#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০২
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৬.
“আদ্র ইচ্ছেকে ভীষণ ভালোবাসে অয়নি তাইতো আজ ৬ বছর ধরে ইচ্ছেকে কোনো বিপদ টাচ করতে পারেনি। নয়তো অনেক আগেই কাব্য ওকে ওর বেডের স্বীকার বানিয়ে ফেলতো।
‘রুপের কথায় অয়নি মাঝ নদীতে একটা ইটের কণা ফেলে রুপের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ঠিক বলেছো রুপ। কিন্তু ইচ্ছেকে এইসব বুঝাবে কে?অন্ধকে পথ দেখানো যায় রুপ। কিন্তু চোখ থেকেও যে অন্ধ তাকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া যায়না।
‘কিন্তু অয়নি..আদ্র যে ইচ্ছে ছাড়া কিছু বুঝেনা।
‘আচ্ছা রুপ আমরা কিছু করতে পারিনা?
‘যেমন?
‘কাব্য’র আসল রুপটা আমরা ইচ্ছের সামনে নিয়ে আসতে পারিনা?
‘কিন্তু কিভাবে অয়নি?
৭.
মিস্টার নিহাল চৌধুরী সোফায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। ইচ্ছেকে সিড়িঁ দিয়ে উঠতে দেখে বললো,’দাঁড়াও।
‘কি হয়েছে বাবা?
‘ আজ তুমি আদ্রকে কি বলেছো?
‘বাবা আমি ওনার সম্পর্কে কিছু শুনতে চায়না আর বলতেও চায়না।
‘ইচ্ছে…
‘নিহাল চৌধুরীর আলতো ধমকে চুপসে যায় ইচ্ছে। তার বাবার সামনে সে স্ট্রং যতোটা আসলে সে ততোটা স্ট্রং না যতোটা বাবার সাথে তর্ক করতে গিয়ে মানুষ হয়।
‘আদ্র যথেষ্ট ম্যাচিউর ছেলে। তোমার অনেক বড় সে তাকে তোমার রেস্পেক্ট করা উচিৎ ইগনোর নয়।
‘বাবা রেস্পেক্ট তাকেই করা যায় যে..রেস্পেক্ট এর জায়গায় থাকে। আর আদ্র ভাই…
‘চুপ একদম চুপ থাকবে তুমি। বুঝলাম তোমার ফুপ্পির সাথে আমার বেশ রাগ-অভিমান তবে আমার বোনের ছেলেকে আমি অনেক ভালোবাসি। তাই আমি চাইনা যে আমার ভাগ্নেকে নিয়ে তুমি কিছু বলো।
‘ইচ্ছে বিড়বিড় করে বললো,’মামু কা ভাগ্নে’
৮.
আদ্র বেলকনির মাঝে রাখা বেতের সোফাটায় শুয়ে আছে৷ আর গান শুনছে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে। চোখ দুটো বন্ধ করা। চোখের কর্ণিশে গাল বেয়ে পানি পড়ছে। কতোতা ভালোবাসলে একটা ছেলেও একটা মেয়ের জন্য কাঁদতে পারে তা হয়তো আদ্রকে না দেখলে বুঝাই যেতোনা।
‘কেনো ইচ্ছে কেনো? তুমি বুঝতে পারোনা যে আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি। কেনো বুঝোনা তুমি? কাব্য একটা বাজে ছেলে।
এইসব ভাবতেই আদ্র হাতের ফোনটা নিয়ে ফেইসবুকে একটা পোষ্ট করলো৷ এর মধ্যেই আদ্রের কাছে একটা মেসেজ আসে। আদ্র তাড়াতাড়ি কেউ একজনকে এস এম এস করলো।
৯.
ইচ্ছে সবে মাত্র ওয়াশরুম থেকে গোসল করে বেরিয়েছে। ভেজা চুল থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পড়ছে। হাতের তোয়ালে আনতে যাবে এমন সময় পেছনে রাখা কেবিনেট থেকে ফোনে মেসেজ আসার শব্দ পেলো। ফোনটা বিরক্তিতে হাতে নিয়ে মেসেজ অপশন ওপেন করতেই দেখলো,
‘সামনে কাঁচের টুকরো,সাবধানে দেখে চলো ‘ইচ্ছে পরী’
এইটা লিখা। ইচ্ছে তড়িঘড়ি করে সামনে তাকালো। সত্যিই এইখানে কাঁচের টুকরো। তোয়ালেটা আনতে গেলেই তার পা আজ চলে যেতো। ইচ্ছে অবাক হয়ে ফোনের স্কিনে তাকালো। পরক্ষণেই মিনমিনিয়ে একটু হেসে ফেলে
১০.
“ম্যাম আমার পক্ষে এইটা একদমি পসিবল নয়। যদি কাব্য স্যার জানতে পারে তাহলে আমার জীবন নিয়ে নিবেন”
‘ফোনের ওপাশ থেকে কথাগুলো শুনতেই হাতের মুঠোয় শক্ত করে নেয় ইনশিয়া জান্নাত। ক্রুধ নিয়ে অপরপাশের ব্যাক্তিটিকে বললো, পসিবল না কথাটা আমি শুনতে চায়না। আমার জীবন কাব্য চৌধুরী নষ্ট করেতো দিয়েছে কিন্তু অন্য কোনো মেয়ের জীবন নিয়ে কোনো গেইম খেলতে আমি দিবোনা। এইটা বলেই কল কেটে দেয় ইনশিয়া জান্নাত। সামনে থাকা অয়নি আর রুপের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনারা এতো কষ্ট করে আমাকে খুঁজে যেই হেল্প চেয়েছেন তা আমি করেছি। এইবার আপনারা আসতে পারেন।
১১.
আদ্র টেবিলে বসতেই… রাজ্জাক নীড় হেসে বললেন,
‘আদ্র..তোমার হাত ঠিক আছে?
‘ইয়েস পাপা।
‘কেনো এতো পাগলামি করো আদ্র? তোমার কিছু হলে আমরা কিভাবে বাঁচবো বলোতো?
‘যেইভাবে অদ্রিতাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারছো ঠিক সেইভাবে।
‘কথাটা বলেই আদ্র টেবিল থেকে উঠে যায়। আনেয়া নীড় রাজ্জাক নীড়কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই…রাজ্জাক নীড় খাবার ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। আনেয়া নীড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললেন, ” ওই দিনটা সব সম্পর্কের মাঝে কাল ধরিয়েছে।
১২.
ইচ্ছে বিছানায় শুয়ে ফেইসবুকে ডুকতেই একটা পোষ্টে চোখ আটকে যায়।
‘ভালোবাসি কতোটা জানোনা তুমি,
হারাবো যেদিন বুঝবে তুমি।
ভালোবাসা এক নিখুঁত উপহার,
যার জীবনে আসে, সে বুঝে তার আয়াস।
এই পোষ্টটা দেখে ইচ্ছে আনমনে হেসে বললো,”কি নিখুঁত মানুষটার ভাবনা চিন্তা। না,একটা কমেন্ট না করলেই নয়।
১৩.
আদ্র রুমে বসে বসে অফিসের ফাইল ঘাটছে। ফোনে নোটিফিকেশন আসতেই ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তার পোষ্টে একটা সুন্দর কমেন্ট করেছে একটা আইডি। আইডিটার নাম ‘আদ্র আকাশের ইচ্ছে’। আদ্র নামটা দেখে কিছুটা অবাক হয়। আবার খুশিও হয় এইটা ভেবে, “যাক আমার ইচ্ছের নাম একসাথে হলেও কেউ আইডিতে ইউজ করে। আদ্র কমেন্টটা ঘুটিয়ে ঘুটিয়ে দেখছে। কমেন্ট টা ছিলো এমন,
‘ভালোবাসা এক নিখুঁত উপহার তাতো জানি,
গোপন ভালোবাসা দ্বিগুণ সুন্দর তাও মানি।
প্রকাশ্য ভালোবাসার থেকে সারপ্রাইজ অনেক ভালো,
ভালোবাসি জানতে পেরেই ফুঁটবে যে তার মুখে হাসির আলো।
১৪.
‘জানো রুপ আজ আমি অনেক অনেক হ্যাপি আদ্র ভাইয়া আর আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের জন্য কিছু করতে পেরে।
অয়নি হেঁটে হেঁটে কথাটা বললো রুপকে৷ রুপের কোনো হেলদোল নেই৷ ভাবশেলীন হয়ে আছে সে। অয়নি রুপের হাত ধরে ঝেঁকে বললো,’এই রুপ শুনছো? আমি কি বলছি।
অয়নির ধাক্কায় রুপের ভাবনায় ছেদ পড়ে৷ সে বললো,
‘হ্যাঁ হ্যাঁ না…মানে..
‘তুমি কি এতো ভাবছো রুপ?
‘অয়নি তুমি একটা জিনিস ভেবে দেখেছো?
‘কি?
‘ইনশিয়া জান্নাত মেয়েটার মুখ একদিক দিয়ে ঢাকা।
‘হুম আমিও বুঝলাম না বিষয়টা। তবে আমার ভীষণ ভয় লেগেছিলো প্রথম।
চলবে….