকছো…? মাথার কি তার ছেড়া নাকি…?
তিয়াসা: এই আপনি কি বলতে চাইছেন..? আমি পাগল.?.আপনি পাগল আপনার চৌদ্দগ্রাম পাগল…।
দূরন্ত: এখন অামি পুরোপুরি সিওর যে তুমি সত্যিই পাগল…
এদের দুজনের সুনামিতে মনে হচ্ছে না এটা বিয়ে বাড়ি…
.
.
.
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই ফ্রেস হতে চলে গেলো… একেক জনের শরীরে পুরো হলুদের গোডাউন লেগে আছে…আর তিয়াসার হলুদে এলার্জি থাকায় শাওয়ার নিতে হবে মাস্ট বি… রুমে এসে শাওয়ারে চলে গেলো তিয়াসা তাড়াতাড়ি করে… না হলে এলার্জি উঠে যাবে….
শাড়িটা খুলে শাওয়ার ছেড়ে দিলো তিয়াসা…পরনে শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট… মনের সুখে শরীর থেকে হলুদ তুলছে তিয়াসা…কিন্তু সুখে থাকতে ভূতে কিলায় আর তিয়াসারর সুখে দূরন্ত বাদা হয়ে দাড়ায়….।
কারন তিয়াসারর রুম লক না থাকায় দূরন্ত রুমের ভিতর চলে আসে…আর রুমে কোনো মানুষ না থাকায় ভাবে রুম প্লাস ওয়াস রুম দুটোই ফাকা আছে…আর ওয়াস রুম ও লক ছিল না….তাই তো চট করে শাওয়ার নিতে ঢুকে যায় ওয়াস রুমে… আর যা দেখলো তাতে মুখ একদম হা হয়ে গেলো.. কারন প্রথম এক্সপ্রেরিয়েন্স তো এটা দূরন্তর তাই…
ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটেছে..যে কি ঘটেছে তা বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো তিয়াসার.. যতক্ষনে বুজতে পারলো ততক্ষনে দূরন্ত অলমোস্ট যা দেখার দেখে নিয়েছে…
তিয়াসা চিৎকার করার আগেই দূরন্ত তিয়াসার মুখ চেপে ধরলো… যাকে বলে প্রি সেফটি…।
দূরন্ত:এখন আর চিৎকার করে লাভ নেই…অলমোস্ট সব দেখে ফেলেছি…শুধু শুধু চিৎকার করে নিজের প্লাস আমার মতো ইনোসেন্ট একটা ছেলের বদনাম করো না…
তিয়াসা নিজের মুখ থেকে ঝাড়ি দিয়ে দূরন্তর হাত সরিয়ে দিলো…।
তিয়াসা: আপনি যে এতোটা খারাপ সেটা জানতাম না…কারো রুমে আসলে যে নক করে আসতে হয় সেটা বোধহয় আপনি জানেন না… উইদআউট পারমিশনে রুমে চলে আসলেন তো ডিরেক্ট ওয়াস রুমের ভিতরেও চলে আসলেন…আমার তো সন্দেহ হয় আপনার চরিত্র নিয়ে… সেটা আদৌ ঠিকঠাক আছে তো…?
দূরন্ত: প্রথমত দোষটা তোমার..কারন রুমটা তুমি লক করোনি.. তার উপর ওয়াস রুমে শাওয়ার নিতে এসেছো সেটাও লক করোনি… আর দিত্বীয়ত আমার চরিত্র টা কতোক্ষন ঠিকঠাক থাকবে তা ইনসিওর করতে পারছিনা… কারন এভাবে যদি আর বেশিক্ষন থাকি…
তিয়াসাকে দেখে নিচ থেকে উপর পযর্ন্ত একবার চোখ বুলিয়ে কথা গুলো বললো দূরন্ত…
তিয়াসা নিজের দিকে তাকিয়ে রাগে ফায়ার হয়ে গেলো…ভিজে জামা কাপড় শরীরের সাথে লেগে গেছে প্রায়… না দূরন্তর উপর না নিজের উপরই… পাশ থেকে শাড়িটা বুকের উপর জড়িয়ে নিলো…কিন্তু তাতেও দূরন্তর দৃষ্টি তিয়াসার উপরই পরে আছে…।
তিয়াসা রেগে গিয়ে দূরন্তকে ওয়াস রুম থেকে বের করে দিলো…তিয়াসার এতো রাগ হয়েছে যে কি বলবে সেটাও কম হয়ে যাবে বলা…।
দূরন্ত রুম থেকে বের হতেই রিশার সাথে দেখা…দূরন্তকে ভেজা অবস্থায় রুম থেকে বের হতে দেখে প্রশ্ন করে বসলো…
রিশা: ভাইয়া আপনি ভেজা অবস্থায় আমাদের রুম থেকে বের হচ্ছেন কেনো…?
দূরন্ত: সে না হয় পরে বলবো…এখন আসি বাইই..।
.
.
____
______________
___
বিন্দু বাড়ি ফিরেই চেয়ারে ধপাস করে বসে পরলো…মায়ের কাছে এক গ্লাস পানি চাইলো…বিন্দুর মা হাতে পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েকে পর্যবেক্ষণ করছে…মেয়েটা কেমন অস্থির হয়ে…মেয়েটার মুখে সেই তিন বছর আগের কষটের ছাপ ভেসে উঠেছে…
বিন্দুর মা: এই নে পানি…।
বিন্দু মায়ের হাত থেকে পানি নিয়ে একদমে পানিটা শেষ করে ফেললো…বিন্দু গ্লাসটা মায়ের হাতে দিতেই…প্রশ্নের চাহনিতে তাকিয়ে আছে তার মা…।
বিন্দু: কি হয়েছে..ওমন করে তাকিয়ে আছো কেনো..? টায়ার্ড লাগছিল তাই…।
বিন্দুর মা: আমার কাছে তো কিছু এক্সপ্লেইন করতে হবেনা বিন্দু…আমি তোকে ২৫ বছর ধরে চিনি..।
বিন্দু জানে এই একমাত্র মানুষ যে বিন্দুর না বলা কথা বুঝতে পারে…চোখের ভাষা পরতে পারে…মনের কথা জানতে পারে…যার জন্য বিন্দু বেচে থাকার সাহস জুগাতে পারে…। বিন্দু এবার নিজের মাকে আকড়ে ধরলো… বিন্দু চেয়ারে বসে ছিল..আর ওর মা দাঁড়িয়ে ছিল..বিন্দু তার মাকে জড়িয়ে ধরাতে বিন্দুর মাথাটা তার মায়ের বুকের মাঝ বরাবর আশ্রয় পেলো… এই একমাত্র জায়গা যে জায়গাটা বিন্দুর জন্য পরম যত্নে আর অফুরন্ত ভালোবাসায় ঘেরা…।
বিন্দু মায়ের বুকে মাথা রেখেই সব বললো তার মাকে… বিন্দুর মা চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলো না… কি করেই বা আটকে রাখবে তিনটে বছর ধরে নিজের মেয়েকে এক চাপা কষ্টে ভুগতে দেখছে তিনি…এতোটা দিন পর বিন্দু নিজেকে সময় দিবে.. নিজের মায়ের জন্য পরিবারের জন্য ভালো থাকবে বলে ছুটছিল..আর পথে চলার আগেই তার না পাওয়া কষ্টের অতীত সামনে এসে দাড়ালো…।
বিন্দুর মা বিন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে..বারন করছে না বিন্দুকে কাদতে… কাদুক একটু হলেও হালকা লাগবে… বেশ কিছুক্ষন পর বিন্দু মায়ের বুক থেকে মাথা টা তুলে…চোখের পানি মুছে নিয়ে
বিন্দু: মা তুমিও না… এসব বাদ দাও..এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি [ ঠোটের কোনে হাসি রেখে ]
মেয়ের মুখে হাসি দেখে বিন্দুর মায়ের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো…।
বিন্দুর মা: এবার আসল কথা টা বলবি তো..?
বিন্দু: হুমম মা আমার চাকরিটা হয়ে গেছে…এই দেখো appointment letter…
বলেই ব্যাগে হাত দিল কিন্তু পেলো না…অনেক খুজেও লেটার টা পেলো না…তখন বিন্দুর মনে পরলো লেটার তো হাতে ছিল..দৌড়ে আসার সময় তখন হয়তো পরে গেছে..।
.
.
দিয়া: এই খামটা কিন্তু কালকেই তুমি এই ঠিকানায় পৌছে দিবে… হয়তো দরকারি কিছু আছে…
দীপ: আমি..? [ অবাক হয়ে ]
দিয়া: তা নয়তো কে.. তুমি চাইলে আমি দিয়ে আসতে পারি..।
দীপ: আচ্ছা আমি দিয়ে আসবো..হয়েছে..?
___
_________
___
.
.
.
তিয়াসা শাওয়র নিয়ে ওফ হোয়াইট কালারের চুরিদার পরে..হাতে কফি নিয়ে ছাদে গেলো… সাদের কর্ণার ঘেষে দাঁড়িয়ে কফিতে এক চুমুক দিতেই পিঠে শীতল কিছু অনুভব করলো…শীতল স্পর্শ পেয়েই তিয়াসার শরীর শীওরে উঠলো…পিছনে তাকিয়ে তিয়াসা যে মানুষ টাকে দেখতে পেল রেগে গিয়ে আই উইল কিল ইউ বলেই হাতে থাকা গরম কফিটা তার মুখে ছুড়ে দিলো…
চলবে…