#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১০
রেস্টুরেন্টে হৃদয় ভাইয়ার সামনে বসে আছি,শরীফকে দেখার জন্য হসপিটালে পৌঁছানোর পরই হৃদয় ভাইয়ার সাথে দেখা।তখন উনি কিছু না বলেই আমাকে এই রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।
“ভাইয়া কিছু বলার থাকলে বলুন নয়ত আমি আসি,আমি শরীফের কাছে যাব।”
“একটু পরে যাও তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
“ভাইয়া আপনি একটু অপেক্ষা করুন না হয় আমি শরীফকে দেখেই চলে আসব।আমার এখানে এভাবে ভালো লাগছে না।শরীফ কেমন আছে কিছু জানি না,আমার মনটা বড্ড ছটফট করছে।প্লিজ ভাইয়া যেতে দিন আমাকে।”
“শরীফ এখন ভালো আছে তুমি ওকে নিয়ে চিন্তা করো না।কিন্তু তোমাকে কথাগুলো বলা আমার খুব দরকার নয়ত খুব বেশি দেরি হয়ে যেতে পারে।”
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলাম,,,
“আচ্ছা ভাইয়া বলুন,একটু তাড়াতাড়ি বলবেন প্লিজ।আপনার কথা শুনে আমি শরীফকে দেখতে যাব।যতক্ষণ না নিজের চোখে দেখব ততক্ষণ শান্তি পাব না আমি।”
“ঠিক আছে,আমি আজ যা বলব তার জন্য হয়ত তুমি কষ্ট পেতে পারো কিন্তু আমাকে আজ সবটা বলতে হবে।আজ সেসব না জানালে তোমাদের মধ্যেকার দুরত্বটা হয়ত কমবে না।আর আমি সেটা চাই না,আমি চাই আমার বন্ধু সুখে থাকুক।তাই আজ মনের সাথে যুদ্ধ করে তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম সবটা জানাতে কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো তাই তোমাকে হসপিটালে পেয়ে যাই।”
“কী কথা ভাইয়া যার জন্য আপনি এত চিন্তিত?”
“বলব আজ আমি সব বলব,কিন্তু তুমি কথা দেও আমার কথাগুলো শোনার পর তুমি শরীফকে কিছু বলবে না।”
“জি ভাইয়া আপনি বিশ্বাস করে বলতে পারেন।”
তারপর হৃদয় ভাইয়া বলতে শুরু করে,,,
“শরীফ বিয়ে করে নি,শরীফ তোমাকে খুব ভালবাসে
শরীফ তোমাকে ঠকায় নি সাদিয়া,শরীফ তোমাকে এত কষ্ট দিয়ে শরীফ নিজেও ভালো নেই।এখন হয়ত তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে বিয়ে করে নি আর তোমাকে এখনও ভালবাসে তবে কেন তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না,আর কেনই বা তোমাকে সত্যিটা জানায় নি?এসবের উওরের পিছনে একটা বড় কারন আছে যেটা শরীফ ছাড়া কেউ জানে না।আর তুমি কখনও মা হতে পারবে না এটার জন্য শরীফ তার পরিবারকে দায়ী করছে।কিন্তু কেন এভাবে দায়ী করছে সেসব শরীফ আমাকে কিছু বলে নি।আমি এর বেশি কিছুই জানি না,কিন্তু এর পিছনে নিশ্চয়ই খুব বড় একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।যেটা শরীফ ব্যাতীত আর কেউ জানে না,আর শরীফ কেন এসব করছে সেটা একমাত্র তুমিই জানতে পারবে।তোমাকে এসব জানানোর পিছনে আমার তিনটা কারন রয়েছে,প্রথম কারন হল তুমি সত্যিটা না জেনে নিজে কষ্টে আছো,আর দ্বিতীয়ত শরীফকে ভুল বুঝে ঘৃণা করছো যেটা শরীফ একদমই মেনে নিতে পারছে না।সেটা শরীফ মুখে প্রকাশ না করলেও আমি বুঝতে পারি।আর তৃতীয় এবং সর্বশেষ কারন হলো তোমাকে এভাবে সবটা না জানিয়ে দূরো রাখার কারন উদঘাটন করা,আর শরীফ কেন তার পরিবারকে দায়ী করছে সেটার রহস্য ভেদ করা।”
ভাইয়ার কথাগুলো এতক্ষণ মন দিয়ে শুনলাম কিন্তু একটা কথাতে বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে,আমার মা না হওয়ার পিছনে শরীফ তার পরিবারকে দায়ী করছে কেন?তবে কী তারা আমার মা হওয়ার ক্ষমতাটা নষ্ট করে দিয়েছে কোন ভাবে?না এমনটা হতে পারে না,কেউ কীভাবে কারো এত বড় ক্ষতি করতে পারে।এমন কিছুই হয় নি,শরীফের পরিবার আমাকে মেনে নিতে না পারে কিন্তু অর পরিবার এমন কিছু করতে পারে না।মাথা কাজ করছে না,শরীফ কেন আমাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না আর কেনই বা শরীফ তার পরিবারকে দায়ী করছে আমি মা হতে পারব না বলে?এত কেনর উওর আমি কীভাবে পাব?কী করব আমি?কিছু বুঝতে পারছি না।
“সাদিয়া তুমি ঠিক আছো?”
ভাইয়ার কথায় নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,,,
“হহে ভাইয়া ঠঠঠিক আছি আআমি।”
“সাদিয়া এখন তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো না প্লিজ,এখন তোমাকে শক্ত হতে হবে।শক্ত হয়ে সবকিছু খুঁজে বের করতে হবে।আর তার জন্য তোমাকে শরীফের জীবনে ফিরে যেতে হবে।”
ফিরে যেতে হবে কথাটা শুনে আমি ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকালাম।আমি ফিরে যাব মানে?
“আপনি কী বলছেন এসব?”
“হে আমি ঠিকই বলছি,তোমাকে এই কেনোর উওর পাওয়ার জন্য তোমাকে শরীফের আর শরীফের কাছাকাছি থাকতে হবে।যাতে তুমি সব কেনোর উওর পেতে পারো।এতে হয়ত শরীফের পরিবার তোমাকে অনেক কষ্ট দিবে কিন্তু তারপরও ত তুমি সত্যিটা খুঁজে বের করতে পারবে।তাই বড় ভাই হিসেবে আমার পরামর্শ রইল তোমার কাছে,ফিরে যাও শরীফের বাড়িতে তবে সব উওর পেয়ে যাবে তুমি।এখন বাকিটা তোমার হাতে,আমি আসি।আমার কথাগুলো একটু ভেবে দেখো।”
কথাগুলো বলে ভাইয়া চলে যায়,আমি ঠায় বসে রয়েছি সেখানে।ভাইয়ার কথাগুলো মাথায় ঘুরছে,কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না।এই কেনোর উওর খুঁজতে গিয়ে যদি সব এলোমেলো হয়ে যায়।কিচ্ছু ভাবতে পারছি না আমি,আমি কী করব কিছু মাথায় আসছে না।মন একবার বলছে এই রহস্যর জট খুলতে আরেকবার বলছে খুলিস না সব এলোমেলো হয়ে যাবে।
মাথায় হাত দিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে থেকে এসবই ভাবছি হঠাৎ করে আশরাফুল চাচ্চুর কথা মাথায় আসে।আশরাফুল চাচ্চু আমার বাবার ছোট ভাই।আর চাচ্চু তার কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকে তাই চাচ্চু এসব কিছু জানে না।চাচ্চুকে এসব জানালে নিশ্চয়ই কোন না কোন সাজেশন দিতে পারবে।চাচ্চু আমাকে খুব ভালো বুঝে,আর খুব ভালবাসে আমাকে।চাচ্চুই পারবে আমাকে এই দোটানা থেকে বের করতে।তাই কিছু না ভেবেই চাচ্চুর নাম্বারে ডায়াল করি,ফোন বেজে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না।তাই বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দিলাম,বড় করে কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম।কিছুক্ষণ পর আমি সফল হই,আর তখন শরীফের কথা মাথায় আসে।ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ছুটলাম শরীফকে দেখার জন্য।
_________________________________
শরীফ কারো সাথে ফোনে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে,ওপাশ থেকে কিছু শোনা যাচ্ছে না,,,
“আমি ঠিক আছি এখন,এমনটা করার পিছনেও একটা বিরাট বড় কারন রয়েছে।”
“——-”
“সেই কারনটা না হয় অজানাই থাক।আপনি একটু দেখে রাখবেন ওকে।”
“———–”
“সময় হলে আমি কথা বলে নিব।আপনি কিছু বলবেন না এখন।”
“———”
“আচ্ছা রাখছি এখন,খেয়াল রাখবেন একটু।”
কথাটা বলেই শরীফ ফোনটা কেটে দেয়,ফোনটা কেটে বাঁকা হেঁসে বলে উঠল,,,
“শোন রে কুজন আমি বলি যে তোরে,চাঁদ ভেবে আগুন নিয়ে খেলে নে রে।”
বলেই অট্টো হাসিতে মেতে উঠল শরীফ।আর সবটাই এতক্ষণ বাইরে থেকে সাদিয়া দেখেছে।শরীফের কথা বলার ভাব ভঙ্গি দেখে কিছুই বুঝল না কিন্তু শেষের গানের লাইন গুলোতে সাদিয়া রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে।সাদিয়া কিছু না বলে ফিরে আসতে নিলেই কেউ অর হাত ধরে টান দেয়।
#চলবে…