#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩
বাড়িতে ঢোকার পরপরই শক্ত হাতের এক থাপ্পড় পড়ল আমার গালে।চোখে পানি নিয়ে বাবার দিকে তাকালাম,বাবা তখন হুংকার ছেড়ে বলে উঠল,,,
“বলে ছিলাম তোকে ঐ ছেলেটার সাথে আর অর পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ না করতে।বলেছিলাম আমি তকে?”
আমি ভয়ে কিছু বলছি না,আসলে ছোট থেকেই বাবাকে খুব ভয় পাই।বাবা একটা ধমক দিলেই চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ে।কখনও গায়ে হাত তুলে নি,আজই প্রথম আমার গায়ে হাত তুলল।
“কথা কেন বলছিস না,বল তকে মানা করেছিলাম ঐ ছেলের সাথে কথা বলতে।”
এবার সাদিয়ার মা বলে উঠল,,,
“তুমি চুপ করবে,সাদিয়াকেও কিছু বলতে দেও।নিজের মত সব ভেবে বসে থেকো না,জেলের আসামীকেও কথা বলার সুযোগ দেয়।”
“রাশিদা তুমি তোমার মেয়ের হয়ে আর একটা কথাও বলবে না।সবসময় মেয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলো তুমি।তোমার মেয়েকে আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম তারপরও তোমার মেয়ে কোন সাহসে ঐ ছেলের সাথে কথা বলেছে!”
“সাদিয়া তুই ঘরে যা,আমি আসছি তোর সাথে কথা আছে।”
মায়ের বলার পরও আমি মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি,তখন মা আবারও বলে উঠল,,,
“তকে ঘরে যেতে বলেছি ত আমি এখনও দাড়িয়ে আছিস কেন?আরেকটা থাপ্পড় খেতে মন চাইছে নাকি হে,যা ঘরে যা।”
আমি মার কথা শুনে চলে আসছিলাম তখন একটু শুনতে পেলাম বাবা মাকে বলছে,,,
“তোমার মেয়েকে বলে দিও ২য় বার যাতে এই সাহস না করে।২য় বার এমন করলে আমার বাড়িতে তোমার মেয়ের আর ঠাই হবে না।”
বাবার কথা শুনে আর দাড়ালাম না চলে আসলাম নিজের রুমে।বাবা আমাকে ভার্সিটি থেকে আনতে গিয়েছিল কিন্তু তখন শরীফের সাথে কথা বলার সময় দেখে ফেলেছিল।সারা রাস্তায় কিছু বলে নি কিন্তু বাড়িতে ঢোকার পরপরই বাবা থাপ্পড় মারে।
আমি ঘরে এসে খাটে বসে কাঁদছিলাম তখন কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখি ফরহাদ।আমি চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলে উঠলাম,,,
“কী রে তুই কখন স্কুল থেকে আসলি আর আরাফাত কই?”
ফরহাদ আমার কথার কোন উওর না দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,,,
“তরা মেয়েরা নিজেদের এত দুর্বল প্রমান কেন করিস?”
“মানেহ?”
ফরহাদ এবার রেগে বলে উঠল,,,
“মানে হল তুই সবকিছু এভাবে চুপচাপ কেন মেনে নিচ্ছিস?তর সাথে করা অন্যায়ের প্রতিবাদ কেন করছিস না?খালি বসে বসে চোখের পানি কেন ফেলছিস?চোখের পানি যত ফেলবি তত তকে সবাই দুর্বল ভেবে আঘাত করবে।বাবা যখন তোর গায়ে হাত তুলল তখন বাবার চোখে চোখ রেখে বলতে পারলি না সত্যিটা কী?তা না করে তুই চোখের পানি ফেলছিস।ঐ শরীফ যখন তকে রেখে আরেকটা বিয়ে করল তখনও চোখের পানি ফেলেছিস।চোখের পানি দিয়ে কী করতে পারলি তুই?পারলি কী বিয়েটা আটকাতে নাকি তোর সোনার সংসারটা ভাঙ্গা থেকে আটকাতে?”
আমি এবার অবাক দৃষ্টিতে ফরহাদের দিকে তাকালাম,আমি ত ফরহাদ কিংবা আরাফাতকে বলি নি যে শরীফ আরেকটা বিয়ে করেছে।এ কথা ত শুধু আমি মা আর বাবা জানি কিন্তু ও জানল কীভাবে?ফরহাদ আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে চোখে পানি নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠল,,,
“ছোট হতে পারি অবুুঝ নই,সব জানি আমি।আমি ছোট বলে আমার কথাগুলো হাওয়ায় উড়িয়ে দিস না আপু।আমার কথাগুলো একটু চিন্তা করিস যে আমি ঠিক বলছি কীনা ভুল বলেছি?”
ফরহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল।আমি এবার চোখে পানি নিয়ে অর দিকে তাকালাম,,,
“আপু দেখ আমরা তকে ভালবাসি খুব ভালবাসি তকে।তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে আমাদের কারো ভালো লাগছে না।তুই কী মুভ অন করতে পারবি না আপু?তুই কী প্রমান করতে পারবি না যে মেয়েরা দুর্বল নয়?যারা তকে দুর্বল ভেবে তকে এমন যন্ত্রণা দিয়েছে তাদের কে তুই দেখিয়ে দিতে পারবি না তুই দুর্বল নস।”
ফরহাদ যা বলেছে তা একটা কথাও মিথ্যা নয়,নিজেকে যত দুর্বল করব তত সবাই আঘাত করবে।আমাকে নিজের জন্য না হলেও আমার পরিবারের জন্য নিজেকে সামলাতে হবে।আমার এতটুকু ছোট ভাইটা যা বুঝতে পারল আমিই সেটা বুঝতে পারলাম না।তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেকে আর দুর্বল করব না,ঘুরে দাঁড়াব আমি।জীবনটা নতুন করে সাজাব আমি,আর আমার মত কোন মেয়ের যাতে সংসারটা না ভাঙ্গে তাদের সাহায্যের জন্য নিজেকে তৈরি করব।প্রমান করব মেয়েরা দুর্বল নয়,মা না হওয়াটা কোন দুর্বলতা নয়।সমাজে একটা ছেলের বাবা হওয়ার অক্ষমতা থাকলে যেমন তাদের কোন সমস্যার মুখে পড়তে হয় না তারা যেমন মাথা উঁচু করে বাঁচে তেমনি মেয়েরাও মাথা উঁচু করে বাঁচবে।এটা আমার নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করলাম।
আমি চোখের পানি মুছে হাসিমুখে ফরহাদকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,,,
“তোর আপু প্রমান করবে তোর আপু দুর্বল নয়।তোর আপু মুভ অন করবে,দেখিয়ে দেবে তাদেরকে যারা মেয়েদের দুর্বল ভেবে তাদের উপর অত্যাচার করে।আমি জীবনটা নতুন করে সাজাব,অতীত ভেবে আর নিজেকে কষ্ট দিব না।”
তারপর কিছু একটা ভেবে আরেকবার বলে উঠলাম,,,
“কিন্তু তুই এটা বল ত যে তুই কীভাবে জানলি যে শরীফ বিয়ে করেছে?”
ফরহাদ এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শার্টের কলার টেনে ভাব নিয়ে বলে উঠল,,,
“It’s Secret.”
আমি ফরহাদের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে ফেললাম তখন ফরহাদ আমাকে বলে উঠল,,,
“আপু তুই হাসলে না তকে পুরো পেত্নী লাগে।”
আমি ফরহাদের কথা শুনে রেগে ফরহাদের কানে ধরতে গেলাম,তখনই ফরহাদ দিল ভো দৌড়।ওকে আর পায় কে,আমি অর কাহিনি দেখে হালকা হেসে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।
____________________________________
রাতের খাবার খেয়ে ফরহাদ,আরাফাতের রুমে গেলাম।গিয়ে দেখি দুটোতে মিলে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে আছে।এমনিতে সারাদিন ঝগড়া করেই পার করবে কেউ কারো কাছে ঘেসবে না আর এখন দেখো কীভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।আমি ওদের কয়টা পিক তুলে রুমে চলে আসলাম।ফোনটা রেখে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম,আজ কেন যেন ফরহাদের কথাগুলো শুনে মনটা হালকা লাগছে।বেশ কিছুক্ষন পর রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে এসএমএস দেয়া যাতে লেখা,,,
“ভেঙ্গে গেছো?তবে নতুন করে গড়ো,এমন ভাবে গড়বে যাতে কেউ আর ভাঙ্গতে না পারে।”
কথাগুলো কিছুই মাথায় ডুকল না,আমি সেই নাম্বারে ফোন দিলাম বন্ধ বলছে।এভাবে কয়েকবার ফোন দেয়ার পর হঠাৎ করেই কলটা ডুকল আর সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ হল।আমি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলাম,,
“কে আপনি?আর এই এসএমএস টা দিয়ে কী বুঝাতে চাইলেন আপনি?”
“——–”
এমন চুপ থাকাটা আমার আর শয্য হল না তাই রেগে বলে উঠলাম,,,
“আরে আজব লোক ত আপনি,কথা কেন বলছেন না?”
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে লোকটা ফোনটা কেটে দিল,তাতে রাগটা আবার মাথায় উঠল।রাগে ফোনটা বেডে ফেলে বড় করে শ্বাস নিয়ে রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি।তখনই আবার এসএমএস আসার আওয়াজ হল,আমি ফোনটা নিয়ে দেখি সেই নাম্বার থেকে এসএমএস।এবার তাতে লেখা,,,
“রাগটা সঠিক জায়গায় দেখাও কাজে লাগবে।”
রাগে ইচ্ছে করছে ঐ লোকটার মাথার চুল ছিড়তে,এত রহস্য আর ভাল্লাগছে না।আর কিছু না ভেবে একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ভালো ঘুম হওয়ার জন্য।কারন এখন ঠিক করে ঘুমাতে পারি না বারবার ঐ শরীফ আহনাফের কথা মনে পড়ে আর সারারাত কষ্টে ছটফট করে কাটাতে হয়।কিন্তু আমি আর কষ্ট পেতে চাই না তাই ঘুমের ঔষধ খেয়ে পাড়ি দিলাম ঘুমের দেশে।
____________________________________
অন্ধকার রুমে গিটারে টুংটাং আওয়াজ করে কেউ একজন গাইছে,,,
“তোমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে।”
এতটুকু গেয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠল,,,
“কষ্টের ফল মিষ্টি হয়,এখন যত কষ্ট করার করো তোমার সুখের দিন গনিয়ে আসছে।” (অচেনা)
#চলবে…