Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সে প্রেমিক নয়সে প্রেমিক নয় পর্ব-২৪+২৫+২৬

সে প্রেমিক নয় পর্ব-২৪+২৫+২৬

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_২৪_২৫

#পর্ব ২৪

দ্রুত পায়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ইরান। কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা তার রুমে চলে যায়। দরজা ফাঁক করে ভিতরে ঢুকতেই দেখে মাথা নিচু করে আনাবিয়া বসে আছে সোফায়। ইরান বিচলিত হলো আনাবিয়াকে দেখে। ধীর পায়ে আনাবিয়ার কাছে গিয়ে পাশে বসে পরে। ইরানের অস্তিত্ব অনুভব করে আনাবিয়া। তবুও মাথা তুলে না। ইরান এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। আলগাস্থে আনাবিয়ার মাথা নিজের বুকের মধ্যখানে রাখে। আনাবিয়া তখনও নিশ্চুপ। ইরান স্বাভাবিক হয়ে বলে,

-আনাবিয়া, আম্মা এসেছিল রুমে?

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-আনাবিয়া কিছু বলো জান? তোমার এই গম্ভীরতা আমাকে পীড়া দিচ্ছে।

আনাবিয়া এখনও চুপ। তখনই চিন্তিত ভঙ্গিতে রুমে প্রবেশ করে তনুসফা। তনুসফাকে দেখে ইরান আনাবিয়ার থেকে একটু দূরে সরে যায়। তনুসফা বলে,

-এটা কী হলো ইরান? দেখেছো আমি প্রথমেই বলেছিলাম এই মেয়ে অশুভ। যার জীবনে যায় তার জীবনই নষ্ট করে দেয়। ইসরাফের কী অবস্থায়ই না হলো! এখন দেশে তোমার নামে কী উল্টাপাল্টা গুজব ছড়াচ্ছে এভাবে তো তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইরান রাগে লাল হয়ে উঠে দাঁড়ায়। চেঁচিয়ে বলে,

-চুপ করুন আপনি। চুপ করুন।

-আমি কেনো চুপ করব? সত্যি হজম করতে শিখো। যদি আজ এই মেয়ের জায়গায় তাহশিয়া তোমার স্ত্রী হতো তাহলে কোনো সমস্যাই হতো না। বরং তোমারই লাভ হতো। তাহশিয়া পারফেক্ট তোমার জন্য। এই মেয়ে কলঙ্কিনী। এখনও সময় আছে ইরান ওকে ডিভোর্স দিয়ে তাহশিয়াকে বিয়ে করে নেও।

ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে ইরান। আঙুল তুলে কঠিন কণ্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আনাবিয়া একটি আকস্মিক ঘটনা ঘটিয়ে দেয়। কোনোদিক না তাকিয়ে আনাবিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিঞ্চিৎ সময় ব্যয় না করে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তনুসফার গলা চেপে ধরে ডান হাত দিয়ে। আনাবিয়ার কাজে ইরান হতভম্ব। তনুসফা আনাবিয়ার ভয়ংকর রূপ দেখে ভয় পেয়ে যায়। চোখ জেনো কৌঠা থেকে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। তনুসফা আনাবিয়ার হাত ছাড়ানোর প্রয়াস করে। দাপট যতই দেখাক বয়স তো তার বেশ ভালোই। আনাবিয়ার শক্তির কাছে তার শক্তি ক্ষুন্ন। চিৎকার করে আনাবিয়া বলে,

-এই মহিলাকে আমি মেরে ফেলবো। সাহস কত বড় আমার ইরানকে আমার থেকে আলাদা করতে চায়! আমি জানি আজ যা হয়েছে সব এই শ*য়*তান মহিলা নিজেই করিয়েছে। যে আমার আর ইরানের মধ্যে আসবে তাকেই আমি নিজ হাতে মেরে ফেলবো।

তনুসফার ফেইস লাল হয়ে গিয়েছে। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। ইরান আনাবিয়াকে টেনে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আনাবিয়া তখনও শান্ত হলো না। ফের তনুসফার ওপর আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। ইরান এবার রেগে জ্ঞানশূন্য হয়ে আনাবিয়ার গালে চড় দিয়ে বসে। গালে হাত দিয়ে আনাবিয়া ইরানের পানে তাকায়। তনুসফা কাশতে কাশতে ভয়াত কণ্ঠে বলে,

-ও মেয়ে না কোনো পিচাশনী! আমার ফ্যামিলি ধ্বংস করতে এখানে এসেছে ও। দেখিস ইরান ও তোর জীবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে বলে দিলাম।

তনুসফা চলে যায়। আনাবিয়া একই ভঙ্গিতে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইরান কিছুক্ষন আনাবিয়াকে দেখে বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। যাওয়ার আগে আনাবিয়ার রুমের দরজার ছিটকানি লাগিয়ে দেয়। বাহিরে এসে গাড়ি বের করে অফিসে চলে যায়।

কপালে দু’আঙুল চেকিয়ে ক্যাবিনে বসে আছে ইরান। তার ঠিক সামনেই তাজীব দাঁড়িয়ে আছে। ইরান ভাবুক হয়ে বলে,

-আমার কাছে সব কিছুই কেমন জেনো ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা লাগছে। ভুল করে এতো বড় খবর কিভাবে ছড়ায়? অবশ্যই কেউ ইচ্ছেকৃত ভাবে টাকা দিয়ে এই কাজ করিয়েছে।

-আমারও এটাই মনে হচ্ছে স্যার। আপনার শত্রুর অভাব নেই। একমাত্র ঐ লোকই পারবে সত্যিটা বলতে।

-তাহশিয়া এই মেয়েটা যতটা ভালো সাজে ততটা ভালো নয়! তারপর তনুসফা শেখ, উনিও এর সাথে জড়িত হতেই পারে। নয়তো হাসিব আলী।

-তাহলে এখন আমাদের কী করা উচিত স্যার?

-তাহশিয়ার সমন্ধে না জেনে ওকে দোষারোপ করব না। কিন্তু আমার সিফাত সরকারকে চাই।

-ওকে স্যার।

-তোমার মেডাম মানসিক ভাবে ভালো নেই। তাকে নিয়ে এক মুহূর্তও ঐ বাসায় থাকা যাবে না। কিছুক্ষন পরই আমি তাকে নিয়ে আমাদের বাসায় যাচ্ছি।

-ঠিক আছে স্যার। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখবো। আর তাহশিয়া ও তনুসফা মেডামের ওপর নজর রাখবো।

-গুড।

_______________

বুকে হাত গুঁজে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আনাবিয়া। দৃষ্টি তার দূরের গাছের ওপর। বিকেলে তারা এই বাসায় এসেছে। আনাবিয়া ইরানের সাথে একটা কথাও বলেনি। ইরান কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এখন রাত নয়টা। নিজ কোমরে শক্ত একজোড়া হাতের অস্তিত্ব অনুভব করতেই একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায় আনাবিয়া। ইরান আনাবিয়ার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-কথা বলছো না কেনো? সরি তো। তুমি নাহয় আমার গালে মেরে বরাবর করে দেও।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-আনাবিয়া, আমি মারতে চাইনি। তোমাকে কন্ট্রোল করতে আমার তোমার ওপর হাত তুলতে হয়েছে।

-আপনি কী সত্যি বোকা নাকি আমার সামনে বোকা সাজার নাটক করছেন?

-মানে?

-আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তনুসফা শেখই সব কিছু করিয়েছে। তবুও আপনি তাকে কিছু বললেন না কেনো ইরান?

-অজান্তেই কারো ওপর দোষ দেওয়া যাবে না আনাবিয়া। তুমি শান্ত হও আমি আসল দোষীকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করব।

আনাবিয়া আর দাঁড়ালো না। রুমের ভিতরে যেয়ে বিছানায় বসে পরে। ইরানও আনাবিয়ার সাথেই ভিতরে চলে যায়। আনাবিয়া রাগী কণ্ঠে বলে,

-আমার পিছনে পিছনে ঘুরছেন কেনো? আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন।

-তোমার পিছনে পিছনে না ঘুরলে আমার শান্তি লাগে না যে!

ইরান আনাবিয়ার সামনে বসে। আনাবিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

-আজ যা হয়েছে সেটাকে একটা খারাপ স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও।

-আমি ভুলতে পারছি না। জানেন আপনি ওরা আমাকে কত নোংরা মেসেজ করেছিল। সবাই আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে। সবাই।

আনাবিয়া এখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পরে তার। বার বার নাক টেনে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিছু সময়ের জন্য ইরানের মনে হলো তার বুকের ভিতরে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ধাউ ধাউ করে জ্বলছে সেই আগুন তার সাথে পুড়ে যাচ্ছে ইরানের বক্ষ। আঁখিজোড়া বন্ধ করে বড় একটি নিঃশাস নেয়। আনাবিয়াকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। প্রিয় মানুষের উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে আনাবিয়া আরও দুর্বল হয়ে পরে। কান্না করে ইরানের পরিহিত শার্ট ভিজিয়ে দেয়। ইরান আনাবিয়ার মাথায় গভীর ভাবে অধর ছুঁয়ে দেয়। কেশে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-কাঁদবে না আনাবিয়া। প্লিজ কাঁদবে না। তুমি এভাবে কান্না করে আমাকে কষ্ট দিতে পারো না।

-আমারও কষ্ট হচ্ছে অনেক।

-যাদের জন্য আজ তোমার চোখে পানি খুব শিগ্রই সেই মানুষগুলোর চোখেও এর থেকে দ্বিগুন পানি হবে। কথা দিলাম।

______________________

আনাবিয়া ঘুমিয়ে পরলে বিছানা থেকে উঠে যায় ইরান। শার্ট এর সম্পূর্ণ বোতাম লাগিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইরান। হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাহিরে চলে আসে। বাড়ির পিছনের সিক্রেট দরজা দিয়ে গোডাউনের নিচে নামতে থাকে। আগের থেকেই আলোকিত এখানে। তাজীব ও আরো দুইজন বডিগার্ড দাঁড়িয়েছিল। ইরানকে দেখে সালাম দেয়। ইরানের মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন। রুক্ষ কণ্ঠে বলে,

-কোথায় রাখা হয়েছে বিশেষ অতিথিকে?

-স্যার একটু পিছনে দেখেন।

তাজীবের কথা মতো ইরান পিছনে ফিরে। মুখে তৃপ্তির হাসি তার। সিফাত সরকার সকালের সেই লোকটাকে আধমরা করে একটা লোহার সাথে দু হাত বেঁধে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে। ইরান এগিয়ে যায়। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

-কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো সিফাত সাহেব?

সিফাত ভীত হয়ে ইয়ানের দিকে তাকায়। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে,

-স্যার আপনি! আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসা হয়েছে স্যার। বিশ্বাস করুন আমি নির্দোষ স্যার।

-আমি ভালোভাবে বলছি আশা করি তুইও সোজাসুজি উত্তর দিবি। কে করিয়েছে এইসব? কার কথায় খবর ছড়িয়েছিস ?

-স্যার সত্যি আমরা ইচ্ছেকৃত করিনি ভুলের কারণে হয়েছে।

-সত্যি বললে ছেড়ে দেওয়া হবে। মিথ্যে বললে ভয়ংকর থেকেও ভয়ংকর শাস্তি দেওয়া হবে।

-স্যার আমি সত্যি বলছি আমাদের এখানে কোনো দোষ নেই।

-লাস্ট বার বলছি সত্যিটা বলে দে?

-আমি কিছু করিনি স্যার।

-শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

ইরানের আদেশ পেতেই দুইজন বডিগার্ড মিলে লোকটার ওপরে কেরাসিন তেল ঢেলে দেয়। আকুতী মিন্নতি করতে লাগলো সিফাত নামক ব্যক্তি। ইরানের ভীষণ হাসি পেলো সিফাতের ভীত কণ্ঠস্বর শুনে। অট্টহাসিতে ফেটে পরলো সে।

-দোষ না করলেও তুই আমার কাছে দোষী। কারণ তোদের ভুলের জন্য আমার আনাবিয়ার চোখে পানি এসেছে। ও কেঁদেছে। তুই না বললেও আমি বের করে নিতে পারব আসলেই কী সবটা ভুলবশত হয়েছে নাকি ইচ্ছে করে করানো হয়েছে। হ্যাভ এ নাইস জার্নি। বাই বাই।

কথা শেষ করে ইরান লাইটারে আগুন জ্বালিয়ে ছুঁড়ে মারে সিফাতের শরীরে। গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করছে সে। এতে বিন্দুমাত্র মায়াও হলো না ইরানের। ধীরে ধীরে বাহ্যিক আগুন বাড়তে লাগলো আর ইরানের ভিতরের আগুন নিভতে লাগলো। লোকটার আতর্নাদ শুনে পৌঁশাচিক হাসি দিচ্ছে ইরান। বেশ মজা পাচ্ছে জেনো সে।

-কাজ শেষ হলে জায়গায় পরিষ্কার করে তোমরা চলে যেও।

-জি স্যার।

ধীরে সুস্থে বাহিরে বেরিয়ে যায় ইরান। আশেপাশে তাকিয়ে বাড়ির ভিতরে যেতে নেয় হঠাৎ মাঝ রাস্তায় তার দেখা হয় আনাবিয়ার সাথে। আকস্মিক ঘটনা চমকে যায় ইরান। গভীর রাতে এখানে আনাবিয়াকে আশা করেনি সে। আনাবিয়া জহুরি চোখে ইরানকে পরোক্ষ করে বলে,

-কোথায় ছিলেন আপনি? আপনাকে পাশে না দেখে চিন্তিত হয়ে খুঁজতে বের হয়ে যাই আমি।

-আমি পানি নিতে নিচে এসেছিলাম। হঠাৎ বাহিরের থেকে আওয়াজ আসলো তাই দেখতে বের হলাম সব কিছু ঠিক আছে নাকি।

-ওহ। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

-এসো। ভিতরে যাই।

-হুম।

ইরানের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আনাবিয়া। ইরান টুকটাক কথা বলছে। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় আনাবিয়ার আর ঘুম আসছে না। ইরান আনাবিয়া চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলে,

-চলো আমরা কোথাও থেকে ঘুরে আসি। লাইক হানিমুন?

-এখন ঘুরতে যাওয়ার সময়?

-এখনই ভালো সময়। তোমারও মুড ভালো হয়ে যাবে। এখন বলো কোথায় যেতে চাও?

-আপনি বলুন?

-রাশিয়া যাবে?

মাথা তুলে ইরানের দিকে তাকায়। খুশিতে চকচক করছে তার মুখশ্রী। ইরান জেনো এটাই চেয়েছিল। আনাবিয়া অবিশ্বাস হয়ে বলে,

-সত্যি রাশিয়া যাবেন?

-তুমি যেতে চাও?

-হুমম।

-তাহলে কেনো যাবো না? দেখি আগামীকালের ফ্লাইট হয় নাকি।

আনাবিয়া উঠে বসে উল্লাসে ইরানের গালে কপাল চুমুর বর্ষণ করে। ইরান চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে বলে,

-আমার এখানেও কিস চাই।

আনাবিয়া ইরানের ঠোঁটের দিকে তাকায়। মুখ বাঁকিয়ে নেয়। ইরানের গালে মৃদু চাপড় দিয়ে বলে,

-দুষ্ট লোক।

-থাক তোমার দিতে হবে না আমি নিজেই নিজের হোক আদায় করে নিচ্ছি।

-জানেন ইরান আপনার সাথে কাটানো প্রত্যেকটি রাত জেনো আমার কাছে স্বর্গ!

-তাই নাকি। চলুন তাহলে আজ ভিন্ন এক স্বর্গ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।

________________🌸

ইরানের দুষ্টমিতে সকালে ঘুম ভাঙে আনাবিয়ার। বিরক্ত হয়ে অন্য পাশ ফিরে ঘুমায় আনাবিয়া। ইরান আনাবিয়ার গালে কিস করে, ঘাড়ে সুড়সুড়ি দেয়, আবার কিছুক্ষন পর পর কানে ফুঁ দেয়। আনাবিয়া বিরক্তের চরম পর্যায় পৌঁছে ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বরে বলে,

-উফফ ইরান রাতেও শান্তিতে ঘুমাতে দেননি এখনও দিচ্ছেন না। সরুন আপনি।

-বিয়ের পর মেয়েদের বেশি ঘুমাতে হয় না।

-ইউর হ্যাড!

-চলো একসাথে শাওয়ার নেই।

-আমি এখন উঠবো না। প্লিজ ঘুমাতে দিন। প্লিজ।

-পরে নাহয় আবার একটা ঘুম দিও কিছুক্ষন পর অফিসে চলে যাবো তো।

-যান গিয়ে আমাকে শান্তি দিন।

-মাত্রই তাজীবের সাথে কথা বললাম। ও আজকেই সব ব্যবস্থা করে দেবে।

-তার মানে আজই রওনা হবো আমরা?

-ইনশাআল্লাহ রাতে।

-আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি আমি আমার দেশে যাবো!

-একবারে যেয়েই বিশ্বাস করিও। এখন তো উঠেন ম্যাম।

#পর্ব ২৫

উৎফুল্ল হয়ে প্লেনে বসে আছে আনাবিয়া। তার পাশেই ইরান বসা। আনাবিয়া অবাক হয়ে আশেপাশে চোখ বুলায়। মধ্যে দু’জনের জন্য একটি বেড, সোফা, টেবিল-চেয়ার, একটা কাবাড সব কিছুই সাদা রঙের। আশ্চর্য হয়ে বলে,

-এটা কী কোনো প্লেন নাকি লাক্সরি হোটেল রুম!

ইরান আনাবিয়ার কথায় মৃদু হেসে বলে,

-এটাকে জেট বলা হয়। আমার প্রাইভেট জেট।

-আমি এই জেট নামটা আগেও শুনেছিলাম। কী এটা?

-বাহির দিয়ে এটা অনেকটা প্লেনের মতোই। কিন্তু ভিতরে লাক্সরি রুম। অনেক সখ করে কিনেছিলাম এই জেটটাকে।

-ওহহ। অনেক সুন্দর!

-তোমার পছন্দ হয়েছে আর কী লাগে।

-তাজীব ব্রো না আসলো সে কোথায়?

-অন্য রুমে।

-ওহ। আমার কাছে লাগছে না প্লেন চলছে! একটুও প্লেন প্লেন ফীল হচ্ছে না।

-একটু জালানা খুলে দেখো।

ইরানের কথা মতো আনাবিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। জালানার একঅংশ খুলতেই শো শো করে বাতাস ভিতরে ঢুকে যায়। আনাবিয়া মুহূর্তেই আবার জালানা লাগিয়ে দেয়। পুনরায় ইরানের পাশে বসে বলে,

-কী বাতাস ছিল!

-কখন থেকে বসে আছো যাও একটু রেস্ট নেও আমি কিছু খাবার অর্ডার দিচ্ছি।

-ওকে।

🌸

রাগে রুমের একটার পর একটা জিনিস ভাঙচুর করছে তাহশিয়া। কেউ তার সামনে আসতে পারছে না ভয়ে। হাসিব আলী মেয়ের অবস্থা দেখে দৌড়ে রুমে এসে তাকে আটকায়। তাহশিয়া হাসিবকেও ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। চিৎকার করে বলে,

-একদম ছুঁবেন না আমাকে। বেরিয়ে যান রুম থেকে নয়তো সবাইকে মেরে ফেলবো আমি বলে দিলাম।

হাসিব আলী ভীত হয়েও মেয়েকে বুঝিয়ে বলে,

-মা এভাবে রাগ জেদ করলে বাকি যা আছে সেটাও হারাবি। তোর কাছে এখনও সময় আছে।

-কিছু নেই আমার কাছে। কিছু নেই । সব ছিনিয়ে নিয়েছে ঐ আনাবিয়া মেয়ে। আই স্যয়ার ওকে আমি জিন্দা মাটিতে ঘাড়ব। ভয়ংকর থেকেও ভয়ংকর অবস্থা হবে ওর। আমি যেভাবে এখন প্রিয়জন হারানোর পীড়ায় পুড়ছি ও এভাবেই পুড়বে।

-মাথা শান্ত কর মা। মাথা শান্ত কর। জেদে বসে কিছু করলে ভালো কাজও খারাপ হয়ে যায়।

তাহশিয়া এবার হয়রান হয়ে মেঝেতে বসে পরে। এলোমেলো চুল। অস্থির ভাব। ফেইস লাল হয়ে আছে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলে,

-কী করব আমি এখন? ওদের মধ্যে যাতে দন্ড হয় তার জন্য আমি আজকে কত বড় একটি কাজ করলাম। কিন্তু কী হলো ফলাফল? তারা হানিমুন করতে চলে গিয়েছে! বাহ্!

-কোথায় গিয়েছে তুই জানিস?

-রাশিয়া।

-আমার কী মনে হয় তাহশিয়া মা তোর উচিত আনাবিয়ার বিষয় সম্পূর্ণ খবর নেওয়া। কোনো এমন জিনিস তো আছে যেটা আনাবিয়ার দুর্বলতা?

-ওর বিষয় তো আমি সবই জানি।

-এইসব না। গোপন কোনো বার্তা।

-গোপন!

-হ্যাঁ। এমন কিছু কর যাতে আনাবিয়া নিজেই সরে যায় ইরানের কাছ থেকে। আর আনাবিয়া সরলেই তোর রাস্তা ফাঁকা। ইরান তখন তোকে খারাপও ভাববে না।

-আইডিয়া ভালো পাপা। আমি রাশিয়া যেতে চাই।

-রাশিয়া কেনো?

-আনাবিয়ার বাসা সেখানে। তাই সেখানে গিয়েই আমি আমার মঞ্জিল পেয়ে যাবো।

-ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি। আগামীকালের ফ্লাইট বুক করছি।

-হুম। রাশিয়া যাওয়ার আগে আমি তনুসফা শেখের সাথে দেখা করতে চাই।

-কেনো?

-এতো প্রশ্ন করেন কেনো পাপা। তাকে কল দিন।

মেয়ের কথা মতো হাসিব আলী ফোন বের করে তনুসফা শেখকে কল দেয়। কিছুক্ষন রিং হতেই কল রিসিভ করে তনুসফা।

-স্যার বলুন?

-আমার মেয়ে আপনার সাথে কথা বলবে।

-ঠিক আছে দেন।

তাহশিয়া ফোন নিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-আপনার সাথে দেখা করতে চাই আমি।

-কবে আসতে হবে বলে দেও।

-এখনই।

-এখন কিভাবে? রাত দশটা বাজে এখন।

-সো হোয়াট! আমার দরকার আছে বাসায় আসুন।

-আসছি।

___________________

পরেরদিন বিকেলে ল্যান্ড করে তাঁদের প্রাইভেট জেট। ইরানের দুইজন বডিগার্ড তাঁদের ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে আগে আগে যায়। তাজীব তাঁদের সাথে। ইরান আনাবিয়া কথা বলতে বলতে এয়ারপোর্ট এর বাহিরে আসে। আনাবিয়ার গ্রান্ডমা ও গ্রান্ডফাদার দাঁড়িয়েছিল তাঁদের ওয়েলকাম করতে। আনাবিয়া তাঁদের দেখে দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরে। ইরান এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে তাঁদের সাথে কথা বলে। সারারাস্তা বকবক করতে করতে বাসায় আসে আনাবিয়া। ইরান প্রথমে বাসা দেখে একটু চমকে গিয়েছিল। একদম পুতুলের বাড়ির মতো। সাদা রঙের মাঝে বেবি পিঙ্ক রঙ করা। বাড়ির ডিজাইনও অনেকটা পুতুলের বাড়ি। ছোটোখাটো একটা আঙিনা। সেখানে হরেকরকম বিদেশী ফুলের গাছে। ইরান রাশিয়ার আবহাওয়া ও আনাবিয়ার বাসা দেখে মুগ্ধ। আনাবিয়া সবার আগে মেইন গেট খুলে ভিতরে যায়। হাসি জেনো আজ তার মুখ থেকে সরছেই না। ইরানের মনে শান্তি লাগছে আনাবিয়াকে খুশি দেখে।

ইরানকে আনাবিয়ার গ্রান্ডমা ও গ্রান্ডফাদার মিলে ভিতরে নিয়ে যায়। আনাবিয়া আশেপাশে চোখ বুলিয়ে একজনকে খুঁজছে। বাড়ির ভিতরে ঢুকে ইরান আরেকদফা অবাক। বাহির যেমন সুন্দর ভিতরটা আরো সুন্দর। আনাবিয়া চিন্তিত হয়ে বলে,

-গ্রান্ডমা আমার বেবি কোথায়?

-তার রুমে হয়তো।

আনাবিয়া ভিতরে যেতে যেতে মুসু বলে ডাক দিতেই আচমকা একটি কোরিয়ান পোমেরানিয়ান কুকুর এসে লাফ দিয়ে আনাবিয়ার কোলে উঠে পরে। আনাবিয়াও নিজের আপন বাচ্চার মতো জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে। ইরান এই প্রথম আনাবিয়াকে ন্যাকামি করতে দেখলো। বিয়ের এখন পর্যন্ত একবারও ন্যাকামি করেনি আনাবিয়া। স্ট্রং পার্সোনালিটি, রাগী, জেদি, গম্ভীর, রহস্যময় আনাবিয়াকেই চেনে সে। আনাবিয়া কুকুরটাকে মানে মুসুকে ইরানের সামনে নিয়ে যেয়ে বলে,

-এইযে আমার কেউট বেবি। আপনারও বেবি।

-বাহ্! রেডিমেড বেবি।

-আপনি আসলেই ফানি।

-কুকুর পছন্দ করো?

-না। সে এক বিরাট কাহিনী রুমে চলুন বলছি।

আনাবিয়ার কথায় সায় দেয় গ্রান্ডমা। আনাবিয়া ইরানকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। আগের মতোই তার রুম একটুও পরিবর্তন হয়নি। মুসুকে বিছানায় বসিয়ে আনাবিয়া ঘুরে ঘুরে নিজের রুম দেখছে। ইরান সোফায় বসে পরে। মুসু লেজ নাড়িয়ে ইরানকে দেখছে। আনাবিয়া বলে,

-আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন। ঐপাশে ওয়াশরুম।

-ওকে। এখানে অনেক শীত গরম পানি হবে তো?

-এখানকার মানুষ গরম পানি দিয়েই শাওয়ার নেয়। সারাবছরই এখানের আবহাওয়া শীতল থাকে। তবে এই মৌসুমে শীত জেনো একটু বেশিই।

-গরম পানি হলেই হলো।

আনাবিয়া হালকা হাসে। লাগেজ থেকে ইরান ও তার জামাকাপড় বের করে কাবাডে রাখে। খোলা চুলগুলো একটা ক্লিপের সাহায্যে বেঁধে নেয়। ইরানের পরার জন্য একটা শার্ট, পেন্ট আর জেকেট বের করে বিছানায় রাখে। তারপর মুসুকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। মুসুকে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে আনাবিয়া। মুসু উত্তরে একবার মাথা নারায় আরেকবার লেজ নারায়। শীতে কাঁপতে কাঁপতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে ইরান। শ্যামলা বর্ণের শরীর ঠান্ডার কারণে লাল হয়ে গিয়েছে। শুধু একটা তৈয়ালে কোমরে পেঁচানো। আনাবিয়া ইরানকে দেখে শব্দ করে হেসে দেয়।

-আমি শীতে কাঁপছি আর তুমি হাসছো! ইট’স্ নট ফেয়ার ডিয়ার।

-আপনাকে হুবহু ভাল্লুকের মতো লাগছে ইরান! বরফের দেশের ভাল্লুক।

-ভালুক! দাঁড়াও তোমাকে তো,

ইরান আনাবিয়া দিকে তেড়ে যায়। বিছানায় উঠে সুড়সুড়ি দিতে থাকে আনাবিয়াকে। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে আনাবিয়ার।

-ইরান হয়েছে প্লিজ। আর বলবো না সরি।

-কেনো এখন আরো বেশি করে বলো। বলো?

-আমি আর হাসতে পারছি না। প্লিজ স্টপ।

ইরান থামে না। এবার আনাবিয়াও শোয়া থেকে উঠে ইরানকে সুড়সুড়ি দেয়। দুইজনকে হাসতে দেখে মুসুও লাফাচ্ছে। আনাবিয়া বলে,

-হয়েছে এবার। আপনার তৈয়ালে খুলে যাবে ইরান।

-সো হোয়াট?

-ছি! লাজ সরম নেই আপনার?

-কখনই ছিল না।

-ওকে হয়েছে এখন ড্রেস পরুন তারপর মুসুর সাথে পরিচিত হন। আমি শাওয়ার নিয়ে আসি।

-ওকে। ড্রেস কে বের করেছে?

-আমি আর কে।

-বাহ্! আমার ওয়াইফ দেখছি আপডেট হয়েছে!

-বদমাইশ।

-এইযে শুনো, অতিরিক্ত শীতের কারণে আমি জামাকাপড় ধুতে পারিনি তুমি একটু ধুয়ে দিও।

-ড্রেস ওয়াশ করার মানুষ আছে আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন জনাব।

আনাবিয়া শাওয়ার নিতে চলে যায়। ইরান ড্রেস পরে জালানা দিয়ে বাহিরে তাকায়। এখানে সময় এখন বিকেল। অথচ কুয়াশার চাদরে ঢাকা জেনো মাত্রই সূর্যোদয় হলো!

অন্যদিকে তাহশিয়া বেরিয়ে পরেছে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে। মোটামুটি খোঁজ নিয়ে তাহশিয়া জানতে পারল আনাবিয়া এই দেশে এসেছিল নিজের প্রতিশোধ নিতে। কিন্তু কিসের প্রতিশোধ এটা এখনও জানতে পারেনি সে। ইরান হঠাৎ করে আনাবিয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি কিন্তু ফ্যামিলির কারণে পরে আনাবিয়াকে বিয়ে করেছে। নাতো আনাবিয়া ইরানকে পছন্দ করে নাতো ইরান আনাবিয়াকে। তাহলে তারা কী পারফেক্ট ক্যাপল হওয়ার নাটক করে? কিন্তু নাটকই বা কেনো করবে? তাহশিয়ার মনে এইরকম নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট নম্য স্বরে বলে,

-ম্যাম আমার মনে হয় বিয়ের পর হয়তো তারা ধীরে ধীরে দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছে। নয়তো কেউ এতো ভালো অভিনয় করতে পারে!

-অশুভ কথা ছাড়া ভালো কথা মুখ থেকে বের হয় না তোমার?

-ক্ষমা করবেন ম্যাম।

-ওদের মাঝে কেমন সম্পর্ক এটা আমি জানতে চাই না। আমি জাস্ট চাই ওদের মাঝে বিশাল বড় একটি দেয়াল তৈরি করতে। ঘৃণার দেয়াল। যতটা ঘৃণা হলে একজন আরেকজনের মুখও দেখতে চাইবে না ঠিক ততটা।

-আপনি সফল হবেন ম্যাম।

-ইয়েস।




ইসরাফকে স্যুপ খাইয়ে ইচ্ছে রাকিয়া। শোয়া অবস্থায় খেতে অনেক কষ্ট হয় তার। রাকিয়া ইসরাফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-জলদি সুস্থ হয়ে যাবি তুই বাবা।

ইসরাফ কিছু বলার চেষ্টা করল কিন্তু বলতে পারল না। রাকিয়া ইসরাফের এইরকম করুণ অবস্থা দেখে উদাসীন হয়ে যায়। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তার।

-হে আল্লাহ যে আমার ছেলের এইরকম অবস্থা করেছে তাঁদের আপনি শাস্তি দিয়েন। ভয়ংকর থেকেও যাতে ভয়ংকর অবস্থা হয় ঐ ব্যক্তির।

ইসরাফ আবারও কিছু বলার চেষ্টা করল। রাকিয়া তাকে উৎসাহ দিয়ে বলে,

-বাবা চেষ্টা কর কথা বলার। চেষ্টা করতে করতেই সফল হবি।

-আআ মার আনা বিবববয়া।

ইসরাফের উচ্চারিত শব্দ দুটি শুনে গলা শুকিয়ে যায় রাকিয়ার। দৃষ্টি নত হয়ে যায় তার। ইসরাফ পুনরায় বলে,

-আআনাবিয়া কেমন আছে?

রাকিয়া এখন কী বলবে ভেবে পেলো না। ইসরাফ যখন জানবে তার পছন্দের মানুষ এখন তারই বড় ভাইয়ের বউ তাহলে বিষয়টা ভয়ংকর হয়ে যাবে। রাকিয়া কোনোরকম হাসি ফুটিয়ে বলে,

-ও ভালো আছে আব্বা। তুমি জলদি সুস্থ হও।

-আমি ওওওর সাথে দেখা করতে চচাই।

-ঠিক আছে এখন আর কথা বলিস না। ঘুম দে একটা।

-আআমাকে কী অপছন্দ করবে ও?

-একদমই না।

____________________🖤

রাত আটটা। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে লম্বা একটি ঘুম দিয়েছিল ইরান ও আনাবিয়া। কিছুক্ষন আগেই তাঁদের ঘুম ভেঙেছে। আনাবিয়া ও ইরান নিজেকে সম্পূর্ণ শীতের পোশাকে ঢেকে নিয়েছে। বাহিরে যেতে চেয়েছিল আনাবিয়া। কিন্তু তুষারপাত হওয়ায় গ্রান্ডমা তাকে বাহিরে যেতে দেয়নি। কম্বলের ভিতরে ঢুকে ফোন টিপছে আনাবিয়া আর ইরান তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তাঁদের মধ্যেই একটু জায়গায় করে মুসু শুয়ে আছে। গ্রান্ডমা একজন ভৃত্যর কাছে তাঁদের জন্য পপকর্ন আর কিছু ফল পাঠিয়েছে। আনাবিয়া সেগুলো বিছানায় নিয়ে ইরানকে খেতে বলে। ইরান মুসুকে দেখে বলে,

-মুসুর কাহিনী তো বললে না।

-বলছি শুনুন, আমার ডেডি তো একজন সফল ব্যবসায়ী ছিল। কাজের জন্য অনেক দেশে যেতে হতো তার। তো তার কোরিয়া ট্রিপে যাওয়ার আগে আমি অনেক বেশি কান্না করেছিলাম। তখন ডেডি বলেছিল কোরিয়া থেকে আমার জন্য অনেক স্পেশাল একটা গিফট আনবে। ঐ গিফট পেলে নাকি আমি আর ডেডিকে মিস করব না। তো আমাকে রেখে ডেডি কোরিয়া চলে যায়। একমাস পর ফিরে আসে সে। আমিও খুশিতে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছিলাম সেদিন। তখন ডেডি বক্স থেকে বের করে মুসুকে আমার হাতে দেয়। আমি আবার কুকুর, বিড়াল ততটা লাইক করতাম না। কিন্তু মুসুকে দেখে আমার অনেক পছন্দ হয়। ডেডি সেদিন বলে “মুসুকে সবসময় নিজের কাছে রাখবে কখন যদি আমি না থাকি ভেবে নিবে মুসুর মধ্যেই আমি আছি।” তারপর থেকেই মুসু বেবি আমার অনেক প্রিয়।

-কয় বছর মুসুর?

-নয় বছর।

-বাহ্! বুড়ো বয়সেও ইনি দেখছি ভীষণ হ্যান্ডসাম।

-হুম। আমার কিউটি।

-ইউ নো আনাবিয়া আমার না অনেক তোমার বাবা মার প্রেম কাহিনী শুনতে ইচ্ছে করছে। মানে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া কিভাবে তাঁদের সাক্ষাৎ হলো? প্রণয় হলো?

-আমি যতটুকু জানি ততটুকুই বলি। মম নাকি স্টাডি করতে রাশিয়া এসেছিল। পরে ডেডির সাথে দেখা হয় তার। প্রথম দেখায় দুইজন দুইজনের প্রেমে পরে যায়। তারপর ডেডি ইচ্ছে করে প্রতিদিন মমের কলেজের সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। একসময় তারা তাঁদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। ডেডি মমের সাথে বাংলাদেশ যায় মমের মা বাবার সাথে বিয়ের কথা বলতে। কিন্তু মমের বাবা মা বিদেশী ছেলেকে মেয়ের জামাই করবে না। তখন মম ফ্যামিলিকে ছেড়ে ডেডির সাথে রাশিয়া চলে আসে এবং বিয়ে করে নেয়। আমার গ্রান্ডমা এবং গ্রান্ডফাদার তাঁদের সাথেই ছিল। মমের অনেক সিআইডি অফিসার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। তাই ডেডি মমের স্বপ্ন পূরণ করতে ফের বাংলাদেশে যায়। মম ফ্লার্ট নিয়ে কয়েক বছর বাংলাদেশে থেকে নিজের স্বপ্ন পূরণ করে। ধীরে ধীরে আমরা হই। মম বাংলাদেশেই বেশি থাকতো। ডেডি আমাদের দু বোনকে বেশি দেখাশোনা করেছে। যখন তারা মারা যায় তখন আমার খালামুনি মম, ডেডিকে ইনভাইট করেছিল তাঁদের বাসায়। আমার বোনও তাঁদের সাথে ছিল। আমি সেইসময় বাংলাদেশে যাইনি। কিসের জন্য জানি রাশিয়াই রয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আর কী সব শেষ হয়ে গেলো আমার।

প্রথম থেকে হাসি মুখে কথা শুরু করলেও শেষের দিকে উদাসীনতা ঘিরে ধরে আনাবিয়াকে। ইরানের মুখের ভঙ্গিমাও পরিবর্তন হয়। এক আকাশ সমান আপসোস ও অনুতপ্ত ছেয়ে যায় তার মুখে। আনাবিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,

-এই হলো আমার জীবনের সুন্দর ও কালো অধ্যায়ের কাহিনী।

ইরান এক হাত দিয়ে আনাবিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আনাবিয়ার কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,

-আর আমার জীবনে কালো অধ্যায় বেশি সুন্দর অধ্যায় কম। যেদিন থেকে তুমি আমার জীবনে এসেছো সেদিন থেকেই আমার ব্ল্যাকেনহোয়াইট জীবনে রেইনবোর দেখা মিলেছে।

>>>>চলবে।।

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ২৬

-অনেক ভালোবাসেন আমাকে?

-নিজের থেকেও বেশি। আমার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যই তুমি আর আম্মা।

-আমি কখন ভাবতেও পারিনি কেউ একজন আমাকে এতো ভালোবাসবে আর আমিও কাউকে এতো ভালোবাসবো!

-আমার যা না ভাবি সেগুলোই হয় আমাদের সাথে।

-একদম। আগামীকাল সকালে আমরা ঘুরতে বের হবো। আমার স্কুল, কলেজ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো আপনাকে।

-তাই নাকি?

-জি। চলুন নিচে যাই।

-চলো।

-আগে গরম পোশাক পরিধান করে নিন সসসা সাম দূর বলতেও পারছি না। কী জেনো শব্দটা?

-কোন শব্দ?

-বাংলায় হাসব্যান্ডকে জেনো কী বলে?

-জামাই?

-নোপ্।

-সহধর্মি ওর পতি?

-নো ম্যান। ফেমাস একটা শব্দ তো?

-বুঝেছি স্বামী।

-ইয়েস। স্বামী।

ইরান জেকেট পরতে পরতে মৃদু হাসে। আনাবিয়ার সামনে গিয়ে মাফলার আনাবিয়ার গলায় পেঁচিয়ে দেয়। সুযোগ পেয়ে টুপ করে আনাবিয়ার গালে একটা কিস করে দেয়। আনাবিয়া গাল ফুলিয়ে বলে,

-আপনি যখন তখন শুধু কিস কেনো করেন? এতো ফিলিংস আসে কোথা থেকে?

-প্রিয় মানুষের জন্য মনে সবসময়ই ফিলিংস থাকে। রইলো তোমাকে কিস করার কথা? তুমি হলে একটা কাপকেক। যাকে দেখলেই আমার খেয়ে ফেলতে মন চায়।

-এটা ফানি ছিল!

-হুম চলুন এবার।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে আনাবিয়া দেখতে পায় ড্রইংরুমে তাজীব মুসুর সাথে খেলছে। আনাবিয়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,

-তাজীব ব্রো কে বিয়ে করাচ্ছেন না কেনো? তারও তো বয়স হচ্ছে।

-ওকে বলেছি যদি কাউকে পছন্দ হয় আমাকে বলতে সেদিনই আমি তার বিয়ে করিয়ে দেবো।

-ওওও। ওকে ক্যান আই আস্ক ইউ এ কোয়েশ্চন?

-অফ কোর্স।

-হু আর ইউ?

আনাবিয়ার এহেন প্রশ্ন শুনে ভড়কে যায় ইরান। সহসা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আনাবিয়ার পানে তাকায়। আনাবিয়ার মুখে এতক্ষন একটা উত্তেজনা ছিল। ইরান তার দিকে তাকাতেই আনাবিয়া মেকি হাসে। ইরান কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে বলে,

-হোয়াট টাইপ অফ কোয়েশ্চন ইস দ্যাট!

-নট এট অল। চলুন গ্রান্ডমা ডাকছে।

আনাবিয়া সোফায় পরে। ইরানও আনাবিয়ার পাশে বসে। গ্রান্ডমার সাথে আনাবিয়া কথা বলছে। ইরান তাঁদের একটি কথাও বুঝছে না। হঠাৎ কল আসায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। এক কিনারে যেয়ে কল রিসিভ করে। তার একজন সিক্রেট অ্যাসিস্ট্যান্ট কল দিয়েছে বাংলাদেশ থেকে।

-হ্যাঁ বলো কী দরকার?

-স্যার তাজীব স্যারের কথা মতো আজ সারাদিন আমি তনুসফা ম্যাম ও তাহশিয়া ম্যামের ওপর নজর রেখেছি।

-তো বলো স্পেশাল কিছু জানলে?

-তনুসফা ম্যাম প্রতিদিনের মতো অফিসে গিয়েছিল। সারাদিন কাজ করে বাসায় চলে যায়। কিন্তু কাল রাত সম্ভবত দশটার দিকে ম্যাম কোথায় জেনো গিয়েছিল। নিজস্ব গাড়ি দিয়ে যায়নি। একটা রিকশা করে গিয়েছে।

-কোথায় গিয়েছিল?

-কিছু রাস্তা ফলো করার পর হঠাৎ ম্যামের রিকশা উধাও হয়ে যায় স্যার। ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি তখন।

-জানার চেষ্টা করো কোথায় গিয়েছিল।

-জি স্যার। আর স্যার তাহশিয়া ম্যাম আজই নাকি বিদেশে চলে গিয়েছে।

-আই ক্যান্ট বিলিভ! তুমি একটু ভালো করে খোঁজ নেও। যদি সে অন্য উদ্দেশ্যে আসে তাহলে এতো জলদি তার ফিরে যাওয়ার কথা নয়।

-জি স্যার।

ইরান কল কেটে নিঃশাস নিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখে আনাবিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ইরান দু পা পিছিয়ে যায়। আনাবিয়া বলে,

-ভয় পেয়ে গেলেন নাকি? সরি।

-কী করছিলে এখানে?

-আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে এলাম।

-হুম বলো?

-গ্রান্ডমা জিজ্ঞেস করছে রাতে কী খেতে পছন্দ করবেন?

-যা রান্না করবে তাই খাবো। আমি সব ধরণের খাবারই খেতে পারি।

-তাহলে তো ভালোই হলো।

আনাবিয়ার কোলে মুসু ছিল। আনাবিয়া এখানে আসার পর থেকে মুসুকে কোলে নিয়েই ঘুরছে। এক মুহূর্তের জন্য দূর করছে না। মুসু কত সুন্দর আনাবিয়ার মোলায়েম শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। ইরানের মনে হিংসা জন্ম নিলো মুসুর প্রতি। আনাবিয়া বার বার মুসুকে চুমু দিচ্ছে। সেটা দেখে ইরান নিজের হাত মুঠো করে নেয়। কোথায় আনাবিয়া তাকেও এভাবে কারণে অকারণে চুমু দেয় না! এভাবে আদর করে না! তবে এই মুসু কী তার জায়গা দখল করে নিচ্ছে? ইরানের মস্তিকে কিছু অদ্ভুত ধারণা বাসা বেঁধে নেয়।

-ইরান আমি ভাবছি মুসুকে আমি এবার আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। ভালো হবে না?

ভিতরে ভিতরে রাগ করলেও বাহ্যিক তা প্রকাশ করল না। হাসি মুখে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। আনাবিয়ার কপালে দু ভাঁজ পরে। চোখ ছোট ছোট করে বলে,

-আপনার হাসি দেখে মনে হয় অনেক কষ্টে হাসছেন জেনো! হাসি জিনিসটা হয়তো আপনার পছন্দ না?

-গম্ভীর থাকা হলো আমার স্বভাব। তুমি জীবনে আসার পর থেকেই আমি এতো হাসি।

-হুম আমি বুঝি তো আপনি আমার সামনে একটা মুখোশ পরে থাকেন।

-মুখোশ!

-মানে এইযে আমার সাথে কত হাসেন, মন খুলে কথা বলেন। কিন্তু বাহিরের সবার সাথে গম্ভীর ভয়ংকর ইরান। তাই বললাম আমার সামনে মুখোশ পরে থাকেন।

আনাবিয়া গ্রান্ডমার সাথে কিচেনে চলে যায়। ইরান সেদিকে তাকিয়ে থাকে মূর্তি হয়ে। যেতে যেতে আনাবিয়া তার কথায় একটা কিন্তু রেখে গেলো ইরানের জন্য।

___________________🌸

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর গ্রান্ডমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে রুমে আসে আনাবিয়া। ইরান শুয়েছিল তখন। আনাবিয়াকে দেখে রাগী কণ্ঠে বলে,

-আসলে কেনো আজ গ্রান্ডমার সাথেই ঘুমাতে!

-সত্যি! গ্রান্ডমাও এটাই বলছিল।

আনাবিয়া যেভাবে এসেছিল সেভাবেই আবার বেরিয়ে যেতে নেয়। ইরান কিঞ্চিৎ সময়ের মধ্যে বিছানা থেকে উঠে দরজা লাগিয়ে আনাবিয়া স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। আনাবিয়া কিছু বলতে উদ্যত হতেই ইরান আনাবিয়ার অধর নিজের অধরে পুরে নেয়। অতিকৃত হয়ে আনাবিয়া ইরানকে আঁকড়ে ধরে। ইরান প্রথমে রাগে রুক্ষভাবে চুম্বন করলেও ধীরে ধীরে কোমল হয়ে যায়। আনাবিয়ার দু গাল ধরে বিছানার দিকে অগ্রসর হতে নেয় হঠাৎ আনাবিয়া ইরানের ঠোঁটে কামড় দিয়ে বসে। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরে ইরানের। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,

-একটু কিসই তো করছিলাম এভাবে কামড় না দিলেও পারতে।

-আমি ইচ্ছে করে দেইনি হঠাৎ লেগে গিয়েছে হয়তো।

-হ্যাঁ বুঝেছি। যাও ঘুমাও।

ইরানের কণ্ঠস্বর মনমরা। আনাবিয়া এবার রেগে যায়। চেঁচিয়ে বলে,

-আরেহ আমি ইচ্ছে করে কামড় দেইনি তো। এখন রাগ দেখাচ্ছেন কেনো? আজব!

-আমি বুঝেছি তো তোমার আমার রোমান্স ভালো লাগে না।

-দূর আপনার সাথে কিছু বলাই ভুল।

আনাবিয়া জেদে বসে পা উঁচু করে ইরানের দু গাল শক্ত করে ধরে নিজেই ইরানকে কিস করে। ইরান মনে মনে খুশি হয়। আনাবিয়াকে কিস করার সুযোগ না দিয়ে হাত বাড়িয়ে বাতি নিভিয়ে দেয়। তারপর আনাবিয়াকে সোজা কোলে তুলে বিছানায় ফেলে দেয়। আনাবিয়া চিৎকার করে বলে,

-আপনি কী আমার কোমর ভাঙতে চাচ্ছেন? উফফ আমার কোমর ভেঙে গেলো!

-চুপ আর একটা কথাও বলবে না।




রাশিয়া পা রাখে তাহশিয়া। সকাল হলেও তুষারপাতের জন্য রাস্তাঘাট একদম খালি। নির্জন রাস্তা দিয়ে তার গাড়ি আগে বাড়ছে। আগের থেকেই রিসোর্ট বুক করে রেখেছিল সে এখন সেখানেই যাবে। তাহশিয়ার বাঁকা হেসে তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে বলে,

-ইরান এই মুহূর্তে কোথায় আছে?

-আনাবিয়ার বাসায় ম্যাম। নর্থ সাইডে।

-ওকে। এখন আমি রিসোর্ট যাবো একটু রেস্ট নেবো তারপর বের হবো।

-ঠিক আছে ম্যাম।

-ইরান এতো চতুর, এতো বুদ্ধিমত্তা তাকেও কত সহজে বেকুব বানিয়ে দিলাম আমি! বিষয়টা হাস্যকর বটে।

-আমিও সেটাই ভাবছি ম্যাম।

-আমি জানি ইরান আমার বিষয় খোঁজ নিচ্ছে হয়তো কোনো সিক্রেট গোয়েন্দাও লাগিয়েছে।

-জি ম্যাম ইরান স্যার বসে থাকার লোক নয়।

-তার এই এটিটিউড, আত্মসম্মান, গম্ভীরতা আমি অনেক বেশি পছন্দ করি। সত্যি বলতে সম্পূর্ণ ইরানকেই আমার ভালো। ইসসস কবে যে সে আমার হবে!

-হবে ম্যাম আপনারই হবে।

__________________

ব্রেকফাস্ট করে তৈরি আনাবিয়া ও ইরান। এখন তারা বাহিরে ঘুরতে বের হবে। গ্রান্ডমা দুইজনকে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে বলছে। একটু বাতাস লাগলেই ঠান্ডা লেগে যাবে তাই। অতঃপর বিদায় নিয়ে দুইজন বের হয়। ইরান প্রথমে গাড়ি করে যেতে চাইলেও আনাবিয়া জোর করে ইরানকে নিয়ে হাঁটা ধরে। ইরানের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে আনাবিয়া বলে,

-হেঁটে চলুন শরীর এমনেই গরম হয়ে যাবে।

-আমার তো শুধু তোমার সনিকটে আসলেই শরীর গরম হয়।

-রাব্বিশ!

-কত বছর ধরে এখানে থাকছো তোমরা?

-উম বারো বছর ধরে। বারো বছর আগে ডেডি এই বাড়িটা বানিয়েছিল।

-ওওও।

-হুম।

হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরেই এসে পরে তারা। আনাবিয়া একটা বিল্ডিংয়ের দিকে ইশারা করে বলে,

-উইযে ঐটা আমার স্কুল। আমার বোন এবং আমি সেখানেই স্টাডি করেছি।

-ওহহ! মানুষজন দেখা যাচ্ছে না যে?

-তুষারপাতের কারণে এইসময় স্কুল বন্ধ দেওয়া হয়। দেখছেন না রাস্তায়ও মানুষজন নেই।

-হুম একদম নির্জন। লাইক হরর এলাকা!

আনাবিয়া ইরানের কথা শুনে হাসতে থাকে। ইরান দু ঠোঁট প্রসারিত করে আনাবিয়ার হাসির হাসি দেখে। আচমকা আনাবিয়ার গালে কিস করে দেয়। আনাবিয়া কিছু বলবে তার আগেই ইরান বলে,

-আমার কিসিং ফিলিংস হলে আমি নিজেকে আটকাতে পারি না ডিয়ার।

বলেই ইরান সামনে দৌড় দেয়। আনাবিয়া কিছুক্ষন ইরানের পিছনে দৌড়ে থেমে যায়। নিচে থেকে কিছুটা তুষারপাত হাতে তুলে নিয়ে গোল বল বানিয়ে ইরানের দিকে ছুঁড়ে মারে। ইরানও আনাবিয়াকে পাল্টা আক্রমণ করে। এভাবেই মাঝ রাস্তায় দুইজন দৌড়াদৌড়ি করে তুষারপাত ছুঁড়ে মারে একজন আরেকজনের দিকে। আনাবিয়া একসময় ক্লান্ত হয়ে হাসতে হাসতে নিচেই বসে পরে। ইরান আনাবিয়াকে টেনে কোলে তুলে নেয়। ভড়কে গিয়ে আনাবিয়া বলে,

-কী হলো কোলে তুলে নিলেন কেনো?

-ঠান্ডায় বসলে জ্বর হবে। যেখানে আমি উপস্থিত সেখানে তোমার বসার জন্য অন্য জায়গা লাগে নাকি!

-আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন নামান আমাকে।

-তোমার মতো চিকনিকে কোলে নিলে আমার মনে হয় না আমি কাউকে কোলে নিয়েছি।

-অপমান করলেন!

ইরান মুচকি হেসে প্রতিউত্তরে বলে,

-না তারিফ করলাম। আমার ওয়াইফের কত স্লিম ফিগার! হ*টিন*টি।

-উফফ কী যে বলেন আপনি!

-একটা সত্যি কথা বলবো?

আনাবিয়া ইরানের গলা জড়িয়ে ধরে বাবু হয়ে বলে,

-হুম বলুন?

-অনেক বেশি কেউট লাগছে তোমাকে এই লুকে। একদম চলন্ত পুতুল!

-চলন্ত পুতুল!

-অপ্স সরি ইরানের পুতুল। এখন ঠিক আছে?

-হুম। আপনি আনাবিয়ার প্রিন্সচার্মিং আর আমি ইরানের ডল।

-একদম।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ