#স্পর্শতায় তুমি
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়
পুষ্প স্যার গম্ভীর মোডে ক্লাসে প্রবেশ করে৷ ক্লাসে প্রবেশ পরই গম্ভীর রাগী গলায় সবাইকে সাবধান করে৷ ভারী গলায় বলল,
“যার ক্লাস করতে ইচ্ছা করবে না সে চলে যেতে পারো৷ ক্লাসের মাঝে কেউ দুষ্টামি করার চেষ্টা করলে ব্যবহারিকে নাম্বার দিব না৷ ফেল করিয়ে দিব তাকে৷”
থমথমে পরিবেশে প্রকৃতির নেওয়া সিদ্ধান্ত ব্যর্থ নয়৷ কোন রকম শয়তানি না করে মন দিয়ে ক্লাস শুরু করে৷ মাঝে মাঝে স্যারের সাথে চোখাচোখি হয়৷ চোখ পড়তেই রক্তবর্ণ চোখে তাকান পুষ্প স্যার৷ ভয়ে উপরে তাকানোর সাহস হলো না প্রকৃতির৷ ভয়ে ভয়ে ক্লাস শেষ করে প্রকৃতি।
তিন বান্ধবী মিলে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে৷ পুষ্প স্যার ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে৷ তিথির চোখে পড়ে পুষ্প স্যারকে৷ কাছে আসতেই তিথি প্রকৃতির হাত ঝাঁকি দেয়৷ যার ফলে প্রকৃতির ঝালমুড়ি পুষ্প স্যারের মুখে এসে পড়ে৷ চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলেন৷ হাত থেকে ফোন মাটিতে পড়ে যায়৷ তিথি অর্পি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়৷ গাধা প্রকৃতি সেখানেই দাঁড়িয়ে৷ চোখ মেলে প্রকৃতিকে দেখে রাগের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়৷ গম্ভীর গলায় বলল,
“তোমার সাহস দেখে আমি হতভম্ব! শিক্ষকদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে জানতে না৷ এখন অপমান করতেও ছাড় দিচ্ছো না৷”
প্রকৃতি কোন কথা বলতে পারছে না৷ চোখ তুলে উপরের তাকানোর সাহস টুকু পাচ্ছে না৷ কয়েকটি শুকনো ঢোল গিলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে৷ পুষ্প স্যার ফোন তুলে কৃষ্ণচূড়া গাছের গোড়া বাঁধাই করা অর্কিডে বসে৷ শাস্তি স্বরুপ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়৷ প্রকৃতি এদিক ওদিক তাকিয়ে থেকে এক পায়ে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ প্রকৃতির চোখ থেকে নোনা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে৷ মুখে বলে যাচ্ছে,
❝প্রকৃতি এক পায়ে দাঁড়িয়ে কাঁচকলা খাই চা’বিয়ে।❞
প্রকৃতির শাস্তি শেষ হতেই চিৎকার দিয়ে ভেজা গলায় বলল,
“পুষ্প স্যার আপনার সাহস থাকলে আমাকে বিয়ে করে দেখান৷ সাহস তো শুধু শাস্তি দেওয়ার৷ মাঠের মাঝে এক পায়ে কান ধরে দাঁড় কারানোর৷ বুকে সাহস থাকলে আগামীকালই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাসায় আসবেন৷”
পুষ্প স্যার প্রকৃতির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়৷ কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রকৃতি কান্না করতে করতে সেখান থেকে চলে যায়৷ স্যার বুঝতে পারে প্রকৃতির সাথে অন্যায় করেছে৷ বড় একটা মেয়েকে এভাবে অপমান করা ঠিক হয়নি৷ পুষ্প স্যার বুঝতে পারে প্রকৃতির সাথে অন্যায় হয়েছে৷ প্রকৃতির প্রতি এতোটা কঠোর হওয়ার জন্য লজ্জিত।
একের পর এক ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে৷ কোথাও জব হচ্ছে না ঋষির৷ ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত৷ বাহিরে ঝুমঝুম বৃষ্টি৷ ঋষি দৌড়ে বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়৷ বেঞ্চে বসে আসে সেই মেয়ে বে”য়া”দ”ব মেয়েটা। না দেখার ভান করে অপর পাশে ঘুরে দাঁড়ায় ঋষি৷ অচেনা মেয়েটি ঋষিকে দেখেই চিনে ফেলে৷ মেয়েটি তেড়ে ঋষির কাছে আসে,
“আমি তোকে ছাড়বো না৷ সেদিন তুই আমাকে অনেক আঘাত করেছিস৷ আজ তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না৷”
ঋষি না চেনার ভান করে বলল,
“কে আপনি? আমার উপর এভাবে রেগে আছেন কেন? আমার দিকে তেড়ে আসার কারণ কি?”
“আমি অজান্তা৷ তুই সেদিন আমাকে ধাক্কা দিয়ে নেপচুন পাঠিয়ে দিয়েছিলি৷ আজ তোকে আমি উগান্ডায় পাঠাবো৷”
ঋষি ব্রো কুঁচকে বলল,
“সরি ম্যাম। চলার পথে এমন অনেক ভুল হতে পারে৷ সেসব নিয়ে না ভেবে বৃষ্টি উপভোগ করেন৷ এতো রাতে আপনি বাহিরে কি করছেন?”
অজান্তা রাগী গলায় বলল,
“রাতে শুধু ছেলেদের কাজ থাকে মেয়েদের কোন কাজ নেই৷ মেয়েরা রাতে বাহিরে বের হতে পারবে না এমন কোন সংশোধনে লেখা আছে৷”
“আমি এভাবে বলতে চাইনি। আপনার সাথে কেউ নেই৷ আপনি একা মানুষ তো৷ বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে৷ সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।”
“আমি অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম৷ আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য আমি এখানে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি৷ বাসায় ফোন যাচ্ছে না৷ নেটওয়ার্কের সমস্যা।”
“আমি যদি আপনার গাড়ি ঠিক করে দেয়৷ ধরে নেন সেদিনের শাস্তি হিসেবে আপনার গাড়িটা ঠিক করে দিলাম৷”
“ঠিক করতে হবে না৷ এতো ঝড়ে হাওয়ার সাথে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে ঠিক করতে হবে না৷ বাই দ্যা ওয়ে আপনি সেদিন আমার মায়ের অফিসে কেন এসেছিলেন?”
“আমি একটা জবের জন্য এপ্লাই করেছিলাম৷ কিন্তু জবটা আমার হয়নি৷”
অজান্তা ঋষির দিকে তাকিয়ে আছে। ভেজা মাথার চুল কপালে নুইয়ে পড়েছে৷ বৃষ্টিতে ভেজার ফলে শার্ট গায়ে লেপ্টে লেগে আছে৷ কেমন জানি আসক্ত হয়ে পড়ছে ঋষির উপর৷ কেন এমন হচ্ছে অজান্তার৷ তাকে তো সে চিনেই না৷ নিজের আসক্ত দূরে ঠেলে দিলে বলল,
“আপনি আগামীকাল থেকে অফিসে চলে আসবেন৷ আপনার জব হয়ে গেছে৷”
“সরি আমি আপনার করুনায় জব নিয়ে পারব না। আমার যোগ্যতা থাকলে আমি জব পেয়ে যাব৷”
“ধরে নেন অফিসের একজন কর্মকর্তা হিসাবে আপনাকে জব অফার করলাম৷ এখন আপনার যোগ্যতা দেখিয়ে কাজ করেন৷ আপনার যোগ্যতা কতোটা আছে তা কাজে প্রমাণ করেন৷”
ঋষি অজান্তাকে যতটা বে’য়া”দব অহংকারী মেয়ে ভাবছিল ততটা অহংকারী মেয়ে নয়৷ ছোট থেকে মা বাবা আদুলে বড় হওয়া সন্তান৷ অজান্তা মনে মনে বলল,
“তোকে জব অফার কারণ হলো প্রতিশোধ নেওয়া৷ এতো পরিমাণ কাজ দিব তুই পরের দিন অফিস থেকে লোজ গুটিয়ে পালাবি৷ অজান্তার সাথে লাগতে আসলে শাস্তি তো পেতেই হয়৷”
ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হতে পারে না৷ যতই ভুলার চেষ্টা করুক ভালোবাসার মানুষকে। স্মৃতিগুলো তাড়া দিয়ে বেড়ায়৷ ছোঁয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ঋষির কথা ভেবে যাচ্ছে৷ ঋষির সাথে নানা অকারণে ঝগড়া করতো। বৃষ্টিতে ভিজতে ঠান্ডা লাগবে জেনেও ঋষির হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজেছে৷ আজও বৃষ্টি হচ্ছে৷ বৃষ্টির সে ভালোবাসার অনুভূতি নেই৷ বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁট তীরের মতো লাগছো বুকের ভিতর৷ বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে ভালোবাসা পাইনি৷ শ্বশুর শ্বাশুড়ি খুব ভালো মানুষ৷ তারা ছোঁয়াকে খুব ভালোবাসে৷ বিয়ের পরের দিন ছোঁয়াকে রেখে অন্য মেয়ের হাত ধরে চলে গেছে ছোঁয়ার হাসবেন্ড। ছোঁয়াকে বিয়ে করেছে মায়ের কথা রাখতে৷ আজ বৃষ্টির জলে ভিজে বলতে ইচ্ছা করছে ঋষি কই তুমি? তোমাকে ছাড়া তোমার ছোঁয়া একা৷ নিস্তব্ধে নিরবে নিভৃতে তোমার কথা ভাবে৷ তোমায় ছাড়া ভালো নেই৷ তোমাকে এক নজর দেখার জন্য আমার মন অনেক বেকুল হয়ে থাকে৷ ছোঁয়া রুমে এসে ফোনে ঋষির ছবির দিকে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঋষি অজান্তার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায়। মুখে উচ্ছাস নিয়ে বলল,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য কাজটা আমার খুব প্রয়োজন ছিল৷”
অজান্তা ব্রো কুঁচকে বলল,
“স্বাভাবিক রাখা কথাটা বুঝতে পারলাম না৷ আপনি…”
অজান্তার কথার মাঝে বলল,
“সময় হলে জানতে পারবেন৷ ভাবতেছি এতো রাতে বাসায় ফিরবেন কিভাবে? রাস্তায় কোন রিক্সা নেই৷ ধানমন্ডি যেতে অনেক সময় লাগবে। বৃষ্টির মাঝে তো হেঁটে যাওয়া যাবে না৷”
অজান্তা হতাশা কন্ঠ নিয়ে বলল,
“একদম ঠিক বলেছেন। আমার বাসাও ধানমন্ডিতে৷ গাড়ি ঠিক থাকলে এক সাথে যেতে পারতাম৷”
“আপনার ছাতাটা দেন৷”
“ছাতা দিয়ে কি করবেন?”
“গাড়িটা ঠিক হয় কিনা একটু দেখি৷”
ঋষি অনেক চেষ্টা করে গাড়িটা ঠিক করে৷ অজান্তা ড্রাইভ করছে৷ ঋষি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ পাশে একটা মেয়ে বসে আছে তাকে দেখার মতো সময় নেই৷ নিজ থেকে অজান্তা বলল,
“আপনার বাসায় কে কে আছে?”
“মা বাবা ভাই বোন৷”
ঋষি নিজে থেকে কোন কিছু জানার ইচ্ছা নেই৷ সে বাহিরে বৃষ্টি দেখতে বিজি৷ গাড়ি বাসার সামনে আসতেই গাড়ি থামাতে বলে৷ গাড়ি থেকে নেমে নিজ বাসায় চলে যায়৷ ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন টুকুও মনে করল না৷
চলবে….