স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0
1645

#স্নিগ্ধ_প্রেমের_অনুভূতি
#পার্টঃ১২ ও অন্তীম পর্ব।
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৮৭.

আজ ভার্সিটিতে নতুন প্রফেসর আসবে তাই নিয়ে হৈ হুল্লোড় শুরু করেছে সব স্টুডেন্ট। ইচ্ছের মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। কারণ আজ অয়নির ডেলিভারি ডেইট। আর বার বার কানে বাজছে আদ্রকে কেউ বাবাই বলছে। কিছুতেই মন বসছেনা আজ তার ক্লাসে। হঠাৎ মনে আরেকটা প্রশ্ন নাড়া দিলো ইচ্ছের মাথায়৷ ইনশিয়া! ইনশিয়া কোথায়?

৮৮.

নার্স..হাররি আপ..পেশেন্টকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব। কথাটা বলেই উত্তেজিত নিশ্বাস ফেলে নিশাত। চোখে মুখে তার চিন্তার ছাপ। আদ্রকে কল দিতে চায়না এখন সে। কারণ ৩ দিন হয়েছে মাত্র আদ্র দেশে ব্যাক করেছে। এই মুহুর্তে বিরক্ত করাটা সত্যিই খারাপ দেখায় ভীষণ।

৮৯.

নতুন প্রফেসরের জায়গায় আদ্রকে দেখে চমকে উঠে ইচ্ছে। সবাই হা করে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে বললেও ভুল হবেনা মনে মনে ভাবছে ইচ্ছে।

“সিট ডাউন অল।

” এইটা বলতেই সব স্টুডেন্ট বসে পড়ে। কিন্তু ইচ্ছে! সেতো এক ধ্যানে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রের দিকে।

‘এই মেয়ে বসো…

“তাও ইচ্ছের ধ্যান নেই।

” এই যে বসো…

“এতোক্ষণে হুঁশ আসে ইচ্ছের। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। এমন বিব্রতকর..অবস্থায় পড়ে নিজেকে বোকা বোকা লাগছে তার।

আদ্র ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে কিঞ্চিত হাসলো৷

‘সবার নিজের পরিচয় দাও। লাস্ট বেঞ্চ থেকে স্টার্ট করো।

‘সবার পরিচয় শেষে ইচ্ছের পালা আসতেই..ইচ্ছে মনে মনে বললো,

” খাটাশ একটা। নিজের বউয়ের পরিচয় জেনেও যেনো জানেনা।

“নাম?

” ইচ্ছে চৌধুরী।

“সরি..

‘মাই নেইম ইস ইচ্ছে চৌধুরী।

” Sorry to Say, I think you are a Married Person.

‘ইচ্ছে চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কারণ কেউ আজ পর্যন্ত জানেইনা যে ইচ্ছে বিবাহিত।

‘মন চাচ্ছে বলে দেয় যে হে আপনি আমার বর। ওফ।

“হেই ইউ..কিছু জিগ্যেস করেছি তোমায়।

” নীড়…মিসেস ইচ্ছে নীড়।

‘আদ্র মুচকি হেসে বললো,

“ইয়েস রাইট। মিসেস নীড়।

৯০.

নিশাতের চোখে টপ টপ করে পানি পড়ছে। পাশ থেকে ছোট্ট মেয়েটি হাত ধরে বলছে,

” মামা কাঁদছো কেনো? মাম্মাম কোতায়? [ কোথায় ]

“নিশাত নিজেকে সামলে সামনে থাকা ছোট বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। সে কি করে এই অবুঝ বাচ্চাটিকে বলবে? যে তার মাম্মাম আর বেঁচে নেই।

৯১.

লন্ডন থেকে এতো ভয়ংকর একটা খবর নিশাত আদ্রকে দিবে তা আদ্র কখনোই ভাবেনি। আদ্র হ্যাস্তনস্ত হয়ে ইচ্ছেকে ডাকতে লাগলো..

‘ইচ্ছে… ইচ্ছে…

‘আদ্রের এমন হাঁক ছেড়ে ডাকাতে চমকে যায় ইচ্ছে। আসা পর্যন্ত ভালো করে কথাও বলেনি তার সাথে। সে কিনা তাকে ডাকছে?

” চলো আমার সাথে।

“আজব কোথায়? ছাড়ুন আমার হাত আমার লাগছে।

‘তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমরা লন্ডন যাচ্ছি।

‘কিই!

” বাসার কপউ জানে?

“কিছুদিন পরই চলে আসবো। রেডি হয়ে নাও। আমি মা বাবার সাথে কথা বলে আসি।

” আমার সামনে পরীক্ষা। আমি যেতে পারবোনা।

“আদ্রের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছের এমন ঘাড়ত্যাড়ামি দেখে। সে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললো,

‘এসেই যেনো দেখি রেডি হয়ে আছো।

৯২.

লন্ডনে এসে আদ্র ইচ্ছেকে হসপিটালে নিয়ে আসবে তা ইচ্ছের ধারনার বাইরে ছিলো। সে বুঝতে পারছেনা আদ্র চাইছেটা কি? আদ্র একটা কেবিনে ডুকতেই একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে…আদ্রের কাছে ছোটে এসে বললো, ” বাবাই তুমি এসেছো? বাবাই….আদ্র মেয়েটির আদো আদো ডাকে মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বললো,”হে ইরসাত আমি এসেছি।

“ইচ্ছের বুকটা ধুঁক করে উঠলো।

‘এৃ এই মেয়েটা কে?

” ইচ্ছের কাঁপা কাঁপা কন্ঠ বুঝতে বেশি একটা বেগ পেতে হলোনা আদ্রকে।

“আদ্র নিশাতের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো ইরসাতকে নিয়ে যেতে।

” একি আপনার চোখে পানি?

“আদ্র কিছু না বলে সামনে শায়িত সাদা কাপড়ে জড়ানো মানুষটার কাপড় সরিয়ে নিলো।

” ক্ষনিক ক্ষণ ইচ্ছে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে শুয়ে থাকা মানুষটির দিকে। কেঁপে উঠে ভয়ে

“ইন্ ইনশিয়া আপু!

৯৩.

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আদ্র। ইচ্ছে রান্না সেড়ে রুমে যেতেই দেখলো আদ্র এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারও মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু তাই বলেতো হাত পা ঘুটিয়ে বসে থাকা যায়না। এতো কিছু হয়ে গেলো সে জানলোইনা! ইচ্ছে ধীর পায়ে পিছনে গিয়ে বললো,

” বাংলাদেশে যাবোনা?

‘আদ্র আকাশের দিক থেকে চোখ নামিয়ে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ইচ্ছে পরী জানি তোমার মনে হাজারো প্রশ্ন। আমি সেই গুলোর উত্তর আজ তোমায় দিতে চায়।

” ইনশিয়া জান্নাতের ব্লাড ক্যান্সার হয়েছিলো৷ কিছুদিন আগেই আমি আর নিশাত তা জানতে পারি। নিশাত ইনশিয়ার ভাই। পড়াশোনা করতো লন্ডনে। আর ওই বাচ্চা মেয়েটা! রুপের।

“চমকে উঠে ইচ্ছে। কি বলছেন এইসব?

” হে সত্যিই বলছি। ইরসাত রুপের সন্তান। ইনশিয়া যখন আমাদের বাসায় উঠেছিলো তখনি এমনটা হয়। রুপ অত্যান্ত নেশায় ছিলো আর সেইদিনি…

“অয়নি জানলে..

” অয়নি অনেক আগেই জেনে ফেলতো। কিন্তু ইনশিয়া আমার কাছে অনুরোধ করেছিলো যে কাউকে যেনো এই কঠিন সত্যিটা না বলি। অয়নি আর রুপ যেনো সুখে থাকে। জানো ইচ্ছে পরী? লন্ডনে এসে কিছুই ভালো লাগছিলোনা। ইনশিয়া বার বার চেষ্টা করেছে আমাকে দেশে পাঠাতে কিন্তু রাগ অভিমানে জায়নি। ইনশিয়া কষ্টতেই জীবনটা পার করেছে। কাব্যতো ওকে ইউজ করেছে। আর রুপ! ওতো কখনো হয়তো জানবেইনা যে ওর একটা মেয়ে আছে। ইনশিয়া এক টানা ৪ মাস হসপিটালে ছিলো।

“ইচ্ছে পরী তুমি কাঁদছো কেনো?

” ইচ্ছে আদ্রকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো,

“আর আমি আপনাকে কতো ভুল বুঝেছি।

” আদ্র আলতো হেসে ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“ভালোবাসি ইচ্ছে পরী।

” আমিও..অনেক অনেক ভালোবাসি আপনাকে।

“বাবাই আমাকে রেখেই তুমি ভালো মাকে একা জড়িয়ে ধরছো?

” আদ্র আর ইচ্ছে চমকে পিছনে তাকায়। দেখে ইরসাত..কোমড়ে দুই হাত রেখে মুখ গুমড়ো করে কথাটা বলছে।

‘ইচ্ছে আর আদ্র একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে। আর হাত বাড়িয়ে দেয় ইরসাতের দিকে।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে