সোনার সংসার পর্ব-১৩

0
1044

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৩

রাতে ডিনার করার জন্য নিচে এসে দেখি সবাই খেতে বসে গেছে,বড় ভাবি খাবার সার্ভ করছে।সবাই আছে কিন্তু আমার হিটলার জামাইটা নাই।আমি কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে আামর শ্বাশুড়ি আম্মার পাশে বসে পড়লাম।আমাকে দেখে আমার শ্বশুর,চাচা শ্বশুর,ছোট দেওর অমিত,আর নিলুফা আপু সবাই যেন ভূত দেখার মত অবাক হয়েছে।কিন্তু অরা সবাই খুব খুশিই হয়েছে আমাকে ফিরে আসতে দেখে,সেটা সবার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছি।কিন্তু শ্বাশুড়ি আম্মার ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।আমি কাউকে কিছু না বলে আমার শ্বাশুড়ি আম্মা আর চাচি শ্বাশুড়ির দিকে তাকালাম।কীভাবে রাগে ফুঁসছে, ভেবেছে আগের মত সব কাজ করে মুখের সামনে খাবার রাখব।এভাবে যে খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ব সেটা বুঝতে পারে নি।আমার বেশ মজাই লাগছে ওদের এমন চেহারা দেখে।হঠাৎ আমার চাচি শ্বাশুড়ি বলে উঠল,,,

“বাড়ির বউ হয়ে কীভাবে বসে আছে দেখো!লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই এই মেয়ের।”

“Same too you.”

আমার এমন কথা শুনে সবার চোখ বের হওয়ার উপক্রম।আমার শ্বাশুড়ি আম্মু রেগে বলে উঠল,,,

“এই মেয়ে তুমি ছোটর সাথে কীভাবে কথা বলছো হে!”

“আপনাকে বলি নি বলে কী আপনার খারাপ লাগছে শ্বাশুড়ি আম্মা,,,ডোন্ট মাইন্ড আপনাকেও বলছি,আপনারাও ত বাড়ির বউ আপনারা কীভাবে চুপচাপ বসে খাচ্ছেন?এবার নিশ্চয়ই ঠিক আছে তাই না শ্বাশুড়ি আম্মু!”

আমি খাবার বেরে নিজের প্লেটে নিতে নিতে কথাটা বললাম,আমার কথায় শ্বশুর আব্বা আর অমিত ফিক করে হেঁসে ফেলল।শ্বাশুড়ি আম্মা কটমট চোখে শ্বশুর আব্বার দিকে তাকাতেই উনি চুপ করে গেলেন।এবার শ্বাশুড়ি আম্মা আমাকে রেগে বলে উঠল,,,

“তোমার মত মেয়ে আমার জীবনে দেখি নি।এমন নির্লজ্জ না হলে কীভাবে এত কিছুর পরও কোন দ্বিধা ছাড়া সবার সাথে খেতে বসেছে দেখো।আমি হলে জীবনেও পারতাম না।”

“আমি ত আপনি না,আর না আপনি আমি।”

“সাদিয়া চুপ করে খাও,কিছু বলো না।” (নিলুফা আপু)

“আমি ত চুপ করেই ছিলাম আপু,কিন্তু তোমার মা আর জেঠিমা ত চুপ থাকতে দিচ্ছে না।ননস্টপ ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়েই চলেছে,এক পা কবরে চলে গেছে তারপরও বুড়িদের তেজ কমছে না।”

“এই মেয়ে মুখ সাম,,,

আর কিছু বলতে পারল না আমার শ্বাশুড়ি আম্মা তার আগেই মুখে একটা আস্ত ডিম দিয়ে দিয়েছি।ডিমটা মুখে নিয়েই উনি আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।আমি মুচকি হেঁসে উনার কয়টা পিক তুলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আমার খাবারটা নিয়ে উপরে চলে এলাম।আর ঐদিকে শ্বাশুড়ি আম্মা কী করছে নিশ্চয়ই জানেন?

_______________________________

সাদিয়ার কাহিনী এতক্ষণ উপর থেকে সবই শরীফ দেখেছে।আর মুচকি মুচকি হাসছে,সে কিছুটা নিশ্চিন্ত এখন সাদিয়াকে নিয়ে,যে সাদিয়া এখন আর আগের মত দুর্বল নেই।কিন্তু সাদিয়াকে উপরে আসতে দেখে শরীফ দৌড়ে রুমে চলে গেলো।

আমি খাবার নিয়ে রুমে ডুকে দেখি শরীফ ঘরে নেই।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ।তাই কিছু না বলে খাবারটা বেডে রেখে তার পাশেই আমি পা ঝুলিয়ে বসে পরলাম।উদ্দেশ্য হল শরীফ আসলে একসাথে খাব।আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শরীফ আসল,আমি সেটা দেখে মুচকি হাসলাম।শরীফ আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বারান্দায় চলে যাচ্ছিল আমি দৌড়ে শরীফের টিশার্টের কলার পিছন থেকে ধরে টানছি।সেটা দেখে শরীফ রেগে বলে উঠল,,,

“What is this?কী করছো এসব,ছাড়ো আমাকে।”

“ভাবটা কম লও,আর বসো খাব আমি।”

“আমি খাব না,ছাড়ো আমাকে।”

আমি শরীফকে এবার বিছানায় বসিয়ে তার সামনে দাড়িয়ে বললাম,,,

“জানি আমনে যে খাইতেন না,আর আমি ত আমনেরে কইও নাই যে খান কিংবা আপনি না খেলে আমি খাব না।”

আমার কথায় শরীফ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো,আমি সেটা দেখে শরীফের আড়ালে মুচকি হাসলাম।তারপর শরীফের কোলে বসে পড়লাম আর খাবারের প্লেটটা শরীফের হাতে দিয়ে বললাম,,,

“খাইয়ে দেও আমাকে।”

আমার কাজে আর কথায় শরীফ খুব অবাক হয়েছে সেটা অর ফেস দেখেই বুঝা যাচ্ছে।শরীফ অবাক হয়েই বলে উঠল,,,

“মানেহ কী?”

“মানে হল তুমি আমাকে খাইয়ে দিবা।নিজের হাতে খাইতে আলসেমি লাগতাছে🥱।”

“নামো আমার কোল থেকে,আর আমাকে কী তোমার নিজের মাইনে করা চাকর মনে হচ্ছে যে যা বলবে তাই করব।”

“জি নট,তোমাকে আমার মাইনে করা চাকর ভাবতে বয়েই গেছে।তুমি ত আমার কাগজে,কলমে সই করা
পার্মানেন্টলি হাব্বি।”

কথাটা বলে শরীফের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।শরীফ সেটা দেখে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।

“এসব অবাক হওয়ার হলে আমাকে খাইয়ে দিয়ে অবাক হইয়ো তখন বাঁধা দিব না।এখন চুপচাপ আমাকে খাইয়ে দেও নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

“এই মেয়েটা কী শুরু করল আল্লাহ,এমন করলে ত আমি অর উপর একদম রাগ করে থাকার অভিনয় করতে পারব না।কিন্তু আমার ত এখন নরম হলে চলবে না,আমার এখন যতটা সম্ভব সাদিয়ার সাথে খারাপ আচরন করতে হবে।যাতে এখান থেকে চলে যায়,নয়ত সাদিয়ার বিপদ।” (শরীফ মনে মনে)

শরীফ মনে মনে এসব বলে সাদিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে শক্ত গলায় বলে উঠল,,,

“কী ভেবেছো তুমি নিজেকে?তুমি যা বলবে আমি তাই করব,যদি এমনটা ভেবেই থাকো তবে ভুল ভাবছো।এ বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে এখন আবার ফিরে এসে নাটক করছো।”

আমি ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।কারন এই কান্নাই আমার হাতিয়ার শরীফকে দিয়ে কাজটা করানোর ভেবেই কান্নার আওয়াজটা বাড়িয়ে দিলাম,আমার কান্না দেখে শরীফ হকচকিয়ে গিয়ে আমার কাছে ছুটে এসে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল,,,

“কোথায় লেগেছে তোমার,বলো আমাকে।দেখি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো।”

“হাঁটুতে ব্যাথা পেয়েছি।”

বলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।আমার কথা শুনে শরীফ আবারও বলে উঠল,,,

“তুমি একটু বসো আমি আসছি,এক্ষুনি ব্যাথা সেরে যাবে।”

“না তুমি যাবে না,আর ব্যাথা কমানোর জন্য কোথাও যেতে হবে না।আমাকে তুমি খাইয়ে দিলেই ব্যাথা কমে যাবে।”

আমার কথা শুনে শরীফ চোখ কটমট করে তাকাল,আমি ইনোসেন্ট ফেস করে শরীফের দিকে তাকালাম।তারপর আমাকে কিছু না বলেই শরীফ আমাকে কোলে করে বিছানায় বসিয়ে দিল,আমি শুধু ভাবার চেষ্টা করছি কী করতে চাইছে।তারপর হঠাৎ ইয়া বড় একটা ভাতের ধলা মুখে পুরে দিলো।সব রাগ এই ভাত আমার মুখে দিয়ে শোধ করল বজ্জাতটা।অনেক কষ্টে ভাতের ধলাটা শেষ করলাম তারপর যেই না মুখে পানি দিব তখন শরীফ আমার মুখ চেপে ধরে আবারও বড় ভাতের ধলা মুখে দিয়ে দিলো।আমার এবার সত্যি কান্না করার মত অবস্থা হয়েছে।

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে