স্নিগ্ধ চাহনি পর্ব-০৬

0
1050

#স্নিগ্ধ চাহনি
#পর্বঃ৬
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘কেমন আছিস মৃন্ময়? কত বছর পর দেখা হলো তোর সাথে। এটা কে ভাবি না-কি!’

‘নাহ তবে খুব শীগ্রই হবে। অবশ্য এখনও ভাবি ভাবতে পারিস।’

মুগ্ধ কথাটা বলেই মৃন্ময়ীর দিকে তাকিয়ে অমায়িক ভঙ্গিতে হাসলো। মুগ্ধকে দেখে মনে হলো সে বুক ফুলিয়ে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়েই কথাটা বলেছে। মৃন্ময়ী হতবাক হয়ে স্থির বসে রইলো। তাকে কি বলে পরিচয় দিচ্ছে না দিচ্ছে এসব নিয়ে সে মাথা ঘামাচ্ছে না। সে ভাবছে মৃন্ময় নামটা নিয়ে। চরকির মতো মৃন্ময় নামটা ঘুরছে তার মস্তিষ্কে। লোকটা মুগ্ধকে মৃন্ময় বলে ডেকেছে কিন্তু সে যতটুকু জানে তার নাম মুগ্ধ।
মুগ্ধ মৃন্ময়ীকে উদ্দেশ্য করে বলল-

‘ওর নাম জিসান। আমার কলেজ ফ্রেন্ড।’

কথাটা বলেই জিসানের কাধে হাত রাখে। জিসান মৃন্ময়ীর দিকে চেয়ে বিনয়ী ভঙ্গিতে হাসলো। মুগ্ধ মৃন্ময়ীকে দেখিয়ে জিসানের উদ্দেশ্যে বলল-

‘আর জিসান ও হলো মৃন্ময়ী আমার হাফ স্ত্রী। হাফ থেকে ফুল হওয়ার পথে গাড়ি চলছে এই আরকি।’

মুগ্ধ সশব্দে হাসলো। সে নিজের কথাতেই যেন বেশ মজা পেল। সে হাসছে কিন্তু জিসান আর মৃন্ময়ী কারও মুখেই হাসি নেই। এতে যেন মুগ্ধ আরও বেশি মজা পাচ্ছে। সে শুধু মৃন্ময়ীকে চমকাতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন দু দুজন মানুষকে একসঙ্গেই বিভ্রান্ত করতে পেরেছে। জিসান ভীষণ কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে-

‘ভাবির নাম মৃন্ময়ী? মানে সত্যিই মৃন্ময়ী?’

মুগ্ধ বরাবরের মতোই হাসলো। তার চরিত্রের স্বভাবজাত হাসি। আর মৃন্ময়ী! সে তো আগের মতোই হতচকিত। কেউ একজন তার নাম শুনে হতভম্ব আর সে হতভম্ব আরেকজনের নাম শুনে। তবে কি মুগ্ধ এই যুগলবন্দী হওয়ার কথাই বলেছে?? মুগ্ধ লুকিয়ে রেখেছিস তার নাম!

‘হ্যাঁ তোর ভাবির নাম আসলেই মৃন্ময়ী।’

জিসান তার কৌতুহল ভাব মুহুর্তেই একরাশ ভালো লাগায় রূপান্তর করলো। চোখমুখ আনন্দে উজ্জ্বল করে উল্লাসিত গলায় বলল-

‘বাহ তোদের জুড়ি দেখছি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে। মৃন্ময়ের বউ মৃন্ময়ী৷ ব্যাপারটা খুব বেশিই ইন্টারেস্টিং। সবাই তোদের দু’জনের নাম শুনেই চমকে যাবে। আর তোর তো স্বভাবই মানুষকে চমকানো।’

মুগ্ধ আর জিসান নানানরকম কথা বলে হাসাহাসি করছে। জিসানকে কেউ একজন ডাক দিতেই সে হড়বড়িয়ে বলল-

‘দোস্ত যাই রে আমার কলিগ দাঁড়িয়ে আছে। ভাবি যাই ভালো থাকবেন। আপনার সাথে তো কথাই হলো না ঠিক মতো। যাইহোক বিয়েতে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না কিন্তু।’

মৃন্ময়ী অপ্রস্তুত হয়ে বলল-

‘জ্বি জ্বি অবশ্যই। ভালো থাকবেন।’

জিসান চলে গেল। আবারও সামনা-সামনি মুখোমুখি হয়ে বসে আছে তারা দু’জন। আবারও যেন নিস্তব্ধতা মুড়িয়ে নিয়েছে নিজেদেরকে। মৃন্ময়ীর মুখ গম্ভীর গম্ভীর ভাব৷ আর মুগ্ধ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আঁটকে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চাপা হাসি হঠাৎই বিস্ফোরিত হলো। উচ্চস্বরে হু হা করে হেসে উঠলো মুগ্ধ। আশেপাশের মানুষ মুগ্ধর হাসির শব্দে এক নজর তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় নিজেদের মতো। বাকি রইলো একজোড়া বিরক্তি মাখানো ডাগর ডাগর চোখ। মুগ্ধর আচরণে সে ভীষণ বিরক্ত। একটা মানুষ এতটা উদ্ভট প্রকৃতির কি করে হয়! এই ছোট একটা প্রশ্নেই বার বার মনে মনে আওড়াচ্ছে মৃন্ময়ী।

‘আপনি থামবেন নাকি আমি চলে যাবো!’

‘এই না না চলে যেতে হবে না। এই তো আমি থেমে গেছি।’

মুগ্ধ হাসি থামিয়ে বুক টান টান করে বসলো। মুখে গম্ভীরতা আনার চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো মতেই পারছে না। মুগ্ধর এমন আচরণে মৃন্ময়ী মনে মনে হাসলো। অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বলল-

‘আপনার নাম মৃন্ময় এটা প্রথমদিন বলেননি কেন?’

মুগ্ধ টেবিলের উপর দু হাত তুলে খানিকটা ঝুঁকে এসে বলল-

‘তখন বললে হয়তো তুমি বিশ্বাস করতে চাইতে না। ভাবতে আমি ফ্লার্টিং করার চেষ্টা করছি। আর তার চেয়েও বড় কথা হলো আমি তোমাকে চমকাতে চেয়েছিলাম।’

মৃন্ময়ী চুপ করে রইলো। কিছুটা সময় পর মুগ্ধ শান্ত গলায় বলল-

‘জানো তো! মৃন্ময়ী যুগলবন্দী হবে শুধু মাত্র মৃন্ময়ের সঙ্গে। এটাই নিয়তি। আমাদের যুগলপ্রেমের যুগলবন্দী হওয়ার নিয়তি।’

‘তা না হয় পরেই দেখা যাবে। এখন আমি উঠছি। রাত হয়ে যাচ্ছে।’

মৃন্ময়ী ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই মুগ্ধ বলল-

‘আমি বাসায় পৌঁছে দেই তোমাকে!!’

‘নাহ দরকার নেই। রঞ্জন হয়তো বাহিরেই আছে। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।’

‘আচ্ছা তা না হয় মানলাম কিন্তু অন্য কিছু তো বলে যাও।’

মৃন্ময়ী ভ্রু কুচকিয়ে সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-

‘অন্য কিছু মানে! কি বলে যাবো?’

মুগ্ধ উদাসীন গলায় বলল-

‘দেখা দেখি কোন পর্যায়ে গেল! পজিটিভ নাকি নেগেটিভ! পাত্র দেখতে আসলে অথচ পাত্র পছন্দ হয়েছে কি-না তা তো বললে না!!’

‘আপাতত কিছু বলতে পারছি না। পাত্র তাড়ছিড়া টাইপের তাই আমাকে ভাবতে হবে। ভীষণ ভাবতে হবে।’

মৃন্ময়ী চলে গেল। মুগ্ধ হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে। বিষন্ন চোখে তাকিয়ে আছে মৃন্ময়ীর যাওয়ার পথে।
মৃন্ময়ী বাসায় এসে মুগ্ধর প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলেনি। ধ্রুবকে এসব নিয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। আর ধ্রুবও তার কাছে কিছু জানতে চায়নি। সব কিছুই চলছিল স্বাভাবিক ভাবে প্রতিদিনের মতো।

‘হ্যালো দোস্ত!’

‘ হুম বল। এত রাতে কল করেছিস কি মনে করে?’

মৃন্ময়ীর বিরক্তিমাখা কন্ঠ অর্পির গাঁয়ে লাগলো না। সে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো-

‘এগারোটা বাজেই ঘুমিয়ে পরলি না-কি!!’

‘আমি তোর মতো রাত জেগে চ্যাট করি না যে এখনো চোখ মেলে তাকিয়ে থাকবো। আর বাসায় তো একটা ডাক্তার সাহেব আছেই অনিয়মের প্রশ্নই ওঠে না। যাইহোক এখন কথা না বাড়িয়ে বল ফোন করেছিস কি জন্য?’

মৃন্ময়ী তিক্ত গলায় কথা গুলো বলে। অর্পির প্রতিত্তোরের অপেক্ষা করছে সে। কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। অর্পি হয়তো কিছু একটা নিয়ে ইতস্ততবোধ করছে। মৃন্ময়ী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শোয়া থেকে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে নরম গলায় বলল-

‘কি হলো কথা বলছিস না কেন? কিছু কি হয়েছে!’

অর্পি নিচু গলায় থেমে থেমে বলল-

‘আফনান ভাই আমাকে কল দিয়েছিলেন। তোর কথা জানতে চেয়েছে। তোর নতুন নাম্বারও অনেক বার চেয়েছে।’

মৃন্ময়ী অতি ঠান্ডা গলায় বলল-

‘তা তুই কি করলি?’

‘আমি কিছু বলিনি। তোর নাম্বারও দেইনি।’

মৃন্ময়ী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নরম সুরে বলল-

‘এই প্রথম একটা ভালো কাজ করলি। প্রসংশা করার মতো কাজ করেছিস। তবে এই ভালো কাজটা সব সময় টিকিয়ে রাখিস। পথ হারা হয়ে যাস না। এখন রাখছি আমার ঘুম পাচ্ছে।’

অর্পির কোনো কথার অপেক্ষা না করেই মৃন্ময়ী ফোন কেটে দিল। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে একটা শ্বাস নিয়ে আবারও শুয়ে পরলো। এসব নিয়ে ভাবার ইচ্ছে করছে না মোটেও না। যে চলে গেছে তাকে নিয়ে ভেবে কান্নাকাটি করে বুক ভাসালে কি হবে! মানুষটা ফিরে আসবে!! নাহ আসবে না। সে তার নতুন বউ নিয়ে হয়তো ভালোই আছে। আর এখন ভালো না থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো ভালো থাকা শুরু করবে। তাহলে কেন আবারও যোগাযোগ করতে চাইছে!! বিয়ের খবর দিতে না-কি পরকীয়া করতে??

————————

নির্জন পথ ধরে হাঁটছে মুগ্ধ আর মৃন্ময়ী। মুগ্ধর নানানরকমের কথাবার্তায় মৃন্ময়ী নিজেকে কিছুতেই গম্ভীর করে রাখতে পারছে না। মুগ্ধ কথা বলছে আর সে হাসছে। কখনো মুচকি হাসি কখনো বা প্রাণখোলা হাসি। এই হাসিতে নেই কোনো বিষাদ। আর না আছে কোনো মন খারাপের কারণ। ধ্রুবর পর এই একটা মানুষের সামনে সে নিজেকে ভীষণ খুশি মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করে। এই দুটো মানুষের সামনে আসলে যেন নিজের সকল দুঃখ কষ্টের কথা নিমিষেই ভুলে যায়। দুনিয়ায় সকল কিছুই তখন রূপান্তরিত হয় আনন্দে। তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতম কারণেও তখন আনন্দিত হয়ে ওঠে তার৷ মন। মুগ্ধকে সে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। একটা মানুষ এতটা প্রাণবন্ত কিভাবে হয়!! সব সময় এত হাসিখুশি কিভাবে থাকতে পারে!!

‘মৃন্ময়ী!’

মুগ্ধর গম্ভীর ডাকে মৃন্ময়ী ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়। হঠাৎ করেই এমন গম্ভীর ডাক হজম করতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। মুগ্ধ সামনের সরু পথের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দারুণ গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল-

‘অনেক চিন্তা ভাবনা করেছি। সব শেষে মস্তিষ্ক একটা কথাই বলল তোমাকে ইমপ্রেস করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই হার মেনে নেওয়াটা-ই আমার জন্য সুখকর। আর তার চেয়েও বড় কথা এসব প্রেম ট্রেম আমাকে দিয়ে হবে না। শুধু শুধু সময় নষ্ট।’

মৃন্ময়ী হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো। মুগ্ধ হাঁটছে। কিছুটা সামনে এগিয়ে গেছে। কিন্তু মৃন্ময়ী একজায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। মুগ্ধর কথাগুলো ঠিক মানতে পারছে না। হঠাৎ করে গম্ভীর হয়ে যাওয়া আর এমন নিষ্ঠুর কথাবার্তা বলা এসব কোনোটাই মুগ্ধর চরিত্রের সাথে যায় না। এ নিয়ে মুগ্ধর সাথে দেখা হয়েছে আট বার। লাস্ট পনেরো দিনেই দেখে হয়েছে পাঁচদিন। প্রতিবারই দেখা হয়েছে হুটহাট করে। এই লোকটা কখনই বলেকয়ে আসে না। হঠাৎ করেই তাকে চমকে দেয়। তাকে চমকে দেওয়া যেন মুগ্ধর স্বভাবগত অভ্যাস হয়ে গেছে। মুগ্ধর এসব অদ্ভুত অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের কারনেই মৃন্ময়ী আনন্দ পায়। তবে তা প্রকাশ্যে নয়। আনন্দটা সে লুকিয়ে রাখে তার মনের ভেতরেই। একদম গহীন কোণে। কিন্তু আজ মুগ্ধর মুখে এসব কথা শুনে তার আনন্দ মুহুতেই কালো মেঘে ঢেকে গেল। মুখ হয়ে গেল আমাবস্যার চাঁদের মতো অন্ধকার।

‘ভাবছি এবার বিয়েটা করেই ফেলবো। অনেক তো সময় নষ্ট করলাম। বাকি প্রেম না হয় বিয়ের পরেই করবো। তুমি কি বলো বউ!’

মৃন্ময়ীর চোখদুটো বড় বড় হলো। মনে হচ্ছে এখনই অক্ষিকোটর থেকে চোখ দুটো বেরিয়ে আসবে। হঠাৎ করে যেন সে প্রান ফিরে পেল। বউ ডাক শুনে লজ্জাও পেল কিন্তু সেটাও অপ্রকাশ্যই রয়ে গেল। মুখে রাগী রাগী ভাব এনে বলল-

‘আপনি এমন উদ্ভট আচরণ করেন কেন? আপনি আদৌও স্বাভাবিক একজন মানুষ নাকি পাগল আমি বুঝতে পারছি না।’

মুগ্ধ পেছন ঘুরে ধীর পায়ে মৃন্ময়ীর কাছে এসে দাঁড়ালো। মৃন্ময়ীকে অবাক করে দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে এসে মুখোমুখি হলো। দুজনের চোখাচোখি হলো। শীতল হাওয়া বয়ে গেল মুগ্ধর হৃদয়ে৷ তপ্ত নিঃশ্বাস গিয়ে আছড়ে পরলো মৃন্ময়ীর মুখে। তীব্র থেকে তীব্রতর হলো মৃন্ময়ীর হৃদ স্পন্দন। তপ্ত নিঃশ্বাসের স্পর্শে পুরো শরীরে শিহরিত হলো লজ্জার উষ্ণ অনুভূতি। ভারী হয়ে এলো তার নিঃশ্বাস। চোখ জোড়া বিষ্ময়ে বড় হলো। গলার কাছেই সকল কথা দলাপাকিয়ে রইলো। মুগ্ধ এক দৃষ্টিতে মৃন্ময়ীর চোখের দিকে চেয়ে সহজ গলায় বলল-

‘এই যে, তোমার এই চোখদুটো আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী। তোমার চোখ দুটো হয়তো আমাকে খুব কঠিন এবং খারাপ ভাবেই বশ করে ফেলেছে। তা না হলে একজন লোয়ার তোমার সামনে আসলেই কেন এলোমেলো হয়ে যাবে৷ একজন প্রফেশনাল যুক্তিবাদী লোয়ার তোমার সামনে আসলেই কেন আবেগী, সাহিত্যিক কথাবার্তা বলবে? এটা কি তোমার স্নিগ্ধ চাহনির বশীকরণের জন্য না!! আমার কি উচিত না তোমার চোখদুটোর নামে মামলা করা! আমাকে দেওলিয়া করার দায়ে তোমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া?? তোমার কি উচিত না নিজের ভুক স্বীকার করে মৃন্ময়ের সাথে নিজেকে যুগলবন্দী করে ফেলা?’

মৃন্ময়ীর হতভম্ব মস্তিষ্কে মুগ্ধর কথা গুলো এলোমেলোভাবে এদিক ওদিক ছুটে চলল। বিস্ময়ে বড় হয়ে আসা চোখ দুটো ঘন ঘন পলক ফেলছে। কিছুটা সময় কেটে গেল এভাবেই। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে সচল হলো মৃন্ময়ীর হতভম্ব মস্তিষ্ক। মুগ্ধকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করতে চাইলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ধাক্কা দিল মুগ্ধর বলিষ্ঠ বুকে। মৃন্ময়ীর প্রতিবাদে তেমন কোনো কাজ হলো না। পুরুষালি দেহের কাছে তার শক্তিকে তুচ্ছ করে দিয়ে আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো মুগ্ধ। আচমকাই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভুবন ভুলানো হাসিতে ফেটে পরলো সে। মৃন্ময়ীর স্পর্শ পাওয়া বুকের ঠিক সেই স্থানে হাত রেখে মুগ্ধ গলায় বলল-

‘অবশেষে তুমি আমাকে ছুঁয়েই দিলে। অবশেষে আমাদের প্রেম হয়েই গেল। যাক প্রেম প্রেম খেলা তাহলে পূরণ হলো। এবার শুধু বিয়েটা-ই বাকি।’

মুগ্ধ হাসছে। মৃন্ময়ী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তার এখন রাগ করা উচিত না-কি চুপ থাকা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। মুগ্ধর অদ্ভুত আচরণে তালগোল পাকিয়ে গেল তার মস্তিষ্ক। এলোমেলো অনুভূতিতে ক্লান্ত হয়ে গেল তার মন। হতাশ হলো সে। উদাসীন হলো তার চাহনি।
মৃন্ময়ীর ফোনের রিংটোনের শব্দ আকর্ষিত হলো দুজনের ধ্যান। অস্থিরতার সাথে ব্যাগ হাতড়িয়ে ফোন বের করলো মৃন্ময়ী। তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো। ক্লান্ত গলায় বলল-

‘হ্যালো!’

‘কেমন আছো মৃনু? আমি আফনান।’

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে