#স্নিগ্ধ_অনুভব
#লাস্ট_পার্ট
#পিচ্চি_লেখিকা
কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই পালটে গেছে। আগের চেয়ে সবাই স্বাভাবিক হয়েছে। তুবা সবটা জানার পর একটু ভেঙে পড়েছিলো পরে নিজেকে সামলে নিয়েছে। কিছুদিনের জন্য মামা বাড়ি চলে গেছে মন ভালো করতে। তুষার ভাইয়া আর তন্নির সম্পর্ক এখন এগিয়েছে। তিশা আপুর এক্সাম চলছে,,আজই শেষ। অনুভব আবার হসপিটালে জয়েন করেছে। বাবাই, মামুনি, কাকা, কাকি এদেরকে মার্ডারের দায়ে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। অনা আর মিরাকে এটেম টু মার্ডারের দায়ে কারাবাস হয়েছে কয়েক বছর। নিজের কাজে অনুতপ্ত অনা আর মিরা। শুধু শুধু অনুভবকে দায়ী করে এত কিছু করলো অথচ অনুভবের কোনো দোষ নেই। রাহাত আবারও বিডি ছেড়ে চলে গেছে। ফাহিম ভাইয়া মেঘলা ৯পকে পড়াশোনা করাচ্ছে।
ক্যাম্পাসে তন্নি, আমি, মেঘলা আর তামিম বসে আছি।
“কি রে প্রেম কেমন চলে তোর?”
“কারে কস?” (তন্নি)
“লে কারে আর কমু তোরে কই!”
“আমার কিসের প্রেম? শালা তোর ভাই নাকি এলিয়েন। খালি ঘুরায় এক্সেপ্ট আর করে না।” (তন্নি)
“আহাগো বেচারি!”
“সব মোর কপালের দোষ গো। কি কুক্ষণে যে এমন একটা লোক রে ভালুপাসছি ওহ আল্লাহ তুমি মোরে মঙ্গল গ্রহে পৌছায় দাও! ওই খারুশ তুষার মোরে এক্সেপ্ট করে না গো🥺(তন্নি)
ওর কথা শুনে সবাই হো হো করে হেঁসে দেয়। আমাদের হাসি দেখে তন্নি আরো জ্বলে উঠে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,,
” ওই পোলাপান কম হাঁস। তোর ওই হনুমান, এনাকন্ডা, টিকটিকির লেজ, উগান্ডার খাটাশ ভাইয়ের পিছে আর কত ঘুরমু রে?”
‘”হ্যাঁ হ্যাঁ আর কি যেনো? আরো কি আছে বলো!”
তন্নি কারো কন্ঠ শুনে কাঁদো কাঁদো গলায়ই বলে,,
“আরে ওই তো কলা খেকো হা.. ওয়েট ওয়েট কোন শালা রে আমারে এগুলা জিগায়?”
তন্নি পিছে ঘুরে ওমাগো বলে এক লাফ দিয়ে তামিমের কোলের ওপর উঠে বসে। ওর এই সিচুয়েশন দেখে আমরা হাঁসতে হাঁসতে শেষ।
“ওমাগো,, ও বাবাগো, ও আল্লাহ গো, ও তুষার ভাই গো এই আটার বস্তারে সরাও গো।” (তামিম)
তামিমের কথা শুনে আমরা হাঁসতে হাঁসতে লুটুপুটি খাচ্ছি। তন্নি তামিমকে ধমক দিয়ে কোল থেকে নেমে বলে,,
“চুপ শালা। তুই আটার বস্তা, তোর বউ আটার বস্তা, তোর গুষ্টি আটার বস্তা।”
“এই এই একদম তোর চুল গুলো ছিড়ে নিবো। একদম আমার বউ আর গুষ্টি তুলবি না।”(তামিম)
” একশো বার তুলমু। হাজার বার তুলমু শালা।”(তন্নি)
“এই থাম তোরা। সারাদিন ঝগড়া আর ঝগড়া। কি পাস তোরা ঝগড়া করে।”
তুষার ভাইয়া এতক্ষণ সব চুপচাপ দেখছিলো। এংন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“আমাকে তুমি কি কি বলেছো সব গুলোর শোধ আজকে নিবো।”
বলেই তন্নির হাত চেপে ধরে টানতে শুরু করলো। আর তন্নি তো চেঁচিয়ে যাচ্ছে।
“ওরে তোরা আমাকে বাঁচা রে। এই রাক্ষস না মানে তুষার ভাইয়া আমারে খেয়ে ফেলবে রে।”
“এই মেয়ে চুপ। আর একটা কথা বললেও তোমাকে আমি…..
তন্নি আর কিছু না বলে চুপচাপ কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে আমাদের দিকে তাকাতে তাকাতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ওদের কান্ড দেখে হাঁসছি। তন্নি আর তুষার ভাইয়া গাড়ি করে চলে গেলো। আমরাও হাঁসাহাঁসি করছি। এমন সময় আইদা কোথা থেকে এসে হাজির হলো।
” এই আপু!”
আপু ডাক শুনে পিছনে তাকাতেই দেখি আইদা। ও খুশি খুশি মুখ নিয়ে আমাদের সাথে এসে বসলো। এখন আমাদের সম্পর্কটা আরো সহজ হয়ে গেছে। তুমি থেকে নেমে এসেছে তুই এ। আইদা আমাদের জুনিয়র।
“আরে তুই? এখানে?”
“সারপ্রাইজ! কেমন দিলাম বল?”
“দারুন দিয়েছেন ম্যাম। এবার বলুন হঠাৎ সারপ্রাইজ? কাহিনি কি?”
“এই মেঘু আপু দেখো এই আপু আমাকে সন্দেহ করছে। তুমি কিছু বলো?”
“তাই তো। স্নিগ্ধু তুই ওকে সন্দেহ করছিস কেন? তোকে কিন্তু আমরা বকবো।”
“আচ্ছা বাবা সরি।”
৩ জন গল্প করতে লাগলাম। আমরা এত কথা বলছি অথচ তামিমের পাত্তা নাই। আজব তো। পাশে তাকিয়ে দেখি তামিম এক দৃষ্টিতে আইদার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর তাকানো দেখে আমি প্রথমে অবাক হলেও পরে হেঁসে দিয়েছি। আজ পর্যন্ত এভাবে কারো দিকে তাকাতে দেখিনি বাবাগো। আমি তামিমকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,,
“কি রে কি দেখিস?”
“এ্যাা? না মানে কই কিছু না তো।”
“আমি দেখছি হুহ। চোখ ঠিক করে রাখ।”
সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে তিশা আপুর এক্সাম শেষ হলে বাসায় চলে আসলাম। ২ দিন পর আবিদদ ভাইয়া তার ফ্যামিলিকে নিয়ে আসবে বিয়ের জন্য। রুমে যেতেই দেখলাম অনুভব বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। উনি আবার কখন আসলো? তাও আমাদের না নিয়েই চলে আসলো। আমি ওয়াশরুম গিয়ে আগে শাওয়ার নিয়ে একবারে বের হলাম। অনুভব সোফার ওপর পা এর পা তুলে বসে বসে ফোনে স্ক্রল করছে। উগান্ডা টার সুস্থ হওয়ার পর যেনো ভাব বাড়ছে হুহ😏। আমি চুল মুছতে মুছতে বললাম,,
“এত তাড়াতাড়ি কিভাবে চলে আসলেন?”
“তাড়াতাড়ি আসলে তোর সমস্যা? তুই সারাদিন ঢ্যাং ঢ্যাং না করে একটু পড়াশোনা করলেও তো পারিস।”
“শুরু হয়ে গেছে। আপনি আসলেও একটা ঘাড়ত্যাড়া। কি জিজ্ঞেস করলাম আর কি আন্সার দিলো। সারাদিন না বকলে শান্তি পান না? আপনাদের ভাইদের কি মুড সব সমময় চটেই থাকে হুহ!”
অনুভব ভ্রু কুচকে বললো,,
“ভাইদের মানে? ”
“আরে তুষার ভাইয়া,,তন্নিকে তখন রেগে মেগে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। কোথায় গেলো কে জানে?”
অনুভব মুচকি হেঁসে বললো,,
“আমার দেখছি ২ টা বিয়ের arrange করতে হবে।”
“এই এই ২ টা বিয়ের arrange করবেন মানে কি? আমি না আপনার বউ। আপনি বউ রেখে আবার বিয়ে করবেন? হায় গো আমার সব শেষ গো!”
অনুভব দাঁত কটমট করে বললো,,
“ইডিয়েট,,তুই আসলেও একটা ইডিয়েট। জিবনে তোর মাথায় বুদ্ধি গজাবে না।”
“লাগবে না আমার বুদ্ধি। আপনি আমাকে রেখে আবারও বিয়ে করতে চাইছেন! আমি এখন পুরোনো হয়ে গেছি হ্যাঁ?”
বলেই নাক টেনে টেনে ঠোঁট উলটায় মাত্র কান্না শুরু করবো তখনই অনুভবের ধমক।
“এই চুপ,,সব সময় ফ্যাচ ফ্যাচ করা। আরে ডাফার কোথাকার আমি তিশা আবিদ,,আর তুষার তন্নির কথা বলেছি আর তুই গাধী কি বুঝলি? ইম্পসিবল তোর সাথে কথা বলাই অসম্ভব ইডিয়েট একটা।”
বলেই গটগট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আমি আহম্মুকের মতো বসে আছি। উনি কি বুঝায়তে চাইলো আর আমি কি বুঝলাম! কফাল,, তুষার ভাইয়া আর তন্নি আজ গেলো কই? প্রেম করতে গেছে মনে হয় ওয়েট ওয়েট প্রেম করবে কিভাবে ভাইয়া তো প্রোপোজ করেও নি এক্সেপ্টও করেনি তবে? হুরো,,পেঁচাল। চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা তিশা আপুর কাছে গেলাম। তিশা আপু আবিদ ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। আমি নাক ফুলিয়ে আপুর সামনে বসে বললাম,,
“আপু আমাকে কি তোমার গাধী মনে হয়?”
তিশা আপু আমার কথা শুনে থতমত খেয়ে ফোন টা কান থেকে নামিয়ে বললো,,
“তোকে গাধী বলছে কোন গাধায়?”
“আরে তোমার ওই উগান্ডার ভাই আমাকে গাধী বললো। ডিরেক্ট গাধী? এটার কাছে নাকি আমাকে গাধী মনে হয়ে? এই আপু তুমি বলো আমি বুদ্ধিমান কি না?”
তিশা আপু কয়েক সেকেন্ড মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,
“তোকে গাধী বলছে অনুভব ভাইয়া? ভাইয়ার মাথা দেখি আবার গেছে। ও নিজেই তো দেখি গাধা।”
“এটাই….
” নইলে কি তোকে শুধু গাধী বলে? তুই আস্ত গাধী,,সাথে বলদও।”
আপুর কথা শুনে আমার কথা থামিয়ে রাগী রাগী ফেস করে বলতে লাগলাম,,
“এই আপু তোমার এত বড় সাহস তুমি আমাকে গাধীর সাথে বলদও বললে,,তোমাকে তো আমি…
” ওই থাম,, ঠিক মতো রাগার অভিনয় টাও করতে পারিস না।”
কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফোন থেকে বিকট শব্দে হাঁসির আওয়াজ পেয়ে ভ্রুকুচকে ফোন হাতে নিলাম। আবিদ ভাইয়া এখনো লাইনে। হায় আপু আমারে আবিদ ভাইয়ার সামনে থুক্কু আবিদ ভাইয়া তো এখানে নাই কিন্তু ফোনে তো আছে। আমি ফোন টা নিয়ে বললাম,,
“এই ভাইয়া আস্তে হাঁসেন। হাঁসির শব্দ শুনে মনে হচ্ছে যেন রাক্ষসরানী কটকটি হাহা করে হাঁসছে। আমার কথা শুনে ভাইয়া হাঁসি থামাবার বদলে আরো জোড়ে হাঁসছে। এবার আমি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললাম,,
” ওই আপনার বউরে নিয়া যাান। এবাড়িতে থাইকা আমারে খালি অফমান করে,,হায় আমি এই দুক্কু কোন খানে রাকমু!”
“আরে দাঁড়াও নিয়া আসমু আমার বউরে। মন ডা তো চাইতাছে এখনি লইয়া আসি কি আর করার বউ এখন আসবে না। বউ রে ছাড়া তো থাকতে পারি না কিন্তু বউ বুঝে না আমার দুক্কু!”
“আহাারে,,বেচারা বউ পাগল। আমার জামাইডাই হয়ছে উগান্ডার তেতো সরকার আহা আহা।”
ভাইয়া হো হো করে হেঁসে দিলো। আমি ফোনটা আপুকে দিয়ে চলে আসলাম লিভিং রুমে। তন্নি,তামিম আর আইদা বসে আছে। তন্নি মাঝে মাঝে কেমন লজ্জা পাচ্ছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নাই। ওর লজ্জা পাওয়ার কারণ বুঝলাম না। তাই ওর কাছে গিয়ে ওর মুখ ধরে ভালো ভাবে দেখতে লাগালম। তখন ও বললো,,
“এই পাগলের মতো এমন করিস কেন?”
“তুই এমনি এমনি লজ্জা পাচ্ছিস কেন? এখানে তো লজ্জা পাওয়ার মতো কেউ নাই।”
আমার কথা শুনে তন্নি আবারও কেমন করে হাঁসলো।
“এই হাাঁসিস পরে। আগে বল কাহিনি কি? আর তুষার ভাইয়া তোকে কোথায় নিয়ে গেছিলো? আর বাড়িতে না দিয়ে এসে হঠাৎ এ বাড়ি কেন?”
“কেন আসা বারন নাকি?”
“আরে তা কখন বললাম? তুই এসব বাদ দে। আগে বল তুষার ভাইয়া তোকে কোথায় নিয়ে গেছিলো?”
“বলবো না। আমার লজ্জা লাগে।”
আমি অবাক চোখে ২ গালে হাত দিয়ে বললাম,,
“লজ্জা? তাও তন্নির? হাস্যকর। আমি তো জানতাম লজ্জা তন্নিকে লজ্জা পায় তন্নি না।”
“ওই ছেরি চুপ!”
“আচ্ছা বুঝছি লজ্জা পাওয়া লাগবে না। বিয়ে টা তিশা আপুর বিয়ের দিনই করে ফেল।”
“ধুর সর।”
তন্নির লজ্জা দেখে ভিষন হাঁসি পাচ্ছে। এমন সময় আইদা বলে উঠলো,,
“এই আপু,,আপু,,দেখ তোর এই ঘাড়ভাঙা ফ্রেন্ড আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে।”
আইদার কথা শুনে তামিমের দিকে তাকালাম। তামিম বাচ্চা ফেস নিয়ে হাঁসার চেষ্টা করছে।
“কি রে তুই আমার বোনকে জ্বালাস কেন?”
তামিম ভাব নিয়ে বললো,,
“তোর বোনের প্রেমে পইড়া গেছি। এবার ঝটপট আমারে দিয়া দে তোর বোনডা।”
শেষের কথাটা ঠোঁট উলটে বললো। তামিমের কথা শুনে ৩ জনই হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আর তামিম বোকা বোকা হাঁসি দিচ্ছে। আইদা কি ঘটেছে বুঝতে পেরে রেগে বোম হয়ে তামিমের দিকে তেড়ে গিয়ে বললো,,
“এই আপনার এত বড় সাহস! আপুকে এসব কি বলেন হ্যাঁ? একদম মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো।”
তামিম একটু মাথাটা এগিয়ে আইদার দিকে দিয়ে বললো,,
“কলিজার মধ্যে আসার জন্য এত কাছে আসছো জানু!”
ওর কথা শুনে আইদা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সরে আসে। আর আমরা ওদের কান্ডে হাঁসতে হাঁসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। আইদা তা দেখে গাল ফুলিয়ে বললো,,
“আপু উনি এসব বাজে কথা বলছে আর তুমি হাঁসছো। এটা মোটেও ঠিক না হুহ,,
” বইন এইডা কি সত্যি সত্যি তোর বোন রে? তুই তো এমন গুন্ডি না তাইলে তোর বোন গুন্ডি কেমন হইলো?”
তামিমের কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো আইদা।
“আপু এবার কিন্তু উনাকে আমি….
” এই থাম থাম। তামিম আর আমার বোন কে এসব বলবি না।”
তারপর অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে তন্নিকে তুষার ভাইয়া বাড়ি দিতে গেলো। আইদা নিজের রুমে গেলো আর তামিমও বাড়ি চলে গেলো। আমিও নিজের রুমে এসে ঘুম দিলাম।
___________________
অনেক রাত হয়ে গেছে অথচ এখনো অনুভব বাড়ি ফিরেনি। ফোন দিলাম তাও ধরছে না। এদিকে আমার চিন্তায় চিন্তায় জান শেষ। হঠাৎ করেই কোথা থেকে অনুভব হুড়মুড় করে রুমে ঢুকেই ফোনটা বেডে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আমি কিছু বলার চান্সই পাইলাম না। ১৫ মিনিট পর উনি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসতে বসতে বললেন,,
“কোনো প্রশ্ন না করে তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
এমনিতেই দেরী করে ফিরেছে তার পপর অর্ডার দিচ্ছে রেডি হওয়ার। গুষ্টি কিলায় রেডির। আমি রেগে বললাম,,
“একে তো ফিরেছেন দেরীতে তার ওপর আবার এসেই রেডি হতে বলছেন। হবো না রেডি। এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? ফোন দিলাম কতবার! ধরার প্রয়োজন মনে হয় না নাকি?”
“হয়ছে। এবার টেপ রেকর্ডার বন্ধ করে তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
“হবো না। আপনি একাই যান।”
“দেখ স্নিগ্ধু রাগাবি না। যা রেডি হয়ে আয়। এমনিতেই অনেক লেইট হচ্ছে।”
“আমি যাবো না বললাম তো।”
“এক থাপ্পড় দিয়ে ঘাড়ের রগ সোজা করে দিবো। আর এক মিনিট তুই এখানে দাঁড়ালে তোর কপালে শনি আছে।”
অনুভবের ধমক শুনে কাঁদো কাঁদো মুখ করে কাবার্ডের দিকে যেতে লাগলাম। তখন অনুভব বললো,,
“শাড়ি রাখা আছে ওখানে পড়তে না পারলে তিষার কাছে যা।”
আমি কিছু না বলে শুধু ভেঙচি কেটে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। মোটামুটি এখন শাড়ি সামলাতে পারি। আব্বু আম্মুর(আঙ্কেল আন্টি) কাছে থাকার সসময় শিখে নিয়েছিলাম। শাড়ি পড়ে রুমে এসে দেখি অনুভবও রেডি হয়ে বসে আছে। মেচিং ড্রেস। আমি কিছু না বলে মিরোরের সামনে গিয়ে পিন গুলো লাগিয়ে নিলাম। আর হালকা সাজ দিয়ে গাল ফুলায় অনুভবের পাশে এসে দাঁড়ালাম।
একটা লেকের কাছে এসে গাড়িটা থামলো। এতো রাতে কি উনি এই লেকের পানি দেখার জন্য এসেছে নাকি? কেমন ডা লাগে এবার। আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি্। এটাকে কিছু বলা মানেই আগের মতো থাপ্পড় খাওয়া। খবিশ কোথাকার।
“সঙের মতো বসে না থেকে নামেন ম্যাম।”
ঢং দেখো। কেমন ন্যাকামি করে কথা বলছে। রাগে দুঃখে গাড়ি থেকে নামলাম। অনুভব এসে পাশে দাঁড়িয়ে হাত ধরে সামনে হাঁটা লাগালো। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে রাস্তা স্পষ্ট। হঠাৎ করেই অনুভব একটু এগিয়ে যেতেই পুরো জায়গা অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি তো ভয়ে জমে গেছি। আমি আস্তে আস্তে অনুভবকো ডাকতে লাগলাম কিন্তু অনুভব সাড়া দিচ্ছে না। আমি তো ভয়েই কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ করেই অল্প অল্প আলো জ্বলতে লাগলো। অনুভব এসে পিছে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে আকাশের দিকে তাকাতে বললো। আকাশে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেছি। নানা রকমের লাভ বেলুন উড়ে যাছে আর তার মাঝে সুন্দর করে লিখা happy anniversary bow..এটুকু দেখেই যেন থমকে গেছি। ১ বছর হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের অথচ মনেই নেই। সময় কত দ্রুত চলে যায়। ১ টা বছর যদিও ২ জন এক সাথে কাটাতে পারিনি। অনুভবের কন্ঠস্বরে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু সামনে তাকাতেই আরো অবাক। অনুভব হাটু মুড়ে এক হাত এগিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বললো,,
“কি বলে শুরু করবো বুঝতে পারছি না…(এটুকু বলেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর আবার বলতে শুরু করলো)
তুই আমার লাইফে সবচেয়ে বড় পাওয়া। কিভাবে বিয়ের ১ টা বছর কেটে গেছে বুঝতেও পারিনি। অবশ্য বুঝার পরিস্থতিও ছিলো না। কিভাবে প্রোপোজ করতে হয় জানি না। অতো নাটক করে বলতেও পারবো না। এটুকুই বলতে চায় তুই যেমন আমার কঠিন পরিস্থিতিতে ভালোবেসে পাশে ছিলি আমিও তেমন সারাজীবন তোর পাশে তোর সাথে থাকতে চায়। আমার সবটা জুড়ে শুধুই আমার স্নিগ্ধবতী। স্নিগ্ধবতী ভালোবাসি বলবো না সেটা তুই নিজেই বুঝে নিস। এই ১ বছর হয়তো তোর সাথে কাটাতে পারিনি। বাকি সব গুলো বছর আমি তোর সাথে কাটাতে চাই। আমার এত্তগুলো বেবির মা হয়ে থাকবি সারাজীবন আমার সাথে? এই অনুভব যে একান্তই তার স্নিগ্ধবতীতে আবদ্ধ। বুড়ো বয়সেও এই স্নিগ্ধবতীতেই আবদ্ধ থাকতে চাই! তুই থাকবি তো আমার সাথে?”( আমি প্রোপোজ করতে জানি না। যা একটু ভাবছিলাম তাও গুলাইয়া ফেলছি। কেউ এই প্রোপোজ নিয়া কথাা শুনায়েন না আবার😬)
অনুভবের কথা শুনে চোখে পানি চলে এসেছে। এজন্যই এতো তাড়া দিয়ে বাড়ি থেকে আনলো। অনুভব হাত এগিয়ে দিয়ে আছে। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ওর হাত ধরতেই একটা রিং পড়িয়ে জড়িয়ে নিলো। আমিও জাপটে ধরে আছি। অনুভব মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,
” তোর মতো গাধাকেই তো আমার চাই,,সারাদিন বকবো ধমক দিবো আর ভয় দেখাবো আর তুই ঠোঁট উলটে কাঁদো কাঁদো গলায় বকবি। আর আমি মজা নিবো।”
অনুভবের কথা শুনে ওর বুকে মারালাম কিল ঘুষি। হঠাৎ করেই চারদিক থেকে করতালির আওয়াজ পেয়ে অনুভবকে ছেড়ে তাকাতেই আমি শকড হয়ে গেছি। সবাই আছে এখানে,,তন্নি, তুষার ভাইয়া, আবিদ ভাইয়া, তিশা আপু, আইদা, তামিম, মেঘু, ফাহিম ভাইয়া সবাই মিটমিট করে হাঁসছে৷ আর আমি ওদের দেখে লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছি। তুষার ভাইয়া এগিয়ে এসে গলা খাকাড়ি দিয়ে বললো,,
“উহুম উহুম,, ভাই তুই এতো রোমান্টিক কবে হলি? এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে বউয়ের সাথে রোমান্স করছিস বাহ বাহ।”
“হাহ,,লুকিয়ে লুকিয়ে আর কই করলাম,,তোরা তো এসেই পড়লি আমার আর আমার বউরে নিয়া রোমান্স করা হইলো না। শালা কাবান মে গাড্ডি হইলি ক্যা ক? ওয়েট ওয়েট আমি এটা কি ভাবে কথা বললাম,,
” তুমি স্নিগ্ধুর ভাষায় কথা বললে ভাই!”
“হুম একদম ঠিক। এইটার থেকেই এসব শিখছি আমি।”
“ওই একদম….
” এই থাম দুজনে আর ঝগড়া করিস না। অনুভব ভাইয়া একটা গান হয়ে যাক। আপনার স্নিগ্ধবতীকে ডেডিকেট করে,,
“হুম ভাইয়া গাও প্লিজ।”
সবার কথায় অনুভব ভাইয়া গান গাইতে রাজি হলো। সব গুলো প্ল্যান করেই এসেছে তাই সাথে গিটারও এনেছে। অনুভব গিটারের সুর তুলে গাইতে শুরু করলো,,
তোমার নামের রৌদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কত দুরে এখনো..
তোমার নামের রৌদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাবো কত দুরে এখনো
আমার পোড়া কপালে
আর আমার সন্ধ্যা সকালে
তুমি কেন এলে জানি না এখনো
ফন্দি আটে মন পালাাবার
বন্দি আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও
তেমাকে চাই
তেমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই….
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই
তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই…..
গান শেষে অনুভব বললো,,
“ভালোবাসি স্নিগ্ধবতী…..
আমিও ফিসফিসিয়েই বললাম,,
” ভালোবাসি স্নিগ্ধবতীর বর….
সমাপ্ত…..