স্নিগ্ধ অনুভব পর্ব-১১

0
1530

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:১১
#পিচ্চি_লেখিকা

কাল থেকে মেঘলার বিয়ের অনুষ্ঠান তাই চুপ চাপ কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছি। আর অনুভব একাধারে জিজ্ঞেস করেই চলেছে অতীতে কি হয়েছিলো কিন্তু আমি কিছু বলিনি। এসব জানতে পারলে উনি কষ্ট পাবে,,আমি চাই না উনি কষ্ট পাক তাই তো চুপ করে আছি। মেঘলা বলে দিয়েছে আজ থেকেই যেনো আমি, অনুভব, তন্নি, তামিম, তিশা আপু, অনা সবাই যেনো ওর বিয়েতে যায়। তিশা আপু কাল যাবে তাই আজ আমি অনুভব আর অনা যাবো। আর তন্নি তামিম ও ওইদিক থেকে আসবে। অনুভব এতো বার জিজ্ঞেস করার পরও আন্সার না পেয়ে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো। আজকাল অনুভবের বিহেভে বড্ড অবাক হয়। কয়েকদিন আগেও যে লোক কথায় কথায় থাপ্পড় দিতো সে এখন থাপ্পড় তো দুর ধমকও দেয় না। উনার রাগ জেদ এসবে আমার বেশ ধারণা আছে। উনি একটুতেই রেগে যান অথচ রাহাতের কথা শুনে রিয়েক্ট করলো না? কেন?

মেঘলাদের বাড়ি চলে এসপছি। অনুভবে রাগে আমার সাথে কথাটাও বলেনি। পুরো রাস্তা চুপ ছিলো৷ আমাকে আর অনাকে দিয়ে হসপিটালে চলে গেছে। মেঘলা অনেকবার নিষেধ করা সত্বেও অজুহাত দিয়ে চলে গেলো। বলেছে আসতে রাত হবে। আমি কিছু বলিনি। তন্নি আর তামিমও চলে এসেছে। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি।
“তোর জামাই কই রে স্নিগ্ধু?” (তামিম)
“তোর হঠাৎ আমার জামাইরে দিয়া কি কাজ?”
“আরে তোর জামাইয়ের পায়ের ধুলা নিমু। ছোট বোনের ঝাঁড়ি খেয়ে একদম ফিট হয়ে গেছে। তোর ওই ননদ আমার বড় না হয়লে একটা চান্স নিতাম!”
“ওই ওই তামিম্ম্যা সাবধানে কথা কবি ওইডা আমার ননদিনী লাগে। তোর বড় আপু হয়। সম্মান কইরা কথা কবি।”
“ধুরো লুচু। তোর শুধু মাইয়া পটানো ছাড়া কাম নাই নাকি?” (তন্নি)
“আহারে মোর সাধু সন্ন্যাসী! তুমি যে সারাদিন ছেলেগো সাথে ফ্লার্ট করো তাতে কিছু না তাই না!” (তামিম)
“আমি কি তোর মতো বান্ধবীর ননদ রে পটানোর কথা কয়ছি?(তন্নি)
” তুই মাইয়া মানুষ তুই কেন ওর ননদরে পটাইয়ে যাবি? বাই দ্যা ওয়ে, স্নিগ্ধু জানে তুই যে তলে তলে কতদূর গেছিস?”(তামিম)
“এই দাঁড়া দাঁড়া তামিম্ম্যা আমি কি জানি না রে? কাহিনি কি?”
“ধুরু ছেরি দাঁড়ায়তে কস কেন? তোর বান্ধুপিরে জিগা কি করতেছে তলে তলে?” (তামিম)
“এই তোরা এত ঝগড়া করিস কেন বল তো? তন্নি কাহিনি কি?” (মেঘলা)
“আ..আরে কিছু না। ওর কথা বিশ্বাস করিস কেন তোরা?” (তন্নি)
“আমার কথা বিশ্বাস করবে না কেন? আমি বলবো তুষার ভাই……(তামিম)
” এই থাম থাম মেরি ভাই। এমনে আমার প্রেসটিজ ফুটা করিস না ভাই।”(তন্নি)
“সর সর আমি কমুই যে।”(তামিম)
“এই তোরা ২ টা থাম। যেকোনো একজন বল কাহিনি টা কি?”
“আমি বলি তন্নি!”(তামিম)
“ইয়ে মানে!”(তন্নি)
“তুই থাম। তামিম তুই বল,,”
“আরে আমাদের তন্নি তো তুষার ভাইয়ার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কয়দিন তো যেখানে তুষার সেখানেই তন্নি🥴” (তামিম)
তামিমের কথা শুনে আমি আর মেঘলা হা করে তন্নির দিকে তাকিয়ে আছি আর তন্নি ফোকলা হাসি দিয়ে বসে আছে। আমি আর মেঘলা দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দিলাম।
“তন্নি তুইও না। তুষার ভাইয়ার পিছনে পড়ছিস এখন? তুষার ভাই কিন্তু অনুভবের মতোই রাগী। ফ্লার্টিং করা ছেড়ে দে মেরি মা। নয়তো আমার মতো থাপ্পড় খেতে খেতে শহিদ হয়ে যাবি।”
তন্নি চোখ ২ টা ছোট ছোট করে বললো,,
“ফ্লার্ট করছি না আমি। আই রিয়েলি ফিল লাভ উইথ হিম।”
“মজা করা বাদ দে। চুপচাপ বসে থাক।”
৪ জনই গল্পে মেতে ছিলাম তখনই দরজার বাইরে থেকে অনা ডাকলো।
“ভাবি”
অনার কথায় ওর দিকে তাকালাম। ওর কথা আমার মনেই ছিলো না। ওকে আমি রুমে রেখে এসেছিলাম।
“সরি সরি অনা আসলে আমি ভুলে গেছিলাম। রিয়েলি সরি।”
“ইটস ওকে ভাবি।”
তারপর ৪ জন মিলে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম। তন্নি সত্যি সত্যি তুষার ভাইয়ার প্রেমে পড়েছে। এই মেয়ের সাহস আছে বটে।

রাতে ডিনার করে একা একা রুমে বসে আছি। অনুভব সেই যে গেছে এখনো ফেরে নি। ফোন টাও সুইচড অফ বলছে। চিন্তায় মাথা হ্যাং মেরে গেছে্। ওরা সবাই আড্ডা দিচ্ছে আমাকে একবার ডেকেও গেছে কিন্তু আমি যায়নি। রুমের মধ্যে কখনো পায়চারী করছি তো কখনো বসছি কখনো বারান্দায় যাচ্ছি। শান্তি মতো বসতে পারছি না। হঠাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজে পেছনে তাকাতেই দেখি অনুভব এসেছে। চুল গুলো এলোমেলো,,চোখ লাল হয়ে আছে। বিধ্বস্ত অবস্থা তার। আমি তাড়াতাড়ি ওর কাছে এগিয়ে বললাম,,
“কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? ফোন অফ কেন আপনার? আর..আর এই অবস্থা কেন আপনার?”
“এত অস্থির হওয়ার কিছু হয়নি,,সর।”
অনুভব আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আমি গিয়ে বেডের এক কোণে চুপ করে বসে আছি। কিছুক্ষণ পরই অনুভব ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলো। চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো,,
“সবাইকে দেখলাম মেঘলার রুমে আড্ডা দিচ্ছে তা তুই এই রুমে কেন?”
অনুভবের কথায় ওর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়েই মাথা নিচু করে বললাম,,
“আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম। আপনাকে এই রুমে কে দিয়ে গেলো?”
“অনা!”
“ওহ!”
“হুম!”
কি ভেবে অনুভবের কাছে গিয়ে ওর মুখোমুখি দাঁড়াতেই বললো,,
“কি হয়ছে?”
“কোথায় ছিলেন?”
“তোকে তো বলেই গিয়েছিলাম হসপিটালে যাচ্ছি.. তাহলে?”
“ফোন অফ কেন?”
“এমনি!তোর এসব না জানলেও চলবে।”
“এভাবে বলছেন কেন? আমি তো আপনার বউ! আপনার বিষয়ে সব জানার অধিকার আমার আছে।”
“আমার নেই?”
“থাকবে না কেন?”
“তাহলে আমি কেন জানি না তোর অতীত? কেন তুই এড়িয়ে যাস আমাকে?”
“………..
” জানি তুই কিছুই বলবি না। যায় হোক ঘুমিয়ে পড়।”
অনুভব আমাকে পাশ কেটে চলে যেতে লাগল। তখনই বলে উঠলাম,,
“সবটা জানলে ভেঙে পড়বেন না তো?”
অনুভব আমার থেমে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“কি এমন করেছিস যে ভেঙে পড়বো?”
“আমি আর কি করবো? আমি তো ওই বাড়ির আশ্রীতা ছিলাম। ওই পরিবারের স্বার্থের জন্য আমাকে বলি দিতেও ভাবেনি।”
“মানে?”
আমি অনুভবের কাছে এগিয়ে গিয়ে আলতো করে উনার গালে হাত দিয়ে বললাম,,
“আজ না। মেঘুর বিয়ে শেষ হোক সব জানবেন আপনি!”
“আজ বললে কি হবে?”
“কাল থেকে মেঘুর বিয়ে। বিয়েটা খারাপ কাটুক আমি তা চায় না। প্লিজ বিয়ের শেষে সব বলবো এইটুকু সময় অপেক্ষা করুন। করবেন তো?”
অনুভব তার গাল থেকে আমার হাত সরিয়ে হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,,
“করবো বউ। অপেক্ষা করবো!”
আমি মৃদু হেঁসে বললাম,,
“এবার চলেন খেয়ে নেন।”
“খেয়ে আসছি আমি। তুই খেয়েছিস?”
“খেয়ে এসেছেন মানে? কার সাথে খেয়ে আসছেন হ্যাঁ?”
“আরে বউ কি বলিস? আমি তো একাই খেয়ে আসলাম।”
“সত্যি তো?”
“হুম রে বইন হুম।”
“আচ্ছা শুয়ে পড়েন যান।”
“কোথায় শুবো আজ?”
“বেডে শুয়ে পড়েন। এমনিতেও আমরা হাসবেন্ড-ওয়াইফ, আর তাছাড়াও এটা মেঘুদের বাড়ি। কেউ ভুল করেও আপনাকে সোফাতে দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
“থাক ম্যাডাম আর লজিক দিয়েন না।”
“আইচ্ছা দিমু না আর।”
“ঘুমাবি না তুই?”
“না আমি যাবো ওদের সাথে আড্ডা দিতে।”
“তো আমি একা একা কেন ঘুমাবো?”
“তো আপনি কি বাচ্চা যে দোকলা নিয়ে ঘুমাবেন।”
“চুপ কর। কথা কম বলে আমার সাথে ঘুমা।”
“না ঘুম….
আর কিছু বলতে না দিয়ে অনুভব আমাকে বেডে ফেলে দিয়ে বললো,,
” ঠিক মতো শুয়ে পড়।”
“ধ্যাত আমি ওদের কাছে যাবো!”
“রাগ উঠাবি না। চুপচাপ ঘুমা। নয়লে তোকে..
” থাক ঘুমাচ্ছি।”
অনুভব আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। আমি চুপ করে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি। মাথাটা একটু বের করে দেখি অনুভব গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি আবারও কম্বলের মধ্যে মুখ লুকিয়ে শুয়ে থাকলাম। কয়েক সেকেন্ড যেতেই অনুভব এক টানে নিজের কাছে নিয়ে মিশিয়ে নিলো৷ আমি তল অবাক হয়ে গেছি। কখনো আমার সাথে ঘুমায় না আর আজ কি না নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে। আমি অবাকের রেশ কাটিয়ে মাথাটা অনুভবের বুকে রেখে ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আজ মেঘলার গায়ে হলুদ। সবাই খুব সুন্দর করে সেজেছে। সকাল থেকেই বাড়িতে হৈ হুল্লোর করে মেতে থেকেছি সবাই। অনুভবও আমাদের আনন্দে সামিল হয়েছিলো। এখন সন্ধ্যল হয়ে গেছে। সবাই সেজেছে। কেউ শাড়ি তো কেউ লেহেঙ্গা পড়েছে। কেউ ব্রাউডাল সাজে তো কেউ হালকা সাজে। মেঘলা কে শাড়ি পড়িয়ে হালকা সাজে সাজানো হয়েছে। ফাহিম ভাইয়া ফোন দিয়ে আগে দেখে নিয়েছে তার বউকে৷ তন্নি, অনা, আমি, তিশা আপু ৪ জনই লেহেঙ্গা পড়েছি্। আমি শপিং করার সময় অনার জন্যও কিনে শপিং করে নিয়েছিলাম। অনুভবও বিনা বাক্যে ওর জন্যও শপিং করিয়ে দিয়েছে্। আমি শাড়ি পড়তে পারি না তাই লেহেঙ্গাই পড়েছি। এখনো হলুদ মাখানো শুরু হয়নি। ফাহিম ভাইয়ার বাসা থেকে হলুদ তত্ত্ব আসলে মাখানো শুরু হবে। এখন থেকেই সবাই অনুষ্ঠান নিয়ে মাতামাতি করছে। কেউ নাঁচছে কেউ গায়ছে। কেউ কাপল ডান্স করছে। একেকটা পারফর্ম দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। সবার মাঝেই কোনো না কোনো দক্ষতা রয়েছে। অনুভব আর আমি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। অনুভব পাঞ্জাবি পড়েছে। শুধু অনুভব একা না প্রাই সব ছেলেরাই পাঞ্জাবি পড়েছে। তন্নি তো তুষার ভাইয়া কে পটাতে ব্যস্ত। তুষার ভাইয়া বার বার চোখ গরম দিচ্ছে আর তন্নি ৩২ টা দাঁত বের করে হাঁসছে। ওর এমন অবস্থা দেখে আমি আর অনুভব হাঁসতে হাঁসতেই শেষ।
অনুভব আর আমি গল্প করছিলাম তখনি তন্নি দৌড়ে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়।
“অনুভব ভাইয়া,,চলেন এবার আপনার পারফর্ম।” (তন্নি)
“আমার পারফর্ম মানে?”
“আমরা কিন্তু জানি আপনি অনেক সুন্দর গান গায়তে পারেন সো এখন গান গাইবেন।”
“না না আমি পারবো না।”
“না ভাইয়া প্লিজ। আজ মেঘুর গায়ে হলুদ আজ অন্তত ওর জন্য গান গাইতেই পারেন। প্লিজ প্লিজ ভাইয়া!”
“এহহ না। আমার এত মানুষের মাঝে গান গাইতে লজ্জা করবে।”
আমি অনুভবের কথা শুনে হা হয়ে গেছি। মুখ থেকে আপনা আপনি বের হয়ে আসে,,
“অ্যাাাাা?”
আমার অ্যাাা বলায় সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অনুভব বললো,,
“অ্য্যাাাা বলার কি হয়ছে?”
“কি..কিছু না।”
মুখে কিছু না বললেও মনে মনে বলতেছি😁😁
“এই লোকের আবার লজ্জা! হাউ ফানি। রাস্তায় বলে বউয়ের সাথে রোমান্স করবে আর এখানে গান গাইতেই নাকি উনি লজ্জায় মরে যাবেন হুহ।”
তন্নি জোড় করে অনুভবকে নিয়ে গিয়ে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দিলো৷ অনুভব গলা ঝেড়ে গিটার নিয়ে গান গাইতে শুরু করলো,,

Tere dar pe aake tham gaye
Naina namazi bann gaye
Ek dooje mein yun dhal ke
Aashiqana aayat ban gaye
main aur tum…..
Kaisi dill lagaai kar gaye
Rooh ki rubaai bann gaye
Khaali khaali dono thhe jo
Thoda sa dono bhar gaye
main aur tum…..
Chalo ji aaj saaf saaf kehta hoon
Itni si baat hai mujhe tumse pyar hai
Yunhi nhi main tumpe jaan deta hoon
Itni si baat hai mujhe tumse pyar hai

Chalo ji aaj saaf saaf kehta hoon
Itni si baat hai mujhe tumse pyar hai
Mujhe tumse pyar hai……(আমি আর পারি না হিহিহি যার যার ইচ্ছা ইউটিউব থেইকা শুনে নিয়েন😏)

অনুভব পুরে গানটাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। লজ্জায় মাথা নিচু করে নিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে টান দিয়ে মুখ চেপে একটা রুমে নিয়ে গেলো…..

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)
হ্যাপি রিডিং😊

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে