#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:১৭
#পিচ্চি_লেখিকা
ছোট একটা কফিশপে বসে আছি হিজাব দিয়ে মুখ আটকানো৷ অনেকক্ষণ হলো বসে আছি কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা তার আসার নাম নেই। একটু পরই ফোনটা কেঁপে কেঁপে উঠলো। ফোন তুলে বললাম,,
“কই তুই?”
“আমি তো বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। তুই কই?”
“ভেতরে আয়। একা বসে আছি।”
“আচ্ছাা।”
ফোন কেটে একটু পরই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো তন্নি। যদিও আমার মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিলো তবুও ওর আমাকে চিনতে বেগ পেতে হয়নি। দ্রুত পায়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই আমাদের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। আমি ওকে ছাড়িয়ে দেখি বেচারি কান্না করে দিছে। এত গুলো দিন চলে গেছে তাও আমার প্রতি ওদের ভালোবাসা কমেনি। এই জন্যই হয়তো বলে,, “ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় বন্ধুত্ব নয়”
তন্নিকে শান্ত করে বসিয়ে ওর হাত ধরে বললাম,,
“এই শাঁকচুন্নি কান্না করছিস কেন?”
“চুপ কথা বলবি না। এত গুলো দিন আমরা তোকে ছাড়া কিভাবে কাটিয়েছি তোর ধারণা আছে? একটা বারও কি মনে পড়েনি আমাদের কথা। কোথায় ছিলি এতদিন তুই?”
“হয়ছে বইন থাম। বাপ রে এত প্রশ্ন কেমনে করিস?”
“চুপ। বল কোথায় ছিলি এতদিন?”
ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
“কোমায় ছিলাম।”
আমার কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে তন্নির। চোখের পানিটা মুছে অবাক কন্ঠে বললো,,
“মানে কি?”
“বলছি সব। তার আগে আমার কিছু হেল্প চাই। করবি?”
“এভাবে কেন বলছিস? বলই না কি হেল্প?”
“মেঘু, তামিম ওরা কোথায়?”
“তুই তো কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করলি তাই কিছু বলিনি কাউকে।”
“আচ্ছা। অনুভব কোথায়?”
যদিও আমি জানি তবুও জিজ্ঞেস করলাম। কারণ কিছু সত্যি তো গোপনে আছে। তন্নি মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো,,
“জানি না অনুভব ভাইয়া কোথায়।”
“জানিস না মানে কি?”
“আরে উত্তেজিত না হয়ে পুরো কথাটা শোন।”
“হুম বল,,
” সেদিন এক্সিডেন্ট হওয়ার পর যখন তোকে আন্টি অপমান করেছিলো তখন তিশা আপু আর তুষার ভাইয়া তার জবাব দিচ্ছিলেন। হঠাৎ খেয়াল করলাম তুই নেই। তোকে সবাই মিলে অনেক খুজেও পাইনি। তিশা আপু তো অনেক রেগে গেছিলো। আমরা ফের হসপিটালে এসে শুনি অনুভব ভাইয়ার সেন্স এসেছে এবং সে সুস্থ আছে। ঘুমের ওষুধ দেওয়ায় ঘুমিয়ে গেছে। আমি আর তামিম চিন্তিত মুখ নিয়ে সেদিন চলে আসলাম। পরেরদিন তো মেঘুর বিয়ে ছিলো। ও তোর কথা অনেক জিজ্ঞেস করছে বাট কিছুই বলতে পারিনি। ওর এক কথা তুই না আসলে ও বিয়েই করবে না। কোনো রকম বিয়ে শেষ হওয়ার পর ওকে সবটা বললাম। তোকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে সে কি কান্না। তার ২ দিন পর রুমে মন খারাপ বসে ছিলাম। তখনই ফোক বেজে উঠে। তুষার ভাইয়ার নাম্বার দেখে অনেক অবাক হয়। ফোন ধরতেই উনি বললেন অনুভব ভাইয়াকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত অনুভব ভাইয়া কোথায় তা জানি না।”
এতক্ষণ ওর কথা মন দিয়ে শুনলাম। তার মানে কেউ জানেই না অনুভব মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। আচ্ছা সেদিন তো ও সুস্থ হয়ে গেছিলো তাহলে কিভাবে হলো এসব? এর পিছনে গভীর কোনো রহস্য নেই তো? খুজে বের করতে হবে। আমি তন্নিকে বললাম,,
“আচ্ছা তন্নি আমি সেদিন বেরিয়ে আসার পর সেখানে আমি বাদে কি কেউ মিসিং ছিলো? মানে মিরা বা অন্য কেউ?”
“সেটা তো খেয়াল করিনি। তোর চিন্তা তেই সবাই প্রায় পাগল হয়ে গেছিলাম।”
“তিশা আপুরা কেমন আছে?”
“ভালো আছে।”
“তুষার ভাইয়ার কি খবর? পটাইতে পারছিস?”
“ধুর,,তোর টই ভাই আমারে খালি ঘুরায়। পাত্তাই দেয় না।”
“আহারে।”
“তোকে একটা কথা বলবো স্নিগ্ধু?”
“হুম বল।”
“তোদের এই ফ্যামিলি তে মে বি কোনো প্রবলেম আছে!”
“মানে?”
“মানে এই যে এত কিছু হয়ে গেলো তবুও আমার তোদের ফ্যামিলি কে কোনো ট্রেস নিতে দেখেছি বলে মনে হয় না। জানিস সেদিনের পর তুষার ভাইয়া আর তিশা আপু বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।”
“হোয়াট?”
“হুম..তিশা আপু বলেছে সে আর ওই বাড়িতে ফিরবে না। যেখানে তোর আর অনুভবের অস্তিত্ব নেই সেখানে সে কিছুতেই যাবে না। তিশা আপু মেসে থাকে। আর তুষার ভাইয়া তার ফ্ল্যাটে থাকে। অনেকবার বলেছে তিশা আপুকে সেখানে থাকতে কিন্তু সে নারাজ। তিশা আপুর সব খরচ তুষার ভাইয়াই দেয়। তাও অনেক বুঝিয়ে। তিশা আপু তো এটাও বলে দিয়েছে সে এক্সাম শেষ করে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নিবে। তাও ওই বাড়িতে যাবে না।”
“এত কিছু হয়ে গেছে?”
“হুম। সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার কি জানিস? ওই বাড়িতে তোর আর অনুভব ভাইয়ার কোনো অস্তিত্বই নেই। এমনকি একা ফটোও নাই।”
“একটা হেল্প করতে পারবি?”
“বল!”
“তুই ওই বাড়িতে ঘুরার নাম করে গিয়ে কিছু ক্যামেরা লাগাতে পারবি?”
“পাগল হয়ে গেছিস? এটা অনেক রিস্কি!”
“আমিও বুঝতে পারছি কিন্তু প্লিজ না করিস না। তোরা হেল্প না করলে আমি কার কাছে হেল্প চাইবো বল?”
“বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি যদি ধরা পড়ে যায়। সব শেষ হয়ে যাবে।”
“তুই তামিমকে নিয়ে গেলে পারবি?”
“তা একটু সাহস পাবো। কিন্তু তুই তো তামিমকে এখনি কিছু জানাতে চাস না তাহলে?”
“তামিমকে কিছু জানাবিও না। ওকে শুধু বলবি কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে। তারপর যা বলার আর করার সব আমি করবো। সব রহস্যের জট খুলে দেবো। কয়েকটা দিন ব্যাস।”
“হুম। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো কিন্তু অনুভব ভাইয়াকে কোথায় পাবি তুই?”
“সে চিন্তা তুই বাদ দে। আজ বরং যা। যত দ্রুত পারবি কাজ টা করিস প্লিজ।”
“হুম। আচ্ছা আমি আসছি।”
তন্নিকে কিছু ক্যামেরা দিতেই চলে যেতে নিলো।তন্নি দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারও দ্রুত পায়ে আমার সামনে এসে বললো,,
“একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে স্নিগ্ধু!”
“মানে?”
“মানে হলো,,যে রাহাত তুই বলতে পাগল ছিলি সেই রাহাত অনা কে বিয়ে করে নিয়েছে। অনার তো বাবা মা নাই। তাই নাকি সে বিয়ে করেছে। বিষয়টা আমার কাছে কেমন রহস্য মনে হয়। দেখ বিয়ে করেছে তাতে আমরা সবাই খুশি বাট হঠাৎ করে তুই আর অনুভব গায়েব হওয়ার পরই ও কেন বিয়ে করলো? তাও আবার অনাকে!”
একটা রহস্যনয় হাসি দিয়ে বললাম,,
“তোর কাজটা একটু বেড়ে গেলো। আর থ্যাঙ্কস এতকিছু বলার জন্য।”
“কাজ বেড়ে গেলো মানে?”
“দেখ আমি কাউকে সন্দেহ করছি না। কিন্তু সবার গতিবিধি আমার জানাটা দরকার।”
“হুম। কি করতে হবে বল!”
“তুই মেঘুর বাড়িতে যাবি পারলে মেঘুকে বলবি একটু সাহায্য করতে। ওখানে গিয়ে খেয়াল করবি কার কেমন বিহেভ? অনা আর রাহাতের সম্পর্ক কেমন? মেঘু কতটা খুশি ওই বাড়িতে? সবটা৷ খেয়াল করে অনা আর রাহাতের রুমে একটা ক্যামেরা লাগিয়ে দিবি। এমন ভাবে দিবি যেন সেইটা দেখা না যায়। আর অবশ্যই মেঘুকে বলবি ও যেন সবটা খেয়ালে রাখে। আর এদিকে তিশা আপুর মেসে একটা ক্যামেরা লাগাবি!”
“স্নিগ্ধু তুই তিশা আপুকেও…
” আরে না। আমি শুধু গতিবিধি দেখতে চায়।”
“ঠিক আছে। আমি আমার সাধ্য মতো সবটা করবো ইন শাহ আল্লাহ।”
তন্নি বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমিও আর দাঁড়ালাম না। অনুভবকে রেখে এসেছি। ও আবার কি করছে কে জানে?
বাড়ি এসে দেখি অনুভব আর সিফাত খেলছে। এত বড় ছেলে নাকি বাচ্চাদের মতো করে খেলছে। মাঝে মাঝে সিফাতের মতো ঠোঁট উলটে দিচ্ছে। ওকে এই অবস্থায় দেখে প্রচুর হাঁসি পাচ্ছে। কিন্তু সেইটা দমিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার আনলাম। অনুভবকে নিচে নামিয়ে বিপদে পড়তে চাচ্ছি না। কি করতে কি করবে? কে ই বা জানে?
“অনুভব উঠুন। ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নিবেন চলুন।”
“আমি খাবো না।”
“এটা আবার কেমন কথা? দুপুর হয়ে গেছে এর মধ্যে তো কিছুই খাননি! আসেন ভালো ছেলের মতো খেয়ে নেন!”
“না আমি আরো খেলবো!”
এটা কে কিছু বলে লাভ নাই। আগেও ঘাড়ত্যাড়া ছিলো এখনো আছে। আমি সিফাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ফ্যালফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হেঁসে বললাাম,,
“বাবা তুমি খায়ছো?”
“হুম খায়তি!”
“আচ্ছা এখন তুমি গুড বয়ের মতো গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো কেমন!”
“আত্তা!”
সিফাত দৌড়ে রুম থেকে চলে গেলো। সিফাতকে যেতে দেখে অনুভব ঠোঁট উলটে বলে,,
“সিফাত চলে গেলো কেন? আমি এখন কার সাথে খেলবো?”
“উমম তাই তো এটা তো ভাবার বিষয়। আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে বাট আপনি তো খাবেন না তাই বলবোও না।”
“কি প্ল্যান?”
“খেলার বাট বলবো না।”
“আমি খেয়ে নিলে বলবেন?”
“হুম খেয়ে নিলে বলবো!”
“আচ্ছা! খাইয়ে দেন।”
অনুভব ভদ্র হয়ে বসে পড়লো। আর আমি খাইয়ে দিলাম। তারপর খাইয়ে ওকে শুইয়ে দিলাম। একটু ঘুমালে ওর নিজেরই ভালো লাগবে!
রাতের আকাশের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি্। বৃষ্টি হবে ধুমধাম। মেঘ গর্জন করে থেকে থেকে ডেকে উঠছে। অনুভব বিছানায় শুয়ে আছে। আমাকে পাশে না পেয়ে বললো,,
“কোথায় আপনি? আমার ভয় করছে।”
অনুভবের গলা শুনে রুমের দিকে তাকালাম। এখন আবার এটার ভয়ও লাগে। বাব্বাহ। আমি চুপ করে এসে উনার পাশে বসে বললাম,,
“ভয় লাগবে কেন? এখানে তো কেউ নেই যে আপনাকে মারবে?”
“আপনি আমর কি হন?”
অনুভবের এমন প্রশ্নে তার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললাম,,
“বউ হয়।”
“বউ কাকে বলে?”
লে এখন আমার উনাকে এই ব্যাখ্যা দিতে হবে বউ কাকে বলে? আল্লাহ। একটু ভেবে বললাম,,
“একটা ছেলে আর একটা মেয়ে যখন আল্লাহর কালাম পড়ে বিয়ে করে তখন সেই মেয়েটা সেই ছেলেটার বউ হয়। এখন প্লিজ আর এইটা বলবেন না যে আপনি বিয়ে মানেও জানেন না।”
“আচ্ছা কিন্তু বিয়ে মানে কি?”
“হায় আল্লাহ। এত কিছু কি করে ব্যাখ্যা দিবো আপনাকে? আপনি বরং এখন ঘুমান। যখন সুস্থ হয়ে যাবেন তখন সব বুঝাবো কেমন!”
অনুভব মাথা নাড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আমিও পাশে শুয়ে পড়লাম। একটুর মধ্যেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। জোড়ে বাতাস বইছে। মেঘ ডাকছে। হঠাৎ করেই অনুভব আমাকে ধরে বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। আমি তো থ মেরে গেছি। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,
“কি..কি হয়েছে?”
“মেঘ ডাকছে। আমার না অনেক ভয় করে মেঘ ত
ডাকলে!”
“আচ্ছা। ঘুমান!”
অনুভব বুকে মাথা রেখে ছোট বাবুর মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি কয়েক সেকেন্ড উনার দিকে তাকিয়ে থেকে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম।
মাঝরাতে হঠাৎ করে অনুভব চিল্লিয়ে উঠে বলল,,
“ছেড়ে দাও আমাকে। কষ্ট হচ্ছে আমার। প্লিজ ছেড়ে দেও। আমি বাড়ি যাবো। মেরো না আমাকে আর। আমার কষ্ট হচ্ছে। ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও আমাকে।”
অনুভবের চিল্লাচিল্লিতে ধড়ফড়িয়ে উঠে ওকে ধরতে গেলেই সজোড়ে ধাক্কা মারে। বার বার এক কথায় বলছো ছেড়ে দাও আমাকে। পাশ থেকে লাইট জ্বালিয়ে তাড়াতাড়ি অনুভবকে ধরলাম।
“অনুভব শান্ত হন। কেউ নেই এখানে। কেউ নেই। কেউ মারবে না আপনাকে৷ তাকান আমার দিকে।”
অনুভব আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো চেঁচিয়েই যাচ্ছে। এবার ওর বাহু ধরে একটু জোড়ে অনুভব বলে চেঁচিয়ে উঠতেই সে শান্ত ভাবে আমার দিকে তাকালো।
“কি হয়ছে আপনার? এভাবে চেঁচাচ্ছিলেন কেন? দেখেন কেউ নাই এখানে। কেউ মারবে না আপনাকে!”
অনুভব কিছু না বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো করে কান্না করে দিলো। কান্না করতে করতে বললো,,
“ওরা খুব পঁচা। আমাকে অনেক মারে। রাতের বেলায় কি দেয় আমার কানে তখন আমার খুব কষ্ট হয়। চেঁচালে আমাকে আরো মারে।”
অনুভব এসব বলে কেঁদেই যাচ্ছে। ওর কথা শুনে বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে। অনুভব ওখানে অনেক কষ্ট করেছে যার জন্য ওর ভয় এখনো কাটেনি। অজান্তেই চোখ থেকেই কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। ভালোবাসার মানুষের এতো কষ্ট কি সহ্য হয়? অনুভবকে ধরে শুইয়ে দিয়ে লাইট জ্বালিয়েই রাখলাম। অনুভব অন্ধকারে ভয় পেতে পারে। আমার আগে থেকেই জ্বালিয়ে রাখা উচিত ছিলো তাহলে হয়তো আর এত ভয় পেতো না বেচারা। অনুভবকে শুইয়ে দিতেই ও আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আগের মতো বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নিজে নিজেই বললাম,,
“যারা আপনাকে এত কষ্ট দিয়েছে সবাইকে গুনে গুনে শাস্তি দিবো আমি। না না আপনাকে দিয়ে নিজের হাতে শাস্তি দেওয়াবো। তার আগে আপনাকে সুস্থ করতে হবে আমার। এবার আর লুকিয়ে না সবার সামনে থেকে সবাইকে শাস্তি দিবো। প্রত্যেককে আপনার থেকেও মানসিক যন্ত্রনা দিবো। যারা যতটা অন্যায় করেছে আপনার প্রতি সবাই শাস্তি পাবে। আপনাকে আর আমাকে আলাদা করার শাস্তি দেবো। জিবন থেকে ৮ টা মাস কেড়ে নেওয়ার শাস্তি দিবো হ্যাঁ দেবোই। ওয়েট করো তোমরা আসছি। বেশি ওয়েট করাবো না জাস্ট ৩ টা দিন……..
চলবে..
#স্নিগ্ধ_অনুভব
#বোনাস_পার্ট
#পিচ্চি_লেখিকা
সারাবাড়িতে খুজেও অনুভবের খোজ পাচ্ছি না। গেলো কোথায় লোকটা তাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। উনি তো এখানকার কিছুই চেনে না। যদি আবর কোনো বিপদে পড়ে! উফফ উনার চিন্তায় আমি পাগল হয়ে যাবো। উনাকে খুঁজতে খুঁজতে লিভিং রুমে এসে দেখি আন্টি, ভাবি বসে টিভি দেখেতেছে। আমাকে হন্তদন্ত হয়ে নামতে দেখে আন্টি বললো,,
“এত দৌড়ে আসছিস কেন? কিছু কি হয়ছে?”
“আন্টি অনুভবকে দেখেছো? ওকে কোথাও পেলাম না। রুমে, বারান্দায়, ছাদে অন্যান্য জায়গায়ও দেখেছি কোথাও নেই। উনি এখানকার কিছু চেনে না। বিপদে পড়লে কি হবে?”
“আরে নিঃশ্বাস নে মা। অনুভব বাগানে!”
আন্টির কথায় একটু অবাক হলাম। উনি একা একা বাগানে চলে গেলো। তাও আমাকে না জানিয়ে!
“আন্টি উনি একা একা গেলো কি করে? আমাকেও তো জানিয়ে যায়নি!”
“আরে আর বলিস না। সিফাত বাগানে খেলবে বলে বায়না ধরেছে। তুই ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছিলি তাই তোকে ডাকিনি। তুই চিন্তা করিস না আইদা, সিফাত ওদের সাথেই বাগানে খেলছে অনুভব।”
আইদা সাথে আছে শুনেই যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। সিফাতের সাথে একা থাকলে চিন্তা হতো ২ জনেই বাচ্চা। অনুভব তো বড় হয়ে বাচ্চা হয়ে গেছে। শান্ত হয়ে আন্টির পাশে বসতেই আন্টি বললো,,
“অনুভবকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছিস তাই না?”
“হুম আন্টি। উনি একদম বাচ্চাদের মতো বিহেভ করে। সব কিছু যেনো উনার ধারণার বাইরে। চিন্তায় আমার মাথা ঘুরায়। উনাকে কেউ স্নিগ্ধবতীর কথা বললেই বোকার মতো তার সাথেই চলে যাবে। বুঝতে পারছো কতটা ছেলেমানুষ। বাচ্চাদের যেমন কেউ চকলেট দিয়ে ডাকলেই চলে যায় উনি ঠিক তেমন।”
আন্টি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,
“এমন অবস্থা কে করলো ছেলেটার? কি নিষ্পাপ চেহারা। ওর মুখ দেখলেই তো মায়া কাজ করবে তাহলে ওর এমন অবস্থা কিভাবে করলো?”
“কে করছে? কেন করছে? সবটা খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবো। অপেক্ষা শুধু প্রমাণের। তোমাদেরও অনেক বিরক্ত করছি আর ২ টা দিন পর তোমাদেরও আর বিরক্ত করবো না।”
“এই মেয়ে তুই এখন মার খাবি। বিরক্ত কি রে? আমি তো তোদের ছেলে মেয়েই ভাবি। তুই সারাজীবন এখানে থাকলেও কেউ কিছু বলবে না।”
পাশ থেকে ভাবি বললো,,
“মা ও বেশি পেকে গেছে। ওর হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে দিতে হবে।”
“ঠিক বলেছিস,,ওকে ইচ্ছা মতো পিটানি দিলে ও বুঝবে।”
“ওরে বাবা থাক আমি আর মার খেতে চায় না। তোমরা টিভি দেখো আমি অনুভবকে নিয়ে আসি।”
“আচ্ছা যা।”
আন্টিদের কাছে থেকে উঠে গিয়ে বাগানে গেলাম। সেখানে আইদা, সিফাত আর অনুভব বল দিয়ে খেলছে। ৩ টাই বাচ্চা পুরা। সিফাতের থেকে তো আইদা আর অনুভবকেই আমার বাচ্চা মনে হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,,
“সিফাত বাবা টা কি খেলছে?”
“বল খেলতি। তুমি খেলবে?”
“না বাবা তুমি আর ফুপি মনি খেলো আমি তোমার আঙ্কেলকে নিয়ে যায়। উনার এই পাগলু লুক টা বদলাতে হবে নয়তো উনাকে দেখলে পাগল কমিটির সদস্য ভেবে উনাকে নিয়ে চলে যাবে বুঝছো।”
আমার কথা শুনে সিফাত খিলখিল করে হেঁসে বললো,,
“আত্তা নিয়ে যাও।”
আমি অনুভবের কাছে যেতেই দেখি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আবার কি হলো? আজব!
“এভাবে গাল ফুলিয়ে রাখছেন কেন?”
“আপনি আমাকে পাগলু বললেন কেন?”
“কখন বললাম?”
“শুনেছি আমি।”
“আরে আমি তো আপনাকে পাগলু বলিনি। এই যে আপনার লুক দেখছেন না? ইয়া বড় বড় দাড়ি,, এত উস্কো খুস্কো চুল এগুলোকে পাগলু লুক বলেছি বুঝছেন?”
“ওই হলো একই কথা।”
“আগের মতো পেঁচাইলা রয়ে গেছেন আপনি। এই আপনি আদৌ পাগল তো?”
“আপনি আমাকে আবারও পাগল বললেন? যাবো না আমি আপনার সাথে!”
এই বলে অনুভব মাটিতেই বসে পড়লো।
“আরে আরে উঠুন।”
“না উঠবো না। উঠলে আপনি আপনার সাথে নিয়ে যাবেন। আমি তো যাবো না!”
“আরে মেরি মা,,নে মাফ কর আমারে। সরি তো আর বলবো না এসব। প্লিজ উঠুন। আপনার দাড়ি চুল কেটে পরিষ্কার করিয়ে গোসল করাতে হবে!”
“না আমি কিছু করবো না।”
এ কি ঘাড়ত্যাড়া লোক রে বাবা? এইটা সুস্থ থাকতেও জ্বালাইছে এখন পাগল হয়েও জ্বালাচ্ছে🥺
“আপনি যাবেন না তো? ঠিক আছে আমিও আপনাকে স্নিগ্ধবতীর কাাছে নিয়ে যাবো না। খেলনাও দেবো না। চকলেটও দেবো না।”
অনুভব এক লাফে উঠে বললো,,
“চলুন আমি আপনার সাথে যাবো।”
মুচকি হেঁসে অনুভবকে নিয়ে আসতে গিয়ে দেখি সিফাত আর আইদা অনুভবের কান্ড দেখে হাঁসছে। আমি অনুভবকে নিয়ে উপড়ে এসে চুপচাপ বসিয়ে চুল আর দাড়ি কেটে ছোট করে দিলাম। উনিও ভদ্র ছেলের মতো বসে রইলেন। কাটা শেষ করে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে বসিয়ে রেখে আমিও গোসল করে বের হলাম। এসে দেখি যেভাবে রেখে গেছি সেভাবেই আছে। এত পরিবর্তন কয়েক মিনিটে? কেমনে হয়লো? আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,
“এত ভালো ভদ্র কবে হইলেন?”
“আমি তো আগে থেকেই ভদ্র।”
“একটু আগে বাগানে ঘাড়ত্যাড়ামো করলেন এখন যা বলছি তাই করছেন ব্যাপার কি?”
অনুভব চোখ ছোট ছোট করে বাচ্চাদের মতো করে বললো,,
“আপনি যদি আমাকে স্নিগ্ধবতীর কাছে না নিয়ে যান, চকলেট না দেন, খেলনা না দেন, তাই! আর আপনার কথা না শুনলে যদি ওদের মতো আপনিও আমাকে মারেন তাই।”
অনুভবের কথা শুনেই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। না জানি কতটা কষ্ট দিছে ওকে ওরা। সব গুলোকে যদি শাস্তি না দিতে পারি তাহলে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেবো। আর আমার নিজের প্রতি এতটুকু কনফিডেন্স তো আছেই যে ওদের আমি শাস্তি দিতে পারবো। হয় অনুভব দেবে নয়তো আইন। তবে প্রত্যেককে আমি অনুভবের মতো কষ্ট দেবো। ভয়ংকর কষ্ট। যে কষ্টে অনুভব দাপড়াচ্ছে প্রত্যেকটা কষ্ট ওরাও পাবে। অনুভবকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে ওকে বললাম,,
“আজকে বেড়াতে যাবেন?”
অনুভবের চোখ চকচক করে উঠলো। ও মুহূর্তেই মাথা নাড়িয়ে বললো,,
“হুম যাবো। আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন?”
“হুম তার আগে আপনার খেয়ে নিতে হবে। নয়তো আমি নিয়ে যাবো না।”
“আচ্ছা খাবো।”
“ঠিক আছে বসেন আমি খাবার নিয়ে আসছি। আমাকে না বলে কোথাও যাবেন না কেমন!”
“আচ্ছা।”
অনুভবকে রেখে আসতে যাবো তখনই ফোনে টুং করে একটা ম্যাসেজ আসলো৷ ফোন টা হাতে নিতেই দেখি তন্নির মেসেজ।
“একটা মিশন কমপ্লিট। বাকি ২ টাও হয়ে যাবে!”
আমি রিপ্লাই করলাম,,
“কার বাাড়িতে লাগিয়েছিস?”
“তোদের বাড়িতে। বাপরে কি ডেঞ্জারাস? অনেক ভয় পাইছি বা**। ভাগ্যিস সাথে তামিম ছিলো ওই সবটা ম্যানেজ করেছে। যায় হোক আমি ভাবছি আজকেই মেঘুর বাড়ি যাবো। ওকেও দেখা হবে কাজও করা হবে!”
“ঠিক আছে। তুই আজকেই সব করে ফেল। ২ দিন পর আমি আসছি।”
“সত্যি?”
“হুম। এখন বাই পরে কথা হবে।”
“ওকে বাই।”
ফোনটা রেখে অনুভবের দিকে তাকিয়ে দেখি বাচ্চাদের মতো হাটু মুড়ে বাবু হয়ে বসে রুমে চোখ বুলাচ্ছে। আমি আর না দাঁড়িয়ে নিচে গেলাম খাবার আনতে।
অনুভবকে খাইয়ে নিজে খেয়ে আগে অনুভবকে রেডি করলাম। বেচারারও দরকার একটু বাহিরে যাওয়ার। খোলা পরিবেশে মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে। অনুভবকে রেডি করিয়ে বললাম,,
“আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি ঠিক আছে বাট আপনার আমাকে একটা কথা দিতে হবে & সেই কথা মানতে হবে।”
অনুভব ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বললো,,
“কি কথা?”
“আমি ছাড়া আপনি কারো কাছে যাবেন না। কেউ স্নিগ্ধবতীর কথা বললেও যাবেন না। ওরা কিন্তু নিয়ে গেলে এবার আর আপনাকে বাঁচতে দেবে না।”
“কেন?”
“এত প্রশ্ন করেন কেন? আপনি কি আমার কথা শুনবেন না?”
অনুভব চুপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আলতো করে ওর গালে হাত দিয়ে বললাম,,
“বিশ্বাস করেন না আমাকে?”
অনুভব মাথা উপর নিচ করে বোঝালো “হ্যা করে”
“তাহলে আমার কথাটা মানেন। সময় হলে আপনি আপনার স্নিগ্ধবতীকে পেয়ে যাবেন। তার আগে কাউকে বিশ্বাস করবেন না। সবাই কিন্তু স্বার্থপর।”
অনুভব কি বুঝেছে জানি না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে মাথা উপর নিচ করলো। আমি ওকে রেখে নিজেও রেডি হয়ে নিলাম। কোনো রিস্ক নেওয়া যাবে না এখানে। তাই অনুভবকে মাস্ক পড়িয়ে আমি নিজেও মুখ আটকে নিলাম। এই লোক তো প্রথমে পড়বেই না। কত জোড় করে পড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি। একা যাওয়া ঠিক হবে না। তাই আইদা, সিফাত আমি আর অনুভব যাচ্ছি। ওরা থাকলে তাও কেউ সন্দেহ করবে না।
৪ জনে মিলে চলে আসলাম একটা পার্কে। এখানে অনেক বাচ্চারা খেলছে। সিফাত আর অনুভবও বাচ্চাদের সাথে মেতে আছে। আইদা আর আমি ওদের দুজনকে চোখে চোখে রাখছি। আশে পাশে তাকাতেই হঠাৎ……………
চলবে…..