#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৪
শরীফ আমার ফোন হাতে নিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে আপেল চিবুচ্ছি।আমাকে কিছু বলতে না দেখে শরীফ ফোনটা আছার মেরে দুই টুকরো করে ফেলল।আমি চমকে শরীফের দিকে তাকাই,আর অস্থির হয়ে বলে উঠি,,,
“হায় হায় আমার কলিজাটা ভেঙ্গে দুই টুকরা হইয়া গেলো গো।এখন আমি কেমনে বাচমু গো,ও খোদা গো আমার এত বড় সর্বনাশ কেন করলা গো।”
বলেই ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলাম,আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে শরীফ তার রাগ ভুলে আমার কাছে এসে বলে উঠল,,,
“কলিজা ভেঙ্গে গেছে মানে?কী বলছো এসব তুমি!তোমার শরীর খারাপ লাগছে নাকী?আর বাঁচবে না মানে কেমন কথা এটা।তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো,আর নয়ত চলো এখনই ডাক্তার দেখাব তোমাকে।”
কথাটা বলে শরীফ আমার হাতটা ধরে টান দিলে আমি হাত ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছে ফ্লোর থেকে ফোনটা তুলে শরীফকে যাওয়ার জন্য ইশারা করলাম।শরীফ আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।তারপরই সন্দেহ নিয়ে বলে উঠল,,,
“তুমি হসপিটালে যাবে কিন্তু এই ভাঙ্গা ফোনটা সাথে কেন নিলে?তুমি কোন ভাবে আমাকে বোকা বানাও নি ত?”
“আজিব ত বোকা কেন বানাব?আর ফোনটা সাথে না নিলে ডাক্তার দেখাব কী করে?”
“ফোনের সাথে তোমার ডাক্তার দেখানোর কী সম্পর্ক?”
“ফোনকেই ত ডাক্তার দেখাব😊।”
“মানেহ😤!”
“মানেটা ত খুব সহজ,আমার কলিজাটা ভেঙ্গে গেছে আর তুমিই ত বললা ডাক্তার দেখাবে।তাই ত ফোনটা নিলাম ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য।ফোনটা না নিলে ডাক্তার দেখাব কাকে?”
“সদিয়য়য়য়য়য়য়া👿”
আমি শরীফের ধমকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম,তখন আবার শরীফ রেগে বলে উঠল,,,
“ফোনকে কলিজা বলে আমাকে বোকা বানানো,দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা তোমাকে।দুইদিন ধরে খালি দেখছি তোমাকে,কিছু বলছি না বলে ফাইজলামির সীমা দিন দিন বেরেই চলেছে।”
“এক মিনিট,এক মিনিট ব্রেক মারো,নয়ত এক্সিডেন্ট করবে।আর আমার কথা শোন কান,নাক,চোখ সব খুলে নয়ত আবারও ব্লাস্ট হবে রাগে।আমি কোন ফাইজলামি করতাছি না।ফোন আমার কলিজা তাই কলিজা বলেছি।কারন নিজে পড়ে গেলে ততটা কষ্ট লাগে না যতটা না আমার ফোন পড়ে গেলে কষ্ট লাগে।একদম কলিজায় গিয়ে লাগে,আর সেখানে ত তুমি আমার ফোনটা দুই টুকরা করে ফেললে।আমার কলিজা ত ভেঙ্গেই গেছে,এখন যদি তুমি সেটা না বুঝো তবে ত তুমি বোকাই,শুধু বোকা না তার সাথে ডাবল বোকা হবে।”
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বললাম,তারপর শরীফের দিকে তাকিয়ে দেখি বেটা আরো চেতছে🤭।শরীফ এবার আর কিছু না বলে আমাকে টেনে হিছড়ে ছাদে নিয়ে এলো,আর এনেই ছাদের একদম কিনারায় নিয়ে দাড় করাল।এমন ভাবে দাড় করাল যে শরীফ আমার হাতটা ছেড়ে দিলেই পড়ে যাব।আমি শরীফের হাতটা শক্ত করে আকড়ে ধরলাম,সেটা দেখে শরীফ রেগে বলে উঠল,,,
“ছাড়ো আমাকে একদম ধরবে না,এখনই তোমাকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেলব।ফাজলামি করো আমার সাথে হে!”
“আল্লা গো আল্লা কী কও এইসব আমাকে মেরে ফেললে ত তুমি বিধবা হয়ে যাবে।প্লিজ তোমার এত বড় ক্ষতি কইরো না,তোমার সাথে সাথে ত তোমার হবু পোলাপানও এতিম হয়ে যাইব।আমি আর ফাজলামো করব না এবারের মত ছেড়ে দেও।”
“এই মাইয়া এত কথা কেমনে শিখল খোদা?আমাকে পাগল করে ছাড়বে একদম,ফেলে ত দিব না কিন্তু রাগ না হলে,ভয় না দেখালে কাজের কাজ কিছু হবে না।আর এই মাইয়াও চুপ করবে না।আমার কানের তেরোটা বাজাইয়া ছাড়ব।” (মনে মনে শরীফ বলল)
“ছাড়ব তবে একটা শর্ত আছে,রাজি থাকলে বলো নয়ত ধাক্কা দিয়ে সত্যি সত্যি ফেলে দিব।”
“আল্লা না না এমন কইরো না আমি রাজি সব শর্তে রাজি।কিন্তু তার আগে আমাকে এখান থেকে উঠাও প্লিজ।”
“এখন আমি যা জানতে চাইব সবটা বলবা কোন ফাজলামো না করে আর যা বলব সব মেনে নিবা ঠিক আছে।”
“আগে ত এখান থেকে উঠি তারপর তোরে কেমনে টাইড দিতে হয় আমার ভালো করেই জানা আছে।”
মনে মনে কথাটা বলে তাড়াতাড়ি মাথা ঝাঁকিয়ে উওর দিলাম সব মানব।শরীফ আমাকে আর কিছু না বলে সরে এসে আমাকে ছাদের মাঝখানে নিয়ে এলো।আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম,তখন শরীফ তার হাত গুজে বলে উঠল,,,
“ছেলেটা কে যার সাথে ফোনে কথা বলছিলে তখন?”
“ওটা ত আমার ফ্রেন্ড।”
“ছেলের সাথে কীসের বন্ধুত্ত,আর বন্ধুকে মিস ইউ বলার কী মানে?”
“আরে ছেলে মেয়ের সমান অধিকার কথাটা কী জানো না তুমি?ছেলে মেয়ে সবাই বন্ধু হতে পারে এটাও ত একটা অধিকার তাই না।আর বন্ধুত্ত করতে পারব বন্ধুকে মিস করলে মিস ইউ বলতে পারব না নাকি?”
মজা করতে গিয়ে কী থেকে কী বলতাছি নিজেও জানি না,শুধু জানি এই রাক্ষসটার হাত থেকে বাঁচতে হবে।
“না পারবে না,আজ থেকে ছেলেদের সাথে কথা বলা যাবে না,কোন ছেলে ফ্রেন্ড থাকবে না আজ থেকে।”
“এহহ বললেই হল থাকবে না।থাকবে ছেলে বন্ধু একটা কেন হাজারটা থাকবে তাতে তোমার কী?তোমার কী জ্বলে,হিংসা লাগে নাকি গো?”
“চুপ একদম চুপ,আর একটা কথা বলবা ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।যেটা বলেছি সেটা করবা খালি বেশি কথা।”
“তুই চুপ কর,শালা খাটাশ,খবিশ,হিটলার কোথাকার।তুই অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারবি,তোর মেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড থাকতে পারবে আর আমার ছেলে ফ্রেন্ড বানাতে পারব না।তোর কথা শুনতে আমার বয়েই গেছে।”
শরীফ আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে,শরীফ ভাবতেই পারে নি আমি এভাবে বলব।আমি উত্তেজিত হয়ে এতগুলো কথা বলে এখন ভাবছি কী বলে ফেললাম এসব।তাই চুপচাপ কিছু না বলে কেটে পড়লাম।আজ হাওয়া গরম আজ আর সামনে যাওয়া যাবে না,তাই আমি টাটা বায় বায় হয়ে যাই।
কিন্তু ফোনটা ভেঙ্গে ফেলছে সেটা ভেবেই ভিতরটা কেঁপে উঠল গো,তখন কোন দুঃখে যে বজ্জাতটাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আলামিনের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে গেলাম।যার ফল আমার ফোন এখন নিশ্চিন্তে ঘুমিং,আমি এখন ফোন মিস করিং😭।
____________________________________
সাদিয়ার বাবা তার ভাই আশরাফুলের কাছে ফোন দেয়।সেটা দেখে আশরাফুল ইসলাম কিছুটা গাবড়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে ফোনটা তুলে আর বলে উঠে,,,
“কেমন আছো ভাইয়া?”
“ভাইয়ের খবর রাখিস তুই,বাতিজীকে পেয়ে ত ভাইকে ভুলেই গেছিস।আমার মেয়েটাও হয়েছে তেমন চাচ্চুকে পেয়ে মা,বাবা,ভাইদেরকেও ভুলে গেছে।”
“ভাইয়া যে কী বলো ভুলব কেন?একটু বিজি ছিলাম তাই খবর নিতে পারি নি।”
“আচ্ছা সেটা না হয় বুঝলাম এখন আমার মেয়েটাকে একটু দে ত আরাফাত,ফরহাদ কথা বলবে।”
“আআসলে ভাইয়া সাদিয়া ত একটু বাইরে গেছে,ও আসলে কথা বলিয়ে দিব নে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে,এখন রাখি তবে।”
“আচ্ছা ভাইয়া।”
ফোনটা রেখে আশরাফুল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আর বিড়বিড় করে বলে উঠে,,,
“কতদিন যে এভাবে মিথ্যা বলে চলতে হবে,কবে এই সব লুকোচুরি শেষ হবে।”
কথাটা বলেই তিনি সাদিয়ার নাম্বারে কল দেয়।সাদিয়া ফোন ধরছে না তাই একটা ম্যাসেজ করে দেয় যাতে সাদিয়া ফোন হাতে পেলেই উনাকে কল বেক করে।
#চলবে,,,,