#সে_ফিরে_আসবেই
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
নীলা হকচকিয়ে গিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই আমায় দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কেমন হা করে তাকিয়ে থাকে।পাশে বসা পিয়ালীকে দেখেও অবাক হতে পারে! কারণ সে জানে আমার কোন মেয়ে বন্ধু নাই। এবং পিয়ালী আমার শুধুই কলিগ। ওকে নিয়ে এখানে আমি ঘুরতে আসবো তা কল্পনায়ও ভাবেনি সে হয়তোবা।ঘুরতে আসবো জানলে সে এদিকে কখনোই আসতো না!
পিয়ালীর সাথে ওর দু’দিন কথা হয়েছে মাত্র।তাও কয়েকমিনিট।আমার ভরসা তখন একটাই।পিয়ালীকে আমার উল্টাপাল্টা কিছু বুঝাতে হবে।ও যে নীলা তা কিছুতেই তাকে বুঝতে দেয়া যাবে না।
নীলা পেছনে আসবে কী আসবে না বুঝতে পারছে না। ওদিকে তমালও ওকে তাড়া করছে। ওদের হাতে সময় কম। হয়তোবা ওরা অনেক হাঁটাহাঁটি করবে। অনেক অনেক গল্প করবে। সমস্যা হলো তমাল আমায় চেনে না।চিনলে অবস্থা ভয়াবহ হতো। নীলার সঙ্গে সেও কাঁঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো।কী করবে না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারতো না!
নীলাকে আমি হাত ইশারায় বললাম চলে যেতে।
নীলা চলে গেল।নীলা চলে গেলে পিয়ালী আমায় বললো,’ভাবী এলো না যে?আর ভাবী কার সাথে ঘুরছে?’
আমি তখন কষ্ট করেই হা হা হা করে শব্দ করে হেসে উঠলাম।
পিয়ালী অবাক হয়ে বললো,’হাসছেন কেন এভাবে?’
আমি হাসতে হাসতেই ওকে বললাম,’তুমি যাকে নীলা বলে ডেকেছো সে নীলা না।’
তারপর আবার হেসে উঠলাম।
‘হা হা হা’
পিয়ালী বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’তবে ও কে?দেখতে তো একেবারেই ভাবীর কপি!’
আমি হেসে বললাম,’এটা ওই ছেলের গার্লফ্রেন্ড।’
পিয়ালী অবাক হলো।বললো,’কী আশ্চর্য!একদম মিল । আচ্ছা আপনি অবাক হোননি কেন ওই মেয়েকে দেখে ফাহাদ ভাই?’
আমি তখন বলি,’কারণ ওর সাথে আমার স্ত্রীর একশো টারও বেশি অমিল পেয়েছি এই জন্য অবাক হইনি!’
‘কোথায় অমিল দেখলেন আপনি আমি তো দেখিনি!’
‘তুমি দূর থেকে দেখেছো। দূর থেকে সত্যটা সব সময় দেখা যায় না।আসলকে নকল আর নকলকে আসল দেখা যায় অনেক সময়।’
পিয়ালী এবার বললো,’আচ্ছা ঠিক আছে। এখন এসব ফিলোসফি মার্কা কথাবার্তা বাদ দিয়ে ভালো কথা বলুন।’
‘ভালো কথা কী বলবো? কোন ধরনের কথাকে ভালো কথা বলে?’
পিয়ালী লজ্জামাখা গলায় বললো,’
‘ভালোবাসার কথা বলুন। ভালোবাসার কথাকে ভালো কথা বলে।’
বলে পিয়ালী খানিক লজ্জার ভান করে।
আমি তখন বলি,’পিয়ালী তুমি একটা বিয়ে করে ফেলো। এভাবে একা একা থেকে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো!কষ্ট পাচ্ছো!’
পিয়ালী তখন কেঁদেই ফেলে প্রায়। কাঁদো কাঁদো গলায় সে বলে,’আপনার অত শিখিয়ে দিতে হবে না আমি কী করবো না করবো সেই বিষয়ে।সব সময় আপনি এমন করেন। আপনার সাথে কথা বলতে আসলেই এটা ওটার অযুহাত। কোথাও ঘুরতে বেরুলে কথা বলতে ভুলে যান।চুপ করে থাকেন।যেন আপনি কথা বলতেই জানেন না। আসলে আপনি চান না আপনার সাথে আমি থাকি।কথা বলি।আমি জবটা ছেড়ে দিবো। কাল থেকে আর আসবো না অফিসে। আপনিও আমায় কিন্তু খুঁজতে যাবেন না খবরদার। আপনার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নাই! আপনি আমার কেউ না। আমিও আপনার কেউ না!’
কথাগুলো বলে পিয়ালী ঝট করে উঠে পড়ে। তারপর দ্রুত হাঁটতে থাকে।আমি দৌড়ে এসে ওকে থামাতে চেষ্টা করি।সে তখন অদ্ভুত আচরণ করে।বলে,আমায় থামাতে চাইলে আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক জমা করবো!’
আমি তবুও তার সামনে পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে যাই।ও আমায় তখন ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে যায়।আমি পেছন থেকে ডাকতে থাকি।সে একবারের জন্য তাকিয়েও দেখেনি পর্যন্ত।
বাসায় ফিরে নিজেকে আমার হঠাৎ কাপুরুষ মনে হতে থাকে।ক্রোদ্ধ হই নিজেই নিজের প্রতি।মনে হয় আমি কেন সবকিছু দেখার পরেও চুপ করে আছি এভাবে।আর আজ যা দেখলাম এতে তো এটাই প্রমাণিত হয় যে নীলা আমার সাথে প্রতারণা করছে। এরকম একটা প্রতারকের সাথে আর ঘর করা যায় না!
আমি সঙ্গে সঙ্গে নীলাকে ফোন দেই।
নীলা ফোন রিসিভ করে না।রিসিভ করে মানহা।
সে বলে,’বাবা, তোমার জন্য খুব খারাপ লাগছে।’
আমি তখন তাকে বলি,’শিগগির তোমাকে আমার কাছে দিয়ে যাবে ওরা এসে মা। তুমি এখন তোমার মার কাছে দেও!’
মানহা তখন নীলাকে ডেকে ওর হাতে ফোন দেয়।
নীলা ওপাশ থেকে বলে,’ফাহাদ, তুমি কিছু বলো না প্লিজ!আমি সবকিছু খুলে বলবো তোমায়। তুমি আমায় একটু সময় দাও প্লিজ!কটা দিন সময় দাও।’
আমি তখন হেসে উঠি।বলি,’অনেক বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়। তুমি অলরেডি আমার বিশ্বাস নিয়ে অনেক বড় একটা গেইম খেলে ফেলছো। এরপর আরো সুযোগ দিলে আমার সর্বনাশ হবে।আমি আর পারবো না।সরি নীলা! আমায় এখন স্ট্রং হতে হচ্ছে।আমি ডিসিশন নিয়েছি তোমার সাথে আর সংসার করবো না।ডিভোর্স দিবো তোমায়। এবং আগামীকাল সকাল সকাল তুমি আমার মেয়েকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে।মনে রাখবে,মানহা যেন দুপুরের আগেই এসে আমার বাড়ি পৌঁছায়!’
নীলা সবকিছু শুনে খানিক সময় চুপ থাকে। তারপর বলে,’ফাহাদ, তুমি এমন করছো কেন? তুমি আমায় ভুল বুঝছো!আমি সব খুলে বলবো তোমায়।আমায় একটু সময় দাও প্লিজ!’
আমি আবার হাসি।হা হা হা করে হাসি।হাসির পর বলি,’নীলা,আমায় আর বোকা বানাতে পারবে না তুমি। তোমাকে সেই সুযোগ আর দেয়া হবে না।তোমায় আমি ডিভোর্স দিবো এটাই ফাইনাল। তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছো। তাছাড়া আমার কলিগও আজ তোমায় দেখেছে!আমি জবাই হয়ে গেছি!’
নীলা তখন কী যেন বলতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি ওর ফোন কেটে দিলাম।
তারপর শান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম ।
‘
রাতে মেসেঞ্জারে ঢুকে ভাবলাম পিয়ালীর সাথে কথা বলবো। ওকে সরি বলবো। কিন্তু ফেসবুক মেসেঞ্জারে ওকে পাওয়া গেল না।ওর আইডি ডিএক্টিভ করে রেখেছে। হোয়াটসঅ্যাপেও নাই। অবশেষে ওর নম্বরে ফোন করলাম।ওপাশ থেকে সুইচ অফ বলছে। এবার আমার খারাপ লাগছে। খারাপ লাগছে এই জন্য যে মেয়েটা শুধু শুধু আমায় ভুল বুঝছে।আমি কী করে আমার স্ত্রী আর সন্তান রেখে ওর সাথে নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে তুলি!এটা কী আদৌও সম্ভব!
পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে বেলা হয়।দশটা বাজে। অফিসে আর যাওয়া হয় না। বিছানা থেকে নামতে যাবো আর তখন কলিং বেল বাজে। বাইরে মানহার গলা।
‘বাবা দরজা খোলো তাড়াতাড়ি!’
#চলবে