#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৪
আমি যেন জেলের আসামি এমন ভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘিরে ধরেছে আমাকে।যেন চোখের আড়াল হলেই জেল থেকে পালাব।আমার ডান পাশে রয়েছে তাবাসসুম,পান্না আর বাম পাশে তামান্না।ভার্সিটিতে পা রাখার সাথেসাথেই তিনজন মিলে এক প্রকার টেনে এনেছে ভার্সিটির পিছন দিকটায়।আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি ওদের মনে কী চলছে তাই একটু হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,,,
“তরা এভাবে আমাকে এখানে নিয়ে এলি কেন?”
“কেন তাকিয়ে আছি আপনি বুঝতে পারছেন না!” (তাবাসসুম)
“তুই বিবাহিত আর গতকাল সারাদিন আমাদের সাথে থেকে একবারও বলার প্রয়োজন বোধ করলি না।তুই বিবাহিত কথাটা বললে কী তোর জামাইকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম হে?” (পান্না রেগে বলে উঠল)
“তুই কী কিছু বলবি নাকি মাইর খাবি!” (তামান্না)
“তরা প্লিজ শান্ত হ,আমি কয়দিন পর তদের এমনিতেই সব বলতাম।”
আমার কথাশুনে তিনজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠল,,,
“ওওও কয়দিন পর।”
আমি মনে মনে ভাবছি ওদের কথাগুলো বলা ঠিক হবে কী না?এভাবে নিজের জীবনে ঘটা সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার কথা ওদের বলব কী বলব না সেটা নিয়ে কনফিউজড।পরে ভাবলাম অরা ত আমার ফ্রেন্ডই সো বলাই যায়।তাই ওদের সবটা খুলে বললাম,সবটা বলতে গিয়ে চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।আমি চোখের পানি মুছে ওদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সবার চোখই ছলছল করছে।আমি হালকা হেঁসে বলে উঠলাম,,,
“আরে তরা কাঁদছিস কেন?আমার কপালে এটা হওয়ার ছিল তাই এটাই হয়েছে।এসব নিয়ে এখন আর ভাবি না,এখন জীবনকে নতুন রঙ দিয়ে সাজাব।অতীত ভেবে কেন ভবিষ্যৎ নষ্ট করব আমি,তরা প্লিজ এভাবে থেকে আমাকে কষ্ট দিস না।”
আমার কথাটা বলার পরপরই তিনটে মিলে আমাকে জড়িয়ে ধরল,আমাকে জড়িয়ে ধরে পান্না বলে উঠল,,,
“এতটুকু একটা মেয়ে হয়ে কীভাবে এত যন্ত্রণা শয্য করছিস তুই?আমি হলে ত মরেই যেতাম।”
“মৃত্যুটা একমাত্র পথ নয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার,ভুলে যাস না মৃত্যুর পরও আরেকটা জীবন আছে।এই জীবন আর কতদিনের বেশি গেলে ৮০/৯০ বছর কিন্তু বাকি সারাজীবন কাটাতে হবে সেই মৃত্যুর পরের জীবনে।আর এই পৃথিবীর কষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যার মত মহাপাপ করে মৃত্যুর পরের জীবনটা কেন নষ্ট করব বলতে পারিস।তাই নিজের মনকে শান্ত করে পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া শিখতে হবে।”
আমার কথাশুনে তাবাসসুম আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠল,,,
“একদম ঠিক বলেছিস,আমাদের উচিত যত খারাপ পরিস্থিতিই হোক না কেন তার মুখোমুখি হয়ে সমস্যা সমাধান করা।”
“তুই ঠিক পথটাই বেছে নিয়েছিস সাদিয়া,তোর জন্য গর্বিত আমরা।”(তামান্না)
আমি এবার পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠলাম,,,
” বইনেরা আমার এত পাম দিস না,পাম দিলে ফুলে বেলুন হয়ে যাব।তারপর হাওয়ায় উড়ে যাব,তখন আমাকে খোঁজার জন্য তদেরকে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘুরতে হবে।আর তার জন্য অনেক অনেক টাকা লাগবে,আর টাকার জন্য চাকরি করতে হবে।আর চাকরি পেতে হলে পড়াশোনাটা ভালো করে করতে হবে,তাই এখন ক্লাসে চল।”
পুরো কথাটা একদমে বলে ওদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সবকয়টা আমার দিকে হা করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তখন আমি সব কয়টাকে একটা করে চিমটি দিয়ে হুসে আনলাম।তখন তাবাসসুম বলে উঠল,,,
“বইন তুই এত কথা কেমনে বলছ?কাল অবধি তকে দেখে ত মনে হয় নাই তুই এত কথা বলতে পারছ!”
আমি হেঁসে বলে উঠলাম,,,
“আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া!এখন চল ক্লাসে যাই।”
তারপর তিনজন ঠেলাঠেলি করে দুষ্টুমি করতে করতে ক্লাসে চলে এলাম।
ভার্সিটির ছুটির পর একটু লেট করেই বের হলাম সবাই।চারজন বের হতে গিয়ে দেখি ভার্সিটির মাঠে কতগুলো বাচ্চা ক্রিকেট খেলছে পান্না তখন বলে উঠল,,,
“দোস্ত দেখ ক্রিকেট খেলতাছে পোলাপানরা চল একটু খেলে আসি,আমার ক্রিকেট খেলতে খুব ভাল্লাগে।”
পান্নার সাথে তাল মিলিয়ে তামান্নাও বলে উঠল,,,
“হে দোস্ত চল একটু খেলে আসি,অনেকদিন হয় খেলি না।”
আমি মুচকি হেসে বলে উঠলাম,,,
“হে চল একটু হাত,পা চালিয়ে দেখিয়ে দেই মেয়েরাও ক্রিকেট খেলতে পারে।”
অতঃপর সবাই মিলে বাচ্চাদের ওখানে গেলাম,তাবাসসুম বলে উঠল একটা বাচ্চা ছেলেকে,,,
“বাবু আমাদের কী খেলায় নিবে?”
বাচ্চাটা চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠল,,,
“আমার নাম বাবু নয়,আমার নাম নাদিম।”
আমি বাচ্চাটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার গালে হাত দিয়ে বললাম,,,
“খুব সুন্দর নাম,আমাদের কী খেলায় নিবে?”
“না তোমরা অনেক বড়,তোমাদের সাথে আমরা পারব না।তাই খেলব না আমরা তোমাদের সাথে।”
বাচ্চাটার কথাশুনে আশেপাশের সব বাচ্চারা সহমত পোষন করল,তখন পান্না সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,,,
“আমাদের খেলায় নিলে তোমাদের সব্বাইকে চকলেট কিনে দিব।”
পান্নার কথাশুনে মনে হল কথাটা বাচ্চাদের মনে ধরেছে।তখন নাদিম নামের সেই বাচ্চাটা বলে উঠল,,,
“ঠিক আছে নেও ব্যাট।”
কথাটা বলেই নাদিম ব্যাট আমার হাতে দিল,আমি ব্যাট হাতে নিয়ে পজিশন মত দাঁড়ালাম আর বলে উঠলাম,,,
“সবাই পজিশন মত দাড়াও আমি ব্যাট করব।”
সবাই সেটা মেনে নিয়ে পজিশন মত দাঁড়াল,আর বল করবে তাবাসসুম।তাবাসসুম আমাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল যে আমি রেডি আছি কী না?আমিও চোখে ইশারা করে বলে উঠলাম রেডি তুই বল কর। অতঃপর তাবাসসুম বল করছে আর আমি ব্যাটিং করছি কতক্ষন খুব ভালো করেই খেলা হল,কিন্তু আমার কপাল কী এত ভালো নাকি যে সব ভালো হবে,আমি বলে আঘাত করার একটু পরপরই খুব জোরে একটা চিৎকার করার আওয়াজ হল,আমার সবাই হালকা ভয় পেলাম।আমরা আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি ঠিক কী হয়েছে,হঠাৎ করেই চোখ আটকে যায় একটা জায়গায়।সেটা দেখে রীতিমতো সবার চোখ চড়ক গাছ,যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিলাম না আমরা কেউ।বাচ্চাগুলো ত কিছু না ভেবেই ভৌ দৌড়।
#চলবে…
(মৃত্যু একমাত্র পথ নয় কোন মানসিক/শারীরিক কষ্ট, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার।পৃথিবীতে সব সমস্যারই সমাধান রয়েছে,তাই মনকে শক্ত করে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে নিজেকে প্রস্তুত করুন।)