#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ১০.
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৬৭.
গায়ের পান্জাবীটা খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আদ্র। আজ ইচ্ছেকে ভীষণ সুন্দর লাগছে তার কাছে। এ যেনো এক ধরণীর পরী। আদ্র এইসব ভেবে আপনমনে হাসে। তখনি রুমে প্রবেশ করে উচ্ছ্বাস।
৬৮.
কাব্য ড্রিংক সাইডে বসে একটার পর একটা ড্রিংক করে যাচ্ছে। পাশ থেকে একটা ছেলে তাচ্ছিল্য করে বললো,
‘এই প্রথম কাব্য চৌধুরীর টার্গেট মিস! হাউ ম্যান? হাউ!
‘কাব্য চোখ লাল করে হাতে থাকা গ্লাসটি শক্ত মুঠোয় করে গ্লাসটি ছুঁড়ে ফেলে দেয় নিচে। আর বিড়বিড় করে বললো,
‘নো নেভার। ইচ্ছে শুধুই আমার। একদিনের জন্য হলেও ওকে আমার চায়। চায় মানে চায়।
৬৯.
রুপ..
‘রুপ অয়নির সাথে বারান্দায় শুয়ে শুয়ে কথা বলছিলো। কারণ ইনশিয়া রুমে থাকে আর সে বেলকনিতে বিছিয়ে থাকা বেতের সোফাতে। রুপ ইনশিয়ার দিকে তাকিয়ে অয়নিকে বললো,
‘অয়নি…আপু আমায় ডাকছে। তোমাকে একটু পর কল করছি। টাটা..
‘অপর পাশ থেকে কোনে উত্তর না শুনেই কলটা কেটে দেয় রুপ। ইনশিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘কিছু বলবে আপু?
‘রুপ..অয়নি তোমায় অবিশ্বাস করছে নাতো?
‘আরে আপু না না তেমন কিছুইনা। অয়নি আপনাকে আর আমাকে যথেষ্ট বিলিভ করে৷ সো প্লিজ…ভুল বুঝবেন না। আর এইসব ভেবে মনকে বিব্রত করবেন না।
৭০.
‘ইচ্ছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে কানের দোল খুলছিলো। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে কাব্য নামটা ভেসে উঠছে। ইচ্ছে ফোনটা হাতে নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,
‘বেবি কালই আমরা পালাবো। সো ডন্ট ওয়ারি।
‘ব..ব্ বেবি..আই অনলি ওয়ান্ট ইউ৷ ইয়েস আই অনলি ওয়ান্ট ইউ।
‘তুমি আবার ড্রিংক করেছো কাব্য?
‘কাম বেবি…প্লিজ কাম।
‘কাল সারাজীবনের জন্য আমি আর তুমি এক হয়ে যাবো জান।
‘প্রমিস?
‘ইয়াহ বেবি প্রমিস।
৭১.
‘আদ্র আর একটু পরই..কাজী সাহেব চলে আসবে। একটাবার আবার ভেবে নিলে হয়না?
‘উচ্ছ্বাস অলরেডি আমি সব ভেবে নিয়েছি। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।
‘তাই বলে আজ গায়ে হলুদ আজই বিয়ে?
‘হুম। আজই বিয়ে। কারণ আমি জানি কালই ইচ্ছে পালাবে কাব্যকে নিয়ে।
‘আদ….
‘উচ্ছ্বাসকে পুরো কথা শেষ না করতে দিয়ে..আয়নার সামনে আদ্র গিয়ে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো,
‘আমি চায়না খারাপ কিছু হোক ইচ্ছের সাথে।
৭২.
ইচ্ছে বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো? রাত ২ টায় আদৌ কোনো বিয়ে হয়! এই প্রথম সে এমনটা দেখলো৷ ইচ্ছে আরো অবাক হচ্ছে বাসার সবাই কতো নরমালি বিয়েটাতে পার্টিসিপেট করলো। ইচ্ছে ধীর পায়ে বাবার সামনে গিয়ে বললো,
‘বাবা…
“এইটা হওয়ার ছিলো ইচ্ছে।
” ইচ্ছে তার বাবার এমন কথা শুনে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকায়। উচ্ছ্বাসও মাথায় হাত বুলিয়ে অদ্রিকে নিয়ে উপরে চলে যায়।
‘আদ্র ইচ্ছের কাছে গিয়ে বললো,
‘রুমে চলো।
“রুমে চলো মানে?
‘আমাদের রুমে।
” ইচ্ছে চিৎকার ছেড়ে বললো,
‘কি পেয়েছেন আপনারা আমায় হ্যাঁ? পুতুল পেয়েছেন? পুতুল? এইভাবে জোর করে আপনি আমাকেতো বিয়ে করলেন মিস্টার আদ্র নীড়। কিন্তু আমার মন কখনোই আপনি পাবেন।
ঠাসস…একটা শব্দে থমকে যায় বাসার উপস্থিত সবাই। ইচ্ছে গালে হাত দিয়ে উপরে তাকাতেই দেখলো…অগ্নি চক্ষু নিক্ষেপ করে নিহাল চৌধুরী তাকিয়ে আছেন।
‘তোমার সাহস কি করে হয় আদ্রর সাথে চোখ গরম করে কথা বলার? যেই জায়গায় আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
‘বাবা…
‘চুপ একদম চুপ। তোমার মুখ থেকে আমি বাবা ডাকটা আর শুনতে চায়না। লিভ…
‘যাবোনা আমি যাবোনা। বাবা আমাকে তোমার সাথে বাড়ি নিয়ে চলো..
‘রুমে নিজ থেকে যাবে? নাকি মামা যেই কাজটা করেছে তা আমি আবার রিপিড করবো ইচ্ছে?
“কিই! আপনি আমায় থাপ্পড় মারবেন?
‘ইচ্ছে হাতে তালি বাজিয়ে বললো,
” বাহ মিস্টার নীড় বাহ..বিয়ে হতে না হতেই গায়ে হাত! বাহ বাবা…ওয়ান্ডারফুল একটা ছেলের কাছে নিজের মেয়েকে তুলে দিয়েছো।
‘আদ্র ইচ্ছেকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে….ইচ্ছের হাত টেনে টেনে উপরে নিয়ে যাচ্ছে।
৭৩.
“ইচ্ছেকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আদ্র।
ইচ্ছে অবাক হচ্ছে আদ্রকে দেখে। এই আদ্রকে সে চিনেইনা। এ আদ্র হতেই পারেনা। অবাক পানে চেয়ে কথাগুলো ভাবছে ইচ্ছে। ইচ্ছে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায়।
” এতোদিন কিছু বলিনি। কিন্তু ভালোবাসলেই সব কিছুতে ছাঁড় নেই ইচ্ছে পরী।
“আপনি কোন অধিকারে আমাকে এইভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছেন?
‘স্বামীর অধিকারে।
‘স্বামী মাই ফুট। আই হেইট ইউ। জাস্ট হেইট ইউ।
‘সো হোয়াট? আমিতো ভালোবাসি। এখন না চাইলেও তুমি আমার। ৩ কবুলে আবদ্ধ হয়েছি আমরা।
‘আই ওয়ান্ট ডিভোর্স মিস্টার আদ্র নীড়..
‘আদ্র কষিয়ে থাপ্পড় মারে ইচ্ছের গালে। ইচ্ছের গালটা লাল হয়ে আছে। ৫ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট।
‘তুই নিজেকে কি ভাবিস হে? রুপের ডিব্বা? আমাকে কি ভাবিস? কাঠের পুতুল? ছোট থেকে কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়েও দেখিনি যেইদিন থেকে জানতে পেরেছি যে তুই আমার বউ হবি। তাহলে কেনো আমার কপালটা এমন বলতে পারিস? কেনো নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেও আজ আমি এতোটা কষ্টটায় ভুগছি? কেনো??? আনসার মি… ” এইটা বলেই বেলকনিতে চলে যায় আদ্র। আজ বড্ড নেশাক্ত লাগছে তার। পৃথিবীর এমন নির্মম ভালোবাসা সে আশা করেনি।
“ইচ্ছে কাব্যকে কল লাগিয়ে সব বলতেই কাব্য বললো,
‘না তুমি ভুলেও আদ্রের কাছে যাবেনা৷ আমি ছাড়া তোমাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা ইচ্ছে কেউনা। বিয়ে হয়েছে কি হয়েছে? তুমি আমার কাছে চলে এসো।
‘কলিজা কালই আমি চলে আসবো। আমি আসতে দিবোনা ওনাকে আমার কাছে। প্রমিস।
‘বারান্দায় শুয়ে চোখে র পানি ফেলছে কাব্য। এই রাতটা সবার জন্য কতো সুখময়। আর তার জন্য! বিষাক্ত!
৭৪.
সকাল সকাল ইচ্ছেকে কোথাও না দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বাস বুঝে ফেললো যে ইচ্ছে তাদের ফেলা ফাঁদে পা দিয়েছে। আদ্র আয়েশ করে টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। আনেয়া নীড় আর রাজ্জাক নীড় অবাক হয়ে দেখছে ছেলের এমন শান্তসৃষ্টকতা। আদ্র বাঁকা হেসে বললো,
” চিন্তা করোনা। চলে আসবে। আমি বাইরে ওয়েট করছি। উচ্ছ্বাস তাড়াতাড়ি আয়। এইটা বলেই বেরিয়ে যায় আদ্র। জিন্স প্যান্ট, টিশার্ট এর উপর ব্রাউন কালার জেকেটে যে কেউ তার প্রেমে হাবুডুবু খাবে।
৭৫.
না..না কাব্য তুমি এমন করতে পারোনা। ছেড়ে দাও আমায় প্লিজ…
“রুমের এইখান থেকে ওখান থেকে ছুটতে ছুটতে বললো ইচ্ছে। কাব্য ধীরে ধীরে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ইচ্ছের দিকে এগোচ্ছে। ইচ্ছে কান্না করতে করতে বললো,
” তুই এতোটা নিচু জানতাম না আমি। ছেড়ে দে আমায়…
“এতোদিনের গড়া ফসল কিভাবে নদীতে ভেসে যেতে দেয় বলোতো ইচ্ছে পাখি..
‘এইটা বলেই তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দেয় কাব্য।
‘ইচ্ছেকে ধরে বিছানায় ফেলে যেই কাব্য ইচ্ছের দিকে ঝুঁকে পড়বে তখনি দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আদ্র।
৭৬.
হাত টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসে ইচ্ছেকে আদ্র। সবাই ছুটে আসছে ড্রইং রুমে।
‘কি হয়েছে বাবা তুই এইভাবে ইচ্ছেকে টেনে আনলি কেনো? উচ্ছ্বাস তুই বল….
” ইনশিয়া….ইনশিয়া…
“আদ্রের ডাকে ইনশিয়া আর রুপ তড়িঘড়ি করে ড্রইং রুমে আসে। ইনশিয়া আদ্রের সামনে আসতেই…ইনশিয়ার মুখের কালো কাপড়টা সরিয়ে দেয় আদ্র। কেঁপে উঠে সবাই। ভয়ে আর্তনাদ করে ইচ্ছে। সবাই ভয়ে মুখে হাত দিয়ে অবাক চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে ইনশিয়ার দিকে।
” ও্ ওনার মুখ…
‘ইচ্ছে কেঁপে কেঁপে কথাটা বলতেই.. আদ্র হাঁক ছেড়ে বললো,
“কাব্যের ওয়াইফ এই মেয়েটি। ৩ বছর অটাল সংসার করে নির্যাতিত হয়ে যখন প্রতিবাদ করতে যায় এসিড ছুঁড়ে মারে তাকে। রাস্তায় কুকড়ানো অবস্থায় পায় আমি ইনশিয়াকে। লুকিয়ে রাখি একটা বাড়িতে৷ সেখানেও পৌঁছে যায় কাব্য। বাধ্য হয়ে রুপের বউ সাজিয়ে নিয়ে আসি..ইনশিয়াকে এই বাড়িতে। এইটা বলেই ইচ্ছের হাত ছেড়ে চলে যায় আদ্র। ইনশিয়া টলমল চোখে ইচ্ছেকে বললো,
” আসল সোনার কদর মানুষ সহজে বুঝেনা বোন। আদ্র ভাইয়া হিরের চেয়েও বেশি দামি। কারণ তার মন তা গড়ে তুলেছে।
৭৭.
ইচ্ছে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। চোখে পানি। ভালোবাসার মানুষ এতোটা নিকৃষ্ট তা ভেবেই কান্না পাচ্ছে তার। আদ্র এখনো রুমে আসেনি। ইচ্ছে আদ্রর কাছো ক্ষমা চাইবে। আসল ভালোবাসাকে পায়ে ফেলে রেখেছিলো এতোদিন সে। কিন্তু আর নয়। হঠাৎ চোখে ঘুম লেগে যায় ইচ্ছের। সকালে উঠতেই খেয়াল করে আদ্র এখনো ফিরেনি। ইচ্ছে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে যায়। বাড়ির সবাই মলিন মুখে বসে আছে।
‘ভাইয়া আদ্র ভাই কোথায়?
‘কথাটা শুনতেই উচ্ছ্বাস তাকালো ইচ্ছের দিকে। চোখে তার পানি। সোফা থেকে উঠে..ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে বললো,!হ্যাপি তুই? হ্যাপিতো? চলে গেছে আদ্র..অনেক দূরে। তোর চোখের সামনে আর আসবেনা।
“মানে!
” আমার ভাইটা তোর জন্য আজ এই বাড়ি ছেড়ে লন্ডনে চলে গেছে ইচ্ছে। তোকে আমরা কখনো ক্ষমা করবোনা কখনোনা। এইটা বলেই কান্নায় লুটিয়ে পড়ে অদ্রি। ইচ্ছে ধাম করে পড়ে যায় ফ্লোরে। পাথরের ন্যায় আজ সে।
“কলিং বেলের আওয়াজে..অতীতের শুকনো পাতা থেকে বেরিয়ে আসে ইচ্ছে। ডায়েরীর পাতা গুলোয় আরেকবার হাত বুলিয়ে ডায়েরীটা বন্ধ করে দেয় ইচ্ছে। স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে দরজা খুলতেই দেখে নিহাল চৌধুরী।
” বাবা তুমি? কিছু বলবে?
‘সেজেছিস আদ্রকে রিসিভ করতে?
‘হে বাবা। আজ ৫ বছর পর ওনাকে দেখবো। একটু সাজবোনা বলো?
‘নিহাল চৌধুরী কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রি এসে বললো,
“বাহ ইচ্ছে তোকে নীল শাড়ীতে বেশ সুন্দর লাগছেতো।
‘সত্যি আপু?
” হুম সত্যি।
“অদ্রিজা কোথায়?
” তোর ভাইয়ের কোলে। আচ্ছা তাড়াতাড়ি চল।
“ফুপ্পি….
” মা কিছু বলবেনা। চল।
“এই ৫ বছর অনেক জোর করেও নিহাল চৌধুরী ইচ্ছেকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে পারেনি। এর মধ্যে সবার সাথে আদ্রের কথা হলেও ইচ্ছের সাথে কথা হয়নি। হয়নি না..মোটকথা আদ্রই তার সাথে কথা বলতে চায়নি।
চলবে…..