#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৮
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৪৮.
এই মেয়ে কে আদ্র?
মিসেস আনেয়া নীড় কড়া গলায় কথাটা বললো আদ্রকে। আদ্র এখনো পাশে থাকা মেয়েটির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। বাড়ির সবাই ইতিমধ্যেই উৎকৃষ্ট দৃষ্টিতে পরখ করছে আদ্রের পাশে থাকা মেয়েটিকে।
‘ভাইয়া এই মেয়েটা কে?
‘অদ্রি…ওহ আসলে…
‘আমি বলছি মেয়েটি কে..’হঠাৎ এই কথা শুনে সবাই পিছনে তাকায়। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলেছে রুপ। চোখে মুখে বিষন্নতা তার।
‘এইটা কে রুপ?
‘আন্টি মেয়েটি আমার সদ্য বিবাহিত বউ।
‘সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রুপের দিকে। ইচ্ছের হঠাৎ চোখ যায় পেছনে চুপসে দাঁড়িয়ে থাকা অয়নির পানে। ইচ্ছে তড়িঘড়ি করে অয়নির কাছে গিয়ে বললো, “আর ইউ ক্রেজি অয়নি? নিজের ভালোবাসাকে কেউ এইভাবে অন্যের হাতে দিয়ে দেয়?
‘অয়নি জড়িয়ে ধরে ইচ্ছেকে কেঁদে ফেলে৷ মিসেস আনেয়া নীড় চোখ রাঙ্গিয়ে রুপকে বললো,
‘তুই না অয়নিকে ভালোবাসিস রুপ?
‘আমার কিছু করার ছিলোনা আন্টি। মেয়েটির সাথে পাবলিক আমাকে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে।
‘অদ্রি আর উচ্ছ্বাস একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কিই!
‘হে। আসলে এইটা একটা Accident. আন্টি মা বাবার কাছে গিয়েছিলাম৷ মেনে নেয়নি.. তাই বাধ্য হয়ে…
৪৯.
‘ওফ অয়নি রুপ তোরা জাস্ট অসাধারণ অভিনয় করিস।
‘আদ্র ভাইয়া..আপনার জন্যতো এইসব করতেই হলো।
‘হে অয়নি যা বলেছো।
‘অয়নি..হঠাৎ ইচ্ছের কন্ঠ পেয়ে সবাই..আমতা আমতা হয়ে উঠে।
আদ্র বললো, ” ইচ্ছে পরী’এসো আমার রুমে এসো।
‘আপনি না বললেও আসতাম আদ্র ভাই।
‘ইচ্ছে রুমে ঢুকতেই বিছানায় বসে থাকা মেয়েটিকে বললো,
‘আপনার নাম কি আপু?
‘আমার নাম ইনশিয়া জান্নাত।
৫০.
আদ্র সবে মাত্র গোসল করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ পাশের রুমের বারান্দায় চোখ যায় তার। বারান্দার ভেতরেই রুম৷ ইচ্ছে গুনগুন করে গান গাইছে। আদ্র হঠাৎ ভাবলো, ইচ্ছেকে শুনিয়ে গান গাইলে মন্দ হয়না। ইচ্ছের দিকে উঁকি দিয়ে একটু গলাটা ঝেড়ে গান শুরু করলো আদ্র।
‘ কখনো কি রাত্রি কেটে..
ভোরের আলো এসে,
আমাকে জড়াবে….
কখনো কি মনেতে
লুকোনো কথা সে শুনতে পাবে..
যতবার কল করি
তুমি ব্যস্ত থাকো বন্ধুদের সাথে…
আবার আমি বের হলে,
বলো কি করো..তুমি অন্যদের কাছে,
চায় ছুটে যায়,
দূরে কোথাও পালায়.
তোমার ছায়া..থেকে সরে যেতে চায়।
৫১.
হঠাৎ এতো সুমুধুর কন্ঠে গান শুনে ইচ্ছে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে পড়ে। গান অনুসরণ করে বেলকনিতে যায় সে। আদ্রের গানের এতোই গভীরতা ছিলো যে ইচ্ছে আদ্রের একদম সামনাসামনি গিয়ে বেলকনির গ্রিলে ধরে দাঁড়ায়। আদ্রও এর সামনাসামনি গ্রিল এ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
আর এইদিকে.. আদ্র চোখ খুলতেই ইচ্ছেকে তার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠে। ইচ্ছে এখনো আগের মতোই আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে ধরা কন্ঠে বললো,
‘আপনি অনেক ভালো গান গাইতে পারেন আদ্র ভাই।
‘গানটা যার জন্য গিয়েছি তার মন ধরেছে তবে!
“ইচ্ছের এতোক্ষণে যেনো হুঁশ ফিরে৷ সে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে এক দৌঁড়ে বেলকনি থেকে গিয়ে দোম করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
৫২.
‘আদ্র ভাইয়া হঠাৎ আপনি আমাকে রুপের ওয়াইফ করে কেনো নিয়ে এসেছেন বলবেন একটু?
‘ইশনশিয়ার কথায় আদ্র মুচকি হেসে বললো,
‘তোমার জীবন বিপদে ইনশিয়া। কাব্য যে কোনো টাইমে তোমার ক্ষতি করে দিবে। আর আমি থাকতে আমার বোনকে কেউ টাচ ও করতে পারবেনা। তুমি আমার কাছে যদি অদ্রির মতোই।
‘ইনশিয়ার চোখে পানি টলমল করছে। আদ্র গিয়ে ইনশিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” চোখের পানির ভীষণ মূল্য। তাই অযথা খরচ করোনা।
৫৩.
আমার তো সন্দেহ হচ্ছে।
‘আনেয়া নীড় ঘর গোছাতে গোছাতে রাজ্জাক নীড়কে উপোক্ত কথাটি বললো। রাজ্জাক নীড় ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘কেনো?
‘এই মেয়ে রুপের বউ! আচ্ছা দেখেচো? মেয়েটার মুখের এক পাশ কালো কাপড়ে ঢাকা। আমারতো দেখতেই ভয় লেগেছে।
‘হতেই পারে কোনো সমস্যা। তুমি যে কেনো এতো উল্টা পাল্টা ভাবো কে জানে।
‘কিই! আমি উল্টা পাল্টা ভাবি?
‘,না মানে এমনি আর কি..
‘আজ সারাদিন তোমার চা খাওয়া বন্ধ। আনেয়া নীড় এইটা বলেই রেগে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে যান। আর এইদিকে রাজ্জাক নীড় ফিক করে হেসে মনে মনে বলেন,
‘সেই আগের মতোই তুমি রয়ে গেলে আনেয়া।
৫৪.
আদ্রদের বাসার বসার ঘরে সবাই একসাথে বসে আছেন। নিহাল চৌধুরী একটু আগেই আসলেন। আজ উচ্ছ্বাস অদ্রি আর ইচ্ছে আদ্রের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে।
‘ভাই আমি ভাবছি ওদের বিয়েটা আগামী সপ্তাহে ধরে ফেললে কেমন হয়?
‘হুম আনেয়া তুই ঠিকি বলছোস। কি বলো রাজ্জাক?
‘হে ভাইজান শুভ কাজে দেরি কিসের?
‘ওদের কথা শুনে আদ্র ইচ্ছের দিকে তাকায়। ইচ্ছেও আদ্রের দিকে রাগে কটমট করে তাকিয়ে ছিলো। তাই দুজনের চোখাচোখি হয়েছে। আদ্র ইচ্ছের দিকে তাকাতেই চোখ টিপ মারে। ইচ্ছে দুই চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ আদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে উপরে চলে গেলো।
৫৫.
দেখুন আদ্র ভাই..আমি কাব্য….
‘ইচ্ছেকে একদম বুকে চেপে ধরে আদ্র। পরম আভেশে জড়িয়ে ধরে তাকে। ইচ্ছে কথা বলতে গিয়েও থেমে গেছে।
‘ইচ্ছে পরী আদ্র…আদ্র থাকবে তোমার মুখে অন্য কেউ নয়। আর তুমি এখন একজনের হবু বউ তাই আমি চায়না..অন্য কোনো ছেলের কথা মুখে নাও তুমি।
‘ইচ্ছে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,
‘আই ডন্ট লাইক ইউ মিস্টার আদ্র নীড়। সো, প্লিজ ডিস্টেন্স ফ্রম মি।
‘আদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, “প্রশ্নই উঠেনা ডিস্টেন্সের।
৫৬.
আদ্র…তোর কথা মতো ইচ্ছেকেতো বলে দিলাম কাব্যকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। ওহ কিন্তু সত্যিই যাবে। আমি আমার বোনকে ভালো করে চিনি।
‘আদ্র ডেবিল স্মাইল দিয়ে বললো,
” যেতে দেনা কাব্যকে নিয়ে এরপর বুঝতে পারবে কাব্যের আসল রুপ।
‘তুই ভেবে বলছিস? যে আমি ইচ্ছেকে পালিয়ে যেতে দিবো?
‘অফ কোর্স উচ্ছ্বাস। চিল কর। জাস্ট চিল। প্যারা নিসনা।
‘দেৎ তোর কোনো চিন্তায় নেই…
কথাটা বলেই উচ্ছ্বাস আদ্রের রুম থেকে চলে যায়।
উচ্ছ্বাস যেতেই আদ্র মনে মনে বলে,
“এইবার তুমি আসল আদ্র নীড়কে দেখবে ইচ্ছে পরী। এতোদিন লাভ দেখেছো এইবার দেখবে রোমান্টিক লাভ অত্যাচার।
৫৭.
আকাশে উঠেছে সূর্য। পাখিরা করছে চিকিমিকি। আকাশে উঠেছে একটুখানি নীল আভা।
ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙে ইচ্ছের। ঘুম ঘুম চোখে বিছানায় হাতড়াতে হাতড়াতে মোবাইলটা নিয়ে কল ধরতেই..ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে কেউ একজন বললো,
‘তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে কলেজে এসো।
‘ইচ্ছে বিড়বিড় করে বললো, ” আদ্র ভাই!
চলবে….