#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_২৭_২৮
#পর্ব ২৭
ঘুরেফিরে বাসায় আসে আনাবিয়া ও ইরান। শীতের কারণে দুইজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছে। আনাবিয়া বড় বড় পা ফেলে দ্রুত রুমে চলে যায়। জামাকাপড় পরিবর্তন করে কম্বলের ভিতরে ঢুকে বসে। ফোন টিপতে টিপতে হঠাৎ আনাবিয়া খেয়াল করে ইরান রুমে আসেনি। শরীর থেকে কম্বল সরিয়ে উঠে বসে। বাহির থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। উঁচু স্বরে কথা বলছে জেনো কেউ। আনাবিয়া ভালো করে শুনে বুঝতে পারে এটা আর কারো নয় ইরানের কণ্ঠস্বর। ভয় পেয়ে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে জালানা দিয়ে বাহিরে তাকায়। গার্ডেনে গ্রান্ডফাদার এবং ইরান এক্সেসাইজ করছে। এই শীতের মধ্যে ইরান শুধু একটি টি-শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনের বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে দেখে বুঝা যাচ্ছে। আনাবিয়া ফিক করে হেসে দেয়।
ইরান আনাবিয়ার রুমের জালানার দিকে তাকালে আনাবিয়ার হাসি হাসি মুখ দেখতে পায়। হাতের ইশারায় ইরান হাই দেখায়। ইরানের দেখাদেখি গ্রান্ডফাদারও আনাবিয়াকে হাই দেখায়। হাসি মুখে আনাবিয়া দুইজনকে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে মারে।
দুপুরে ইরান গ্রান্ডমার সাথে কিচেনে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। আনাবিয়া ফোনে কথা বলতে বলতে ড্রইংরুমে আসে। তখন তার নজর পরে কিচেন রুমে। ইরান তার গ্রান্ডমাকে সাহায্য করছে আবার মাঝে মাঝে দুষ্টামিও করছে। আনাবিয়ার মন ভরে যায় একরাশ মুগ্ধতায়। পলক না ফেলে তাকিয়েই থাকে সেদিকে। মুসু আনাবিয়ার কোলেই। ধীর পায়ে আনাবিয়া এগিয়ে যায় কিচেনে।
-কী কুক হচ্ছে আজ?
আনাবিয়ার কথায় গ্রান্ডমা হাসি মুখে বলে,
-দেখো আনা ইরান আমার সাহায্য করছে। ছেলেটাকে বললাম এখন একটু বিশ্রাম নিতে! কিন্তু না সে এখানে এসে কাজ করছে।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ, আমার আনার চাঁদ কপাল এইরকম একজন দায়িত্বশীল পুরুষকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে। তার সাথে আমরাও ভাগ্যবান ইরানের মতো একজন নাতজামাই পেয়ে।
-বাহ্! আপনি দেখছি আমার গ্রান্ডমাকে নিজের দিওয়ানা বানিয়ে দিলেন।
ইরান শুধু মুচকি হাসছে কিছু বলছে না। আনাবিয়া রান্নার ঘ্রাণ নিয়ে ঠাট্টার স্বরে বলে,
-সুবাস কিন্তু অনেক সুন্দর আসছে! এইযে আপনি কিন্তু আমার গ্রান্ডমাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেন না।
গ্রান্ডমা আনাবিয়ার কথায় ইরানকে ধরে মজা করে বলে,
-আমি কোনো আনাবিয়াকে চিনি না। আমার শুধু একটাই নাতি সে হলো ইরান।
ইরান আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রাউড ফীল করে বলে,
-দেখেছো, তোমার গ্রান্ডমা এখন আমার হয়ে গিয়েছে।
-বেশ ভালো।
এভাবেই হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে সবাই লাঞ্চ করে। ইরানের একটা জিনিস পছন্দ হচ্ছে না সেটা হলো মুসু। আনাবিয়ার এই মুসুর প্রতি এতো আদিখ্যেতা জাস্ট অসহ্য লাগছে ইরানের। শুয়ে থাকলে দুইজনের মাঝে মুসুকে রেখে দেয়। খাবার খাওয়ার সময়ও আনাবিয়া নিজ হাতে মুসুকে খাইয়ে দেয়। রাতে ঘুমানোর সময়ও মুসুকে সাথে নিয়ে ঘুমায়।
বিকেলে আনাবিয়ার ফ্রেন্ড’সরা আসে। জোবান বাদে সবাই আসে। লিলি আর ইভানা ফুল ভাব লাগাচ্ছে ইরানের সাথে। আনাবিয়া প্রথম প্রথম তেমন কিছু মনে করে নি। কিন্তু এখন তার ভালো লাগছে না নিজের বান্ধবীদের এতো বেশি আলগা পি*রি*ত দেখতে। কিছুক্ষন বাসায় কথা বলে ঘুরতে বের হয় সবাই। একটা আলিশান রেস্টুরেন্টে যায় তারা। আনাবিয়া গাল ফুলিয়ে বসে আছে। ইরান লিলির সাথে সেলফি তুলছে। ইরান অবশ্য ছবি তোলা পছন্দ করে না। কিন্তু এখন স্ত্রীর ফ্রেন্ড বলে কথা! মুখের ওপর না কিভাবে করে। আনাবিয়া লুকাসের সাথে কথা বলছিল হঠাৎ তার নজর পরে তাঁদের ঠিক সামনের টেবিলে। সানগ্লাসের ভিতরে দিয়ে কিছুক্ষন এক ধেনে তাকিয়ে থাকে সেদিকে আনাবিয়া। মনে মনে নিজেই নিজেকে বলে, “এটা তো ঐ তাহশিয়া মেয়েটা না?” আনাবিয়া ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে হ্যাঁ এটা তাহশিয়াই। আনাবিয়া চমকায়। ভীষণ চমকায়। তার মনে সর্বপ্রথম প্রশ্ন জাগে এই মেয়েটা এখানে কী করছে? তাঁদের পিছু নিচ্ছে কী? কিন্তু কেনো নেবে?
আনাবিয়াকে ভাবুক হয়ে বসে থাকতে দেখে ইরান আনাবিয়ার হাতে হাত রাখে। আনাবিয়া নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। ইরান তাকে জিজ্ঞেস করে,
-এনিথিং রং?
-ওয়েট।
আনাবিয়া উঠে দাঁড়ায়। পরিহিত লং উইন্টার কোটটা টেনে ঠিক করে সামনে হাঁটা ধরে। ইরান সহ সকলেই আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আনাবিয়া তাহশিয়ার স্মুখীন যেয়ে দাঁড়ায়। তাহশিয়া প্রথমে আনাবিয়াকে দেখে নি। হঠাৎ মুখোমুখি হওয়াতে একটু ভীত হয়ে যায় সে। এমন ভাব করে জেনো সে আনাবিয়াকে খেয়ালও করেনি। আনাবিয়া শান্ত স্বরে বলে,
-মিস তাহশিয়া রাইট?
তাহশিয়া মাথা তুলে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
-ওওও মিসেস শেখ।
সামনের চেয়ারে বসা ছিল একজন ভদ্রলোক। তাহশিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট কিনারে দাঁড়িয়ে ছিল। হাতের ইশারায় লোকটাকে চলে যেতে বলে। তাহশিয়া পুনরায় হাসি মুখে বলে,
-হোয়াট এ সারপ্রাইস! বসুন মিসেস শেখ।
আনাবিয়া বসলো না। তাহশিয়ার হাসি তার কাছে ততটা ভালো লাগলো না। দূরে বসা ইরান জেনো আকাশ থেকে পরেছে তাহশিয়াকে এখানে দেখে। সে তো জানে তাহশিয়া তার দেশে মানে সুইজেরল্যান্ড চলে গিয়েছে তাহলে এখানে কিভাবে এলো! ইরান এক এক করে সব কিছু ভাবতে থাকে। জেসিকার হলুদ ফাঙ্কশন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত ঘটা সকল ঘটনার সূত্রই জেনো এক জায়গায়। ধীরে ধীরে সবটা ক্লিয়ার হয়ে যায় ইরানের কাছে। কোনোরকম নিজেকে শান্ত স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস করে।
আনাবিয়া বসলো না। জহুরি চোখে তাহশিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-আপনি এখানে? দুইদিন আগে ও না বাংলাদেশে ছিলেন?
-আমারও সেম কোয়েশ্চন!
-আমরা আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছি লাইক হানিমুন টাইপ।
-ওওও! আমি এসেছিলাম কিছু ড্রেস ডিজাইনের জন্য। দুইদিন পর এখানে একটা ফ্যাশন শো আছে সেটার জন্য আমি নিজে ড্রেস ডিজাইন করছি।
-বাহ্! এ তো আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তা কোথায় অনুষ্ঠিত হবে ফাঙ্কশন?
আনাবিয়ার প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় তাহশিয়া। আনাবিয়াকে মিথ্যে বলে কথা কাটিয়ে চলে যেতে চেয়েছিল সে। কিন্তু এখন নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে যায়। মাথা তুলে দূরে বসা ইরানের পানে তাকায়। অদ্ভুত হাসি দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাহশিয়া মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার সেলফোন বেজে উঠে। তাহশিয়া ফোনে নাম্বার দেখে কল রিসিভ করে। অতি ব্যস্ত হওয়ার ভঙ্গিতে কথা শেষ করে আনাবিয়াকে বলে,
-সরি মিসেস শেখ হঠাৎ করেই আমার অনেক জরুরি একটা কাজে যেতে হবে। আশা করি আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে।
-জি।
তাহশিয়া চলে যায়। আনাবিয়া সেদিকে তাকিয়ে ইরান ও তার ফ্রেন্ডের কাছে চলে আসে । লিলি আনাবিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-হু ইস দেট গার্ল?
-তেমন কেউ নয়।
_________________
রাস্তায় চকচকে সাদা রঙের কৃত্রিম আলো জ্বলছে। মৃদু বাতাস। তুষারপাত কমলেও শীত কমেনি। নির্জন রাস্তা দিয়ে এক দু জন লোক হেঁটে যাচ্ছে। আনাবিয়া ইরানের হাত ধরে হেঁটে বাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আনাবিয়া ইরান দুজনের পরণেই লং কোট। ইরান একবার আনাবিয়ার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার সামনে তাকাচ্ছে। আনমনে আনাবিয়া ইরানকে প্রশ্ন করে,
-আপনি আগেও রাশিয়া এসেছেন ইরান?
-হ্যাঁ দুইবার এসেছি।
-ওও! আমাকে বলেনি কেনো?
-তুমি জিজ্ঞেস করোনি তাই বলিনি। আমাদের জলদি বাসায় যাওয়া উচিত শীত জেনো বাড়ছেই!
-আমার তো এখানেই ভালো লাগছে। বরফের ঢাকা রাস্তার ওপর দিয়ে আপনার হাত ধরে হাঁটতে।
ইরান হালকা হাসে। আনাবিয়া ইরানের হাতে আঁকিবুকি করতে করতে বলে,
-তাহশিয়া মেয়েটাকে আমার কেনো জানি ভালো মনে হলো না! মেয়েটার হাসি, কথাবার্তা সবই নকলি মনে হয়!
-বাদ দেও। অন্যের বিষয় ভেবে লাভ নেই আমরা আমাদের কথা বলি?
-ইয়েস।
-জাস্ট ইমেজিং, তুমি মুসুকে আমাদের বাসায় নিয়ে গেলে। রাগ করে একদিন আমি বললাম মুসুকে আমাদের সাথে রাখতে পারবে না তখন তুমি কী বলবে অথবা করবে?
-হঠাৎ মুসুকে নিয়ে প্রশ্ন কেনো?
-গোয়েন্দাগিরি না করে উত্তর দেও?
আনাবিয়া কিছুক্ষন সময় নিয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। ইরানের মুখে তখন টান টান উত্তেজনা। আনাবিয়া দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
-তখন আমি আপনাকে ছেড়ে মুসুকে নিয়ে অন্য রুমে চলে যাবো।
আনাবিয়ার উত্তর শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ইরানের। আঁধারে ঘিরে ধরে তাকে। বিমূঢ় হয়ে বলে,
-একটা কুকুর আমার থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট তোমার কাছে?
ইরানের কথায় হাসতে থাকে আনাবিয়া। কোনোরকম নিজেকে সামলে বলে,
-আমি জাস্ট মজা করছিলাম। আপনার থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট নয় আবার কম ইম্পরট্যান্টও নয়। আমার জান হলো মুসু আর আপনি তো আমার সব। এখন বলিয়েন না আপনি মুসুকে নিয়েও হিংসা করে!
-দূর না। মুসুকে আমার ও অনেক ভালো লাগে।
-হুম তাহলেই ভালো।
আনাবিয়া হাঁটতে থাকে। ইরানের মুখে আর হাসির রেখা দেখা গেলো না। ফাঁটা বাঁশের মতো চেহারা করে আগে বাড়তে থাকে।
”
”
”
রাতে আনাবিয়া ঘুমিয়ে গেলে ইরান ফোন দেয় তাজীবকে। তাজীব কল রিসিভ করে বিস্মিত স্বরে বলে,
-স্যার এক বাসায়ই তো আমরা কষ্ট করে আবার কল দিলেন যে?
-দেখা না করাটাই ভালো। এখন শুনো তুমি সিক্রেট অ্যাসিস্ট্যান্ট লাগিয়েছিলে তনুসফা শেখ ও তাহশিয়ার ওপর?
-জি স্যার।
-তাকে বলে দিও তার কাজ হয়ে গিয়েছে।
-কিন্তু স্যার কিভাবে হলো? আমরা তো এখন পর্যন্ত আসল দোষীকে ধরতে পারলাম না!
-আমি স্যার নাকি তুমি?
তাজীব অনুতপ্ত স্বরে বলে,
-সরি স্যার।
-হ্যাঁ, ওকে ওর প্রাপ্য এমাউন্ট দিয়ে দিও।
-জি স্যার।
-আর খুব জলদি আমি বাংলাদেশ যেতে চাই। দুই কী তিনদিনের ভিতরে ব্যবস্থা করো।
-স্যার আপনি বললে আগামীকাল সকালেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে কিন্ত মেডাম? সে তো একমাস থাকবে বললো!
-তোমার মেডামকে আমি মেনেজ করছি।
-ঠিক আছে স্যার।
_________________
রিসোর্টে এসে উস্কোখুস্ক হয়ে হাটু মুড়ে বসে আছে তাহশিয়া। এলোমেলো হয়ে আছে পুরো রুম। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট তাকে সামলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। তাহশিয়া একা একা কিছুক্ষন বিড়বিড় করে মাথা তুলে বড় বড় চোখ করে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট মেয়ের দিকে তাকায়। মেয়েটা ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাহশিয়া ধপ করে বসা থেকে উঠে মেয়েটার গলা চেপে ধরে। কিনারে আরো দুজন ছিল। তারা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এসে তাহশিয়াকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাহশিয়া ছাড়ে না। চিৎকার করে বলে,
-তোকে আজ আমি মেরে ফেলবো। তোর জন্য আজ আমার সম্পূর্ণ প্ল্যান ক্যানসেল হয়ে গেলো! শুধুই তোর জন্য! তোর মতো মেয়েকে আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বানানোই ভুল হয়েছে। তুই কী জানতি না ইরান সেখানে আগেই উপস্থিত ছিল? কেনো সেখানেই আমার মিটিং রেখেছিলি তুই?
মেয়েটা নিঃশাস নিতে পারছে না। কথা বলার চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর তাহশিয়া নিজেই ছেড়ে দেয় অ্যাসিস্ট্যান্ট মেয়েকে। মেয়েটা দুর্বল হয়ে মেঝেতে বসে পরে। গলা ধরে কাশতে থাকে। পাশের একজন মেয়ে অ্যাসিস্ট্যান্টকে ধরতে আসলে তাহশিয়ার ভয়ে পিছিয়ে যায়। তাহশিয়া একসময় না পেরে জেদে কেঁদে দেয়। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরে তার। অ্যাসিস্ট্যান্ট তাহশিয়ার পা জড়িয়ে ধরে কান্নারত্ব স্বরে বলে,
-ম্যাম ক্ষমা করে দিন আমাকে। আমি সত্যি জানতাম না তারা সেখানে থাকবে। ম্যাম দোয়েয়া করে আমাকে কাজ থেকে বের করবেন না ম্যাম। দোয়েয়া করুন।
তাহশিয়ার মায়া হলো না। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তাকে। আরেকজনকে আদেশ স্বরে বলে,
-এই মেয়েকে আমার চোখের সামনের থেকে চলে যেতে বলো। ওকে আর দেখতে চাই না আমি।
#পর্ব ২৮
ড্রইংরুমে বসে গ্রান্ডফাদারের সাথে কথা বলছে ইরান। তাঁদের কথার মূল টপিক হলো ইরানের বিজনেস। ইরান বিজনেস নিয়ে এটা সেটা বলছে। গ্রান্ডফাদার এখন অবসর মানুষ। তার ছেলে যা রেখে গিয়েছে তা-ই তাঁদের তিনজনের জন্য এনাফ। আরেকটা বাড়ি আছে আনাবিয়াদের। ঐ বাড়ি আনাবিয়ার মার নামে ছিল যেটা এখন আনাবিয়ার। ইরান কথা বলতে বলতে এক পর্যায় সিঁড়ির দিকে তাকায়। নেত্রপল্লব আটকে যায় সেখানেই তার। গ্রান্ডফাদারের একটা বাক্যও কর্ণকুহর হলো না ইরানের।
আনাবিয়া মাথায় শীতের টুপি পরতে পরতে নিচে নামছিল। আকস্মিক আনাবিয়া ইরানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। লাজে রাঙা হয়ে যায় তার দু গাল। কালো রঙের পেন্টের সাথে কালো লেডিস শার্ট ইং করে পরেছে আনাবিয়া। তার ওপর কালো রঙের লং কোট জড়িয়েছে কায়ায়। গলায় সাদা রঙের মাফলার পেঁচানো। সোনালী বর্ণের কেশগুলো ছেড়ে রেখেছে, মুখে তেমন কিছুই দেয়নি শুধু পিঙ্ক কালার লিপগ্লোস দিয়েছে। পায়ে লেডিস বুট জুতো। সব কিছু মিলিয়ে সম্পূর্ণ বিদেশী লাগছে আনাবিয়াকে। ইরান অস্পষ্ট স্বরে বলে,
-মাশাআল্লাহ! আমার বিদেশীনি!
গ্রান্ডফাদার বসা থেকে দাঁড়িয়ে আনাবিয়ার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-ইউ লুক সো বিউটিফুল মাই লেডি।
-থ্যাংক ইউ হ্যান্ডসাম।
-কোথায় যাবে আজ?
আনাবিয়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে গ্রান্ডমা বলে উঠে,
-আজ কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই বাচ্চারা। বাহিরের অবস্থা একদম ভালো নয়। গত রাতে অনেক বেশি স্নো হয়েছে। নিউজে দেখলাম বরফে ভরে গিয়েছে চারপাশ।
আনাবিয়া গ্রান্ডমাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে স্বরে বলে,
-ওও কিউটি কিছু হবে না আমাদের। আর আজ বাহিরে ঘুরবো না বাসায় যাবো।
-অসুস্থ হয়ে পরবে তো।
-কিছু হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো কিউটি।
-ঠিক আছে যাও। ইরানের খেয়াল রাখবে।
ইরান এতক্ষন নীরব দর্শক ছিল। আনাবিয়া এবার ইরানের কাছে এসে বলে,
-যান গিয়ে তৈরি হয়ে আসুন। একদম ভালো করে নিজেকে আবরণ দিয়ে ঢেকে নিয়েন।
-ওকে ওয়েট। জাস্ট ফাইভ মিনিট।
ইরান আনাবিয়াকে দেখতে দেখতে রুমে চলে আসে। বাঁকা হেসে সেও আনাবিয়ার মতো সম্পূর্ণ কালো রঙে নিজেকে তৈরি করে। শেষ একবার নিজেকে আয়নায় দেখে চোখে সানগ্লাস পরে পকেটে ফোন ঢুকিয়ে বেরিয়ে পরে রুম থেকে। আনাবিয়া ইরানকে দেখে ধীর কণ্ঠে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-কেনো সবসময় নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করেন যাতে আমার নজর আপনার ওপর থেকে না সরে?
– ইট’স্ মাই প্লেসিউর ওয়াইফি।
-ইটস টু মাচ! একদিন তো পারেন আমাকে একটু বেশি এট্রাক্টিভ হতে দিতে নিজের থেকে?
-তোমার নিজেকে এট্রাক্টিভ করতে স্টাইলিশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তোমার কথা, হাঁটাচলা, অঙ্গভঙ্গি, কায়া সব কিছুই অনেক বেশি এট্রাক্টিভ!
আনাবিয়া ফের লাজে মাথা নিচে ঝুঁকিয়ে নেয়। গ্রান্ডমা ও গ্রান্ডফাদারের থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে। ইরান শান্ত স্বরে বলে,
-কোথায় নিয়ে যাবে আজ?
-আজ আপনাকে আনাবিয়ার রাজ্যে নিয়ে যাবো।
-তাই নাকি?
-হ্যাঁ ডিয়ার।
-হেঁটে যাওয়া লাগবে?
-জি। তুষাপাতের কারণে রাস্তাখাটের অবস্থা ভালো নয়। এমন্ত অবস্থায় গাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
-আর কি চলুন তাহলে।
দুইজনে দুনিয়ার সকল কথা বলতে বলতে হাঁটা ধরে। আনাবিয়া আগে বাড়ছে আর ইরানকে অনেক জায়গা চেনাচ্ছে। ইরান আনাবিয়ার কথা শুনছে আর মুগ্ধ হয়ে আনাবিয়াকে দেখছে। ঠান্ডার কারণে মুহূর্তেই লাল হয়ে গিয়েছে আনাবিয়ার ফেইস। ইরান করুণ কণ্ঠস্বরে বলে,
-অনেক ঠান্ডা লাগছে ডিয়ার?
-একটু লাগছে! তবে সমস্যা নেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছালে আর ঠান্ডা লাগবে না।।
-কিভাবে?
-সারপ্রাইস।
___________________
শেখ বাড়িতে জেনো আজ কালবৈশাখী নেমেছে। ড্রইংরুমের সোফায় বসে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে রাকিয়া। সান্ত্বনা দিতে তনুসফা দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখন ইসরাফ অনেকটা সুস্থ। কথা বলতে পারে স্বাভাবিক ভাবে এবং খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো করে। তবে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ানো, হাঁটাচলা করার ক্ষমতা হারিয়েছে সে। এতো কিছুর পরও রাগ জেদ বিন্দু পরিমানও কমেনি তার। ইসরাফের আর ইরানের রক্ত যে এক এটাই তার প্রমান জেনো! কিছুক্ষন আগে না পেরে তনুসফা শেখ বলে দিয়েছে ইরান ও আনাবিয়ার বিয়ের কথা। রাগে অগ্নিমূর্তি হয়ে যায় ইসরাফ। উত্তেজিত হয়ে হাতের সামনে না পাচ্ছে তাই ছুঁড়ে ফেলছে। চিৎকার চেঁচামেচি করছে। রাকিয়া অনেক বুঝায় ইসরাফকে। কিন্তু ইসরাফ বুঝার পাত্র নয়। তার একটাই কথা, “সবসময়ের মতো এবারও ইরান তার প্রিয় জিনিসকে ইচ্ছেকৃত ভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে।” রাকিয়া কোনোরকম ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় ইসরাফকে।
রাকিয়া চোখের পানি মুছে তনুসফাকে বলে,
-আমি যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম সেটাই হলো তনুসফা। আমার সংসারে আগুন লেগে যাবে এবার। একপাশে ইরান আরেক পাশে ইসরাফ। কাকে রেখে কাকে সামলাবো আমি!
-আমিও আগেই বলেছিলাম আম্মা এমনটা করো না। ইসরাফ সইতে পারবে না। কিন্তু তুমি শুনলে না আমার কথা। আর ঐ ছে*সরা, বেহায়া, পরিচয়হীন মেয়ে কত সুন্দর নাচতে নাচতে নিজের প্রেমিককে রেখে তার ভাইকে বিয়ে করে নিলো!
-চুপ করো তনুসফা। আনাবিয়াকে নিয়ে কিছু শুনতে চাই না আমি। ওরা দুজন দুজনকে নিয়ে অনেক সুখে এবং শান্তিতে আছে। কিন্তু এখন ইসরাফ না তাঁদের শত্রু হয়ে যায়।
-শত্রু তো হবেই। ও এখন নিজের ভাইয়ের স্ত্রীকে ফের নিজের করতে চাইবে।
-এইরকম অশুভ কথা বলো না। এখন ইরান এসেই ওকে ঠান্ডা মাথায় বুঝাবে।
রাকিয়া উঠে তার রুমে চলে যায়। তনুসফা মুখ বাঁকায়। নিজেই নিজেকে বলে,
-আগুন যেহেতু লেগেছে তেল ঢালার দায়িত্ব আমার। ঐ মেয়ে আমার গলায় হাত দিয়েছি না! ওর সুখের সংসার ধ্বংস করে দেবো আমি।
🌸
বেশ কয়েক মিনিট হাঁটার পর আনাবিয়া ও ইরান বিশাল একটি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। বাহির থেকে শুধু বড় বড় গাছ দেখা যাচ্ছে যেগুলোতে স্নো পরে সাদা হয়ে আছে। দুইজন গার্ড দাঁড়িয়ে ছিল মেইন গেটের সামনে। আনাবিয়াকে দেখে তাঁদের ভাষায় কিছু একটা বলে। আনাবিয়াও হাসি মুখে উত্তর দেয়। ইরানের নজর পরে পাশে টাঙানো বোর্ডের ওপর। ইংরেজিতে “ড্রিমিহাউস” লেখা তার ঠিক নিচে আনাবিয়ার ফুল নাম লেখা। আনাবিয়া গেট খুলে ইরানকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। ইরান আনাবিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-গেটের সামনে একটা বোর্ড ছিল। ড্রিমিহাউস
মানে কী?
-এই বাড়ির নাম এটা।
-ওহ।
-আসুন।
বড় বড় পা ফেলে ভিতরে প্রবেশ করে আনাবিয়া ও ইরান। বাড়িটা দেখতে অনেকটা রিসোর্ট এর মতো। ফুল গাছ দিয়ে ভরা চারপাশ। যেগুলো এখন সাদা হয়ে আছে। আনাবিয়া বাড়ি দেখিয়ে বাড়ির পিছনের দিকে নিয়ে যায় ইরানকে। পিছনে বিশাল বড় একটি ময়দান। তার চারোপাশে লোহার বেড়া দেওয়া। স্নোতে ডুবে আছে একদম। ইরান বুঝলো না এখানে কী করা হয়। আনাবিয়া ইরানের হাবভাব দেখে বলে,
-আসুন। এখানে দিয়ে ভিতরে আসুন।
আনাবিয়ার কথা মতো ভিতরে যায় ইরান। কিছু দূর যেয়ে আনাবিয়া দুইজন লোককে দেখতে পায়। মাথা নত করে সালাম দেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া তাঁদের কিছু একটা ইশারা করে। সাথে সাথে লোক গুলো বড় একটি কাঠের দরজা খুলে দূরে সরে যায়। ইরান বুঝছে না আসলে এখানে হচ্ছে টা কী। আনাবিয়া দু’হাতের সাহায্য বাঁশি বাজাতেই একসাথে পাঁচটা ঘোড়া পর পর দৌড়ে আসে। ইরান অতিকৃত। বিশাল আকৃতির ঘোড়া গুলো দেখতে অনেক বেশি অপরূপ। ইরান অবিশ্বাস স্বরে বলে,
-ইউ লাইক হর্স?
আনাবিয়া খুশিতে দিশেহারা হয়ে বলে,
-আই লাভ হর্স।
পর পর পাঁচটা ঘোড়া সিরিয়ালে দাঁড়ায়। তারপর আরো পাঁচটা ঘোড়া আসে। আনাবিয়া দৌড়ে তাঁদের কাছে যায়। হালকা কালো ও খয়েরি রঙের একটি হেভিই ড্রাফট হর্সকে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়া। এই ঘোড়াটা দেখতে নজরকারা। স্বাস্থবান শরীর, পায়ে ঘন সাদা লোম, মাথায় মেয়েদের চুলের মতো। বড় বড় চোখ ও খাড়া খাড়া কান। আনাবিয়ার ছোট বেলার খেলার সাথী এই ঘোড়াটা। অনেক বেশি প্রিয় তার এটা। আনাবিয়া ঐ ঘোড়াটাকে ইরানের সামনে নিয়ে আসে।
-আমি বাচ্চাকাল থেকে হর্স প্রেমিক। অনেক বেশি প্রিয় আমার হর্স। তার মধ্যে এটা অন্যতম। জানেন ওর অনেক বয়স তবুও এখন পর্যন্ত কত শক্তিশালী!
-রাশিয়ান হেভিই ড্রাফট না এটা?
-ইয়েস।
-তাহলে হর্স রাইডডিংও জানো অবশ্য?
-পর পর তিনবার চ্যাম্পিয়ন আমি। আপনিও পারেন?
-মোটামুটি।
-ওহ গ্রেট। তাহলে আসেন হয়ে যাক হর্স রেস?
-ওকে।
-আমি আমার প্রিয় ঘোড়াকেই নেবো। আপনি ঐ নয়টার মধ্যে থেকে একটা বেছে নিন।
ইরান ভালোভাবে পরোক্ষ করে নেয় সবকয়টা ঘোড়া। অতঃপর কালো রঙের একটি ঘোড়া পছন্দ হয় তার। ইরান বলে,
-এটা পছন্দ হয়েছে আমার।
-ঠিক আছে উঠে পড়ুন।
আনাবিয়া এক লাফে ঘোড়ার ওপরে উঠে বসে। ইরান আবারও মুগ্ধ হয়ে যায় আনাবিয়ার আন্দাজ দেখে। ইরান লং কোট ও সানগ্লাস খুলে ফেলে। তারপর চড়ে যায় ঘোড়ার ওপর। আনাবিয়া একজন লোককে বলে,
-মিস্টার এরিস আমরা প্রস্তুত হওয়ার পর তিন পর্যন্ত গণনা করে বাঁশি বাজাবেন।
-ওকে ম্যাম।
আনাবিয়া ইরান বরাবর দাঁড়ায়। আনাবিয়ার মুখে বাঁকা হাসি। ইরান শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। আনাবিয়া শয়*তানি করে বলে,
-অল দা বেস্ট।
-সেম টু ইউ ডিয়ার।
দুইজনের চোখ জ্বলজ্বল করছে। মুখে রেসের যশ। আনাবিয়া জেনো একটু বেশিই এক্সসাইটেড। বাঁশি বাজানোর সাথে সাথেই রেস শুরু হয়ে যায়। আনাবিয়া আকাশে উড়ার মতো দুই হাত মেলে রাখে। ইরানের মুখে হাসি নেই। ঘোড়ার রশি ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। আনাবিয়া ইরানের রাইডডিং দেখে অবাক। দুইজনের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার টান টান উত্তেজনা চলছে। ঘোড়ার দৌড়ানোর সাথে স্নো গুলো ধুলোর মতো উড়ে যাচ্ছে। প্রথমে সাধারণ একটা কম্পিটিশন ভেবে নিলেও এখন দুইজনই বেশ সিরিয়াস। ইরানকে আগে যেতে দেখে আনাবিয়াও তার ঘোড়াকে আরো দ্রুত দৌড়াতে থাকে। একসময় ইরান আনাবিয়ার আগে ফিনিসিং লাইনে চলে যায় এবং বিজয়ী হয়। তার পর পরই আনাবিয়াও ফিনিসিং লাইন ক্রস করে। ইরানের মুখ চকচক করছে। আনাবিয়া দুঃখিত হওয়ার অভিনয় করে বলে,
-উফফ হেরে গেলাম!
-হেরে যাওনি বরং তুমিই জিতেছো।
-কিভাবে?
-সাধারণত মেয়েরা এতো ভালো হর্স রাইডডিং করতে পারে না। সেখানে তুমি মেয়ে হয়ে আমার থেকে ভালো খেলেছো। আই এম জাস্ট ইমপ্রেস। সর্বগুনে সম্পর্ণ আমার ওয়াইফ!
-আপনি আগের থেকে হর্স রাইডডিং করতেন? এতো ভালো কিভাবে হর্স কন্ট্রোল করলেন?
-কানাডায় আমার নিজস্ব দুইটা হর্স ছিল। ফ্রেন্ড’সদের সাথে প্রায়ই হর্স রেস করতাম তখন। মধ্যে কয়েক বছর হর্স ছুঁয়েও দেখা হয়নি। আজ ভীষণ ভালো লাগলো।
-আমারও অনেক ভালো লেগেছে।
-ওয়েট।
-কী?
ইরান কোনো উত্তর না দিয়ে ঘোড়া থেকে নেমে যায়। পেন্টের পকেটে থেকে ফোন বের করে বলে,
-তোমার এই নজরকারা আন্দাজে কয়েকটা ছবি তুলে নেই। মেমোরি হিসেবে আমার ফোনে রেখে দেবো।
-ওকে। সুন্দর করে তুলিয়েন।
আনাবিয়া পর পর কয়েকটা পোজ দেয়। ইরান সুন্দর করে সেগুলো নিজের ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে ফেলে। ছবি তোলা শেষ হলে ইরান এক ধেনে একটি ছবি দিকে তাকিয়ে থাকে।
-আমার ফোনও হয়তো মুগ্ধ হয়ে গেলো এইরকম রূপবতী ভিনবিদেশী মেয়েকে দেখে!
>>>চলবে।